ছবির মতোই সুন্দর ছিল আমার গ্রামটা...

বর্ষা মৌসুমে নৌকা ছাড়া চলাচলের কোন উপায় থাকতোনা। যেন মহসড়কের পাশে বিচ্ছিন্ন ছোটএকটা দ্বীপ।

সমস্যা যত বড়ই হোক, আশা মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে

আমরা অবশ্যই পারব৷ সমস্যা যত বড়ই হোক না কেন, আশা মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে, নতুন কিছু উদ্ভাবন করতে অনুপ্রেরণা জোগায়৷ কিন্তু সমস্যাকে নিজের চোখে না দেখলে শুধু আশা দিয়ে সমস্যা সমাধান করা যায় না৷

ঘুরে আসুন নারায়ণগঞ্জের সব দর্শনীয় স্থানে

অপরূপ সৌন্দর্যে ভরপুর আমাদের বাংলাদেশের প্রায় প্রত্যেকটি জেলায়ই রয়েছে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান। যা আমাদের দেশকে করেছে আরো সমৃদ্ধ। শত বছর ধরে লাখো পর্যটককে করেছে আকৃষ্ট।

মানবসেবাই সর্বোত্তম ধর্ম: ফাদার তেরেসা

অসহায়, দুস্থ মানুষের সহায়তাই তার ধ্যান-জ্ঞান।সহিংসতার বিপরীতে তিনি অসহায়ের ত্রানকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হন।তিনি পাকিস্তানের আবদুল সাত্তার ইদি।অসম্ভব মানবসেবার কারনে ৮৪ বছর বয়সী এই ব্যক্তি তার দেশে ফাদার তেরেসা নামেই বেশি পরিচিত।

‘মানসিক প্রশান্তির জন্য সাইকেল’

যাত্রা পথে পরিবহন নিয়ে দুশ্চিন্তা আর ভোগান্তি থেকে রেহাই পেতে বিকল্প হলো একটা বাই সাইকেল। তাছাড়া ইদানিং স্বাস্থ্যটার দিকেও মনে হচ্ছে একটু যত্ন নেয়া দরকার।

বুধবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০১৫

সৃষ্টিকর্তার বিচিত্র সৃষ্টি গঙ্গাফড়িং

প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের এক অনুসঙ্গ গঙ্গাফড়িং। মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালার অপরূপ সৃষ্টি।
গঙ্গাফড়িং (Dragonfly)  Odonatla বর্গের Anisoptera উপবর্গের দিবাচর, বড় আকারের এক দল পতঙ্গ।

গঙ্গাফড়িং দেখতে অনেক সুন্দর। এদের চারটি বড়, বহুশিরাযুক্ত, পাতলা ডানা বসে থাকার সময় আনুভূমিক ও শরীরের দৈর্ঘ্য বরাবর সমকোণে থাকে। দেহ লম্বা, সরু এবং অনেক সময় লাল, সবুজ, নীল বা কালো দাগে চিত্রবিচিত্র। এর দেহের রং হালকা সবুজ, মুখটা ত্রিভুজের মতো, এটাকে সে খুশিমতো এদিক- ওদিকে ঘোরাতে পারে। মাথার বেশির ভাগ জুড়ে থাকে বিশাল দু পুঞ্জাক্ষি। গঙ্গাফড়িংয়ের চোখ দুটো বেশ বড় এবং দুটো ডানাও আছে। গায়ের রং সবুজ হওয়ার ফলে ঘাসের মধ্যে লুকিয়ে থাকতে তার সুবিধা হয়।

গঙ্গাফড়িং গাছের পাতার আড়ালে লুকিয়ে থেকে শিকার ধরে। গঙ্গাফড়িং একদৃষ্টিতে শিকারের দিকে তাকিয়ে থেকে তাকে কাবু করে ফেলে, তারপর সামনের হাত দুটো দিয়ে তাকে ঘায়েল করে গোগ্রাসে গিলে ফেলে। সামনের হাতে করাতের দাঁতের মত কাঁটা থাকায় শিকার কোনমতেই পালিয়ে যেতে পারে না।

গঙ্গাফড়িং প্রায় দুই মিটার দূরের বস্তু এবং ৪-১৩ মিটার দূরত্বের চলমান বস্তু দেখতে পায়। পা কাঁটাযুক্ত, ডালপালায় বসার উপযোগী, কিন্তু হাঁটাচলার জন্য নয়। উড়ার সময় এ পতঙ্গের গুটানো পাগুলি ঝুড়ির মতো দেখায় এবং তাতে শিকার ধরে রাখে।

এদের যৌনসঙ্গম অস্বাভাবিক ধরনের। স্ত্রী ও পুরুষ ফড়িং প্রায়ই একসঙ্গে ওড়ে এবং উড়ন্ত অবস্থায়ই মিলন সম্পন্ন করে।
স্ত্রী গঙ্গাফড়িং একসঙ্গে অনেকগুলো ডিম পাড়ে। তারপর শরীর থেকে আঠার মতো একধরনের জিনিস বের করে সেটা দিয়ে প্রত্যেকটা ডিমকে ঢেকে দেয়। এর ফলে ঐ আঠার ক্যাপসুলের ভিতর ডিমটি বেশ নিরাপদে থাকতে পারে। ডিম পানিতে বা পানির আগাছার উপর লাগিয়ে দেয়। একটি স্ত্রী পতঙ্গ ৮০০টি পর্যন্ত ডিম পাড়ে। ডিম ফোটে ১-৩ সপ্তাহের মধ্যে। বাচ্চাদের অপূর্ণ রূপান্তর ঘটে। পানিতে ১-৫ বছর কাটায়।

