ছবির মতোই সুন্দর ছিল আমার গ্রামটা...

বর্ষা মৌসুমে নৌকা ছাড়া চলাচলের কোন উপায় থাকতোনা। যেন মহসড়কের পাশে বিচ্ছিন্ন ছোটএকটা দ্বীপ।

সমস্যা যত বড়ই হোক, আশা মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে

আমরা অবশ্যই পারব৷ সমস্যা যত বড়ই হোক না কেন, আশা মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে, নতুন কিছু উদ্ভাবন করতে অনুপ্রেরণা জোগায়৷ কিন্তু সমস্যাকে নিজের চোখে না দেখলে শুধু আশা দিয়ে সমস্যা সমাধান করা যায় না৷

ঘুরে আসুন নারায়ণগঞ্জের সব দর্শনীয় স্থানে

অপরূপ সৌন্দর্যে ভরপুর আমাদের বাংলাদেশের প্রায় প্রত্যেকটি জেলায়ই রয়েছে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান। যা আমাদের দেশকে করেছে আরো সমৃদ্ধ। শত বছর ধরে লাখো পর্যটককে করেছে আকৃষ্ট।

মানবসেবাই সর্বোত্তম ধর্ম: ফাদার তেরেসা

অসহায়, দুস্থ মানুষের সহায়তাই তার ধ্যান-জ্ঞান।সহিংসতার বিপরীতে তিনি অসহায়ের ত্রানকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হন।তিনি পাকিস্তানের আবদুল সাত্তার ইদি।অসম্ভব মানবসেবার কারনে ৮৪ বছর বয়সী এই ব্যক্তি তার দেশে ফাদার তেরেসা নামেই বেশি পরিচিত।

‘মানসিক প্রশান্তির জন্য সাইকেল’

যাত্রা পথে পরিবহন নিয়ে দুশ্চিন্তা আর ভোগান্তি থেকে রেহাই পেতে বিকল্প হলো একটা বাই সাইকেল। তাছাড়া ইদানিং স্বাস্থ্যটার দিকেও মনে হচ্ছে একটু যত্ন নেয়া দরকার।

মঙ্গলবার, ১১ আগস্ট, ২০২০

ইমোশনাল ইন্টিলিজেন্স: নিজের ও অন্যের মন পড়ার অসাধারণ ক্ষমতা

একবার ভাবুন তো আমরা যদি বুঝতে পারতাম কী চলছে অন্যদের মনের মধ্যে, তাহলে কত ভুল বোঝাবুঝির অবসান হতো? কত সম্পর্ক ভাঙার বদলে আরো দৃঢ় হতো? আরেকজনের কথা বাদ দেই আমরা, নিজেদের অনুভূতিগুলোই ঠিকমতো বুঝতে পারি কি? ধরুন আপনার মন খারাপ। কিন্তু আমাদের অনুভূতি কি এতই সরল যে স্রেফ মন খারাপ বা ভালো এ দুটো শব্দ দিয়েই প্রকাশ হয়ে যায়? উত্তর হলো- না। আপনি কি ধরতে পারছেন আপনার আসলে কোন ধরণের মন খারাপ? আপনি কি হতাশ, নাকি বিষণ্ণ? নাকি কোনো অনুতাপে ভুগছেন? আমরা আমাদের অনুভূতির এ সূক্ষ্ম রূপগুলো ধরতে পারি কি?


অনুভূতির এ সূক্ষ্ম রূপগুলো নিয়েই ইমোশনাল ইন্টিলিজেন্স এর কাজ। নিজের এবং অন্যের আবেগ বুঝতে পারা, অনুভূতির সূক্ষ্মতর রূপগুলো সঠিকভাবে অনুধাবন করতে পারা এবং কোনো পরিবেশে খাপ খাইয়ে নেয়া বা কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য আবেগ নিয়ন্ত্রণ করার সক্ষমতাই হলো ইমোশনাল ইন্টিলিজেন্স।


জীবনের বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা নিয়ন্ত্রিত হই আবেগ দ্বারা। আবার এ আবেগের কারণেই সূত্রপাত ঘটে দৈনন্দিন জীবনের অধিকাংশ সমস্যার। আবেগকে ঠিকমতো বুঝে নিয়ন্ত্রণ করা গেলে এড়ানো যায় এসব সমস্যা, অর্জন করা যায় অনেক লক্ষ্য। এ কারণেই ইমোশনাল ইন্টিলিজেন্স এর গুরুত্ব এত বেশী। এমনকি সফলতার ক্ষেত্রে ইমোশনাল ইন্টিলিজেন্সকে (‘ই আই’ বা ‘ই কিউ’) ‘আই কিউ’ এর চেয়েও বেশী গুরুত্বপূর্ণ ধরা হয়।


ড্যানিয়েল গোলম্যান তার ইমোশনাল ইন্টিলিজেন্স এর মডেলে পাঁচটি দক্ষতার কথা উল্লেখ করেছেন:

১। আত্মসচেতনতা: নিজের অনুভূতি, দুর্বলতা, সবলতা, মূল্যবোধ ও লক্ষ্য সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে এ সকল কিছু মাথায় রাখাই আত্মসচেতনতা। এছাড়াও অন্যদের উপর নিজের সহজাত ও প্রতিক্রিয়াশীল অনুভূতিগুলোর (যেমন হতে পারে অতিরিক্ত বিশ্বাস প্রবণতা বা রেগে যাওয়া ইত্যাদি ) প্রভাব সম্পর্কে সচেতন থাকাও এর অন্তর্ভুক্ত।

২। আত্মনিয়ন্ত্রণ: নিজের ক্ষতিকর আবেগ বা মনোবৃত্তিগুলো নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা বা পরিবর্তিত অবস্থার সাথে নিজেকে খাপ খাওয়ানো এর অন্তর্ভুক্ত।

৩। সামাজিক দক্ষতা: সম্পর্কের মাধ্যমে সহযোগী বা অধীনস্থ কর্মীদের কোনো একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে পরিচালিত করা।

৪। সহমর্মিতা: কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় অন্যদের অনুভূতির বিষয়ে সজাগ থাকা।

৫। প্রেরণা: কোনো কিছু অর্জনের জন্য নিজেকে তাড়িত করা।


ইমোশনাল ইন্টিলিজেন্টদের কিছু বৈশিষ্ট্য

অন্য যেকোনো দক্ষতার মতো ইমোশনাল ইন্টিলিজেন্স এর দক্ষতাও অনুশীলনের মাধ্যমে শাণিত করা যায়। তবে এমনটাও হতে পারে যে এটি কি তা না বুঝেই সহজাত ভাবে আপনি উচ্চ ‘ই আই’ সম্পন্ন। নিচে উল্লিখিত ইমোশনাল ইন্টিলিজেন্ট ব্যক্তিদের অভ্যাসগুলো খেয়াল করুন। আপনার অভ্যাসের সাথে কি মিল খুঁজে পাচ্ছেন?


১। তারা অনুভূতি সম্পর্কে সচেতন থাকেন

উচ্চ ‘ই কিউ’ সম্পন্ন ব্যক্তিরা নিজেকে জিজ্ঞেস করেন ‘আমি এমন অনুভব করছি কেন?’, ‘আমি এমনটা করলাম কেন?’ এ সকল প্রশ্নের মাধ্যমেই মূলত ‘ই আই’ এর শুরু। প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার মাধ্যমে একজন তার প্রতিক্রিয়াশীল অনুভূতিগুলোর বিষয়ে সচেতন হন এবং একে ইতিবাচক দিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেন।

২। তারা অন্যের দৃষ্টিভঙ্গি জানতে আগ্রহী হন

তারা জানেন যে তিনি নিজেকে বা নিজের কাজকে যে দৃষ্টিতে দেখেন অন্যরা সে দৃষ্টিকোণ থেকে দেখবে না। তাই তারা ইতিবাচক বা নেতিবাচক যেমনই হোক না কেন অন্যের দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়ে জানতে আগ্রহী হন।


৩। তারা সঠিক সময়ে বিরতি দিতে জানেন

হুট করে কোনো কথা বলতে গিয়ে বা কোনো কিছু করতে গিয়ে থেমে একটু ভেবে নেয়া, বিষয়টি সহজ মনে হলেও আসলে ততটা সহজ নয়। তবে এ একটুখানি ভেবে নেয়া আপনাকে বাঁচিয়ে দিতে পারে অনেক সমস্যা থেকে, টিকিয়ে রাখতে পারে অনেক সম্পর্ককে, এমনকি আপনি হয়ে উঠতে পারেন আগের চেয়ে ভাল কর্মীও। ইমোশনাল ইন্টিলিজেন্ট ব্যক্তিরা সঠিক সময়ে এ বিরতিটি দিতে পারেন।

৪। তারা অন্যের অবস্থান থেকে ভাবার চেষ্টা করেন

কোনো বিষয়ে কাউকে ঢালাওভাবে দোষারোপ করার পূর্বে উচ্চ ‘ই আই’ সম্পন্ন মানুষেরা ঐ ব্যক্তির অবস্থান থেকে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করেন। সে কেন এমনটা করল? তার এমন প্রতিক্রিয়ার পেছনে কী কাজ করছে? এ প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার মাধ্যমে তারা সবার মধ্যে একধরণের মিলবন্ধন খুঁজে পান।

