অসহায়, দুস্থ মানুষের সহায়তাই তার ধ্যান-জ্ঞান।সহিংসতার বিপরীতে তিনি
অসহায়ের ত্রানকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হন।তিনি পাকিস্তানের আবদুল সাত্তার ইদি।অসম্ভব
মানবসেবার কারনে ৮৪ বছর বয়সী এই ব্যক্তি তার দেশে ফাদার তেরেসা নামেই বেশি পরিচিত।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ধর্ম সহিংসতার শিক্ষা দেয় না,এটা ধর্মের অপব্যবহার।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী যখন উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে তালেবানের বিরুদ্ধে
অভিযান শুরু করে, তখন প্রাণ বাঁচাতে দেশটির পর্বতময় ওই অঞ্চল থেকে হাজার হাজার লোক
পালাতে থাকে। ঠিক তখনই আবদুল সাত্তার ইদি সেই প্রদেশের রাজধানী পেশোয়ারের দিকে ছুটলেন।
তিনি ঘোষণা দিলেন, আমি এখানে (পেশোয়ারে) এসেছি মানবসেবার মিশনে। যারা
এখনো ভালো আছে তাদের জন্য খাবার, গরম পোশাক, কম্বল ইত্যাদির সংস্থান করা আর যারা মারা
গেছে বা আহত হয়েছে,তাদের জন্য অ্যাম্বুলেন্স ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা আমার কাজ। তিনি বলেন, যুদ্ধে নির্দোষ ব্যক্তিরাই দুর্দশার শিকার হয়, আর হামলাকারী
ও মুনাফাখোররা হয় লাভবান।
১৯৫০ সালে বন্দর নগরী করাচিতে একটি ডিসপেনসারি প্রতিষ্ঠার দিন থেকে তিনি
দরিদ্র, দুস্থ, অনাথদের বিরামহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি আর তার স্ত্রী বিলকিস মিলে
ইদি ফাউন্ডেশন পরিচালনা করে আসছেন। এটিই এখন পাকিস্তানের মানবিক কার্যক্রম ও দাতব্য
নেটওয়ার্কের বৃহত্তম প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি বেশ কয়েকটি হাসপাতাল, ব্লাড ব্যাংক পরিচালনা
করছে। পরিত্যক্ত শিশুদের লালনপালন, মাদকাসক্তদের চিকিৎসা,দুস্থ মহিলাদের সহায়তা, মানসিক
ও শারীরিকভাবে অক্ষম লোকদের পরিচর্যা,প্রবীণদের আশ্রয়দানসহ নানা ধরনের কাজ করছেন ইদি
দম্পতি।
আবদুল সাত্তার ইদি জানান,আমি যখন দারিদ্র্য আর অসহায়ত্ব দেখি, তখন আমি
অন্তর থেকে সাহায্য করার অনুপ্রেরণা পাই। আমি পাকিস্তানিদের মধ্যে মানবসেবা সম্পর্কে
জনসচেতনতা সৃষ্টি করেছি। বিনিময়ে, তারা আমাকে শিশুর মতো ভালোবাসে।
কে এই ফাদার তেরেসা:
আবদুল সাত্তার ইদি’র জন্ম বর্তমান ভারতের
গুজরাট রাজ্যে। ১৯৪৭ সালে তিনি তার পরিবারের সাথে নতুন রাষ্ট্র পাকিস্তানে পাড়ি জমান।
যোগ্যতা দিয়ে তিনি অতি দ্রুত টেক্সটাইল এজেন্ট হিসেবে সফলতা লাভ করেন। কিন্তু মানবসেবার
জন্য সেটা ছেড়ে দেন।
ধর্মীয় সহিংসতায় তবিত পাকিস্তানে তার প্রতিষ্ঠান নির্বিশেষে সবাইকে সহায়তা
করে। নিষ্ঠাবান মুসলমান ইদি জানান, আমার সাথে
সহযোগিতাকারী ২০ বছর বয়সী এক খ্রিষ্টান তরুণীকে যখন জিজ্ঞেস করা হলো, তোমার ধর্ম কী?
সে জবাব দিলো মানবসেবা। মানবসেবাই সর্বোত্তম ধর্ম। ইসলাম আমাদের শিক্ষা
দেয়, সব কাজের ভিত্তি হওয়া উচিত মানবসেবা।আমি একজন ফকির। আমি কিছুই চাই না। আমি শুধু
আমার কাজ করে যেতে চাই। আল্লাহ আমাদের সহায়তা করবেন।
চলতি বছরের ৮ জুলাই হাপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান এই মানবতাবাদী। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।