এরা জলজ ক্ষুদে প্রাণী খায়, বিশেষত মেফ্লাই ও মশার লার্ভা। বড় জাতের গঙ্গাফড়িং -এর লার্ভা মাছের ছোট পোনাও খেতে পারে। বড় হতে হতে এরা প্রায় ১২ বার খোলস পালটায়।

পাখি, টিকটিকি, গিরগিটি– এরা হচ্ছে গঙ্গাফড়িংয়ের প্রধান শত্রু। তাই সাবধানে সে তাদের এড়িয়ে চলে।

গঙ্গাফড়িংকে নিয়ে অনেক কিংবদন্তী প্রচলিত আছে। অনেকের মনে এও বিশ্বাস রয়েছে যে, ভুল করে এই পোকার মুখের রস চোখে গেলে মানুষ অন্ধ  হয়ে  যায়। কেউ কেউ মনে করে গরু-বাছুর ঘাস খাওয়ার সময় যদি কোনক্রমে গঙ্গাফড়িং খেয়ে ফেলে, তবে সে নিশ্চিত মারা পড়বে। আমাদের দেশে অনেকে মনে করে, ছোট ছেলে হারিয়ে গেলে যদি গঙ্গাফড়িংকে দেখতে পায়, তবে সে হাত তুলে কোন্ পথে যেতে হবে তা বলে দেয়।

বাংলাদেশের প্রধান গঙ্গাফড়িং প্রজাতিগুলি Aeshnidae, Gomphidae Cordulogastridae Libellulidae গোত্রভুক্ত। তবে আজ পর্যন্ত জানা প্রায় ৩০টি প্রজাতির অধিকাংশই Libellulidae I Aeshnidae গোত্রের।

- বাংলা পিডিয়া অবলম্বনে আকতারের ক্যানভাস

শনিবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০১৫

শোকে অসুস্থ খালেদা জিয়া, ফিরে গেলেন শেখ হাসিনা

প্রিয় পুত্র আরাফাত রহমান কোকোর অকাল মৃত্যুশোকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে বর্তমানে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁর বিশেষ সহকারি শিমুল বিশ্বাস।

শনিবার রাত সোয়া আটটার দিকে বিএনপি চেয়ারপার্সনের  গুলশান কার্যালয়ে এক প্রেস বিফ্রিংএ তিনি এসব কথা বলেন।

শিমুল বিশ্বাস বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠপুত্র তারেক রহমান হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শনিবার দুপুরে মালয়েশিয়ায় ইন্তেকাল করেন।

শিমুল বিশ্বাস বলেন, শোকার্ত বেগম খালেদা জিয়াকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে তিনি সুস্থ বোধ করলে প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়ে দেয়া হবে। শিমুল বিশ্বাস এসময়  গণতন্ত্রের বিজয় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলেও ঘোষণা দেন।

এদিকে রাত ৮টা ৩৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু এবং তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরীসহ বেগম খালেদা জিয়াকে সমবেদনা জানাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ের সামনে এসে উপস্থিত হন। তিনি গাড়ী থেকে নেমে কার্যালয়ের সামনে আসেন। এসময় বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহাকরি শিমুল বিশ্বাস বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমদেকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা ও ইনজেকশনের মাধ্যমে  ঘুম পাড়িয়ে রাখার কথা অবহিত করেন। এর পরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফিরে যান।

আরাফাত রহমান কোকোর বর্ণাঢ্য জীবন

ঢাকা : শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠপুত্র আরাফাত রহমান কোকো। তিনি ছিলেন একজন সফল ব্যবসায়ী। তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ওল্ড ডিওএইচএস ক্লাবের সাবেক চেয়ারম্যান ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক, ক্রীড়া সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের সঙ্গে ওতোপ্রোত ভাবে জড়িত ছিলেন।

আরাফাত রহমানের জন্ম ও বেড়ে উঠা: শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠপুত্র আরাফাত রহমান কোকোর জন্ম ১৯৬৯  সালে ঢাকায়। ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে গ্রেফতারের আগ পর্যন্ত মা বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গেই ছিলেন আরাফাত রহমান কোকো। শিক্ষা জীবনে ঢাকার বি এফ শাহীন কলেজে লেখাপড়া করেন আরাফাত রহমান কোকো।

১৯৬৯ সালে জিয়াউর রহমান স্বপরিবারে ঢাকায় চলে আসলে কিছুদিন জয়দেবপুরে থাকার পর বাবা জিয়াউর রহমানের চাকরির সুবাদে চট্টগ্রামের ষোলশহর এলাকায় বসবাস করেন তারা। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে মায়ের সাথে কিছুদিন আত্মগোপন করে থাকার পর ১৬ মে নৌপথে পরিবারের সাথে ঢাকায় চলে আসেন কোকো। এরপর বড় খালা খুরশিদ জাহানের বাসায় ১৭ জুন পর্যন্ত থাকেন পরিবারের সবাই। ২ জুলাই সিদ্ধেশরীতে জনাব এস আব্দুল্লাহর বাসা থেকে পাক সেনারা মা ও বড়ভাই তারেকসহ আরাফাত রহমান কোকোকে বন্দি করে। তাঁরা ১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে বন্দি ছিলেন। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হলে মা-ভাইসহ তিনি মুক্তি পান।

ব্যক্তি জীবনে বাবা জিয়াউর রহমান সাবেক সেনাবাহিনীর প্রধান ও রাষ্ট্রপতি, মা বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী, এবং বড় ভাই তারেক রহমান বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হলেও আরাফাত রহমান কোকো ছিলেন অনেকটা পর্দার আড়ালে। রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ তার ছিল না। ব্যবসা বাণিজ্যসহ সামাজিক কর্মকান্ডেই সময় ব্যয় করতেন তিনি।