৫। ইমোশনাল ইন্টিলিজেন্ট ব্যক্তিরা সমালোচনা গ্রহণ করতে পারেন

নিজের সম্পর্কে নেতিবাচক মতামত কে-ইবা শুনতে চায়! তবে ‘ই আই’ সম্পন্ন ব্যক্তিরা বুঝতে পারেন সমালোচনা ঠিক ভদ্র ভাবে না আসলেও তার মধ্যেও কিছু সত্যতা লুকিয়ে থাকে। তাই তারা সমালোচনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন। এছাড়াও সমালোচনা থেকে অন্যরা কিভাবে চিন্তা করে তাও বুঝতে পারেন তারা।

৬। অন্যদের মনোভাবও গুরুত্ব পায় তাদের কাছে

কোনো একজন মানুষের সাথে পরিচিত হওয়ার পর তারা নিজের অজান্তেই ঐ ব্যক্তিকে বিশ্লেষণ করতে শুরু করেন। এর ফলে তাদের কথাগুলি অন্যদের উপর কীভাবে প্রভাব ফেলছে তারা তা বুঝতে পারেন। তাই তারা কী বলছেন এর পাশাপাশি কিভাবে বলছেন তাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে তাদের কাছে।

৭। তারা নিজেদের ভুলের জন্য ক্ষমা চান

নিজের ভুলগুলি স্বীকার করে আবার তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার কাজটি সহজ না। কিন্তু ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্ট ব্যক্তিরা নিজেদের বিশ্লেষণের মাধ্যমে নিজেদের ভুলগুলো ধরতে পারেন এবং ‘আমি দুঃখিত’ বা ‘আমি ক্ষমা প্রার্থী’ এ শব্দগুলোর ক্ষমতা সম্পর্কেও তারা জ্ঞাত তাই ক্ষমা প্রার্থনা করতে দ্বিধা করেন না।

৮। তারা ক্ষমা করে দেন

তারা বুঝতে পারেন যে কেউই আসলে নিখুঁত নয়। তাই ক্ষমা করতে না চাওয়া আসলে একটি ক্ষতকে নিরাময় হওয়ার সুযোগ না দেয়ার মতো। যখন দোষী ব্যক্তি তার জীবনে এগিয়ে চলছে, তখন অযথা অসন্তোষ ফুঁসে না রেখে ক্ষমা করার মাধ্যমে তারা নিজেদেরও এগিয়ে চলার সুযোগ করে দেন।

৯। তারা তাদের চিন্তাধারা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেন

প্রচলিত কথায় আছে, “একটা পাখিকে হুট করে আপনার মাথায় এসে বসার থেকে হয়তো আপনি থামাতে পারবেন না, কিন্তু আপনার মাথায় বসে বাসা বানানোর থেকে তো থামাতে পারেন!”

ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্ট ব্যক্তিরা এটি করার চেষ্টা করেন। কোনো বাজে পরিস্থিতিতে সহজাত কোনো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখানোর থেকে হয়তো তারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। কিন্তু এর পরবর্তী বিষয়গুলো তারা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। তারা ঠিক করেন যে তাদের চিন্তাগুলো কোনদিকে ফোকাস করবেন। তারা সবধরনের নেতিবাচক অনুভূতি ঝেড়ে ফেলে নিজেকে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেন।

১০। তারা কাউকে বিচার করেন না

কারো সম্পর্কে ভালভাবে না জেনে, পরিস্থিতি, প্রসঙ্গ ইত্যাদি বিশ্লেষণ না করে কাউকে বিচার করে ফেলা বা কোনো আখ্যা দিয়ে ফেলা খুবই বাজে অভ্যাস। কিন্তু ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্টরা এ কাজটি কখনোই করেন না। তারা মানুষকে জানেন, বিশ্লেষণ করেন কিন্তু কারো উপর কোনো লেভেল এঁটে দেন না কখনোই। তারা জানেন যে, একজন মানুষের একটা খারাপ দিন এমনকি একটা খারাপ বছরও যেতে পারে।


অন্য সব দক্ষতার মতো ইমোশনাল ইন্টিলিজেন্সকেও নৈতিক, অনৈতিক দুই ভাবেই ব্যাবহার করা যায়। এর মাধ্যমে আমরা যেমন মুক্তি পেতে পারি অনেক নেতিবাচক অনুভূতি থেকে, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে করতে পারি অনেক অর্জন, তেমনি অনেকে এ দক্ষতার মাধ্যমে অন্যকে অনেক নেতিবাচক উদ্দেশ্য সাধনের জন্যও প্রভাবিত করতে পারে। তাই অর্জন করতে হবে এর ক্ষতিকর প্রভাব প্রতিরোধের দক্ষতাও।


লেখক: মোনেম আহমেদ

সোর্স: https://roar.media/bangla/main/lifestyle/emotional-intillegence-understand-emotions

রবিবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৮

দু:খের দিনলিপি: একটি দু:সংবাদের অপেক্ষায়...

১৯ আগস্টের বিকেল। শিশু হাসপাতালের ৪ নাম্বার ওয়ার্ডের ৫৪ নম্বর বেডের রেলিং ধরে বসে আছি। পাশে ঐশীর বাবা মা দুজন অক্সিজেন হেড বক্সের দুইপাশ ঘিরে অশ্রুসজল।  জ্বরে পুড়তে থাকা মেয়ের গায়ে অাদরের পরশ বুলিয়ে দিচ্ছেন। হার্টবিটও বেড়েছে অনেক। শরির শুকিয়ে প্রায় রক্তশুন্য, চামরাগুলো এমন কুচকে গেছে যেন ৮০/৯০ বছরের বুড়ির শরির। শুকিয়ে হাড্ডিশার শরীর। বুকের খাচায় কংকাল।  ডা. রেজাউল বলেছেন ইনফেকশনের কারনে এমনটি হয়েছে। তবে চেহারাটা অনেক সুন্দর রয়েছে। হয়তো সৃষ্টিকর্তার নিজ হাতে সুনিপুণ ভাবে অনেক ভালোবাসায় সৃষ্টি করেছেন বলেই, মরনব্যাধি সেই ভালোবাসার চেহারা ঘায়েল করতে পারেনি।

আমি বসে আছি রক্ত দিব বলে, ক্রস মেচিং রিপোর্ট আসবে বলে দেরি। যদিও গতমাসেও একবার দিয়েছিলাম।

রওজার ৩ মাস ৩ দিন আজ।  এই তিন মাসের সোয়া দুই মাসই তাকে কাটাতে হয়েছে হসপিটালে। এর মধ্যে এনআইসিও, আইসিও মিলিয়ে ২৫ দিন। গত কয়েকদিন ধরেই এখানকার ডাক্তাররা ফের আইসিও আইসিও  বলে মাথা খারাপ করে দিচ্ছে। তাদের ভাষ্য যে কোন সময় লাইফ সাপোর্ট লাগবে তার। কিন্তু আঢ়ালে এও বলে দিয়েছেন এসব করে তার ফিরে আসার চান্স  ২০ ভাগ। বাকিটা আল্লাহর উপর ভরসা। উনি যা চান ফায়সালা  তাই হবে। আমরা শুধু চেষ্টা করার মালিক।

সবকিছু বিবেচনায় আইসিও বা লাইফ সাপোর্টে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু কারো চোখের পানিইত আর ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছেনা। বিশেষ করে রেখার বোবাকান্না সহ্য করার মতোনা। সময়ে অসময়ে গোপনে প্রকাশ্যে বুক ফেটে চোখের জলে এই কষ্টের বহিপ্রকাশ ঘটছে সবারই। গভীর রাতে বা ভোর সকালে যখনই তাদের ফোন পাই তখনই বুকের ভিতরটা মোচর দিয়ে উঠে এই বুঝি কোন খারাপ খবর শুনবো। এখনত প্রতিরাতে একটা দু:সংবাদ শোনার অপেক্ষায় ঘুমুতে যাওয়া অনেকটা রুটিনে পরিণত হয়েছে। সকালে নতুন সূর্যের মতো যখন তাদের ভালো থাকার খবরটা পাই তখনই বুক থেকে দুশ্চিন্তার পাথরটা নামে। কিন্তু তাতে কি। হঠাৎ হঠাৎই বাবুর অবস্থার অবনতি হলে কষ্টের তীব্রতা গ্রাস করে নেয় সব প্রশান্তি।

বিশেষত ঐশীর নিষ্পাপ, ফুলের মতো চেহারা যখন দেখি পাশাপাশি রোগ যন্ত্রনায় ছটফটানি দেখলে যে কারো চোখেই পানি চলে আসে। আসেপাশের বিছানার অন্যরোগীর আত্নীয়রাও দেখি কাঁদে ওর কষ্টে।

সবার একটাই প্রার্থনা এই কষ্ট থেকে যেন সবাইকেই মুক্তি দেন পরম দয়ালু আল্লাহ তায়ালা।  তিনিইত উত্তর আরোগ্যদানকারী।

জানিনা আজ থেকে ২০ বছর কিভাবে এই দিনটিকে মুল্যায়ন করা হবে। তবে মহান প্রভু পরোয়ার দেগারের দরবারে ফরিয়াদ তাকে নেক হায়াৎ দাও। সবার অন্তরে প্রশান্তির বাতাস বইয়ে দাও। তাকে সুস্থ্য স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দাও।

রবিবার, ১২ আগস্ট, ২০১৮

ছবির মতোই সুন্দর ছিল আমার গ্রামটা...


বাইরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। অনাকাঙ্ক্ষিত বৃষ্টিতে স্বভাবতই বের হওয়ার জো নেই। বাধ্যতামূলক গৃহবন্দি। তবে আজকে বের হতে না পারলেও অন্যদিনের মতো তীব্র বিরক্তি ভর করছেনা। কারন বাইরে বেরুবার সিরিয়ার কোন তাড়াও নেই। 
এমন বৃষ্টিদিনে অলস দুপুরে তাই বৃষ্টি দেখতেই ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে মনের দীর্ঘদিনের জমে থাকা বিষাক্ত কষ্টগুলোও ধুয়ে যাচ্ছে। মনটাও হালকা হতে শুরু করেছে। তানজীব সরোয়ার আর মিনারের বৃষ্টি দিনের গানগুলো শুনতে শুনতে কেন জানি হারিয়ে গেলাম অতীত জীবনের বৃষ্টি দিনে। চোখের সামনে ভেসে উঠলো আমার শৈশব জীবনেরর বৃষ্টিস্নাত গ্রাম খানি।

ঢাকার খুব কাছে হলেও সুযোগ সুবিধার দিক থেকে সবচে পিছিয়ে থাকা জনপদের সন্তান আমি। যদিও এখন প্রেক্ষাপট অনেক ভিন্ন।
ঢাকা চটগ্রাম মহাসড়ক থেকে ৭০০ মিটার দূরে হলেও  উন্নয়নের মহাসড়ক থেকে ৭০০ মাইল দুরেই মনে হয় আমার গ্রাম।।
সেসময় গ্রামে চলাচলের কোন কোন রাস্তা ছিলনা। বিশেষত বর্ষা মৌসুমে নৌকা ছাড়া চলাচলের কোন উপায় থাকতোনা। যেন মহসড়কের পাশে বিচ্ছিন্ন ছোটএকটা দ্বীপ।

মনেপড়ে, এরকম বহু বর্ষাময় দিনে পানি সাতরে স্কুলে গেছি। বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে নৌকার লগি ঠেলছি।

যে বছর আমাদের নৌকা ছিলনা,  কত কষ্টের  যাতায়াত ছিল। পাশের গ্রামের যে পর্যন্ত কাঁচারাস্তা ছিল হেটে এসে পড়নের হাফপেন্ট খুলে বই সমতে পলিথিনে ঢুকিয়ে  একহাত উচু করে দে সাতার।
বর্ষাকালে রাতের বেলায় ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে নৌকার জন্য বাপ- চাচাদের ডাকাডাকি শুনতাম।। অথবা কাউকে পার করে নিয়ে আসতে হবে এই তাগিদে বাড়ি থেকে সড়কের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। কখনো ডাকে সাড়া না পেলে তারাও পানি সাতরেই বাড়ি আসতেন। 

আর এখন কত পরিবর্তন গ্রামের উপর দিয়ে রাস্তা গেছে। যদিও কাঁচা। তবুও এখন রাতে বাড়ি গেলে ডাকাডাকিই করতে হয়।। এখন বাড়িতে একটা কলিং বেল লাগানোর প্রয়োজন অনুভব করছি সিরিয়াসলি। যাই হোক গ্রামের ছেলে মেয়েদের সাতার আর নৌকা চালাতে জানা অবধারিত। গ্রামের চলাচলে কেন্দ্রে বাড়ি হওয়াতে একটা উটকো ঝামেলাও ছিল, যখন তখন যে কেউ এসে অনুরোধ করতো একটু পাড় করে দেওয়ার। ইচ্ছে না হলেও মানবিক কারনে লিভ দিতে হতো।

এখন ভাবলেই মনটা কেমন চনমনে হয়ে উঠে, আধুনিক সুযোগ সুবিধা না থাকলেও আমাদের গ্রামটা কত সুন্দর ছিল। 
বাড়ির দুই পাশে তাকালে থই থই পানি। বিশেষ করে সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখতাম বাড়ির দুই পাশের বিলে হাজার হাজার শাপলা ফুল ফুটে পুরো বিল সাদা হয়ে আছে।  এ এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। কখনো কখনো সেই শাপলা তুলে নৌকা বোঝাই করে ফেলতাম। পরে সেই শাপলা দিয়ে পুটি মাছের ঝোলও ছিল মুখরোচক।
এরকম বহু বৃষ্টি দিনে ধান ক্ষেত মারিয়ে শালুক তোলার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা পানির নিচে ডুবাইছি। চোখ লাল করে যখন বাড়ি ফিরতাম মায়ের চোখ রাঙ্গানিটাও মিস করি এখন। আমার মাছ ধরার নেশা ছিল মারাত্নক। প্রায় প্রতিবছরই বিলে টুকটাক বরশি পেতে মাছ ধরতাম। যদিও দিন শেষে কিনেই খেতে হতো মাছ। রাতেও টেটা নিয়ে মাছ শিকারে ঘুরছি অনেক।

যাই হোক গত এক যুগে এই গ্রামেই এসেছে অনেক পরিবর্তন। গ্রামের বুক চিরে রাস্তা হয়েছে। গ্রামের কোলঘেষে গড়ে উঠেছে বহু ইন্ডাস্ট্রি ও গার্মেন্ট। কাছেই অর্থনৈতিক অঞ্চলের নামে গড়ে উঠছে বিশাল শিল্প এলাকা। সামনে পেছনের সেই শাপলা বিল এখন ধুধু মরুভুমি। কোম্পানির আকার বাড়াতে গিয়ে উচ্ছেদ হচ্ছে বসতবাড়ি। ছোট হয়ে আসছে গ্রাম। বহু ভীনদেশিদের পদচারনায় হারিয়ে ফেলছি চেনা মুখগুলো। 

আগে বর্ষাকালে রাস্তা না থাকায় ভোগান্তি হতো, আর এখন নিষ্কাশনের অভাবে সেই গ্রামের রাস্তায়ই জমে থাকে পানি। চলার পথে এই ভোগান্তি আরো বড় মবে হয়। 
যেই বিলে ঘন্টার পর ঘন্টা ডুবাইছি, শাপলা শালুক তুলছি, মাছ ধরছি সেই বিল এখন কারখানা বর্জ্যের ডাম্পিং স্পট। পানি ব্যবহার সুদুর কল্পনা।

তবে এই নগরায়নের অর্থনৈতিক তাৎপর্য বেশি। মানুষের পেষা বদল হয়েছে রাতারাতি। পুরুষদের পাশাপাশি মহিলারাও কাজ করছেন সমানে।  এসেছে অর্থনৈতিক সাবলম্বীতা। সৃষ্টি হয়েছে নতুন নতুন উটকো ঝামেলা। উন্নয়নের মহাসড়ক ধরেই গ্রামে ঢুকেছে মাদক, সন্ত্রাস আর নানা কুটনামির কুটচাল।

এতকিছুর পরও চোখের সামবে যখন গ্রামের সেই প্রাকৃতিক  দৃশ্যটা ভেসে উঠে। মনটা হাহাকার করে উঠে। সেই প্রাকৃতিক জলাশয়,  নদী ভরাট করে এখন রিয়েলএস্টেট বনিকেরা রিভারভিউ সিটি, লেকভিও বাড়ি বানানোর মিথ্যা বিজ্ঞাপন দিচ্ছে।

যাইহোক বৃষ্টি শেষ, অনেকক্ষন হলো নস্টালজিয়া।  এবার সত্যি বের হতে হবে।  তবে যাওয়ার আগে আরেকটা কথা বলার প্রয়োজন অনূভব করছি। সেটা হলো, আমরা উন্নয়ন চাই মনে প্রানে। কিন্তু যদি পরিবেশ প্রকৃতি সব কিছু ঠিক রেখেই করা যায়। পরিকল্পিত নগর পরিকল্পনার আলোকে যেন করা হয় উন্নয়ন। সবুজ প্রকৃতি, চলাচলের রাস্তা, সামাজিক প্রতিষ্ঠান, পানি ও বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থাও যেন রাখা হয় পর্যাপ্ত। নগরপতিরা যেন পুজির কাছে তাদের মাথা বিক্রির আগে বিবেক ও অনুভুতিগুলোও বিক্রি করে না দেন।

(আকতার হোসেন, 
১২ আগস্ট, সোনারাগাঁও )

বৃহস্পতিবার, ২৬ জুলাই, ২০১৮

স্বামী হিসেবে সাংবাদিকরা সবচেয়ে পঁচা


আমাদের দেশে একটা কথা বেশ প্রচলিত আছে ‘সাংবাদিকের কপালে গরম বউ আর ঠান্ডা ভাত’ অর্থাৎ পেশাগত কারনেই বেশিরভাগ সময় অনেক রাত করে ঘরে ফিরতে হয় সাংবাদিকতার মতো মহান পেশায় নিয়োজিত কর্মীদের। তাই অত রাতে হাড়ির ভাত ঠান্ডা হয়ে গেলেও বউয়ের মেজাজ ঠিকই গরম থাকে। পেশায় যেহেতু মহান সেহেতু ঠান্ডা ভাত খেয়েই গরম মেজাজ হজম করতে হয় রোজ। 

