ছবির মতোই সুন্দর ছিল আমার গ্রামটা...

বর্ষা মৌসুমে নৌকা ছাড়া চলাচলের কোন উপায় থাকতোনা। যেন মহসড়কের পাশে বিচ্ছিন্ন ছোটএকটা দ্বীপ।

সমস্যা যত বড়ই হোক, আশা মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে

আমরা অবশ্যই পারব৷ সমস্যা যত বড়ই হোক না কেন, আশা মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে, নতুন কিছু উদ্ভাবন করতে অনুপ্রেরণা জোগায়৷ কিন্তু সমস্যাকে নিজের চোখে না দেখলে শুধু আশা দিয়ে সমস্যা সমাধান করা যায় না৷

ঘুরে আসুন নারায়ণগঞ্জের সব দর্শনীয় স্থানে

অপরূপ সৌন্দর্যে ভরপুর আমাদের বাংলাদেশের প্রায় প্রত্যেকটি জেলায়ই রয়েছে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান। যা আমাদের দেশকে করেছে আরো সমৃদ্ধ। শত বছর ধরে লাখো পর্যটককে করেছে আকৃষ্ট।

মানবসেবাই সর্বোত্তম ধর্ম: ফাদার তেরেসা

অসহায়, দুস্থ মানুষের সহায়তাই তার ধ্যান-জ্ঞান।সহিংসতার বিপরীতে তিনি অসহায়ের ত্রানকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হন।তিনি পাকিস্তানের আবদুল সাত্তার ইদি।অসম্ভব মানবসেবার কারনে ৮৪ বছর বয়সী এই ব্যক্তি তার দেশে ফাদার তেরেসা নামেই বেশি পরিচিত।

‘মানসিক প্রশান্তির জন্য সাইকেল’

যাত্রা পথে পরিবহন নিয়ে দুশ্চিন্তা আর ভোগান্তি থেকে রেহাই পেতে বিকল্প হলো একটা বাই সাইকেল। তাছাড়া ইদানিং স্বাস্থ্যটার দিকেও মনে হচ্ছে একটু যত্ন নেয়া দরকার।

রবিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৪

ঐতিহ্য ফেরাতে আধুনিক যুগে আমিরের ডিজিটাল পালকি

গ্রামবাংলার ঐতিহ্যে মিশে আছে পালকি। একসময় পালকি না হলে বিয়েই হতো না। তাছাড়া অবস্থা সম্পন্ন মহিলাদের দূরদূরান্তে যাতায়াতের জন্যও ব্যবহৃত হতো পালকি। একসময় পালকির বেশ কদর থাকলেও আধুনিক সভ্যতার উৎকর্ষের সঙ্গে পালকির প্রচলন উঠেই গেছে। আজকাল কোথাও আর পালকি দেখাই যায়না।

তবে আধুনিক যুগে পালকিতে চাকা লগিয়ে প্রায় ৩০০ বছর আগের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনলেন বগুড়ার আমির হোসেন। তিনি তৈরী করেছেন চাকা বিশিষ্ট বিশেষ ধরনের পালকি। প্রাচীণ পালকি আর কয়লা চালিত রেলের ডিজাইনে তৈরী এই বিশেষ ধরণের পালকি চলবে প্রেট্রোল ইঞ্জিনে। যার গতি কিছুটা কম। ইতোমধ্যেই পরীক্ষামূলক ভাবে চলছে বাহনটি।

পালকিতে তিনজন করে বেহারা থাকতেন। তাদের পোশাক ছিল লাল ফতুয়া, হাতে থাকত লাঠি ও লাঠির মাথায় থাকত বল্লম। পরনে সাদা ধুতি, মাথায় থাকত গামছা বাঁধা। বর-কনে দুজনই পালকিতে বসে থাকতেন। এখনকার প্রজন্ম জানেই না বা দেখেওনি পালকি জিনিসটা কি বা কোন কাজে ব্যবহৃত হতো। তাই নতুন রূপে চাকা লাগিয়ে ইঞ্জিনের সঙ্গে সেটিং করে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী পালকি নতুন রূপে ফিরিয়ে আনেন আমির হোসেন।


আমির হোসেন জানান, শিশু পার্ক কিংবা দেশের যেগুলো কমিউনিটি সেন্টার আছে সেগুলোতে এ অটোপালকি সংযোজন করতে পারলে এর মান আরও বাড়বে। পালকিটিতে আসন সংখ্যা রয়েছে ২২টি। পর্যায়ক্রমে আরও বাড়ানো যাবে আসন। পালকিটি প্রতি ঘণ্টায় পেট্রোলে ১২ কিমি. চলবে। এ পালকির গতি ৩০ থেকে ৬০ কিমি.। যন্ত্রচালিত পালকিটির মূল্য পড়বে আট লাখ টাকা।

তিনি জানান, সরকার চাইলে বিদেশী অতিথিদের এয়ারপোর্ট থেকে অভ্যর্থনা দিয়ে নিয়ে আসার জন্য ব্যবহার করতে পারেন এ পালকি। এতে তারা অবাক হবেন ও এতে করে দেশের মান আরও বাড়বে।

৮০ বছরের কলিমুদ্দিন প্রাং জানান, এ রকম কয়লাচালিত রেলগাড়ি করে কলকাতা ঘুরে এসেছি। এত বছর পর ঠিক এ রকম রেলগাড়ি চোখে পড়ল। ভাবাই যায় না।

খাতেমন বিবি জানান, আমার বয়স যখন ১৬ বছর, তখন আমার বাবা-জ্যাঠা এ করম পালকি আমার বিয়েতে ব্যবহার করেন। -আকতারের ক্যানভাস


রবিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৪

ঘাস কেটে কোটিপতি!

গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার সুলতানপুর বড়ইপাড়া গ্রামের আব্দুল গফুর (৫০)। এক সময় নুন আনতে যার পান্তা ফুরাত, এখন তিনি কোটিপতি। নেপিয়ার জাতের ঘাস চাষ করে কয়েকবছরে তিনি কোটি টাকার সম্পদ করেছেন। তার সাফল্যে উজ্জীবিত হয়ে এ ঘাসের চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন একই এলাকার আরও কয়েকজন কৃষক।

গফুর জানান, ২০০৫ সালের কথা। তখন দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাতেন তিনি। স্ত্রীর পরামর্শে সমিতি থেকে সাত হাজার টাকা ঋণ নিয়ে একটি গাভী কেনেন। পরে গাভীর ভালো খাবার যোগাড় করতে গিয়ে জানতে পারেন নেপিয়ার ঘাসের কথা। সেই নেপিয়ার ঘাসই তার ভাগ্য বদলে দিয়েছে। নেপিয়ার ঘাস বিক্রি করে বর্তমানে ১০ বিঘা জমি, পাকা বাড়িসহ সোয়া কোটি টাকার মালিক গফুর।

তিনি জানান, পলাশবাড়ী উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের চিকিৎসক মোস্তফা কামালের পরামর্শে নেপিয়ার ঘাস চাষ শুরু করেন। প্রথমে নিজেই পাঁচ শতক জমিতে ঘাস লাগান। ধীরে ধীরে তিনি ঘাস চাষের পরিমাণ বাড়াতে থাকেন। ২০০৯ সালেও বর্গা নেয়া তিন বিঘা জমিসহ মোট সাত বিঘা জমিতে নেপিয়ার চাষ করেন তিনি। বর্তমানে তিনি বাণিজ্যিকভিত্তিতে নিজের ১০ বিঘা জমিতে নেপিয়ার ঘাস চাষ করেন। প্রতিমাসে ঘাস বিক্রি করছেন ৯০ হাজার টাকা। খরচ বাদে তার মাসিক আয় ৭০ হাজার টাকা।