জেল-জুলুম, প্রবাসী জীবন গ্রহন: ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির  মাধ্যমে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এলে জিয়া পরিবারের উপর নেমে আসে রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের খড়গ। একই বছরের ৩ সেপ্টেম্বর ভোরে সেনানিবাসের বাড়ি থেকে মা বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে গ্রেফতার হন তিনি। সেনা সমর্থিত সরকারের অমানুষিক নির্যাতনে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে বিদেশে চিকিৎসার জন্য প্যারোলে মুক্তি দেয়া হয় তাকে।

২০০৮ সালের ১৮ জুলাই চিকিৎসার জন্য সপরিবারে ব্যাংকক যান আরাফাত রহমান কোকো। এরপর চিকিৎসা শেষে তিনি মালয়েশিয়াতে চলে যান এবং সেখানেই সপরিবারে বসবাস করে আসছিলেন।

২০১২ সালে খালেদা জিয়া সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা করাতে গেলে সেখানে কোকোর সাথে সিঙ্গাপুরে সাক্ষাত করেন তিনি। সবশেষ ২০১৪ সালে সৌদি আরবে জিয়া পরিবার একত্রিত হলেও আসতে পারেননি আরাফাত রহমান কোকো।

কোকোর বিরুদ্ধে যত মামলা: জরুরি অবস্থার সেনা সমর্থিত সরকারের সময় দেশের অন্যান্য ব্যাবসায়ীদের মতো তিনিও হয়রানির শিকার হন। বিভিন্ন অভিযোগে তার বিরুদ্ধে সাতটি হয়রানিমূলক মামলা দেয়া হয়।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে কোকোর বিরুদ্ধে গুলশান থানায় দুটি চাঁদাবাজির মামলা এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে একটি মামলা করে দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সোনালী ব্যাংকের ঋণখেলাপের মামলায় ভাইয়ের (তারেক রহমান) সঙ্গে এবং গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় মা বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাকেও আসামি করা হয়।

এরপর বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ২০০৯ সালের ১৭ মার্চ সিঙ্গাপুরে ২০ কোটি টাকার বেশি অর্থের অবৈধ লেনদেনের অভিযোগে কাফরুল থানায় আরাফাত রহমান কোকোর বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। ২০১১ সালের ২৩ জুন এ মামলার রায় হয়।  মামলায় পলাতক দেখিয়ে কোকোকে ছয় বছরের সশ্রম কারাদ-াদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে সাড়ে ১৯ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়।
কোকোর বিরুদ্ধে আয়কর ফাঁকির অভিযোগে ২০১০ সালের ১ মার্চ আরেকটি মামলা করে এনবিআর।

পারিবারিক জীবন: পারিবারিক জীবনে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলী রহমান এবং জাফিয়া রহমান ও জাহিয়া রহমান নামে দুই মেয়ে রয়েছে। তারাও বর্তমানে তার সঙ্গে মালয়েশিয়াতে বসবাস করছেন। প্রায় সাত বছর ধরে তিনি নির্বাসিত জীবন যাপন করে আসছিলেন।

ক্রীড়াঙ্গনে আরাফাত রহমান কোকো: ২০০৩ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন আরাফাত রহমান কোকো। এছাড়া ওল্ড ডিওএইচএস ক্লাবের চেয়ারম্যানও ছিলেন তিনি।

এদিকে আগেই থেকেই শ্বাসকষ্ট জনিত রোগে অসুস্থ ছিলেন আরাফাত রহমান কোকো। সবশেষ ২৪ জানুয়ারি শনিবার তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাকে মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি মালায়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। (আকতারের ক্যানভাস)

বৃহস্পতিবার, ২২ জানুয়ারী, ২০১৫

মণিপুরিদের অহঙ্কারের প্রতীক এস কে সিনহা

তিনি প্রমান করেছেন জীবনের লক্ষ যদি থাকে স্থির আর সেটাতে থাকা যায় অবিচল ও কর্মনিষ্ট তাহলে সে লক্ষ অর্জিত হবেই। তিনি প্রতিনিধিত্ব করছেন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর। ইতিহাস গড়ে হয়ে উঠেছেন পুরো মণিপুরি জাতির অহঙ্কারের প্রতীক। তিনি আর কেউ নন। তিনি হলেন বাংলাদেশের নতুন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।

উঠে এসেছেন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার তিলকপুর নিভৃত পল্লীর এক মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে। কর্মজীবনে প্রবেশের শুরুতেই শপথ নিয়েছেলেন এ ভুবনের শীর্ষে পৌঁছুবেন একদিন। গত ১৭ই জানুয়ারি লালিত সেই স্বপ্নের শেষ সীমা ছুঁলেন তিনি। বাংলাদেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেনে তিনি। তিনিই বাংলাদেশের প্রথম অমুসলীম প্রধান বিচারপতি।