সম্প্রতি অনলাইনে ভেসে বেড়াচ্ছে একটি স্যাটায়ার ধর্মী আর্টিক্যাল তা হলো ‘প্রেমিক হিসেবে নাকি সাংবাদিকরাই সেরা।’ প্র্যাকটিক্যালি ওই লেখার সাথে আমার কোন দ্বিমত নেই। তবে এর পরের স্টেপে যত গণ্ডগোল। 

লেখকের নিজস্ব গবেষণা ও জরিপ বলছে, প্রেমিক হিসেবে সেরা হলেও স্বামী হিসেবে কিন্তু সাংবাদিকরা খুবই পঁচা। সাংবাদিক ও তাদের স্ত্রীদের উপর চালানো এক জরিপে দেখা গেছে ৯০ শতাংশেরই এই পেশার প্রতি রয়েছে চরম অসন্তোষ।

বিশেষ করে পেশাগত অনিশ্চয়তা, অর্থনৈতিক টানাপোরেন, হাউজ পলিটিক্স এবং হয়রানির কারনেই বেশিরভাগ সাংবাদিক পেশার প্রতি বিরক্ত। তবে নানা সংকটেও পেশার প্রতি গভীর ভালোবাসা এবং দায়বোধ থেকেই এই পেশা ছেড়ে অন্যকোথাও যেতে চাননা ৮০ শতাংশ সাংবাদিক। বাকী ২০ ভাগ মনে করেন পেশা পরিবর্তনের মোক্ষম সুযোগ না থাকা, সরকারি চাকরির বষয় শেষ হওয়ার কারনে এ পেশায় রয়ে গেছেন তারা।

অন্য এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১০ কারনে সাংবাদিকদের প্রতি ক্ষুদ্ধ তাদের স্ত্রীরা।  

১. সাংবাদিকদের স্ত্রীদের প্রধাণতম অভিযোগটি হলো সময় না দেয়া। প্রায় ৭০ শতাংশ সাংবাদিকের স্ত্রীরাই মনে করেন তাদের স্বামীরা পর্যাপ্ত সময় দেন না পরিবারে। পেশাগত কাজ নিয়েই দিনের বেশিরভাগ সময় ব্যস্ত থাকেন তারা। বিশেষত চাকরীজীবি স্ত্রীরা সাংবাদিক স্বামীকে কাছে পান খুবই কম।

২. অর্থনৈতিক টানাপোরেন। সামান্য যে বেতন পান তা দিয়ে সংসারের নিয়মিত খরচ মেটাতেই হিমসিম খেতে হয় সাংবাদিকদের। তাছাড়া অনিয়মিত বেতন এবং পেশাগত অনিশ্চয়তা নিয়েও দুশ্চিন্তায় থাকেন স্ত্রীরা। 
৩. ছুটির দিনেও কোথাও বেড়াতে যান না।অন্যপেশার লোকজন বিশেষ দিবসগুলোতে ছুটি পেলেও সাংবাদিকরা কোন ছুটি পাননা। এছাড়া সাধারন সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও নানা কারনে ব্যস্ত থাকেন তারা। পারিবারিক অনুষ্ঠান আয়োজনেও সহসা অংশ নিতে পারেননা এই বিশেষ পেশায় নিয়োজিতরা। 

৪. পেশাগত দায়বোধের দোহাই দিয়ে প্রায়ই নানা উটকো ঝামেলায় জড়িয়ে থাকেন সাংবাদিকরা। এ নিয়ে প্রায়ই উদ্বিগ্ন থাকতে হয় স্ত্রীদের ।
৫. পেশাগত কারনে সাংবাদিকরা জীবন্ত এনসাইক্লোপিডিয়া। তাবৎ দুনিয়ার সমস্ত খবর তাদের ব্রেনের আগায় থাকলেও সংসারের খুটিনাটি ছোট বিষয়গুলোও  তাদের মাথায় থাকেনা। 

৬. বেশিরভাগ সাংবাদিকদের স্ত্রীরাই মনে করেন, স্ত্রীদের প্রয়োজন মাথায় না থাকলেও অন্যের সমস্যা ঠিকই নিজের মাথায় বয়ে বেড়ান সাংবাদিকরা। 
৭. অনেকেরই অভিযোগ, সাংবাদিকরা নাকি একটু বেশিই প্রশ্ন করেন। যেটা সবার পছন্দ নয়। 

৮. কারো কারো অভিযোগ সাংবাদিকদের নাকি আত্নসম্মান বোধ কম। কারন ভালো মন্দ, যে কোন শ্রেনী পেশা বা চরিত্রের লোকদের সাথেই তাদের সমান সম্পর্ক। 
৯. অনেকে মনে করেন, এই পেশার লোকজন জীবন যাপনে যথেষ্ট ডিসিপ্লিন মেনে চলেন না। খাওয়া-দাওয়াসহ প্রাত্যাহিক কাজে চরম অনিয়ম করেন।ফলে শেষ জীবনে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয় পরিবারের অন্য সদস্যদের। 

১০.  অনেকেই মনে করেন, অযাচিত মন্তব্য বেশি করেন সাংবাদিকরা। জীবন জগতের সব কিছু নিয়েই তারা বিশেষজ্ঞ জ্ঞান জাহির করেন। যেই সাবজেক্ট নিজের সেটা নিয়ে যেমন কথা বলেন, তেমনি যে বিষয় আওতার বাইরে সে বিষয়েও পাণ্ডিত্য ফলাতে বেশ পটু সাংবাদিকরা। 

এসব কারনেই অনেক স্ত্রী’রাই মনে করেন প্রেমিক বা বন্ধু হিসেবে সাংবাদিকরা আস্থাভাজন হলেও স্বামী হিসেবে একদম বিপরীত। 

বি.দ্র: এই লেখাটি লেখকের অযাচিত পাণ্ডিত্য। বাস্তব বিষয়ে লেখকের কোন অভিজ্ঞতাই নেই। সবই গবেষণালব্ধ জ্ঞান। তাই লেখা থেকে কারও দু:খিত হওয়ার  বা কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর যুক্তিকতা নেই। 

বুধবার, ২৫ জুলাই, ২০১৮

‘মানসিক প্রশান্তির জন্য সাইকেল’


 অফিস শেষে ক্লান্ত শরীরে বের হলাম। গন্তব্য শাহবাগ। কিন্তু রাস্তায় বেরুতেই যেন চোখ কপালে..পুরা রাস্তায় গাড়িতে ঠাসা। তীব্র যানজটে গন্তব্যে যাওয়ার কোন গাড়ি নেই। উপায় না দেখে আড়াইশো টাকার বিনিময়ে রাইড শেয়ারিং অ্যাপের দ্বারস্ত হওয়া গেলো কিন্তু তীব্র যানজটে  সেই সার্ভিসেও ভরসা রাখা বৃথা। 

আবার কখনো কখনো কোথাও যাওয়ার জন্য তাড়াও থাকে। কিন্তু ঢাকার ট্রাফিকের কাছে হাসফাঁস করা ছাড়া যেন আর কিছুই করার নেই আমাদের। সকালেও একই রকম অস্বস্তি নিয়ে বাসা থেকে বের হতে হয়। হাতে যত সময় নিয়েই বের হোন না কেন সঠিক সময়ে অফিস পৌঁছার কোন গ্যারান্টি নাই। 

যাওয়া এবং আসার পথে আমাদের এই দুশ্চিন্তা আর ভোগান্তি থেকে রেহাই পেতে একটি বিকল্প পদ্ধতি মাথায় আসলো। সেটা হলো একটা বাই সাইকেল। তাছাড়া ইদানিং স্বাস্থ্যটার দিকেও মনে হচ্ছে একটু যত্ন নেয়া দরকার। কিন্তু অলসতা আর উদ্যোগের অভাবে ব্যায়াম করা হয়না। সবকিছু বিবেচনায় মাত্র ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে বন্ধুর ১৪ হাজার টাকায় কেনা সাইকেইলটাই কিনে ফেললাম। কিন্তু কেনাত হলো বাট চালাবো কিভাবে ? কারন ঢাকার রাস্তায় রিক্সা, গাড়ি ও মানুষের যে চাপ তাতে ফুটপাতে হাটাই দুস্কর। আর সড়কে বেপরোয়া গাড়ি চলাচলে বুক দুরু দুরু করে। কিন্তু কিইবা করার প্রতিদিনের ভোগান্তি বিরম্বনা থেকে মুক্তি পেতে অনেকটা রিস্ক নিয়েই শুরু ঢাকার রাস্তায় সাইক্লিং। তবে দুচারদিন চলার পর মনের ভয়টা যেন আস্তে আস্তে কমে গেলো। 