তার পরিবারের সদস্য ৬ জন। স্ত্রী আছিয়া বেগম গৃহিণী। বড় ছেলে আতিয়ার রহমান ও দ্বিতীয় ছেলে ফারুক হাসান তার সঙ্গে ঘাষ চাষ করেন। ছোট ছেলে শাকিল অষ্টম ও একমাত্র মেয়ে ফারহানা সপ্তম শ্রেণীতে লেখাপড়া করছে।

গফুর আরও জানান, ঘাস ব্যবসার আয় দিয়ে তিনি পাকা বাড়ি, ১০ বিঘা জমি, দুইটি গাভী, দুইটি শ্যালো মেশিনসহ প্রায় সোয়া কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন।



তিনি জানান, তার দুই ছেলে ছাড়াও পাঁচজন শ্রমিক প্রতিদিন রিকশা-ভ্যানযোগে পলাশবাড়ী, ঢোলভাঙ্গা, ধাপেরহাট ও গাইবান্ধা শহরে ঘাস বিক্রি করেন। নতুন বছরে আরও দশবিঘা জমিতে ঘাসচাষ ও ডেইরি ফার্ম করার প্রয়োজনীয় যোগাড়-যন্ত্র শেষ করে এনেছেন বলে জানান কৃষক আব্দুল গফুর।



সরেজমিনে দেখা যায়, আব্দুল গফুরের সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে মাসুদ মিয়া, সিরাজুল ইসলাম ও আব্দুর রশিদসহ অর্ধশতাধিক কৃষক নেপিয়ার ঘাস চাষ করছেন।

মাসুদ মিয়া বলেন, আগে এই ঘাস সম্পর্কে আমার কিছু জানা ছিল না। গফুর ভাইয়ের সাফল্য দেখে আমিও একবিঘা জমিতে ঘাসচাষ করছি। এ থেকে প্রতিমাসে নয় হাজার টাকা আয় হচ্ছে।

একই গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, গত বছর দুই বিঘা জমিতে ঘাসচাষ করেছি।নিজের গাভীকে খাওয়ানোর পরও মাসিক চৌদ্দ হাজার টাকার ঘাস বিক্রি করতে পারছি।

দেড় বিঘা জমিতে ঘাস চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন ওই গ্রামের আরেক কৃষক আব্দুর রশিদ।

গাইবান্ধা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবুল কাশেম বলেন, গাইবান্ধা জেলায় একমাত্র আব্দুল গফুরই বাণিজ্যিকভাবে ঘাস চাষ করছেন। এ ঘাস গবাদি পশুর একটি আদর্শ খাদ্য। এ কারণে চাহিদাও ব্যাপক। প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে এসব কৃষককে সহায়তার পাশাপাশি সাফল্যের ভিডিও চিত্র ধারণ করে বিভিন্ন সেমিনারে প্রদর্শন করে কৃষকদের নেপিয়ার ঘাস চাষে উদ্ধুদ্ধ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

মঙ্গলবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৪

স্কার্ট কিংবা খাটো পোশাক পড়া উচিৎ নয় : আকিল মালিক

খোলামেলা ও আটশাট পোশাক পড়ে মঞ্চে উঠায় উপস্থাপিকা গওহারকে থাপ্পড় মেরেছেন আকিল মালিক নামে এক যুবক। ভারতীয় দৈনিক মিড-ডে বলছে, ২৪ বছর বয়সী আকিল মালিককে নিজের এই কাণ্ডে মোটেও বিব্রত কিংবা অনুতপ্ত বলে মনে হয়নি। বরং নিরাসক্ত ভঙ্গিতে দেওয়া বিবৃতিতে মালিক বলেন, খাটো পোশাক পড়ে যেসব নারীরা পুরুষদের 'মাথা নষ্ট' করে দেয় এবং ধর্ষণের মতো অপরাধ করতে বাধ্য করে তাদের হাত থেকে নিজেকে এবং অন্য তরুণদের রক্ষা করতেই তিনি এই কাজ করেন।

তিনি আরও বলেন, "অভিনেত্রীরা সমাজের প্রতিনিধি। তাদের স্কার্ট কিংবা খাটো পোশাক পড়া উচিৎ নয়। কারণ এতে তরুণরা তাদের প্রতিভাবে শারীরিকভাবে আকৃষ্ট হয়। আজকাল অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেরাও ধর্ষণ এবং যৌন উৎপীড়ণের মতো অপরাধ করছে। এবং তারা পকেটে অভিনেত্রীদের অশ্লীল ছবি নিয়ে ঘোরে। অভিনেত্রীরা যদি সংক্ষিপ্ত পোশাক পড়া বন্ধ করে তাহলে অপরাধ কমে যাবে এবং একটি উন্নত সমাজের দিকে আমরা এগিয়ে যাবো।"

আকিল মালিক পেশায় একজন জুনিয়র আর্টিস্ট। সংগীতভিত্তিক রিয়েলিটি শো ‘ইন্ডিয়াস র স্টার’-এর সেটে তিন দিন ধরে কাজ করছিলেন তিনি। এই অনুষ্ঠানেই উপস্থাপিকা হিসেবে ছিলেন গওহার।

পুলিশকে আকিল জানান, তিন দিন ধরে গওহারকে খোলামেলা পোশাকে চলাফেরা করতে দেখে তার প্রতি শারীরিকভাবে আকৃষ্ট বোধ করছিলেন আকিল, কিন্তু নিজেকে সামলে নেন। অবশেষে তৃতীয় দিন অর্থাৎ অনুষ্টানের চূড়ান্ত পর্বের শুটিং চলাকালে গওহারকে তিনি প্রথমে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে তাদের ধর্মে এ ধরনের পোশাক পরা অনুমোদিত নয়। কিন্তু বাক-বিতণ্ডা শুরু হওয়ায় আড়াই হাজার দর্শক এবং ২৫০ জন নিরাপত্তাকর্মীর সামনে গওহারকে চড় মারেন তিনি।

এছাড়া তার বিরুদ্ধে গওহারকে অভদ্রভাবে স্পর্শ করারও অভিযোগ আনা হয়েছে। এরই মধ্যে তাকে আদালতে হাজির করা হয়েছে এবং আদালত তাকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

পুলিশ বলছে, চলতি বছরের অগাস্টে আবু ধাবি থেকে মুম্বাইতে আসেন আকিল। আবু ধাবিতে বেয়ারা হিসেবে কাজ করতেন তিনি। মুম্বাইতে গাড়িচালক হিসেবে কাজ নেন আকিল। পাশাপাশি জুনিয়র আর্টিস্ট হিসেবে ফিল্ম সিটিতে কাজ করছেন। ভবিষ্যতে অভিনেতা হওয়ার ইচ্ছা আছে তার।

কি ঘটেছিল সে দিন: সেদিন ছিলো বলিউডে স্টার টিভিতে ইন্ডিয়ান র-স্টার এর গ্র্যান্ড ফিনালে অনুষ্ঠান। ঝাঁক জমক পূর্ণ এই অনুষ্ঠান তখন লাইভ দেখানো হচ্ছিলো। মঞ্চে উপস্থিত হলেন মুসলিম প্রেজেন্টার গওহার। পড়নে আট সাট টাইট ও খোলা মেলা দামী গাউন।

অনুষ্ঠান স্থলে তখন ২৫০০০ দর্শক উপস্থিত, আছেন ৭০জন নিরাপত্তা রক্ষী। তার উপর স্টার টিভির নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীও ছিলো। এমন টাইট সিকিউরিটি ভেদ করে আকিল মালিককে দেখা গেলো মঞ্চে উঠে যেতে। তিনি আস্তে ধীরে মঞ্চে উঠেই প্রেজেন্টার গওহারের গালে চড় দিলেন বসিয়ে আর বলতে লাগলেন, একজন মুসলিম নারী হয়ে আট সাট খোলামেলা পোশাক পরিধানের জন্য তিনি চড় মেরেছেন। অবশ্য নিরাপত্তা রক্ষীদল তাকে ধরে ফেলেন এবং পুলিশে সোপর্দ করেন।
চড় খেয়ে গওহার কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তাকে ঘিরে ধরেন উপস্থিত তার টিম ও স্টার টিভির লোকজন। তিনি অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে বের হয়ে যান নিরাপত্তা রক্ষীদের সাথে। অনেক চেষ্টার পর তাকে শান্ত করে প্রায় এক ঘন্টা দেরীতে আবার তিনি মঞ্চে ফিরে এলে অনুষ্ঠান চলতে থাকে যথারীতি।