এস কে সিনহার পুরো নাম সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। আপনজনরা ডাকে সুরেন নামে। ১৯৫১ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার নিভৃত পল্লী তিলকপুর গ্রামে তার জন্ম। উন্নয়নের ছোঁয়া থেকে অনেক দূরে থাকলেও গ্রামটিতে শিক্ষার আলো জ্বলছিল  অনেক আগে থেকেই। স্কুল শিক্ষক ললিত মোহন সিনহা ও ধনবতী সিনহার দ্বিতীয় সন্তান এস কে সিনহা পড়ালেখার পাঠ শুরু করেন গ্রামের রানীবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রাথমিক শিক্ষা শেষে ভর্তি হন কমলগঞ্জ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে। ১৯৬৬ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর এস কে সিনহা গ্রাম ছেড়ে আসেন সিলেটে। শিক্ষার্থী হিসেবে নাম লেখান সিলেটের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ মদন মোহন কলেজে। সেখান থেকে ১৯৬৮ সালে পাস করেন উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ১৯৭০ সালে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এলএলবি ডিগ্রি নেওয়ার পর ১৯৭৪ সালের ১৯শে ডিসেম্বর আইন পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করেন তিনি।

আইনজীবী হিসেবে যোগ দেন সিলেট জেলা জজ কোর্টে। সিলেটের প্রথিতযশা আইনজীবী সুলেমান রাজা চৌধুরীর জুনিয়র হিসেবে প্র্যাকটিস শুরু করেন। থাকতেন নগরীর তাঁতিপাড়ায়। ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত সিলেটেই ছিলেন। ’৭৮ সালে হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে নাম লেখান তিনি। ১৯৯০ সালে এস কে সিনহার পরিচিতি হয় আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে। স্বনামধন্য আইনজীবী এস আর পালের জুনিয়র হিসেবে আইন পেশা চালিয়ে যান হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে শপথ নেওয়ার আগ পর্যন্ত। ১৯৯৯ সালের ২৪শে অক্টোবর হাইকোর্টের বিচারক হিসেবে যোগ দেন এস কে সিনহা। ১০ বছর পর ২০০৯ সালের ১৬ই জুলাই তিনি আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। সবশেষ গত ১৭ই জানুয়ারি, বাংলাদেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন তিনি।

বাবা ললিত মোহন সিনহা চেয়েছিলেন সরকারি কোন চাকরি নিয়ে নিশ্চিত জীবনে থিতু হন ছেলে। তবে সরকারি চাকরির প্রতি আগ্রহী ছিলেন না এস কে সিনহা। সুযোগ এসেছিল তবে চোখ ফেরাননি সেদিকে। হৃদয়জুড়ে ছিল আইনের ঘর-বারান্দা। শপথ ছিল মনে এ ভুবনের শীর্ষে পৌঁছুবেন একদিন।

স্বপ্নের মতো সাজানো এস কে সিনহার ব্যক্তিজীবনও। ১৯৭৮ সালের ২ জুলাই কমলগঞ্জের মাধবপুর ইউনিয়নের জবলারপার গ্রামের সমরেন্দ্র কুমার সিনহা ও হেমলতা সিনহার বড় মেয়ে সুষমা সিনহার সঙ্গে ঘর বেঁধেছিলেন এস কে সিনহা। সুখী সংসারে তার দুই মেয়ে। বড় মেয়ে সূচনা সিনহা অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী, স্বামী বিদ্যুৎ প্রকৌশলী। ছোট মেয়ে আশা সিনহা স্বামীর সঙ্গে কানাডায়।

প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বড় ভাই নরেন্দ্র কুমার সিনহা মার্কেন্টাইল মেরিন বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী, থাকেন চট্টগ্রামে। একমাত্র বোনটি তার ছোট, সত্যবামা দেবী ২০০৯ সালে মারা গেছেন। ছোট দুই ভাইয়ের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা নীলমণি সিনহা গ্রামের বাড়িতেই থাকেন। সব চেয়ে ছোট ভাই অনন্ত কুমার সিনহা পেশায় দন্ত চিকিৎসক, থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে।

ব্যস্ত জীবনে খুব কমই অবসর মেলে এস কে সিনহার। সেটারও মাপা মাপা ব্যয় করেন তিনি। তার স্ত্রী সুষমা সিনহা মানবজমিনকে বললেন, অবসর পেলে গান শুনেন বাংলাদেশের নতুন প্রধান বিচারপতি। রবীন্দ্র সংগীতই তার পছন্দের তালিকায়। খাবারে তেমন বাছবিচার না থাকলেও দুর্বলতা রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভর্তার প্রতি। কোষ্ঠী  বিচারে তিনি তুলা রাশির জাতক। পোশাক হিসেবে প্রথম পছন্দ পাঞ্জাবি-পায়জামা। কাছে টানে হালকা ধরনের রঙগুলো।

কেমন মানুষ এস কে সিনহা। তার সহপাঠী-বন্ধুদের সঙ্গে আলাপে বুঝা যায় ‘সুরেন’ সবার প্রিয়ই। স্কুল জীবনের সহপাঠী ও ভগ্নিপতি রায়মোহন সিংহ জানান, তিনি যে মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান- একথাটি সব সময়ই স্মরণে রাখেন এস কে সিনহা। সব সময়ই সততার প্রতি খেয়াল রেখেই এগিয়ে গেছেন। রায়মোহন সিংহ বলেন, পড়াশোনায় কোন বিরতি নেই তার। শত ব্যস্ততার মাঝে ফাঁক পেলেই বইয়ের পাতা চোখের সামনে মেলে ধরেন এস কে সিনহা।

এস কে সিনহার বাল্যবন্ধু অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক লক্ষ্মীকান্ত সিংহ। বন্ধুকে নিয়ে বেশ গর্বই তার। বললেন, এতো উঁচু মাপের মানুষ তবে এতটুকু বদলে যায়নি সুরেন। শত ব্যস্ততার মাঝেও ও আমার সঙ্গে নিয়মিতই ফোনে আলাপ করে। প্রধান বিচারপতি হওয়ার পরও ওর সঙ্গে আমার ফোনে কথা হয়েছে।

বুধবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১৫

১৫ দিনে গুলিতে ১১ নেতা নিহত // বিরোধী নেতাকর্মীদের হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছে সরকার: বিএনপি

আকতার হোসেন : নিজেদের অবৈধ ক্ষমতা ধরে রাখতে সরকার তালিকা করে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। গত ১৫ দিনের চলমান আন্দোলনে কেবল মাত্র পুলিশ ও সরকার সমর্থকদের গুলিতে অন্তত ১১ জন বিরোধীদলীয় নেতা নিহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় দেশের সুশীল সমাজ ও পেশাজীবীসহ সব শ্রেণীর মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

তথ্যমতে, ‘৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবসে’র কর্মসূচিকে ঘিরে গড়ে ওঠা চলমান আন্দোলনে দেশের বিভিন্নস্থানে পুলিশ ও সরকার সমর্থকদের গুলিতে বিএনপি-জামায়াতের অন্তত ১১ নেতা নিহত হয়েছেন। এছাড়া দেশব্যাপী বহু নেতাকর্মীকে অপহরণ ও গুম করা হয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এর মধ্যে গত কয়েকদিন ধরে বেড়ে গেছে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহতের ঘটনা। প্রায় প্রতিরাতেই রাজধানীসহ বিভিন্নস্থানে গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহতের খবর পাওয়া যাচ্ছে। এসব ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহতরা প্রায় সবাই আগে থেকেই পুলিশ হেফাজতে ছিল বলে তাদের পরিবার ও দলের অভিযোগ। এদের কাউকে রাস্তা থেকে আবার কাউকে জেলগেট থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে নিহতদের পরিবার।

সবশেষ সোমবার গভীর রাতে রাজধানীর খিলগাঁওয়ে জোড়াপুকুর মাঠে ডিবি পুলিশের সাথে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয় ছাত্রদল নেতা নুরুজ্জামান জনি।

দলের অভিযোগ, সোমবার বিকালে খিলগাঁও থানা বিএনপি নেতা দিপু সরকার, যুবদল নেতা মাইনুদ্দিন ও ছাত্রদল নেতা নুরুজ্জামান জনিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের গেট থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায় সাদা পোষাকধারীরা। এরপর মঙ্গলবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে জনির লাশ পাওয়া যায়। তবে অন্য দু’জনের হদিস মেলেনি এখনো।

নিহত জনির বাবা ইয়াকুব আলী জানান, ছোট ভাই মনিরুজ্জামানকে দেখতে সোমবার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে যায় জনি। সেখান থেকে সাদা পোশাকধারী পুলিশ সদস্যরা তাকে ধরে নিয়ে যায়।

এর আগে সোমবার রাত সাড়ে তিনটার দিকে নড়াইলের পৌর কাউন্সিলর ও জামায়াত নেতা ইমরুল কায়েস মতিঝিলের এজিবি কলোনী এলাকায় ডিবির সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। তার শরীরে অন্তত ১০টি গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে।

গত ১৫ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার থেকে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। ইমরুলের স্ত্রী জানান, ঢাকায় বেড়াতে এসে গত ১৫ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার থেকে নিখোঁজ হন তিনি। সোমবার সকালের ডিবি পুলিশের পক্ষ থেকে তাকে ফোন করে জানানো হয় যে, তার স্বামী আর নেই। ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গ থেকে তার লাশ নিয়ে যাওয়ার জন্য বলা হয়।

ইমরুলের স্ত্রী অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ পরিকল্পিতভাবে তার স্বামীকে গুলি করে হত্যা করেছে।

এর আগে শুক্রবার রাতে যৌথবাহিনীর অভিযানের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে র‌্যাবের সথে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন আরেক ছাত্রদল নেতা মতিউর রহমান। নিহত মতিউর শিবগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহ-সভাপতি ছিলেন।

বিএনপির দাবি, গ্রেফতারের পর পরিকল্পিতভাবে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।

এব্যাপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিএনপি সভাপতি অধ্যাপক মো. শাহজাহান মিঞা বলেন, মতিউর রহমানকে সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আটক করে। এরপর পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করে। তার বিরুদ্ধে থানায় কোনো মামলা বা জিডিও ছিল না।

এর আগে গত ১৮ জানুয়ারি চুয়াডাঙ্গা সদরে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের উপর্যুপরি ছুড়িকাঘাত ও গুলিতে নিহত হয় শঙ্করচন্দ্রপুর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি মেম্বার ও ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি সিরাজুল ইসলাম (৪৭)।

গত ১৬ জানুয়ারি র‌্যাবের ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জের শ্যামপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মতিউর রহমান (২৩)। সে শিবগঞ্জ উপজেলার বাজিতপুর গ্রামের আনসার আলীর ছেলে।

এ ব্যাপারে র‌্যাব জানায়, বিএনপি জোটের অবরোধে নাশকতার অভিযোগে আগের দিন বৃহস্পতিবার কানসাট বাজার থেকে মতিউরসহ ৩জনকে গ্রেফতার করা হয়। পরদিন তাদেরকে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে যায় র‌্যাব-৫ এর সদস্যরা। এসময় সন্ত্রাসীরা র‌্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করে এ পরিপ্রেক্ষিতে র‌্যাব পাল্টা গুলি চালালে মতিউর নিহত হয়।

১৫ জানুয়ারি নোয়াখালীতে যুবলীগ কর্মীদের গুলিতে নিহত হয় ছাত্রদল নেতা মোর্শেদ আলম পারভেজ। তিনি সোনাইমুরী ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