কমার আরেকটা বড় কারন হলো চলার স্বাধীনতা। ১১ বছরের ঢাকা জীবনে হঠাতই যেন ব্যাপক স্বাধীনতা পেয়ে গেলাম। অর্থাৎ অফিস ছাড়াও যখন যেখানে খুশি যাওয়ার প্ল্যানিং করা যায়। ১ ঘন্টার রাস্তা ১০ মিনিটেই চলে যাওয়া। সবচে মজার বিষয় হলো তীব্র জ্যামে যখন মোটর সাইকেলগুলোও অসহায় তখনও সচল সাইকেলের চাকা। দিন শেষে অফিসের ক্লান্তি নিয়ে বের হলেও বাসায় যেতে যেতে সাইক্লিং সেই ক্লান্তি দূর করে শরীরে আনে চাঙ্গা ভাব। আর টাকার হিসাবটা নাইবা দিলাম। 

ইদানিং রাস্তায় বের হলে প্রচুর মানুষকে দেখা যায় সাইক্লিং করছে। ছাত্র-পেশাজীবী থেকে শুরু করে সব শ্রেনী পেশার মানুষ সাইক্লিং করছে। তবে ইদানিং বাস চাপা সহ বেপরোয়া এক্সিডেন্টের কারনে সাইক্লিং এ শংকামুক্ত থাকা যাচ্ছেনা। ঢাকার রাস্তাগুলো সাইক্লিংএর উপযোগী নয়। সরকারের একটু নজর থাকলে আরো নিরাপদ হবে আমাদের পথ চলা। 
পাঠক আসুন জেনে নেই, সাইক্লিং এর উপর কিছু গবেষণা ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম কী বলে ?
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা কর্মক্ষেত্রে সাইকেল চালিয়ে যাওয়া-আসা করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনা ৩৯ শতাংশ। 
বিবিসি জানায়, ৫ বছর ধরে বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করেছেন যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব গ্লাসগো’র বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, যেসব মানুষ নিয়মিত কর্মক্ষেত্রে সাইকেল চালিয়ে যান তাদের ক্যান্সার ও হৃদরোগের ঝুঁকি অর্ধেক কমে যায়। প্রায় আড়াই লাখ মানুষের ওপর গবেষণা করে গবেষকরা দেখেন, যারা নিয়মিত সাইকেল চালান তাদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৪৫ শতাংশ কমে যায়, আর হৃদরোগের ঝুঁকি কমে  ৪৬ শতাংশ। তাছাড়া, এ অভ্যাসের কারণে মানুষের যেকোনো রোগে আক্রান্ত হয়ে অসময়ে মৃত্যুর ঝুঁকিও কমে ৪১ শতাংশ।

অপরদিকে যারা গাড়িতে যাওয়া-আসা করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনা ৬১ শতাংশ। বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে নিয়মিত সাইকেল চালানো পেশিশক্তি গঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখে এবং ঊরু, কাফ ও নিতম্ব সুগঠিত হয়।


সাইকেল চালালে শরীর প্রচুর ঘামে। এই ঘামের সঙ্গে শরীরের বর্জ্য বের হয়ে ত্বক পরিষ্কার হয়, শরীর ও মন ফুরফুরে থাকে। নিয়মিত সাইকেল চালালে শরীরের বাড়তি ওজন কমে আসে। শরীর সুঠাম থাকে। তাছাড়াও সাইকেল চালানোর কারণে মুক্ত বাতাসে মনে প্রশান্তি আসে। মানসিক দুশ্চিন্তা কমে। অতএব সাইকেল হোক আমাদের প্রিয় পরিবেশবান্ধব বাহন।


সোমবার, ১২ মার্চ, ২০১৮

কুকুর সমাচার: জেনে নিন কুকুরের কিছু অজানা তথ্য

কুকুর নামটি সাথে আমাদের পরিচয় সেই  শৈসব থেকেই। সম্ভবত প্রাণীকুলের মধ্যে  বহুল প্রচারিত নামটিই কুকুর। কুকুরের অসাধারণ স্বভাবগুনে বা মানুষের খারাপ চরিত্রের বহি:প্রকাশে কুকুরের নামটি আলোচনায় চলে এসেছে যুগ যুগ ধরে।
সাধারণত প্রভু ভক্তির কারনে কুকুরের খ্যাতি রয়েছে বিস্তর। অনেকেই শখ করে এই প্রাণীটিকে পুষে থাকেন, কেউ আবার ঘৃণাভরেও দেখেন। সেই আলাপে না যাই, কুকুর প্রেমী বা কুকুর বিদ্বেষী। কুকুর নিয়ে যাদের আগ্রহ আছে তাদের জন্যই আজকের এই লেখা।

প্রায় ১৫ হাজার বছর ধরে মানুষের সাথে কুকুরের ঘণিষ্ঠতা।তবে কারও কারো মতে কুকুর মানুষের এই সম্পর্কের সুত্রপাত ১ লক্ষ বছর আগের। মুলত শিকারের জন্যই মানুষ কুকুরের সহযোগীতা নিতো সেই থেকে এই সম্পর্কের সুত্রপাত।
যাইহোক, আসুন জেনে নিই কুকুর সম্পর্কে আরো কিছু চমকপ্রদ তথ্য।

মহাকাশে ভ্রমণ করা পৃথিবীর প্রথম স্তন্যপায়ী প্রাণীটি কুকুর। নভোযানের পরীক্ষামুলক উৎক্ষেপনে ১৯৫৭ সালে লাইকা নামের একটি রাশিয়ান কুকুরকে  প্রথম মহাকাশে পাঠানো হয়। সম্ভবত সেই মারা গিয়েছিল। যাই হোক সেই সুত্রে বলা যায় মানুষের প্রগতির উৎকর্ষতার পেছনে কুকুরের অবদান রয়েছে।
বিশ্বস্ত প্রাণী বা মানুষের বন্ধু হিসেবে কুকুরের খ্যাতি রয়েছে। যদি কোনো কারণে  মালিকের মন খারাপ থাকে, পোষা কুকুরটি কিন্তু গন্ধ শুকে ঠিকই বুঝতে পারে। এবং মন ভালো করার জন্য কসরৎও চালায়।
কুকুরের ঘ্রাণশক্তি অতুলনীয়। গন্ধের সাহায্যে অপরাধীদেরও শনাক্ত করতে পারে। গবেষকদের দাবি কুকুর গন্ধের সাহায্যে ক্যানসারসহ মানুষের বেশ কিছু রোগের উপস্থিতি বুঝতে পারে।
পুলিশের কাজে কুকুরে সহযোগিতা সর্বজনবিদিত।
মানুষের চেয়ে কুকুরের শ্রবণশক্তি চারগুণ বেশি। তারা বাদুড়ের মতো কিছু বিশেষ শব্দ শুনতে পায়, যা মানুষের পক্ষে শোনা সম্ভব না। এসব কাজে লাগিয়েই তারা সঠিকভাবে দিক নির্ণয় করতে পারে।
তারা অতিবেগুনি রশ্মি দেখতে পায়, একইসঙ্গে পৃথিবীর ম্যাগনেটিক ফিল্ড অনুভব করতে পারে। দিক নির্ণয় করতে কুকুরের কোনো কম্পাস দরকার হয় না।
কুকুররা খুবই বুদ্ধিমান। কুকুর ২৫০ রকমের শব্দ মনে রাখতে পারে, গুনতে পারে ১ থেকে ৫ পর্যন্ত।তারা মানুষের অঙ্গভঙ্গি বুঝতে সক্ষম। গবেষকদের মতে পূর্ণবয়স্ক কুকুরের বুদ্ধিমত্তা একটি দুই বছর বয়সী শিশুর সমান।
কুকরের আছে বিস্তীর্ণ নেটওয়ার্ক, অনেক দূর হতেও এরা তার শিকারের অবস্থান বুঝতে পারে। যদিও কুকুরকে দিনের বেলা চলাচল করতে দেখা যায়, কিন্তু রাতের বেলা এরা অধিক সচল থাকে।
একটি কুকুরের গড় আয়ু ১০ থেকে ১৪ বছর। কুকুররা খুব অল্প বয়সেই পরিণত হয়ে ওঠে। মানুষ সাধারণত ১৫ বছর বয়সে শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে পূর্ণতা লাভ করে। আর একটি কুকুর পূর্ণতা লাভ করে ২ বছরে।
পৃথিবীতে প্রায় ৪০ কোটি কুকুর রয়েছে। কুকুরের প্রজাতির সংখ্যা একশটিরও বেশি।
সভ্যতার ইতিহাসে মানুষের জন্য সবচেয়ে বন্ধুবৎসল এবং কর্মঠ প্রাণী কুকুর। একটা কথা হয়ত অনেকে জানেনইনা- কুকুর কিন্তু ঘুমাতে খুব ভালোবাসে৷কুকুর মানেই ঘেউ ঘেউ করবে। এটাই কুকুরের সহজাত প্রবণতা। কিন্তু এই ডাকেই আবার রাতে ঘুম ভেঙে যায় মনিবের। প্রতিবেশী অভিযোগ করেন সকালে। কিন্তু তথ্য হলো জনপ্রিয় কুকুর মোটেও ঘেউ ঘেউ করে না।