রবিবার, ৯ নভেম্বর, ২০১৪

জীবনের নিরাপত্তার জন্য এখনো আসছে রোহিঙ্গারা

কক্সবাজারের নাফ নদী পার হয়ে অবৈধভাবে এখনো মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গারা আসছে বাংলাদেশে। অন্যকোন উদ্দেশে্য নয়, শুধুমাত্র জীবনের নিরাপত্তার জন্যই তারা নিজেদের বাপ-দাদার ভিটে ও সম্পদ ছেড়ে তারা বাংলাদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন।


সপ্তাহখানেক আগে নাফ নদী পারি দিয়ে উখিয়ার অনিবন্ধনকৃত রোহিঙ্গা শিবিরে আত্মীয়ের কাছে স্বপরিবারের উঠেছেন রুহুল আমীন। তার স্ত্রী এবং নয়জন ছেলে-মেয়েসহ ১১ জনের সংসার। তিনি আরেকটি পরিবারের সাথে মোট ১৭ জনের দল নিয়ে নৌকা ভাড়া করে মিয়ানমারে নিজের ভিটে-মাটি ছেড়ে চলে এসেছেন।

মিয়ানমার সরকার বলেছে, মিয়ানমারের নয়। তোমরা বাঙালি। তারা আমাদের নিজের মা-বোনকে নির্যাতন করে। আমাদের সম্পদের ওপর অধিকার দেয় না। সেজন্য চলে এসেছি।

আব্দুল হাফেজ নামের এক শরণার্থী বলেন, “আমরা সতেরো জন দলবদ্ধ হয়ে নদীর পারে নারিকেল বাগানে একরাত কাটিয়েছি। নৌকা না পাওয়ায় পরের দিনও ওই নারিকেল বাগানে কাটিয়েছি। এর পরের দিন ২৫ হাজার টাকায় নৌকা ভাড়া করে সীমান্তের পাহাড়া এড়িয়ে আমরা নাফ নদী পারি দিয়ে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে উঠেছি। শাহপরী দ্বীপ থেকেই আমরা এই শিবিরে আত্মীয়ের কাছে এসেছি।”

রুহুল আমীনের ভাষায়, মিয়ানমারে কিছু দিন ধরে রোহিঙ্গাদের ওপর বড় ধরনের কোনো আক্রমণ হয়নি। কিন্তু নির্যাতন হচ্ছে ভিন্নভাবে। রোহিঙ্গাদের জন্য দম বন্ধ করা একটা পরিবেশ তৈরি করে রাখা হয়েছে। যেখানে তাদের মৌলিক অধিকারগুলোও কেড়ে নেয়া হচ্ছে। সেই অবস্থা থেকে পরের প্রজন্মকে বাঁচাতে সব পিছুটান ফেলে আমীন সীমান্ত পারি দিয়েছেন।

তিনি বলেন, “মিয়ানমারে আমরা চলাফেরা করতে পারি না। বাধা দেয়। এ ঘর থেকে অন্য ঘরে যেতে পারি না। এক পাড়া থেকে আরেক পাড়ায় যেতে পারি না। হাটে বাজারে মসজিদেও নামাজ পড়তে যেতে পারি না। সেখানে থেকে লাভ কী। এই বন্ধ জীবন ছেড়ে আমরা এখন খোলামেলায় চলে এসেছি।”

নিয়মিতভাবে না হলেও রোহিঙ্গারা এখনো আসে। তবে তাদের বাধা দেওয়া হয়। রুহুল আমীনের মতো আরো চারটি পরিবারের আটত্রিশ জনের দল দু’টি ছোট নৌকা ভাড়া করে টেকনাফে এসেছে অগাষ্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে। এদের একটি পরিবার নাফ নদীর তীরেই গ্রামে আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে।

নয় সদস্যের এই পরিবারটির কর্তা আব্দুল হাফেজ নিরাপত্তার প্রশ্নে জন্মস্থান ছেড়ে আসার কথা বললেন। তার বক্তব্য হচ্ছে, এখন গোপন হত্যা এবং স্ত্রী মেয়ের সম্ভ্রম বাঁচাতে তিনি সব মায়া ত্যাগ করেছেন।

তিনি বলেন, “মিয়ানমার সরকার বলেছে, মিয়ানমারের নয়। তোমরা বাঙালি। তারা আমাদের নিজের মা-বোনকে নির্যাতন করে। আমাদের সম্পদের ওপর অধিকার দেয় না। সেজন্য চলে এসেছি।”

আব্দুল হাফেজ আরো বলছিলেন, “পৃথিবীতে আমাদের রোহিঙ্গাদের আসলে কোনো দেশ নেই।”

এব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন বলেছে, রোহিঙ্গারা এখন দলে দলে আসছে না। মাঝেমধ্যে দু’একটি পরিবারের অনুপ্রবেশ ঘটছে। আগের তুলনায় এই সংখ্যা অনেক কম। এরপরও অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখার কথাও প্রশাসন বলছে।
নাফ নদীর সীমান্তের মূল অংশে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির ৪২ ব্যাটালিয়ন কাজ করে। এই ব্যাটালিয়নের পরিচালক আবু জার আল জাহিদ বলেছেন, “রোহিঙ্গারা মূলত চিকিৎসা করানোর জন্যে বাংলাদেশে আসে। এছাড়া নাফ নদীর তীরে দুই পাশে আতœীয় স্বজন আছে, তাদের কাছেও আসে। অনেক সময় তিন বা সাতদিনের ভিসা নিয়ে এসে থেকে যায়।”

বিজিবির কর্মকর্তা আরো উল্লেখ করেছেন,নিয়মিতভাবে না হলেও রোহিঙ্গারা এখনো আসে। তবে তাদের বাধা দেয়া হয়। এছাড়া গত দু’বছরের তুলনায় রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের ঘটনা অনেক কম।

স্থানীয় পুলিশ মনে করে, চিকিৎসার পাশাপাশি বাণিজ্য চুক্তির আওতায় রোহিঙ্গারা তিন বা সাত দিনের ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের সুযোগ পেয়ে একটা বড় অংশ থেকে যাচ্ছে।আর অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের চেষ্টা কমবেশি সবসময়ই থাকছে।

টেকনাফ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোক্তার হোসেন জানান, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্ত এলাকাগুলোতে অভিযান অব্যাহত রাখা হচ্ছে।

পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, নতুনরা এসে অনিবন্ধনকৃত শিবিরে বা এর বাইরে ছড়িয়ে থাকা রোহিঙ্গা আত্মীয়দের কাছে প্রথমে আশ্রয় নিচ্ছেন। এরপর নিজের পথ খুঁজে নিচ্ছেন। তবে সপ্তাহখানেক আগে অবৈধভাবে হলেও শেষপর্যন্ত রুহুল আমীন সপরিবারে টেকনাফে যে এসেছেন। এখানে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কোনো চিন্তা তাকে কাবু করতে পারেনি।

তিনি মনে করেন, কোনো একটা কাজ তার মিলবে এবং এখানে কষ্ট হলেও তাদের জীবনের নিরাপত্তা থাকবে।

যদিও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা, রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের সংখ্যা এখন অনেক কম বলে মনে করছেন। তবে সঠিক কোনো পরিসংখ্যান তাদের কাছে নেই।–বিবিসি।

রবিবার, ২ নভেম্বর, ২০১৪

চোখের পাতা লাফায় কেন?