৭ জানুয়ারি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় ছাত্রদল কর্মী মহসিন উদ্দিন (৩০) ও যুবদল কর্মী  মিজানুর রহমান রুবেল (৩৭)।

জানা যায়, ঘটনার দিন সকালে চৌমুহনী বাজারে জামায়াত ও বিএনপি কর্মীরা মিছিল বের করতে চাইলে তাদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে মহসিন ও রুবেল গুলিবিদ্ধ হয়। তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

 এদিকে ‘৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালন উপলক্ষে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ সারাদেশে বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও সরকার সমর্থকদের সঙ্গে ২০ দল নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এদিন দেশের পৃথক স্থানে সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়। এদের মধ্যে নাটোরের তেবাড়িয়ায় গণতন্ত্র হত্যা দিবসে কালো পতাকা নিয়ে মিছিল করার সময় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা পুলিশের পাহারায় মিছিলে গুলি চালালে ছাত্রদল নেতা রাকিব ও রায়হান রানা নিহত হন। রাজশাহীর বানেশ্বরে কালো পতাকা নিয়ে মিছিল করার সময় পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা মিছিলে গুলি চালালে এতে বিএনপি কর্মী মজির উদ্দিন নিহত হন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে বিএনপি কর্মী জমশেদ আলী নিহত হয়েছে। এছাড়া ওই দিন সারাদেশে সংঘর্ষে সহস্রাধিক আহত ও ১১ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়।

মূলত, ৫ জানুয়ারি বর্তমান সরকারের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন। ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ উপলক্ষে রাজধানীতে সমাবেশ করার অনুমতি চায় বিএনপি। কিন্তু ডিএমপির পক্ষ থেকে অনুমতি না মেলায় সে সমাবেশ করা সম্ভব হয়নি।

এদিকে কর্মসূচির দুই দিন আগে ৩ জানুয়ারি রাতেই গুলশানে নিজ কার্যালয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করা হয়। পরে ৫ জানুয়ারি খালেদা জিয়া কার্যালয় থেকে বের হতে চাইলে পুলিশ পিপার স্প্রে নিক্ষেপ করে ও গেটে তালা লাগিয়ে দেয়।

বিএনপি নেতারা অভিযোগ করে বলেন, নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগ সরকার। এজন্যই দেশব্যাপী গুম-খুনে মেতে উঠেছে তারা। আর এ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী পুলিশ-র‌্যাবকে।

এছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাসা ও অফিসে হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সরকার সমর্থকরা এসব হামলায় নেতৃত্ব দিচ্ছে বলে অভিযোগ বিএনপি নেতাদের। শুধু গুপ্ত হত্যাই নয়, গত কয়েকদিনে গুলশানে নিজ কার্যালয়ে অবরুদ্ধ খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আসা নেতাকর্মীদেরও উপরও হামলা চালানো হয়েছে। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রিয়াজ রহমানের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে ও গুলি বর্ষণ করে দুর্বৃত্তরা। এসময় বিশিষ্ট কূটনীতিক রিয়াজ রহমানের শরীরে চারটি গুলি লাগে।

কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আইন বহির্ভূতভাবে বিরোধী নেতাকর্মীদের হত্যার সমালোচনা করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া জাস্ট নিউজকে জানান, এধরনের হত্যাকান্ড সংবিধান পরিপন্থী, আইন ও মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। আমরা পুলিশের এ ধরনের কাজের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সরকারের এজেন্ডা বাস্তাবায়নের জন্যই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যাবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

এ ব্যাপারে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, বর্তমান সরকার তাদের অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের পরিকল্পিতভাবে হত্যার নীল নকশায় মেতে উঠেছে।

তিনি বলেন, ২০ দলীয় জোটের অবরোধ কর্মসূচিতে জনসমর্থন দেখে দ্বিগবিদিগ জ্ঞানশূন্য হয়ে নিজেদের অস্তিত টিকিয়ে রাখতে ও ক্ষমতা সুরক্ষিত করতেই অবৈধ সরকার বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে গুম ও তথাকথিত বন্দুক যুদ্ধের নামে পৈশাচিকভাবে হত্যা করছে। তবে এসব হত্যাকান্ড চালিয়ে অবৈধ সরকারের শেষ রক্ষা হবে না।

ফের খুলল সৌদির শ্রম বাজার: শীঘ্রই কার্যকর

বহু প্রতীক্ষার পর বাংলাদেশীদের জন্য খুলল সৌদি আরবের শ্রম বাজার। বাংলাদেশী শ্রমিকদের ফের ভিসা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সৌদি সরকার। খুব শিগগির বাংলাদেশের শ্রমিকরা সৌদি আরব যেতে পারবেন।

সৌদি আরব সফররত বাংলাদেশের প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন দেশটির শ্রম মন্ত্রীর কার্যালয়ে রবিবার সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাতের পর সোমবার এ কথা জানিয়েছেন সে দেশের শ্রমমন্ত্রী আবদেল ফাতেহ।

দেশটির গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ২০০৮ সাল থেকে সৌদি আরবে বাংলাদেশী নতুন শ্রমিক নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা ছিল। তবে দুই দেশের কল্যাণেই এ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হবে। খুব শিগগিরই আমরা বাংলাদেশীদের জন্য ভিসা দেওয়া শুরু করব। এ সময় তিনি বাংলাদেশী শ্রমিকদের প্রয়োজনীয় কারিগরি প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তোলার আহ্বান জানান।