কুকুর কি নিকৃষ্ট প্রানী?
পবিত্র কোরআন ও হাদিসেও কুকুর সম্পর্কে বিস্তর আলোচনা রয়েছে। কোরআনের কিছু কিছু স্থানে| আল্লাহ পাক কিছু মানুষ সর্ম্পকে কুরআনে বলেছেন "এরা হলো চস্তুপদ জানোয়ারের চেয়েও নিকৃষ্ট" আবার কুরআনে বর্ণিত আসহাবে কাহাফের ঘটনাতে দেখা কাফের দাকিয়ানুস বাদশাহর সময় যায় আল্লাহ কিছু প্রিয় বান্দাদের একটি কুকুর সাহায্য করেছিলেন।
আর হাদিসে বলা আছে প্রশিক্ষিত কুকুর দিয়ে শিকার করা জায়েজ।  বিনা অপরাধে কুকুর কে হত্যা অথবা প্রহার করা যানে ।  কারণ রাসুল(সাঃ) বলেছেন সকল প্রাণী/সৃষ্টির প্রতি দয়া প্রদর্শন করতে |

মঙ্গলবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

সহজ প্রশ্নের কঠিন উত্তর...‘নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন’

নিজের সম্পর্কে বলতে বলা হলে আপনি কী বলবেন? চাকরির ইন্টারভিউয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে সহজ প্রশ্ন হওয়া উচিৎ ছিল এটি কিন্তু এই প্রশ্নটিই সবাইকে বিপদে ফেলে দেয় প্রশ্নটি কী?

প্রশ্নটি হলো নিজের সম্পর্কে বলুন এই প্রশ্নটিকে সবাই এত কঠিন মনে করেন কেন সে ব্যাপারে সম্ভবত অনেক সাইকোলজিক্যাল ব্যাখ্যা রয়েছে আসুন দেখি কীভাবে এই প্রশ্ন মোকাবিলা করতে হবে এবং কীভাবে এর উত্তর দিতে হবে

  • ·      প্রশ্নকারী আসলে কী জানতে চাইছে তা আগে বুঝুন

আপনি গাড়ি চালাতে না বাইক চালাতে পছন্দ করেন অথবা আপনার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুর নাম কী এগুলি প্রশ্নকারী কখনোই জানতে চান না আপনি কোন স্কুলে পড়েছেন বা কোথায় কাজ করতেন এগুলিও তিনি জানতে চান না এই প্রশ্নের উত্তর আপনার বায়োডাটা থেকেই তিনি পাবেন তিনি জানতে চান আপনি আসলে নিজেকে কীভাবে দেখেন আপনি বেশি সাহসী? অনিরাপত্তায় ভোগেন? নাকি আপনি সবকিছুর ব্যাপারেই আত্মবিশ্বাসী

শুধু মনে রাখবেন প্রশ্নকারী যা জানতে চান তা হলো, আপনার নিজের সামর্থ্যের ব্যাপারে আপনার বাস্তবসম্মত দৃষ্টিভঙ্গি আছে কিনা এবং সেটাকে আপনি অহংকার না বানিয়ে আত্মবিশ্বাসে পরিণত করতে পারেন কিনা


  • প্রশ্নটির উত্তরকে তিনভাগে ভাগ করুন
বর্তমানে আপনি কে, কীভাবে আপনি এখনকার আপনি হয়েছেন এবং ভবিষ্যতে কী হতে চানপ্রশ্নটির উত্তরকে এই তিন ভাগে ভাগ করুন

  • বর্তমানে আপনি কে ?
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো আপনি এখন কে কারণ বর্তমানের এই আপনি’-কেই চাকরিদাতাদের নিয়োগের জন্য বিবেচনা করতে হবে প্রথমে নিজের সাথে এই কাজের সম্পর্ক স্থাপন দিয়ে শুরু করুন যেমনআমি একজন আর্কিটেক্ট, আমি একজন সফটওয়্যার ডেভেলপার অথবা আমি একজন মার্কেটিং ম্যানেজার এই ধরনের পরিচয় আপনার নিয়োগদাতাদের আপনাকে বেছে নেয়ার জন্য সাইকোলজিক্যালি কাজ করবে

পরবর্তীতে যদি সম্ভব হয়, তাহলে সেই চাকরির নিয়োগ বর্ণনায় যেসব শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যেমন বিবেকবান, বিবেচনাশীল, ক্রিয়েটিভ ইত্যাদি নিজেকে সেইসব আকর্ষণীয় শব্দ দ্বারা উপস্থাপন করুন আর তা যদি সম্ভব না হয়, তাহলে এই চাকরিতে ভবিষ্যতে সফল প্রমাণ করতে পারবেনএই জাতীয় কথা বলার চেষ্টা করুন

  • এখনকার আপনি কীভাবে এই আপনি হয়েছেন
ইন্টারভিউয়ে আপনার রিজুমেতে উল্লেখ করা কথাগুলিই হুবহু বলে যাবেন না আপনার পড়াশোনা বা আগের চাকরি কীভাবে আপনাকে গঠন করেছে সে সম্পর্কে বলুন আপনি কী কী করেছেন তা বলবেন না, বরং আপনি বিভিন্ন কাজ বা ঘটনা থেকে কী অভিজ্ঞতা গ্রহণ করেছেন তা বলুন

  • ভবিষ্যতে আপনি কী হতে চান
ভবিষ্যতের কথা বলতে, আপনি আপনার ক্যারিয়ারের লক্ষ্য সম্পর্কে কথা বলুন

  • আপনার বক্তব্য গুছিয়ে শেষ করুন
শেষে নিজেই একটি প্রশ্ন করুন এছাড়া আমার সম্পর্কে অন্য কিছু কি জানতে চান?
এই প্রশ্ন করার মাধ্যমে আপনি প্রশ্নকারীকে আরো কিছু অতিরিক্ত প্রশ্ন করার সুযোগ দিবেন, এবং আপনার নিজের সম্পর্কে যদি কিছু বাদ পরে যায় তাহলে সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে পারবেন

  • নিজেকে তুলে ধরুন ৩ শব্দে
ব্যক্তিগত যোগাযোগের ক্ষেত্রে নিজেকে তুলে ধরুন মাত্র তিন শব্দে অর্থাৎ আপনার তিনটি দিক বা ভালো গুন যেগুলো আপনি জানাতে স্বচ্ছন্দ্য বোধ করেন সেটা আবিস্কার করুন। নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন এই প্রশ্নকে বেশি কঠিন প্রশ্ন হিসেবে দেখা উচিৎ না

আপনার নিজের ব্যাপারে অন্য কেউ নিশ্চয়ই আপনার চেয়ে ভালো জানে না তবে সবাই যেহেতু নিজের সম্পর্কে বলতে পছন্দ করে তাই সাধারণত বেশিরভাগ লোকজনই কী করতে পছন্দ করে, কীভাবে বিনোদন করে, কোথায় কাজ করে, তার বন্ধুবান্ধব কে ইত্যাদি বিষয়ে বলতে থাকে ফলে এই প্রশ্নটি আসলে অস্বস্তি তৈরি করে থাকে

এখন থেকে আগেই এই প্রশ্নের উত্তর নিয়ে ভাবুন, নিজেকে প্রস্তুত করুন এবং এই প্রশ্নের ব্যাপারে দুশ্চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিন

সোমবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৭

আমরা কবে সভ্য হবো?

চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর কুলখানির অনুষ্ঠানে গিয়ে ভিড়ের মধ্যে পদদলিত হয়ে দশ জনের মৃত্যু হয়েছে, হতাহতের শিকার আরো বহু মানুষ। একবিংশ শতাব্দীর এই প্রান্তে এসে যখন দাবি করছি উন্নতির দ্বারপ্রান্তে চলে যাচ্ছি আমরা। এমন সময়ে কুলখানিতে গিয়ে এমন হতাহত নি:সন্দেহে আমাদের পীড়া দেয়। সেই সাথে লজ্জাও ।

আমি বলছিনা যে , চট্টগ্রামে কুলখানি খেতে গিয়ে যারা আহত হয়েছে বা নিহত হয়েছে বা যারা হুড়োহুড়ি করেছে তারা খাবারে অভাবে সেখানে ভীড় করেছে। বরং ২০১৭ সালের বিজয়ের এই মাসে আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে পারি, চালের দাম যতই বাড়ুক নিত্যপন্যের দাম যতই আকাশচুম্বী হোক, দু-মুঠো ভাতের জন্য অন্তত কেউ মারা যায়না।

হয়তো আয়-ব্যায়ের ভারসাম্যহীনতায় আমাদের নাকানি চুবানি খেতে হয়, কিন্তু ভাতের অভাবে কারো মরতে হয়না। মানে আমাদের দ্রব্যমুল্যের পাশাপাশি হয়তো আমাদের সক্ষমতাও বড়েছে। তবে কেন এই হতাহত?