প্রাচীণ কাল থেকেই আমাদের দেশে একটি কুসংস্কার আমরা লালন করে আসছি। আর তা হলো চোখের পাতা লাফানো। বিশেষ করে বা চোখের পাতা লাফালেই আমরা ধরে নেই আজকে নিশ্চিত বিপদ আছে। আর সত্যি বিপদ হতে পারে এমনটা ভেবে অনেকে অস্থির ও চিন্তিতও হয়ে পরে। অথচ আধুনিক বিজ্ঞানে এই ধরণের অলীক ধারণার বিন্দুমাত্র স্থান নেই।
চোখের পাতা লাফানো একধরনের অসুখ। ডাক্তারী ভাষায় একে বলে 'মায়োকিমিয়া'  (Myokymia)। মূলত পেশীর সংকোচনের কারণেই চোখের পাতা লাফায়। দুই-একবার হঠাৎ চোখের পাতা লাফালে চিন্তার কিছু নেই। কিন্তু সেটা যদি মাত্রাতিরিক্ত হয় এবং তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।

চোখের পাতা লাফায় কেন?
আসুন জেনে নেই ঠিক কি কারণে প্রায়সই আমদের চোখের পাতা লাফায়।
মানসিক চাপ: কঠিন মানসিক চাপের ভেতর দিয়ে গেলে শরীর বিভিন্ন উপায়ে তার প্রতিক্রিয়া দেখায়। চোখের পাতা লাফানো মানসিক চাপের লক্ষণ হিসেবে প্রকাশ পেতে পারে।

ক্লান্তি: পরিমিত ঘুমের অভাব বা অন্য কোন কারণে ক্লান্তি থেকেও চোখের পাতা লাফানো শুরু হতে পারে। ঘুমের অভাবে চোখের পাতা লাফালে পরিমিত ঘুম হলেই সেরে যাবে।

দৃষ্টি সমস্যা: দৃষ্টিগত কোন সমস্যা থাকলে চোখের উপর চাপ পড়তে পারে। টিভি, কম্পিউটার, মোবাইল ফোনের স্ক্রিনের আলোও চোখের দৃষ্টিতে প্রভাব ফেলতে পারে। আর এই সব সমস্যা থেকে চোখের পাতা লাফানোর উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

চোখের শুষ্কতা: কম্পিউটার স্ক্রিনের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলে, চোখে কন্ট্যাক্ট ল্যান্স ঠিকমতো না বসলে কিংবা বয়সজনিত কারণে চোখ শুকিয়ে যেতে পারে। আর এ কারণে চোখের পাতা লাফাতে পারে।

পুষ্টির ভারসাম্যহীনতা: পুষ্টির ভারসাম্যহীনতা চোখের পাতা লাফানোর একটি কারণ। বিশেষ করে ম্যাগনেসিয়ামের অভাবে এমনটি হতে পারে।

এলার্জি: যাদের চোখে এলার্জি আছে, তারা চোখ চুলকায় বা হাত দিয়ে ঘষে। এতে চোখ থেকে পানির সঙ্গে কিছুটা হিস্টামিনও নির্গত হয়। হিস্টামিন চোখের পাতা লাফানোর জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়।

ক্যাফিন এবং অ্যালকোহল: কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ক্যাফিন এবং অ্যালকোহল অতিরিক্ত সেবনে চোখের পাতা লাফাতে পারে।

এতোক্ষণ চোখের পাতা লাফানোর কারণগুলো পড়তে গিয়ে আপনি নিশ্চয়ই চমকে উঠেছেন এই ভেবে যে, আরে তাই
তো! ঘটনা তাহলে এরকম? তাই এখন থেকে ডান চোখ লাফালে সুসংবাদ আসে আর বাম চোখ লাফালে ভয়ঙ্কর কিছু ঘটতে পারে এসব চিন্তা মাথায় গেড়ে বসতে দেবেন না। মাত্রাতিরিক্ত চোখের পাতা লাফালে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যান। আর যদি হঠাৎ হঠাৎ চোখ লাফায় তাহলে এমনিতেই সেরে যাবে। শুধু অপেক্ষা করুন। নয়তোবা একটা ফ্রেস ঘুম দিন। ঘুম থেকে উঠে দেখবেন এসবের চিহ্নটিও নেই।
- আকতাররের ক্যানভাস

নিজেকে জানা খুবই গুরুত্বপূর্ন: মালালা

নিজেকে জানা খুবই গুরুত্বপূর্ন। সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আপনি কে তা জাহির করতে হবে। নিজের জীবন নিয়ে এমনই দর্শনে বিশ্বাসী ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ নোবেল বিজয়ী পাকিস্তানী কন্যা মালালা ইউসুফ যাই। সম্প্রতি তিনি ডেইলি মেইলকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন  ব্যক্তি জীবন নিয়ে নিজের দর্শনের কথা বিশ্বাসের কথা। জানিয়েছেন তার ভবিষ্যত লক্ষ উদ্দেশ্য নিয়েও। তরুন পাঠকদের জন্য তার চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।

তরুণরা নিজেদের পথ নিজেরাই ঠিক করে নিচ্ছে এবং নিজেরাই নিজের সিদ্ধান্ত গ্রহন করছে, এটি কতটুকু গুরুত্ত্বপূর্ন বলে মনে করছেন আপনি?

মালালা: এটা আমার জন্য খুবই গুরুত্ত্বপূর্ন। তাছাড়া আমার অনেক বন্ধু-বান্ধব আছে যাদের কোনো নিজস্ব পরিচয় নেই। তারা কারও স্ত্রী, কারও কন্যা বা কারও বোন। এমনকি তারা তাদের নিজেদের নামে পরিচিত হন না। তারা তাদের দক্ষতাকে কাজে লাগাতে পারেন না বা সমাজের কোনো কাজে লাগতে পারেন না। তারা জন্ম গ্রহন করেন, মাকে সাহায্য করেন, ভাই বাবাকে দেখাশুনা করেন এরপর তারা বিয়ে করেন। তারা আসলে জানে না যে তারা কে?

নিজেকে জানা খুবই গুরুত্বপূর্ন। সিদ্ধান্ত নিতে, আপনি কে তা জাহির করতে হবে। আমি কে এবং আমার নিজের অধিকারকে চিনিয়ে দেওয়া- এ সব আমার বাবা আমাকে দিয়েছেন বা আমার বাবা নিজেকে উপলব্ধি করতে বাধা দেন নি। তিনি কখনো আমাকে স্কুলে যেতে নিষেধ করেন নি, কখনো বিয়ে করার কথা বলেন নি। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ন।

নিজের সম্পর্কে আপনি কী মনে করেন?
মালালা: স্পষ্টভাষী।

আপনার জীবনের গল্প পড়ে মনে হয়েছে যে আপনি কি চান তা আপনি জানেন এবং সেটাই খুঁজে যাচ্ছেন। আপনি কি মনে করেন যে আপনার ব্যক্তিত্যের এই দিকটি আগেই ছিল বা বিশেষ কারও মাধ্যমে অনুপ্রানিত হয়েছিলেন বা আপনি নিজেই অর্জন করেছেন?

মালালা: যখন আমি ছোট ছিলাম,তখন আমি মানুষের কথা শুনতাম এবং বুঝতে চেষ্টা করতাম তারা কি বলছে ও কোথা থেকে এসেছে। আমি শুনতাম কিন্তু কিছু বলতে পারতাম না। কিন্তু আমার বাবা আমাকে উৎসাহ দিতেন এবং বলতেন যাই আমার মনে আসে তা বলে ফেলা ঠিক। এভাবে তিনি আমাদের স্বাধীনভাবে গড়ে তুলেছেন।

আমরা যদি আমাদের পরিচয় নতুন ভাবে সংজ্ঞায়িত করতে পারি তাহলে আপনি কোন পরিচয়ে পরিচিত হতে চান?