বৈঠকে খন্দকার মোশাররফ হোসেন সৌদি শ্রমমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করে বলেন, বিদেশে কাজ করতে ইচ্ছুক এমন ব্যক্তিদের একটি ডাটা সেন্টার তৈরি করেছে সরকার। এতে ২২ লাখের বেশি লোক নিবন্ধিত হয়েছেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে দক্ষ শ্রমিক মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও হংকংয়ে যাচ্ছেন বলেও সৌদি মন্ত্রীকে অবহিত করেন তিনি।

বৈঠকে দুই দেশের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নত থেকে উন্নততর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারেও একমত পোষণ করেন দুই দেশের মন্ত্রীরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শহিদুল ইসলাম বুধবার বলেন, আমরা আশা করছি, খুব শিগগিরই বাংলাদেশী শ্রমিকদের ভিসা দেয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হবে এবং নতুন করে শ্রমিক নিয়োগ শুরু করা হবে।

প্রসঙ্গত, ১৭ জানুয়ারি শনিবার সকাল থেকে ৮ সদস্যের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল নিয়ে সৌদি আরবে অবস্থান করছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন। সফর শেষে আগামী ২৪ জানুয়ারি মন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দল দেশে ফিরবে।

শনিবার, ১০ জানুয়ারী, ২০১৫

বিলুপ্তির পথে গফরগাঁওয়ের ঐতিহ্যবাহী পলো উৎসব


বাংলা বর্ষপঞ্জিকা মতে এখন চলছে পৌষ মাস। বাংলা ঋতুতে হাড়কাপানো শীতের মৌসুম। বর্ষার পরে এই মাসে সাধারণত বাংলার ঐতিহ্যবাহী খাল-বিল, নদী নালা ও হাওর বাওরের বর্ষার থৈ থৈ পানি সড়ে গিয়ে বিস্তৃর্ণ মাঠ জেগে উঠে। কৃষকরা সেই মাঠে ফসল ফলানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

অন্যদিকে বর্ষার পানি সড়ে যাওয়ায় অপেক্ষাকৃত নিচু জমিতে বা গর্তে হাটু পরিমান পানি অবশিষ্ট থাকে যেখানে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমানে দেশী মাছ। এই মাছ শিকারের জন্য গ্রামের ছেলে-বুড়ো সবাই নেমে পড়ে কাদা পানিতে। উৎসবের আয়োজনে সেসব মাছ শিকার করা হয়। বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্যের মধ্যে এটাও একটা সংস্কৃতি যে শীত মৌসুমে দল বেধে মাছ শিকার করা।

জানা যায়, সাধারনত পৌষ মাস থেকে শুরু হয়ে জৈষ্ঠ্য মাস পর্যন্ত গফরগাঁওয়ের হাওড়, বাঁওর, ছোট নদী-নালা ও খাল-বিল প্রায় শুকিয়ে যায়। তখন নির্দিষ্ট বিল বা ছোট নদীর আশে পাশে হাট-বাজার, গ্রামগুলোতে মাইকে বা ঢোল পিটিয়ে জানান দেওয়া হতো মাছ শিকারীদের।

জানানোর পর মাছ শিকারী পলো (দেশীয় পদ্ধতিতে মাছ ধরার সরঞ্জাম), টাকজাল, জালি, ক্ষেতজাল, চাবিসহ বিভিন্ন রকম মাছ শিকারের সরঞ্জাম নিয়ে মিছিলের মতো করে উপস্থিত হতো নির্দিষ্ট বিল বা ছোট নদীতে। দলবেধে মাছ ধরতে যাওয়ার কোন বাধ্যবাধকতা নেই। একসঙ্গে এরকম হাজার হাজার মাছ শিকারীদের নির্দিষ্ট বিল বা নদীতে মাছ শিকারকে হাত বাওয়া আবার কোন কোন এলাকায় পলো বাওয়া বলা হয়।

হাত বাওয়া বা পলো বাওয়া উৎসব চলত সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত। এই উৎসবে অনেকে একাধিক বা তার চেয়ে বেশি মাছ পেলেও কেউ কেউ আবার একটি মাছও পেত না। মাছ না পেলেও তাদের কোন দুঃখ থাকত না। দলবদ্ধভাবে মাছ ধরতে যাওয়ার আনন্দটাই মূলত মূখ্য। মাছ প্রাপ্তিটা মূল বিষয় নয়। হাত বাওয়া-পলো বাওয়াকে কেন্দ্র করে বিলের আশপাশে দশ গ্রামে ৩/৪ দিন পূর্ব থেকেই উৎসবের আমেজ চলে আসত। বাড়ির মা-ঝি’রা দল বেঁধে মসল¬া বাটার পাশাপাশি গীত-সংগীতের আয়োজন করে  থাকত। হাত বাওয়া-পলো বাওয়ার পর চলতে থাকত পাড়া প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে উপহার হিসেবে মাছ পাঠানো।

নানা কারণে এ ‘পলো বাওয়া’ উৎসব এখন আর তেমন দেখা যায়না। ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী এ সংস্কৃতি। বিল বা ছোট জলাশয়ে ইতিমধ্যে মৎস্য চাষের আওতায়, আধুনিক সেচ ব্যবস্থার আওতায় আনায় এখন ধীরে ধীরে এ উৎসব হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম অঞ্চল থেকে। ইদানীং মাছশূন্য খাল-বিলে হাত বাওয়া-বিল বাওয়া উৎসব আর দেখা যায়না।

মঙ্গলবার, ৬ জানুয়ারী, ২০১৫

বাংলাদেশের শীর্ষ ধণী যারা


ধনী আর বিত্তশালীদের নিয়ে আলোচনা হলে আমরা সবসময় সাধারণত বিশ্বের সেরা ধনী ব্যক্তিদের নিয়েই আলোচনা করি। বাহাদুরি, বিলাসিতা, বা নীতিবাক্য, অধ্যবসায়, সাফল্য আর উদ্যমের কথা আসলে কেবল ওয়ারেন বাফেট, বিল-গেটসদের নামই উচ্চারন করে থাকি। অথচ আমাদের দেশেও যে অনেক বিলিনিয়ার রয়েছে তাদের কথা একবারও বলিনা। অনেকে তাদের নাম জানলেও সব সময় একধরণের নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করি। অথচ ইতিবাচক ভাবে দেখলে তাদের কাছ থেকেও নিতে পারি অনেক অনুপ্রেরণা। তাই আজকে আসুন জেনে নেই বাংলাদেশে ধনীদের তালিকায় শীর্ষ দশে কে কে আছেন...