মোটাদাগে বলতে গেলে এটা আমাদের অসভ্যতার একটা নজির।
পরষ্পরের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও সহানুভুতি কিংবা সহনশীলতা যে কমছে তারই একটা জলন্ত নজির হয়ে থাকবে চট্টগ্রামের এই ঘটনা।



সোমবার দুপুরে চট্টগ্রামের জামালখান আসকার দীঘির পাড়ে রীমা কমিউনিটি সেন্টারের এ ঘটনায় আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোন দায় নেই বলে দাবি করেছেন চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার। তিনি এটাকে আইনশৃংখলা জনিত সমস্যা নয় উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, বিষয়টি নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত নয়। এটা মারামারি বা গ্রুপিং বা অন্য কোনো বিষয় না। নিরাপত্তার অভাব হয়নি, অতিরিক্ত মানুষের কারণে এবং ঢোকার সময় হুড়োহুড়ির কারণে অনেকে পড়ে গিয়ে পদদলিত হয়েছেন।



আইনের কথায় তার বক্তব্যে  হয়তো যুক্তি আছে, কিন্তু তার বাহিনীর নামে আইনের সাথে যে শৃংখলা শব্দটি জুড়ে আছে সম্ভবত  তিনি সেটা ভুলে আছেন। তাই একজন তুমুল জনপ্রিয় নেতার কুলখানিতে তার কি পরিমান ভক্ত-অনুরাগীরা এই অনুষ্ঠানে ভীড় করতে পারে, আর সেখানে ঠিক কী কী ধরনের বিশৃংখলা হতে পারে সেটা হয়তো তিনি অনুধাবন করতে পারেননি।

সম্ভবত  চট্টগ্রাম পুলিশের শীর্ষ এই কর্তাব্যাক্তি ভুলে ছিলেন, এখানে ৮০ হাজার লোককে নিমন্ত্রন জানানো হয়েছে। এতো লোকের যেখানে জড়ো হওয়ার কথা রয়েছে সেখানে শুধুমাত্র সন্ত্রাসী হামলাই ফ্যাক্ট না তারচে বেশি প্রয়োজন শৃংখলা জনিত সমস্যা। যাই হোক অদুর ভবিষ্যতে মর্মান্তিক এই ঘটনার তদন্তে সবকিছুরই কারন অনুসন্ধান হবে এটাই আশা।


কিন্তু পাশাপাশি  যে, কথাটি শুধু বলতে চাই, সেটা হলো আমাদের আচরণ। আইন শৃংখলা রক্ষায় না হয় প্রশাসন আরো কঠোর হলো। কিন্তু আমাদের আচরণ বদলাবে কিসে?  কয়েকবারের নির্বাচিত ও তুমুল জনপ্রিয় মেয়রের কুলখানি অনুষ্ঠান আয়োজন নিশ্চয় কোন ঘাটতি রাখেননি তার পরিবার। 
কিন্তু একটু  শৃংখলভাবে সেখানে অংশ নিতে, হুরুহুরি এড়িয়ে খাবার নিতে আমাদের এতো সমস্যা কেন? এই শিক্ষা আমরা কোথায় পাবো?

শুধুমাত্র হুড়োহুড়ি করে একসাথে এতোগুলো মানুষের অকাল মৃত্যু, এতো গুলো পরিবারের বুকফাটা আর্তনাদের দিনে শুধু এই প্রশ্নটিই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে, আর কবে আমরা সভ্য হবো?

শুক্রবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

পশু কোরবানি: যে বিষয়গুলো জানা জরুরি

কোরবানি বলা হয় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য অর্জন ও তার এবাদতের জন্য পশু জবেহ করা। কোরবানির দিনটি হল বছরের শ্রেষ্ঠ দিন। আব্দুল্লাহ ইবনে কুর্ত রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলে কারীম স. বলেছেন : আল্লাহর নিকট দিবস সমূহের মাঝে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ দিন হল কোরবানির দিন, তারপর পরবর্তী তিনদিন।

কোরবানির দিনের করণীয়

ঈদের সালাত আদায় করা,
এর জন্য সুগন্ধি ব্যবহার,
পরিচ্ছন্নতা অর্জন,
সুন্দর পোশাক পরিধান করা।
তাকবীর পাঠ করা।
কোরবানির পশু জবেহ করা ও তার গোশত আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধব ও দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা।
এ সকল কাজের মাধ্যমে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য অর্জন ও সন্তুষ্টি অন্বেষণের চেষ্টা করা।
এ দিনটাকে শুধু খেলা-ধুলা, বিনোদন ও পাপাচারের দিনে পরিণত করা কোন ভাবেই ঠিক নয়।

এবাদতের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল আল্লাহর উদ্দেশ্যে পশু জবেহ করা। এ কাজটি তিনি শুধু তার উদ্দেশ্যে করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। বলেছেন :— ‘বল, আমার সালাত, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও আমার মরণ জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে। তার কোন শরিক নাই এবং আমি এর জন্য আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই প্রথম মুসলিম।’


কোরবানি ওয়াজিব: 

প্রাপ্তবয়ষ্ক, সুস্থমস্তিষ্কসম্পন্ন প্রত্যেক মুসলমান নর-নারী মুকীম ব্যক্তি, যে ১০ যিলহজ্ব সুবহে সাদিক থেকে ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজন অতিরিক্ত সাড়ে সাত (৭.৫) ভরি স্বর্ণ অথবা সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি রুপা বা সমপরিমান অর্থের মালিক হবেন তার উপর কোরবানি ওয়াজিব।
স্বর্ণ-রুপার অলঙ্কার, নগদ অর্থ, যে জমি বাৎসরিক খোরাকীর জন্য প্রয়োজন হয় না এবং প্রয়োজন অতিরিক্ত আসবাবপত্র-এ সবই কোরবানির নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য। [বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬]

কোরবানির পশু 

রাসুল (সা.)উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা ছাড়া অন্য কোন পশু কোরবানি করেননি ও কোরবানি করতে বলেননি। তাই কোরবানি শুধু এগুলো দিয়েই করতে হবে। উট পাঁচ বছরের হতে হবে। গরু বা মহিষ দু বছরের হতে হবে। ছাগল, ভেড়া, দুম্বা হতে হবে এক বছর বয়সের। কোরবানির পশু যাবতীয় দোষ-ত্রুটি মুক্ত হতে হবে। যে পশুটি কোরবানি করা হবে তার উপর কোরবানি দাতার পূর্ণ মালিকানা সত্ত্ব থাকতে হবে। বন্ধকি পশু, কর্জ করা পশু বা পথে পাওয়া পশু দ্বারা কোরবানি আদায় হবে না। কুরবানীর পশু হৃষ্টপুষ্ট হওয়া উত্তম। কোরবানি দাতা নিজের কোরবানির পশু নিজেই জবেহ করা উত্তম, যদি তিনি ভালভাবে জবেহ করতে পারেন।

মৃত ব্যক্তির পক্ষে কোরবানি

কোরবানি মূলত জীবিত ব্যক্তিদের জন্য। তবে মৃত ব্যক্তিদের জন্য কোরবানি করা জায়েজ ও একটি সওয়াবের কাজ। কোরবানি একটি সদকা। আর মৃত ব্যক্তির নামে যেমন সদকা করা যায় তেমনি তার নামে কোরবানিও দেয়া যায়। মৃত ব্যক্তি যদি ওসিয়ত না করে থাকে তবে সেটি নফল কুরবানী হিসেবে গণ্য হবে। কুরবানীর স্বাভাবিক গোশতের মতো তা নিজেরাও খেতে পারবে এবং আত্মীয়-স্বজনকেও দিতে পারবে। আর যদি মৃত ব্যক্তি কুরবানীর ওসিয়ত করে গিয়ে থাকে তবে এর গোশত নিজেরা খেতে পারবে না। গরীব-মিসকীনদের মাঝে সদকা করে দিতে হবে। -মুসনাদে আহমদ ১/১০৭, হাদীস ৮৪৫,


কোরবানির গোশত কারা খেতে পারবেন

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘অত:পর তোমরা উহা হতে আহার কর এবং দু:স্থ, অভাবগ্রস্থকে আহার করাও।’ রাসূলুল্লাহ স. কোরবানির গোশত সম্পর্কে বলেছেন :—‘তোমরা নিজেরা খাও ও অন্যকে খাওয়াও এবং সংরক্ষণ কর।’

কতটুকু নিজেরা খাবে, কতটুকু দান করবে আর কতটুকু উপহার হিসেবে প্রদান করবে এর পরিমাণ সম্পর্কে কোরআনের আয়াত ও হাদিসে কিছু বলা হয়নি। তাই উলামায়ে কেরাম বলেছেন, কুরবানীর গোশতের এক তৃতীয়াংশ গরীব-মিসকীনকে এবং এক তৃতীয়াংশ আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীকে দেওয়া উত্তম। অবশ্য পুরো গোশত যদি নিজে রেখে দেয় তাতেও কোনো অসুবিধা নেই। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪, আলমগীরী ৫/৩০০ মোস্তাহাব।

কোরবানির গোশত যতদিন ইচ্ছা ততদিন সংরক্ষণ করে খাওয়া যাবে।


কুরবানীর পশুর চামড়া বিক্রি 
কোরবানির মাধ্যমে মুসলমানদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে মেহমানদারি হয়। তাই এর কোনো অংশ বিক্রি করা জায়েজ নয়। কোরবানির পশুর গোশত,চামড়া ও হাড্ডি কোরবানিরই অংশ। এ বিষয়ে শরিয়তের বিধান হলো—এক. কোরবানির পশুর কোনো অংশ, যেমন—গোশত, চর্বি, হাড্ডি ইত্যাদি বিক্রি করা জায়েজ নয়। বিক্রি করলে পূর্ণ মূল্য সদকা করে দিতে হবে। (বাদায়েউস সানায়ে : ৫/৮১)
তবে কুরবানীর চামড়া কুরবানীদাতা নিজেও ব্যবহার করতে পারবে। তবে কেউ যদি নিজে ব্যবহার না করে বিক্রি করে তবে বিক্রিলব্ধ মূল্য পুরোটা সদকা করা জরুরি। চামড়া বিক্রি করলে মূল্য সদকা করে দেওয়ার নিয়তে বিক্রি করবে। সদকার নিয়ত না করে নিজের খরচের নিয়ত করা নাজায়েয ও গুনাহ। -আদ্দুররুল মুখতার, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০১

চামড়া বিক্রির অর্থ কোথায় দেয়া যাবে ?


