ছবির মতোই সুন্দর ছিল আমার গ্রামটা...

বর্ষা মৌসুমে নৌকা ছাড়া চলাচলের কোন উপায় থাকতোনা। যেন মহসড়কের পাশে বিচ্ছিন্ন ছোটএকটা দ্বীপ।

সমস্যা যত বড়ই হোক, আশা মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে

আমরা অবশ্যই পারব৷ সমস্যা যত বড়ই হোক না কেন, আশা মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে, নতুন কিছু উদ্ভাবন করতে অনুপ্রেরণা জোগায়৷ কিন্তু সমস্যাকে নিজের চোখে না দেখলে শুধু আশা দিয়ে সমস্যা সমাধান করা যায় না৷

ঘুরে আসুন নারায়ণগঞ্জের সব দর্শনীয় স্থানে

অপরূপ সৌন্দর্যে ভরপুর আমাদের বাংলাদেশের প্রায় প্রত্যেকটি জেলায়ই রয়েছে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান। যা আমাদের দেশকে করেছে আরো সমৃদ্ধ। শত বছর ধরে লাখো পর্যটককে করেছে আকৃষ্ট।

মানবসেবাই সর্বোত্তম ধর্ম: ফাদার তেরেসা

অসহায়, দুস্থ মানুষের সহায়তাই তার ধ্যান-জ্ঞান।সহিংসতার বিপরীতে তিনি অসহায়ের ত্রানকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হন।তিনি পাকিস্তানের আবদুল সাত্তার ইদি।অসম্ভব মানবসেবার কারনে ৮৪ বছর বয়সী এই ব্যক্তি তার দেশে ফাদার তেরেসা নামেই বেশি পরিচিত।

‘মানসিক প্রশান্তির জন্য সাইকেল’

যাত্রা পথে পরিবহন নিয়ে দুশ্চিন্তা আর ভোগান্তি থেকে রেহাই পেতে বিকল্প হলো একটা বাই সাইকেল। তাছাড়া ইদানিং স্বাস্থ্যটার দিকেও মনে হচ্ছে একটু যত্ন নেয়া দরকার।

শনিবার, ২৭ মে, ২০১৭

সংযমের মাসেও কি সংযত হবেননা ব্যবসায়ীরা

খুচরা বাজারে পন্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন এক ব্যাবসায়ী
শুরু হলো রহমত মাগফেরাত আর নাজাতের মাস মাহে রমজান। গতকাল তারাবি নামাজের মাধ্যমে মুসলমানরা সিয়াম সাধনা শুরু করেছেন। দুনিয়ার সমস্ত পাপাচার আর খারাপ কাজ থেকে বিরত থেকে একমাত্র মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের রহমত, ক্ষমা ও সন্তুষ্টি লাভই মুমিনের একমাত্র টার্গেট। আর তাই এই মাসের ব্যাপারে ইসলামেরর নির্দেশনা হলো দুনিয়াবি কাজ কর্ম বা ব্যস্ততা কমিয়ে দিয়ে বেশি বেশি ইবাদাতে মশগুল থাকা। সারা বছরের উপার্জনের একটা অংশ রেখে দিয়ে রমজান মাসে খরচ করার জন্য এবং এই মাসে কম মুনাফা করার ব্যাপারে নির্দেশনা আছে। কিন্তু আমাদের সমাজের বাস্তবিক চিত্র যেন আল্লাহর সেই নির্দেশনার বিপরীত।

ব্যাবসায়িরা সারা বছর পন্যমজুদ করে বসে থাকেন এই রমজানের অপেক্ষায়। আর রমজান এলেই পন্যমূল্যের পাগলা ঘোড়ার লাগাম ছেড়ে দেন। এমন ভাবেই ছেড়ে দেন যেন একে থামাবার বা নিয়ন্ত্রন করার শক্তি কারো নেই।

সারা পৃথিবীতে ন্যায়পরায়ন শাষকরা, ব্যাবসায়ীরা এই মাসে রোজাদারদের কষ্ট লাঘবে নানা উদ্যোগ নিয়ে থাকেন, ব্যাবসায়ীরা পন্যে ভেজাল দেয়া থেকে বিরত থাকেন, দামও মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে।
অথচ আমাদের দেশে এই পরিস্থিতি পুরো উল্টো, বাজারে নিত্য পন্যের পর্যাপ্ত মজুদ থাকা সত্বেও হু হু করে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম।
নিউজ পোর্টাল অর্থসুচকের একটি প্রতিবেদনে  আজকের বাজার পরিস্থিতিতে দেখা যায়,
 " এদিকে আজ রোববার রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য। গত শুক্রবারের বাজারে কিছু পণ্যের দাম আরেক দফা বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি রসুনের দাম ১০-৫০ টাকা এবং আদার দাম ১০ টাকা হারে বাড়ানো হয়েছে।