মালালা: আমি নিজেকে একজন সমাজকর্মী ভাবি। মেয়েদের অধিকারের জন্য, প্রত্যেক শিশুর জন্য শিক্ষা, নারীর অধিকার, সমতা এবং ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করে যাব।

আপনি সারা বিশ্বে হাজার হাজার নারীর অনুপ্রেরনা। আপনার বেড়ে ওঠার সময়ে কোন নারী আপনাকে অনুপ্রেরনা দিত?
মালালা: বেনজির ভুট্টো ছিলেন একজন অনুপ্রেরনাদায়ী নেত্রী ও নারী। একজন রাজনৈতিক হিসেবে তার কিছু বৈশিষ্ট্য মানুষ পছন্দ করতো না কিন্তু তিনি সারা বিশ্বের মানুষকে দেখিয়ে দিয়েছেন যে, নারীও একজন নেত্রী, একজন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ক্ষমতা আছে। তিনি আমাকে আশা দেখিয়েছেন যাতে আমিও আমার ভবিষ্যতে এমন কাজ করতে পারি।

আমাদের দেশে আরোও নারী আছেন, যারা অনেক কাজ করছেন এবং তারা সমাজকর্মী। যখন আমি বেড়ে উঠছিলাম তখন তারাও আমাকে অনুপ্রেরনা জুগিয়েছেন।

শনিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৪

আফ্রিকার তেল-গ্যাস শোষণ করতেই ইবোলা প্রচারণা


সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী এক আতঙ্কের নাম ইবোলা। এখনো পর্যন্ত রোগটির কোন প্রতিশেধক আবিস্কার করতে পারেনি গবেষকরা। বরং একের পর এক ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। আর এজন্য বিমানবন্দরসহ সব প্রবেশ পথে সতর্কতা জারি করেছে বিভিন্ন দেশ।

তবে রোগটিকে যত ভয়াবহ বলে প্রচারণা চালানো হচ্ছে বাস্তবে ততটা নয়। এবং এই প্রচারণার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে পশ্চিম আফ্রিকার তেল ও গ্যাস শোষণ বলে জানিয়েছেন মার্কিন অনুসন্ধানী সাংবাদিক সুসানে পোজেল।

‘অকুপাই কর্পোরেটিজম’ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক সুসানে পোজেল বলেন, এবোলা মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ছে, প্রচারণার এমন ধুম্রজাল তৈরি করে পশ্চিম আফ্রিকা থেকে তেল ও গ্যাস শোষণ করতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রকৃতপক্ষে কি ঘটছে, তা থেকে সবার দৃষ্টি সরিয়ে রাখতে এবোলার প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

সুসানে পোজেল জানান, লাইবেরিয়াতে যে তেল ও গ্যাস সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে, তা দিয়ে কয়েক শ’ বছর চলা যাবে। তিনি বলেন, পশ্চিম আফ্রিকার এ দেশটির সম্পদ কেড়ে নেয়ার ষড়যন্ত্র করছে যুক্তরাষ্ট্র। এজন্য যাতে কেউ কোন সমস্যা তৈরি করতে না পারে, সেজন্য এবোলার মতো ভয়াবহ রোগের প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

এবোলা রোগ নিয়ন্ত্রণে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা পশ্চিম আফ্রিকায় হাজার হাজার সেনা মোতায়েন করছেন বলে যখন দাবি করা হচ্ছে, তখন এ মন্তব্য করলেন। সুসানে বলেন, তেল-গ্যাস উত্তোলনের পূর্ব মুহূর্তে ক্ষেত্রগুলোর নিñিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে হাজার হাজার মার্কিন সেনা পাঠানো হচ্ছে।

একই সঙ্গে এবোলার মতো ছোঁয়াচে রোগের কথা ছড়িয়ে দিয়ে মানুষের মধ্যে সংশয় তৈরি করা হচ্ছে, যাতে কেউ কোন রকম প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পারে। মার্কিন সরকার এরই মধ্যে লাইবেরিয়ায় ৪,০০০ সেনা মোতায়েন করেছে, যার মধ্যে ভয়াবহভাবে কথিত ‘এবোলা আক্রান্ত’ একটি এলাকা রয়েছে। ওই এলাকায় বৃটেনও সেনা পাঠাবে বলে জানানো হয়েছে। বিভিন্ন সূত্রে বলা হচ্ছে- এসব এলাকায় মার্কিন সেনারা এবোলা আক্রান্ত রোগীদের জন্য চিকিৎসা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করবে।

বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

বিশ্বের শীর্ষ ধনীরা পড়েছেন যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে

মানুষের মতো মানুষ হওয়া এখনো শিক্ষা লাভের প্রধানতম উদ্দেশ্য। তবে শিক্ষালাভ করে আজকাল শুধু ভাল মানুষ হলেই চলে না, সঙ্গে জীবিকাও নির্বাহ করতে হয়। আর তাই শিক্ষা লাভের সঙ্গে বর্তমানে জীবিকা নির্বাহের সম্পর্ক একসূত্রে গাঁথা। এ কারণে যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়লে ভাল চাকরি পাওয়া যায় সেগুলোতে পড়ার চাহিদাও বেশি।

বিশ্বের বেশিরভাগ কোটিপতি পড়াশুনা করেছেন এমন কিছু বিশ্ববিদ্যারয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে সিঙ্গাপুরভিত্তিক সম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়েলথ-এক্স ও সুইজারল্যান্ডের ইউবিএস ব্যাংক।

তালিকায় স্থান পাওয়া ২০ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬টিই যুক্তরাষ্ট্রের। বর্তমানে বিলিয়নিয়ারের তালিকায় থাকা ২০৮ জন ধনকুবের এক সময় এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন। ভারত, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া ও সুইজারল্যান্ডের একটি করে বিশ্ববিদ্যালয়ও রয়েছে এ তালিকায়।

তালিকার প্রথম ৮টি বিশ্ববিদ্যালয় হলো- যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড, ইয়েল, সাউথ ক্যালিফোর্নিয়া, প্রিন্সটন, কর্নেল, স্ট্যানফোর্ড ও ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলে ইউনিভার্সিটি।

প্রথমবারের মতো তালিকায় স্থান করে নেওয়া ভারতের মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ৯ নম্বরে। বিশ্ববিদ্যালয়টির ১২ জন সাবেক শিক্ষার্থী এখন বিশ্বের শীর্ষ একশ' ধনীর তালিকায় রয়েছেন। ভারতের সবোর্চ্চ ধনী ও রিয়ালেন্স গ্রুপের কর্ণধার মুকেশ আম্বানি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন।

তালিকায় ১০ নম্বরে রয়েছে যুক্তরাজ্যের লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স।

কোটিপতি তৈরিকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরি করলেও কোটিপতি হওয়ার জন্য উচ্চশিক্ষা গ্রহণ পূর্বশর্ত নয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ বিশ্বের মোট বিলিয়নিয়ারের ৩৫ শতাংশেরই স্নাতক ডিগ্রি নেই। এদের অনেকে আবার স্কুলের গণ্ডিই পেরুতে পারেন নি।
তাই কোটিপতি তৈরির এসব 'আতুরঘরে' পড়তে না পারলেও আপাতত হাতাশার কিছু নেই।

বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

এক কামরার ঘর (অনুবাদ গল্প)