নিয়ত যা-ই হোক বিক্রিলব্ধ অর্থ পুরোটাই সদকা করে দেওয়া জরুরি। বিক্রয়লব্ধ অর্থ পুরোটাই জাকাতের উপযুক্ত ব্যক্তিকে সদকা করে দিতে হবে।  এই অর্থ মাদ্রাসা-মসজিদ ইত্যাদি নির্মাণে খরচ করা জায়েজ নয়। তবে তা লিল্লাহ বোর্ডিংয়ের জন্য দেওয়া যাবে। (ফাতাওয়া কাজিখান : ৩/৩৫৪)। কোরবানির চামড়া গরিবের হক। গরিব লোকদের না দিয়ে কোরবানির চামড়ার মূল্য দিয়ে ইমাম, খতিব, মুয়াজ্জিন, শিক্ষক ও কর্মচারীর বেতন দেওয়া নাজায়েজ। (শামি : ২/৩৩৯)

কোরবানির পশুর কোনো অংশ বিনিময় বা পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া জায়েয নয়। আলী রা. বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোরবানির চামড়া ছাড়ানোর পারিশ্রমিক হিসেবেও চামড়ার কোনো অংশ প্রদান করতে নিষেধ করেছেন। (-সহীহ বুখারী, হাদীস:১৭১৭) ।
শ্রমের বিনিময়ে টাকা দিয়ে দিবে। চুক্তির সময় গোশত বা ভুড়ি দেওয়ার শর্ত না থাকলে ন্যায্য পারিশ্রমিক দেওয়ার পর কোরবানির পশুর ভুড়ি বা গোশত হাদিয়া হিসেবে দেওয়া যাবে। এতে কোনো অসুবিধা নেই। [সহীহ মুসলিম ৩/৩৫০; সহীহ বুখারী (ফাতহুল বারী) ৩/৬৫০;

কৃতজ্ঞতা: ইন্টারনেট

শনিবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৭

কেমন আছে ইসলামিক ইরানের ইহুদীরা ?

পৃথিবীর প্রাচীন কাল থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত বৃহৎ সভ্যতাগুলোর মধ্যে অন্যতম ইরান। দেশটির জনগণ জাতিগত ও ভাষাগতভাবে বিচিত্র হলেও এরা প্রায় সবাই মুসলিম। শত শত বছর ধরে এ অঞ্চলটি মুসলিম শিয়া মতাবলম্বীদের কেন্দ্র। ইরানের প্রায় ৯৩% মুসলিম শিয়া ধর্মাবলম্বী এবং এদের প্রায় সবাই জাফরি শিয়া মতবাদে বিশ্বাসী। তবে ইরানের বেশিরভাগ মানুষ ইসলাম ধর্মের অনুসারী হলেও সেখানে খ্রিস্টান, ইহুদীসহ অন্যান্য ধর্মের মানুষের বসবাসও রয়েছে স্বল্প পরিমানে। 

 ইরানের প্রায় পৌনে ৮ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ২০  হাজারেরও বেশি ইহুদী জনগোষ্ঠী রয়েছে। 

১৯৭৯ সালের বিপ্লবের পর থেকে ইরানে ইসলামি প্রজাতন্ত্র চালু রয়েছে। সেই সুত্রে স্বাভাবিকভাবেই সাধারনের মনে প্রশ্ন সেখানে বসবাসরত অন্য ধর্মাবলম্বীরা কেমন আছে? বিশেষ করে ইহুদী জনগোষ্ঠী। তার কারন মধ্যপ্রাচ্য সংকট নিয়ে অভিযোগের তীর সব সময় ইহুদীবাদি ইসরাইলের দিকেই। তাছাড়া বিশ্বে শান্তি, স্বস্তি ও মানবতার জন্য ইসরাঈলকে বিসফোড়া মনে করা হয়। তাই এসবের বিরুদ্ধে সোচ্চার  ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরানে বসবাসরত ইহুদীরা কেমন আছে? তারই চিত্র  তুলে ধরেছেন জার্মান ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম ডয়চে ভেলের  সাংবাদিক থেরেসা ট্রপার। 

প্রতিবেদনের ভাষ্যমতে, ইসরাঈলের পরে বিশ্বের অন্যান্য যে কোন দেশের তুলনায় ভালো আছেন ইরানের ইহুদীরা। সেখানে ইহুদীরা যেমন স্বাধীনভাবে ধর্ম পালন করতে পারেন, ঠিক তেমনি ব্যাবসা বাণিজ্য, শিক্ষা সংস্কৃতি এমনকি রাজনৈতিক কর্মকান্ডেও যুক্ত হতে পারে। ইরান ইসলামিক প্রজাতন্ত্র হলেও দেশটির সংসদে রয়েছে সংখ্যালঘু ইহুদীদের প্রতিনিধি সংসদ সদস্যও। 
সাক্ষাতকারে তেহরানের ইহুদি সম্প্রদায়ের পরিচালক ও সংসদ সদস্য সিয়ামাক মোরসাদেঘ বলেন, মানুষ যা ভাবে তার চেয়ে অনেক ভালো আছেন ইরানের ইহুদীরা। সেখানে সংখ্যালঘু হিসেবে আমাদের স্বীকৃতি আছে৷ তাই আমরা স্বাধীনভাবে ধর্ম পালন করতে পারি৷ তেহরানে ২০টির বেশি সিনাগগ বা ধর্মীয় উপসনালয় আছে।  
সাধারণভাবে বললে, ইরানে ইহুদিদের অবস্থা সমসময় ইউরোপের চেয়ে ভালো। 


সিয়ামাক মোরসাদেঘ বলেন, এখানে ইহুদি আর মুসলমানরা একে অপরকে সম্মান করে। মুসলমানদের সঙ্গে আমাদের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আছে। তিনি বলেন, যে হাসপাতালের ডাক্তার আমি সেটি ইহুদি পরিচালিত হলেও সেখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারী ও রোগীদের ৯৫ শতাংশই মুসলমান৷
তবে কিছু পার্থক্য রয়েছে, যেমন এই দুই ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে বিয়ে হওয়ার হার খুবই কম। ইরানে আইন অনুযায়ী ইহুদিরা  চাইলে বিচারক হতে পারেনা, সেনাবাহিনীতে কর্মকর্তা পর্যায়ে চাকরি করার সুযোগ নেই, তবে সৈনিক পর্যায়ে চাকরি করতে পারে। 
ইরানের আইনে ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো ধরণের যোগাযোগ রাখা নিষিদ্ধ।
ইহুদী হলেও ইসরাঈলের আগ্রাসী নীতির সমালোক অনেক ইহুদী। সিয়ামাক বলেন, ইসরায়েলে যাওয়ার কোন ইচ্ছা আমার নেই। কারণ, আমি মনে করি, ইহুদিরা অন্যদের চেয়ে আলাদা, এই চিন্তাধারা থেকে ইহুদিদের শুধু বিশ্বের একটা জায়গায় বাস করতে হবে – এমন ভাবনার সঙ্গে আমি একমত নই। কারণ আমি মনে করি আমরা সবাই সমান৷
ধর্মীয় শিক্ষা বলে, আমরা যে দেশে বাস করি সেই দেশের আইন মেনে চলতে হবে। বিশ্বে অনেক ইহুদি আছেন যাঁরা ইসরায়েলি সরকার ও সেনাবাহিনীর আচরণের কঠোর সমালোচক৷ ইহুদি হিসেবে আমাদের ধর্মগ্রন্থ ‘তাওরাত' ও ‘তালমুদ' মেনে চলতে হয়৷ অন্য দেশ দখল করা ও নিরীহ মানুষ হত্যা করা মোজেসের (ইহুদিদের নবি) শিক্ষা নয়।  ইহুদি হিসেবে আমরা ইসরায়েলের আচরণ সমর্থন করতে পারি না, এটা ধর্মীয় নয়, রাজনৈতির ‘মুভমেন্ট'।  ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণহত্যার শিকার হওয়ায়, ইহুদিদের উচিত ফিলিস্তিনিদের প্রতি আরও সহানুভূতিশীল হওয়া।