গত সপ্তাহে কেজি প্রতি ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া দেশি রসুন আজকের বাজারে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ভারতীয় রসুনের দাম ২৩০ টাকা থেকে বেড়ে ২৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে ১১০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া চায়না আদা ১০ বেড়ে আজকের বাজারে ১২০ টাকা এবং ক্যারালা আদা ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এভাবেই সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়ে চলেছে সব পণ্যের দাম। "


এই হলো আমাদের বাজার পরিস্থিতি। প্রতিবেদনটিতে পন্যবাজারের  অস্থিতিশীলতার কয়েকটি কারন তুলে ধরেছে। যেখানে বলা হয়েছে, কিছু আমদানিকারক ও পাইকাররা তাদের টার্গেট অনুযায়ী পণ্য গুদামজাতকরণের পরই পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। আর কিছু অসাদু পাইকার ব্যবসায়ী রমজানের আগে প্রচুর পণ্য মজুদ করে রাখেন। ফলে কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়। আর দাম বাড়তে থাকে। প্রতি দফা দাম বাড়ার পর অল্প অল্প মাল বাজারে ছাড়েন তারা।"

দ্রব্যমুল্য বৃদ্ধির অভিযোগ বা কারনটা খুবই স্পষ্ট। এমনকি এই অভিযোগ নতুন কিছুও নয়, বছরের পর বছর একই অভিযোগ। তাহলে দায়টা কার।
সরকারের পক্ষ থেকে বার বার জোড় গলায় বলা হচ্ছে রমজানে পন্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। ফলে দামও বাড়বেনা। কিন্তু বাস্তবে কী হচ্ছে এসব। তাহলেকি বলবো, সরকার মহাশয় এখানেও অসহায়?? দিন দিন তারা তাদের ব্যার্থতারই প্রমান দিচ্ছে?? যার মাশুল গুনতে হচ্ছে সাধারন রোজাদারদের।


বাজার ব্যাবস্থাপনার এ চরম বিশৃংখল পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগী হওয়া ছাড়া আমার মতো সাধারন নাগরিকের হয়তো কিছুই করার নেই। তবুও আমাদের এ কষ্টের কথা শোনার কি কেউ থাকবেনা? তিনি আল্লাহ একজন অবশ্যই আছেন। আমরা তার কাছেই অভিযোগ জানাই। হে আল্লাহ, সংযমের এ মাসে তুমি অসাধু, মুনাফাখোর ব্যাবসায়ী, ঘুষ খোর কর্মকর্তাদের  সংযত হওয়ার তৌফিক দাও। নয়তো তোমার ফয়সালাই তাদের দেখিয়ে দাও। যেমন ফয়সালা হয়েছিল, হযরত মুসা আলাইহিসালাম এর জাতির উপর।
যারা তোমার নির্দেশনা অমান্য করে রবিবারে  ইবাদতের জন্য আসা মাছ ধরে ধরতো।
সুতরাং সবক্ষেত্রে অাল্লাহর ফয়সালাই চুড়ান্ত। আমরা সবাই যেন তার গজব থেকে বেঁচে থাকতে পারি, এবং রমজানের পূর্ন সওয়াব অর্জন করতে পারি সে জন্য তৌফিক কামনা করি।
 আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন, আমিন।
(২৮-০৫-২০১৭)