ইউসুফ ইদ্রিস (জন্ম:১৯২৭, মৃত্যু:১৯৯১) আরবী ভাষার সমসাময়িক লেখকদের মধ্যে অন্যতম একজন। মিশরীয় এই ছোট গল্পকার ও নাট্যকার পেশাগত জীবনে একজন চিকিৎসক ছিলেনকট্টর বামপন্থী এই লেখক তাঁর রাজনৈতিক আদর্শের কারণে জেলও খেটেছেনতাঁর লেখায় সমন্বয় ঘটেছে প্রচলিত আখ্যানরুপের সঙ্গে চলিত কথনের, ফুটে উঠেছে সাধারণ গ্রাম্য জীবনের বাস্তবতাঅনুদিত ‘A House of Flesh ‘ গল্পটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৭১ সালের এক গল্প সংকলনেমোনা মিখাইলের ইংরেজী অনুবাদ অনুসরণে লেখাটি বাংলায় তর্জমা করেছেন রেশমী নন্দী। 

নিস্তব্দতা নিয়ে এ গল্প শুরুপঁয়ত্রিশ বছর বয়সী লম্বা, ফর্সা, লাবণ্যময়ী এক বিধবা আর তাঁর তিন মেয়ে, গড়নে লম্বা তবে মোটা গোছেরদিনের পর দিন, অনেকদিন তারা সবাই ক্রমাগত কালো রঙের শোকের পোশাক পরে আছেমেয়েদের মধ্যে সবচেয়ে ছোটজনের বয়স ষোল আর বড়জন বিশের কোঠায়বাবার মতোই মেয়েরা সবাই কালো, বিসদৃশ দেহাবয়বধারি, স্থুলকায়, থলথলে- মায়ের গড়নের প্রায় কিছুই পায়নি তারাসারাটা দিন এক কামরার বাসাতেই তাদের দিন কাটেচরম অভাবের মধ্যেও মেয়েলি ছোঁয়ার গুণে তাদের এক কামরার ঘরটা ছিমছাম, আরামদায়করাত নেমে এলে এ ঘরেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকে চারটা শরীরবিছানায়, আরামকেদারায় গড়াগড়ি খেতে থাকে উষ্ণ জীবন্ত মাংসের পিন্ডগুলো- ঘুমহীন রাত ঘন নিঃশ্বাসের শব্দে ভারী হয়ে ঝুলে থাকে ঘরে

দীর্ঘ রোগভোগের পর এ বাড়ির একমাত্র পুরুষ সদস্য মারা যাওয়ার পর থেকেই শব্দহীনতায় ডুবে আছে এ ঘর, তবে সেও প্রায় দুবছর হলোশোকের বাঁধা সময় পার হয়েছে অনেক আগেই, কিন্তু শোক করার অভ্যাস কাটেনি, বিশেষ করে চুপচাপ থাকার এ প্রবণতাআদপে এ একধরনের প্রতীক্ষামেয়েদের বয়স বাড়ছে কিন্তু কোন পাণিগ্রাহী এ পথ মাড়াচ্ছে নাকে-ই বা দেখতে খারাপ, সেই সাথে এতিম এমন মেয়েকে বিয়ে করতে চাইবে? কিন্তু আশা মরে না (সঠিক ক্রেতার জন্য সুরার অপেক্ষা স্বতঃসিদ্ধ)মেয়েরা আশা করে বসে আছে একদিন ভাগ্য বদলাবেতারা যতই গরীব হোক, তাদের চেয়েও গরীব নিশ্চয় কেউ আছেআর চেহারার কথাই যদি ধরা হয়, তাদের চেয়েও কুৎসিত মানুষের অভাব নেইসবচেয়ে বড় কথা, ধৈর্য্য ধরলে স্বপ্ন একদিন পূরণ হবেই

স্থায়ী এ নৈঃশব্দ ভেঙ্গে মাঝে মাঝে আবেগহীন একঘেয়ে গলায় এ বাড়িতে কোরান তেলাওয়াতের সুর শোনা যায়অন্ধ এক তেলাওয়াতকারী মৃতের আত্মার বেহেস্তবাস কামনা করে প্রার্থনা করেপ্রত্যেক শুক্রবার তার লাঠি এ বাড়ির দরজায় আওয়াজ তোলেকেউ একজন তখন হাত বাড়িয়ে তাকে ভিতরে নিয়ে আসেমাদুরে হাঁটু মুড়ে বসে শুরু হয় কোরান তেলাওয়াতপ্রার্থনা শেষে হাতড়ে হাতড়ে জুতা জোড়া খুঁজে নিয়ে সালাম জানিয়ে বিদায় নেয় সেকেউ তাকে স্বাগত কিংবা বিদায় জানায় নাঅভ্যাসবশতঃ সে আসে, কোরান পাঠ করে আর চলে যায়তার উপস্থিতি পর্যন্ত কেউ লক্ষ্য করে না
flesh.gif
এ ঘরের অনতিক্রম্য নৈঃশব্দ কোরানের সুরেও বিচলিত হয়নাসম্ভবতঃ কেবল নীরবতার চাপেই চেপে বসা নীরবতার অবসান সম্ভবঅপেক্ষা আশার মতোই চিরন্তনতুচ্ছ মানুষও বাঁচে নিয়ত আশায়, তা যতই অকিঞ্চিতকরই হোক না কেনতুচ্ছের চেয়েও তুচ্ছতর কেউ না কেউ থাকেইআর মেয়েদের স্বাভাবিক এ চাওয়াকে উচ্চাকাঙ্খা বলা যায় না

এভাবেই দিন কেটে যেত যদি না সেই শুক্রবারও অন্ধ তেলাওয়াতকারী যথারীতি এ বাসায় আসতোসব কিছুরই শেষ আছে, দেখা যাচ্ছে এক্ষেত্রেও তাই ঘটেছেসেদিনই প্রথমবারের মতো মা ও মেয়েরা বুঝতে পারলো, সপ্তাহের অন্তত একটা দিন একজন পুরুষের গলা এ বাড়িতে শোনা যেত এতদিনআর এরমধ্যে এ লোকই একমাত্র পুরুষ যে এ বাড়ির চৌকাঠ মাড়িয়েছেতাদের হঠাৎ বোধদয় হলো যে গরীব হলেও তার পরিচ্ছন্ন পোশাক, চকচকে জুতা আর নিখুঁত পাগড়ির বাঁধন যেকোন দৃষ্টিসম্পন্ন মানুষকে লজ্জা দিতে পারেআর তার চেয়েও বড় কথা, তার আছে তেজদীপ্ত, গভীর, সুরেলা কন্ঠস্বরতাদের মনে হতে থাকলো যে এখনই তাকে ডেকে এনে চুক্তি নবায়ন করা উচিৎতিনি কি অন্য কোথাও ব্যস্ত থাকবেন? সে যাই হোক, তারা অপেক্ষা করতে পারবেঅপেক্ষা করার অভ্যাস তাদের আছে

সন্ধ্যা শেষ হয়ে এসেছেতিনি কোরান পাঠ করছেন যেন প্রথমবার তারা শুনছেতারা ভাবতে শুরু করলো, যার গলার স্বর এ ঘর ভরিয়ে রাখে, তাদের মধ্যেই কারো একজনের তাকে বিয়ে করে ফেলা উচিৎ

সদ্য গোঁফ উঠা অবিবাহিত এক যুবক তিনিকথায় কথায় জানা গেছে তিনিও বিয়ের জন্য উপযুক্ত পাত্রীর সন্ধানে আছেনমেয়েদের আলোচনা থেকে এ কথা জেনে মা মেয়েদের মুখের দিকে তাকায়বোঝার চেষ্টা করে, এদের মধ্যে ভাগ্যবান কোনজন? কিন্তু মায়ের চোখে চোখ না রাখা চেহারাগুলো যেন বলতে থাকে, “আমাদের দীর্ঘ প্রতিক্ষার এই কি প্রতিদান? আমাদের এতদিনকার অপেক্ষার প্রাপ্তি একজন অন্ধ পুরুষ?” তারা তখনো স্বপ্ন দেখছিলো সত্যিকারের একজন স্বামী পাওয়ারআর স্বামী মানেই দৃষ্টিসম্পন্ন যুবকবেচারা, তাদের এখনো পুরুষদের জানতে বাকি আছেতাদের পক্ষে এই বয়সে বোঝা সম্ভব নয় যে কেবলমাত্র চোখের আলো থাকাটাই একজন পুরুষের যথেষ্ট যোগ্যতা নয়