রবিবার, ১৪ মে, ২০১৭

আমার মা: জীবন সংগ্রামে হার না মানা এক মহিয়সী নারী

হাসপাতালের বারান্দায় আমি আর মা
'মা'। সম্ভবত পৃথীবির সবচে ছোট তবে সবচে বড় অনুভুতির একটি শব্দ। হাজার হাজার পৃষ্ঠা লিখেও মায়ের মর্ম সঠিকভাবে উত্থাপন সম্ভব নয়। আমাদের অনুভুতি, যাপিত জীবন সবকিছুর রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে আছেন মা। মা ছাড়া এই পৃথীবি নি:সন্দেহে অন্ধকার।
ব্যাক্তি জীবনে আমার মা- কে নিয়ে ব্যাখা করার মতো সঠিক কোন বাক্য খুঁজে পাইনা। হয়তো একটা বই ই লিখে ফেলতে পারব- 'আমার মা কে যেমন দেখেছি' এমন শিরোনামে। ছোট বেলা থেকে আমি মারাত্নক ডানপিটে থাকার কারনে অসম্ভব রকম জ্বালিয়েছি মা কে বাবাকে।
তবে জীবন জীবিকার তাগিদে বাবা প্রবাসী জীবন বেছে নেয়ার কারনে মা-ই হয়ে উঠেন আমাদের তিন ভাই বোনের একমাত্র অভিবাবক। লেখাপড়া, জীবনাচার, লেনদেন, লোক সমাজে চলাফেরা সব কিছুতেই মা আমাদের গাইড।
যদিও তিনি নিজে লেখা পড়ায় প্রাথমিকের গন্ডি পার হতে পারেননি, কিন্তু জ্ঞানে আমি  ইঞ্জিনিয়ারিং এ গ্রাজুয়েশন করেও তাকে টপকাতে পারিনি এখনো। আমার অন্য ভাই বোনরাত নয়ই। মা যখন প্রথম আমাদের বাড়িতে আসেন তখন তার বয়স ছিল তের কি চৌদ্দ। অথচ এই অল্প বয়সে, শিশুকালেই তিনি যে দক্ষতায় আমাদের সংসারের দায়িত্ব কাধে নিয়েছিলেন, আমরা ভাই বোনরা তারচে দ্বিগুন বয়সের হয়েও এখনও সেই দায়িত্বটা বুঝেই উঠতে পারিনি। সক্ষমতাতো দুরের কথা। 

 ক্যালেন্ডারের পাতাগুনে বয়স হয়তো হয়েঁছে ঠিকই ২৭ কিংবা ২৮। কিন্তু তার কাছে এখনো ৭/৮ বছরের শিশু থেকে বেশি বড় হতে পারিনি। দেশের কত প্রান্তে ঘুড়ে বেরিয়েছি, কত মানুষের সাথে চলাফেরা করেছি, করছি নিত্যদিন, কিন্তু মানুষ চেনায় এখনো তার কাছে আনাঢ়ি। অর্ধেকটাও প্রজ্ঞাবান হয়ে উঠতে পারিনি।
প্রতিদিন কত চ্যালেঞ্জিং কাজ করি, অথচ এখনো মায়ের মতো অতটা সাহসীই হয়ে উঠতে পারিনি। যখনই কোন কাজে বুকটা দুরু দুরু করে ভেঙ্গে পরি তখন মা সাহস যোগান।
একটা ঘটনা না বললেই নয়, সে বার আমি যখন চরম বিপদে পড়লাম। গুম হয়ে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ছিলাম, তখন আমার ধারনা হয়েছিল আর কোন দিন হয়তো পৃথিবীর আলো দেখবোনা। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবো না। তখন পৃথীবির জন্য নয় শুধু আমার মায়ে মুখটা কল্পনা করেই কেঁদেছি দিন রাত। তবে সপ্তাহ দুই পর যখন জীবনে কিছুটা আশার আলো ঝলকানি দিল তখন ভেবেছিলাম মায়ের সাথে প্রথম সাক্ষাতে অামি খুব শক্ত থাকবো। কারন আমার দুরবস্থা জানলে মা হয়তো অনেক কষ্ট পাবে।   কিন্তু কিসের কী! মা কে দেখেই আমার হৃদয় ভেঙ্গে কান্না চলে এলো। আমি যখন হাউ মাউ করে কেঁদে উঠলাম, তখন আমার মা আমাকে অবাক করে দিয়ে বীরের মতো, একজন সেনাপতির মতো আমাকে সাহস দিলো। বললো বাবা, কাঁদো কেন? তুমি না পুরুষ মানুষ। সেই দিন আমি তার চোখে এক ফোঁটা পানিও দেখিনি বরং তার চোখে দেখেছিলাম দৃঢ়তার ঝলকানি। তার সেই সাহসী ভুমিকা আমাকে প্রেরনা যুগিয়েছে শত কষ্টের মাঝেও দাত কেলিয়ে হাসার। এনে দিয়েছে দুনিয়াকে তুচ্ছ করার মানসিক শক্তি । যেটা আমার কল্পনাতেও ছিলনা। কঠিন বিপদে একজন দুর্বল মহিলা কীভাবে হারমানা সৈনিকের মনোবল ফিরিয়ে দিতে পারে তার উদাহরন আমার মা।
মায়ের যোগানো সেই সাহস আমাকে অারো অনেক দুর নিয়ে যাবে, পৃথিবীকে জয় করার শক্তি এনে দিবে এটাই আমার বিশ্বাস।

শুধুকি সাহস আর বুদ্ধিমত্তা! যাপিত জীবনে ফ্যাশন, লাইফস্টাইলেও মায়ের কাছে খ্যাত ছাড়া ভালো কোন পদবি পাইনি এখনো। 

মা কে ছাড়িয়ে যাওয়ার আমার এ ইচ্ছা সেই ক্লাস সেভেন কি এইট থেকেই। সেই থেকে অদ্যবধি একটাই চেষ্টা করে যাচ্ছি জীবনের সব ক্ষেত্রে মা-কে ছাড়িয়ে যাবার। কিন্তু আজও তার ধারে কাছে যেতে পারিনি। মাঝে সাঝে তাকে এগিয়ে যাবার চেষ্টা করি কিন্তু পরক্ষনেই কুপোকাত। বুমেরাং হয়ে ফিরে আসতে হয় তার কাছেই, নত হয়ে বলতে হয় ভুল হয়ে গেছে। তবে এত কিছুর পরও মা চিরস্থায়ী রাগ করেন না। যদিও সাময়িক বকাঝকা করে, তবে বুঝতে পারি এটা তার রাগ না অভিমান। সবক্ষেত্রে তাকে ছাড়িয়ে যেতে পারলে তিনিই হয়তো সবচে বেশি খুশি হবেন।

যাই হোক জীবন যুদ্ধে মা আমার এখন অনেকটাই ক্লান্ত। বয়সের ভারে না হলেও দায়িত্বের ভারে কাবু তিনি। বুঝতে পারি, তিনি এখন আর অাগের মতো অতটা চাপ সইতে পারেননা। তবুও তিনি এখনো অদম্য। তার এত সংগ্রামের পরেও আমরা ভাইবোনরা এখনো সু প্রতিষ্ঠিত না হতে পারায় তিনি আরো বেশি ভেঙ্গে পড়ছেন। প্রায় রাতেই দেখি ঘুমের ঘোরে আমার/আমার ভাইয়ের নাম ধরে কেঁদে উঠেন। গোঙ্গানি দিতে দিতে আবার ঘুমিয়ে পড়েন।  তখন কষ্টে বুকটা ভেঙ্গে যায়। রাগা রাগি করি, বলি এতটা চিন্তা করার কী আছে আমাদের নিয়ে। আল্লাহতো একটা ফয়সালা করেই রেখেঁছেন আমাদের জন্য। তবুও তিনি ভাবনাহীন হতে পারেন না।
মা কে ছাড়িয়ে যাবার এই খেলায় নেমে, এখন দেখছি আমার মায়ের আরেক উল্টো রূপ। তাকে যতটা সাহসী মনে করতাম, আমাদের ব্যার্থতায় তিনি ততটাই দুর্বল। আমরা একদিন আরো বড় হবো, আরো স্বাবলম্বি হবো, সবকিছু ঠিক ঠিক বুঝে নেব, এমন হাজারো আশার বানী তাকে আশ্বস্ত করতে পারেনা কিছুতেই।
জীবন যাপনের এতো এতো সমীকরনে যে কথাটি কখনোই মুখ ফুটে বলা হয়নি, আমরা তাকে কতটা ভালোবাসি, কতটা অনুভব করি। তাকে ছাড়াযে আমাদের জীবনটাই অন্ধকারে ঢেকে যাবে।

যাই হোক, পৃথীবির সব মায়েরাই সুন্দর। অনন্য তাদের ভালোবাসা, মমতা। জীবন সংগ্রামে হার না মানা এক মহিয়সী নারী মা। সন্তানের ভবিষ্যত ভবিষ্যত করে যে তার অতীত বর্তমান ভবিষ্যত সব হারিয়েছে। আজকের এ দিনটাতে পৃথীবির সব মা য়ের জন্যই রইল ভালোবাসা।