মা, তুমি উনাকে বিয়ে করো
আমি? কি লজ্জা! লোকে কি বলবে?”
যার যা ইচ্ছে বলুকএকেবারে অভিভাবকহীন ঘরের চেয়ে ঢের ভালো এমন এক ঘর, যেখানে অন্তত পুরুষকন্ঠ বাজে
তোদের ফেলে আমি বিয়ে করবো? অসম্ভব
সেটাই তো ভালো হবেএরপর আরো অনেক পুরুষদের এ বাসায় আসার সুযোগ হবেআমাদেরও তখন বিয়ে হবেউনাকে তুমি বিয়ে করো মাও মা, বিয়ে করো উনাকে

তারপর, তাদের মা বিয়ে করলোএক কামরার ঘরে আরো একজনের নিঃশ্বাস যুক্ত হলোপরিবারের আয় কিছুটা বাড়লেও এবার বড় এক সমস্যা দেখা দিলোপ্রথম রাত কোনভাবে পার হলো কিন্তু ভুল করেও নবদম্পতি কাছাকাছি হলো নাযদিও মেয়েরা ঘুমিয়ে ছিলো কিংবা ঘুমের ভান করে ছিলো, কিন্তু মা স্পষ্ট টের পেল কয়েক জোড়া চোখ তাদের মধ্যকার দূরত্ব মাপছপুরো অস্তিত্ব দিয়ে কিছু একটা বোঝার চেষ্টা চলছে এখানেদাম্পত্য সম্পর্কের মানে বোঝার পক্ষে মেয়েরা যথেষ্ট বড় হয়েছেহঠাৎ করেই পুরো ঘরটা যেন সংবেদনশীল কিছু একটাতে পরিণত হয়েছেযেন রাতের অন্ধকারেও পুরো ঘর আলোকিত

সকালবেলা এক এক করে মেয়েরা ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে গেলোসন্ধ্যা নামতেই এক ধরনের অস্বস্তি নিয়ে ইতঃস্তত পায়ে ঘরের কাছাকাছি আসতেই তারা শুনতে পেলো, তাদের ফেলে যাওয়া ঘরজুড়ে হাসি, মাঝে মাঝে অস্পষ্ট মেয়েলি কন্ঠ শোনা যাচ্ছেনিশ্চয় মা আর তাদের সেই চেনাজানা সম্মানিত তেলাওয়াতকারীমেয়েদের দেখে মা তাদের দিকে এগিয়ে এলো- ভেজা খোলা চুল, হাতে ধরা চিরুনি, তখনো হাসছিলোতারা মায়ের মুখের দিকে তাকায়যেন অনেকদিন ধরে নিভে থাকা এক প্রদীপ, যার কোনায় ঝুল জমেছিলো, এখন আলোকিতজ্বলজ্বলে চোখে হাসির আভাসেদিন থেকে তাদের জীবন থেকে নিস্তব্দতা নির্বাসিত হলোরাতের খাবার সময়টা হৈ হৈ করে কাটলোতেলাওয়াতকারী তার সুরেলা কন্ঠে উম্মে কুলসুম ( হযরত মোহাম্মদের চার মেয়ের তৃতীয়জন ) আর আব্দুল ওহাবের ( ইসলামি শিক্ষাবিদ) অনুকরণ করে শুনিয়ে তাদের সবাইকে একেবারে মাতিয়ে রাখলো

এই তো চাইখুব শীঘ্রি এই হাসির শব্দ, এই ফূর্তি অন্য পুরুষদেরও আকর্ষন করবে
বিশ্বাস রাখো মেয়েরাখুব তাড়াতাড়ি পুরুষদের আগমন শুরু হবে আর বিবাহপ্রার্থীদের আগ্রহও প্রকাশ পাবেকিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে মায়ের মন তখন ডুবে ছিলো যুবক স্বামীর স্বপ্নেলোকটা অন্ধ, কিন্তু চোখ থাকতেও তো আমরা প্রায়ই অন্যদের দিকে তাকাই নামানুষটার উপচে পড়া প্রাণশক্তির জোয়ার মায়ের এতবছরের অসুস্থতা, পুরুষত্বহীনতা আর অকাল বার্ধক্যের স্মৃতি ভাসিয়ে দিয়েছে

নিস্তব্দতাকে নির্বাসিত করে জীবনের স্পন্দন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এক কামরার এ বাসায়
ধর্মমতে তাদের বিয়ে হয়েছে, তারা এখন বৈধ স্বামী-স্ত্রীএখন আর কিছুই মাকে লজ্জিত করে নাকোন কিছুই গোপন নয়, তেমন চেষ্টাও নেইএক কামরার বাসায় রাত নেমে আসে, গাদাগাদি করে এক কামরাতেই সবকটা মানুষএকসময় শরীরের দাবিতে দম্পতির শরীর আর আত্মার মিলন ঘটেহয়তো মেয়েরা তখন সজাগ নিদ্রায় অস্বিস্তহীন, দীর্ঘনিঃশ্বাস আর গোঙ্গানি চাপার চেষ্টা করছে

মায়ের দিন কাটে বড়লোকদের বাড়িতে কাপড় কেচে, মায়ের স্বামী দিনমান গরীবলোকদের ঘরে ঘরে কোরান তেলাওয়াত করে

প্রথম দিকে দুপুরবেলা লোকটা বাসায় ফিরতো নাকিন্তু রাতের ক্লান্তি কাটাতে, রাতের জন্য প্রস্তুত হতে ইদানিং তার বিশ্রাম নেবার দরকার হয়

দম্পতির কয়েকটা রাত আনন্দে কেটে গেলোএকরাতে হঠাৎ লোকটা জিজ্ঞেস করলো, দুপুরবেলা তার কি হয়েছিলোএখন এত কথা বলছে অথচ দুপুরে একেবারে চুপচাপ ছিলো কেন? এখন বিয়েতে উপহার দেয়া আংটি পড়েছে অথচ দুপুরে ওটা হাতে ছিলো না কেন?

এমন হতে পারতো যে একথা শোনা মাত্র মা উন্মাদের মতো চেঁচিয়ে উঠেছে, কান্ডজ্ঞান হারিয়ে লোকটাকে খুন করেছেকারন, যা সে শুনলো, এর কেবল একটি অর্থই হতে পারেনির্মম, ভয়াবহ এক অর্থকিন্তু একটা ঢোক গিলে উন্মত্ত কান্না ঠেলে ভিতরে ঢুকিয়ে দিয়ে নিজেকে শান্ত করে রাখলো সেঅন্ধকারে কান দিয়ে হাসিল করতে চাইলো শরীরের সমস্ত ইন্দ্রিয়ের কাজ, বোঝার চেষ্টা করতে লাগলো, কে সেই অপরাধী? কেন যেন মনে হচ্ছে, এ মধ্যম জনের কাজভয়ঙ্কর ধারালো হয়ে উঠেছে ইদানিং ওর চোখতবু মা নিশ্চিত হবার জন্য কান পেতে থাকলোতিন মেয়ের ঘন ভারি নিঃশ্বাসের অনিয়মিত শব্দ টের পাওয়া যাচ্ছেযৌবনের স্বাভাবিক আকাঙ্খা গোঙানির শব্দে বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে, যেন আগুনের হল্কা, যেন উত্তপ্ত লাভা বেরিয়ে আসবে তৃষ্ণার্ত ভূমি ফুঁড়েমায়ের নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে, গলায় ঠেকছে একটা কান্নার ডেলানিজের সন্তানদের মা এখন আর আলাদা করে চিনতে পারছে না- সবকটা মানুষি একাকার হয়ে গেছে কামনার উত্তাপেসবারই শরীর জুড়ে ক্ষুধাসন্তানদের নিঃশব্দ এ বিলাপ হাহাকার নয়, যেন মায়ের কাছে আকুতি, সানুনয় প্রার্থনা কিংবা হয়তো তারও চেয়ে বেশি কিছু


এতদিন মা নিজের ন্যায়সঙ্গত প্রাপ্তিতে মগ্ন থেকেছেসন্তানদের প্রতি দায়িত্বের কথা তার মনে ছিলো নাতার মেয়েদের কাছে অপেক্ষা এখন তেতো লাগছে, পরিণয় আকাঙ্খা মরিচীকার মতো উবে গেছেহঠাৎ করেই যেন মার খেয়ে কিংবা ভেতরের গোপন কোনো ডাকে ওরা জেগে উঠেছেআকাঙ্খার বস্তু নিষিদ্ধ কিন্তু আকাঙ্খা যে এখানে আরো বড়ো পাপএ ক্ষুধাকে মা খুব ভালো করে চিনেকতদিন আত্মার উন্মিলনে রক্তেমজ্জায় এ ক্ষুধা নিজেকে জাহির করেছে তার কাছেযে তৃপ্তি নিয়ে সে এখন পূর্ণ, তাকে ভোলা তো তার পক্ষে অসম্ভব

ক্ষুধার্ত সন্তান! মা হিসেবে নিজের মুখের খাবার তুলে দিয়ে সারাজীবন সন্তানদের ক্ষুধা মিটিয়েছে সে, নিজের কথা তো কখনো ভাবেনিআর আজ? সে যে মা, একথা কি করে ভুলে যাবে সে?

এরপর সেই রাতে আর কোনো অনুরোধই তাকে জাগাতে পারলো নাবেদনা জমাট বেঁধে পরিণত হয়েছে নিস্তব্দতায়মা সেদিন থেকে একেবারে চুপচাপ হয়ে গেলোপরেরদিন সকালে নাস্তার টেবিলে দেখা গেলো ঠিক তার ভাবনানুযায়ি মেজো মেয়েও চুপচাপমা আর মেয়ে এরপর থেকে নিস্তব্দতাতেই আশ্রয় নিলোরাতে খাবার সময় অন্ধ কর্তা খুশিতে ডগমগ, গান গাইছে, হাসছে, কিন্তু আজ কেবল বড় আর ছোট মেয়ে এ আনন্দের সাথে তাল মিলালো

ধৈর্য্য পরীক্ষার তিক্ততা অসুস্থ করে তুলেছে মেয়েদের কিন্তু তখন পর্যন্ত কোন পাণিপ্রার্থির দেখা নেইএকদিন হঠাৎ বড় মেয়ে মায়ের বিয়ের আংটির দিকে তাকিয়ে মুগ্ধতা প্রকাশ করেমায়ের হৃদয় কেঁপে উঠলোহৃদস্পন্দনের তুমুল ডামাডোলের ভিতর দিয়ে মা শুনতে পেলো, বড় মেয়ে কেবল একটা দিনের জন্য তার কাছে আংটিটা চাইছেমা চুপচাপ আংটিটা খুলে মেয়ের হাতে দিয়ে দেয়মেয়েও আর কোন কথা না বলে আংটিটা হাতে পড়ে নেয়

সেই সন্ধায় বড় মেয়েও একেবারে চুপচাপ হয়েছিলোএবং সেদিন অন্ধ কর্তার আনন্দ হুল্লোড়ে কেবল ছোট মেয়েকেই আগ্রহী দেখা গেলো

অপেক্ষা করতে করতে ছোট মেয়েটাও বড় হয়ে উঠলো কিন্তু ভাগ্যদেবী প্রসন্ন হলেন নাএবং একদিন এ খেলায় যখন সে নিজের জায়গা চাইলো, তখন কোথাও কোন আলোড়ন না তুলেই সে এর অংশ হয়ে গেলো

আংটিটা প্রদীপের পাশেই পড়ে থাকেচারপাশ চুপচাপকান পর্যন্ত কিছু জানতে পারে নাএর মধ্যে যখন যার পালা আসে আংটিটা হাতড়ে নিয়ে আঙুলে ঢুকিয়ে নেয়আর তারপর আলোটা নিভে যায়

অন্ধকারের রাজত্বে দৃষ্টিবানরাও অন্ধে পরিণত হয়কেবল অন্ধ যুবকের আনন্দ ফুরোয় নাকিন্তু তবু তার হৈচৈ আর আনন্দের ভেতরেও এখনকার নিস্তব্দতা তাকে তাড়া করে ফেরেঅনিশ্চয়তার অনুভব তাকে অস্বস্তিতে ফেলেশুরুতে তার মনে হয়েছিলো, এমন ক্ষণে ক্ষণে বদলানো মেয়েদের স্বভাবকখনো সে ভোরের শিশিরের মতো তরতাজা, অন্যসময় জলাবদ্ধ ঘোলাটে জলকখনো গোলাপের পাপড়ির মতো মসৃণ, আবার কখনো ক্যাকটাসের কাঁটাময় শরীরযদিও সবসময়ই আংটিটাকে আঙুলেই খুঁজে পায় সে, কিন্তু আঙুলটাকে এক এক সময় এক এক রকম লাগেযুবক মোটামুটি নিশ্চিত যে সবাই সবকিছু জানেতাহলে এ নীরবতার অর্থ কি? খাবার খেতে বসে নিছক এ ভাবনাতেই তার গলায় রুটি আটকে যায়এবং সেই মুহূর্ত থেকে আর একটাও কথা শোনা যায় না সেখানেএরপর থেকে সবকিছু ভেঙে পড়ার আশংকা নিয়ে তার দিন কাটতে থাকেএবারের শব্দহীনতার অর্থ ভিন্ন, সচেতন এ নীরবতার কারন দারিদ্র নয়, অপেক্ষা নয়, হতাশা নয়, এ নীরবতা আরো গভীর কিছু ধারণ করে আছেকোনরকম আনুষ্ঠানিক চুক্তি ছাড়াই কেবল শব্দহীনতার জালেই তারা সবাই বাঁধাযুবতী বিধবা, তার তিন মেয়ে, এক কামরার একটা ঘর আর এক নতুন ধরনের নিস্তব্দতাঅন্ধ তেলাওয়াতকারীর সাথে সাথে নিস্তব্দতাও এখন এই ঘরের বাসিন্দাএ নিস্তব্দতায় যুবক আশ্রয় খোঁজেভাবে, তার বৈধ স্ত্রীই তার শয্যাসঙ্গী, যদিও এক এক দিন এক এক রকম শরীর, কিন্তু তার দেয়া আংটি থাকে তার আঙুলেযুবতী কিংবা বৃদ্ধ, মসৃণ অথবা এবড়োথেবড়ো, কখনো মোটা, কখনো ছিমছিমে, এ নিয়ে তার ভাবার কোন দায় নেইযাদের চোখ আছে, ভাবতে হলে তারা ভাবুক

যাদের দৃষ্টি আছে তারাই তো কেবল নিশ্চিত হতে পারে, ন্যায় অন্যায় বিচারের ভারও তাদেরই উপরদৃষ্টিহীনতা নিয়ে সে কেবল সন্দেহই করতে পারে যে সন্দেহ কেবল দৃষ্টিবানদের পক্ষেই মিটানো সম্ভবযতক্ষন সে দৃষ্টিহীন, ততক্ষন নিশ্চিত হবার কোন দায় তার নেইঅন্ধের আবার লজ্জা কিসের? নাকি তাদেরও লজ্জা পাবার কথা!