১.    মূসা বিন শমসের: বর্তমানে বাংলাদেশের শীর্ষ ধনী মূসা বিন সামসের। তবে প্রিন্স মূসা নামেই তিনি  সমধিক পরিচিত। বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার সন্তান মুসা এখনো অনেকের কাছেই রহস্যময় পুরুষ। তাকে বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানি বাণিজ্যের অগ্রদূত বলা হয়। তিনি ড্যাটকো গ্রুপের এর মালিক।

ফোর্বসের তথ্য অনুযায়ী, মুসা বিন শমসেরের মোট অর্থের পরিমাণ ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ৯৫ হাজার কোটি টাকা)। এর মধ্যে সাত বিলিয়ন ডলার আইনি জটিলতায় আটকে আছে সুইস ব্যাংকে।

বেশভূষা ও অঙ্গসজ্জায় মুসা ব্যবহার করেন ১৬ ক্যারেটের একটি রুবি। যার দাম ১০ লাখ ডলার। ৫০ হাজার ডলার দামের একটি চুনিও পরেন তিনি। এ ছাড়াও পরেন ৫০ হাজার ডলার মূল্যের একটি হীরা ও এক লাখ ডলার মূল্যের একটি পান্না (এমেরাল্ড)। নিত্যদিনের চলাফেরায় অথবা বিশেষ কোনো অনুষ্ঠানে তিনি ৭০ লাখ ডলারের বেশি মূল্যের গহনা-অলঙ্কার পরেন। তার পরনের কয়েকটি স্যুট স্বর্ণ সুতা খচিত। তাকে কখনো এক স্যুট পরিহিত অবস্থায় দুবার দেখা যায় না। প্রতিটি স্যুটের মূল্য পাঁচ থেকে ছয় হাজার পাউন্ড। প্রতিদিন তিনি গোসল করেন গোলাপ পানিতে। আর বাংলাদেশী পানি তিনি পান করেন না। বিদেশ থেকে আমদানি করা পানি তিনি পান করেন।

তিনি হীরকখচিত যে জুতা পরেন তার প্রতি জোড়ার মূল্য এক লাখ ডলার। তার সংগ্রহে রয়েছে রতœখচিত হাজারো জুতা।
এক কোটি ডলার মূল্যের মন্ট বাল্ক কলম ব্যবহার করেন তিনি। ফ্রান্সের তৈরি ওই কলম মাত্র একটিই তৈরি করেছে নির্মাতা কোম্পানি।

২.    সালমান এফ রহমান: বেক্সিমকো গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা মালিক। তিনি প্রায় ৬০০ মিলিয়ন ডলারের মালিক । তিনি আইএফআইসি ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও উদ্যোক্তা পরিচালক।
 বাংলাদেশ এক্সপোর্ট-ইম্পোর্ট কোম্পানি বা বেক্সিমকো তাদের যাত্রা শুরু করেছিলো ১৯৭২ সালের প্রথম দিকে বারটার ট্রেডিং করাই ছিলো তাদের মূল ব্যবসা সত্তর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে বেক্সিমকো উৎপাদন শিল্পে বিনিয়োগ শুরু করে৻ আশির দশকে ঔষধ শিল্পে বেসরকারী বিনিয়োগের সুযোগ হবার পরে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসে বিনিয়োগ করে৻ এরপর আসে টেক্সটাইলসের খাতে বিনিয়োগ। এখন বেক্সিমকো বিমান পরিবহন খাতকেও তাদের ‘‘কোর বিজনেস‘‘-এ অন্তর্ভুক্ত করেছে।


৩.    আহমেদ আকবর সোবহান (জন্ম : ১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২): তিনি প্রায় ৬০০ মিলিয়ন ডলারের মালিক। বাজার মূল্য এবং আর্থিক প্রবৃদ্ধির হিসেবে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের মালিক ও শিল্পদ্যোক্তা।
বিচক্ষণ এবং দূরদৃষ্টি সম্পন্ন এই ব্যবসায়ী বাংলাদেশের শিল্প ও বাণিজ্য খাতকে সুসংহত করতে বসুন্ধরা গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন। আবাসন দিয়ে শুরু হলেও দিনে দিনে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবসায় সম্প্রসারিত হয়েছে সিমেন্ট, কাগজ, ইস্পাতজাত পণ্য উৎপাদন, এলপি গ্যাস, বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স নির্মাণসহ জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন খাতে। দেশের শীর্ষস্থানীয় চারটি মিডিয়া হাউজ (দৈনিক কালের কণ্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন, ডেইলি সান ও বাংলানিউজ) এই গ্রুপের মালিকানাধীন।

৪.    এম এ হাশেম: পারটেক্স গ্রুপ ও ইউসিবিএল ব্যাংকের চেয়ারম্যান । তিনি প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলারের মালিক।  পারটেকস গ্রুপের চেয়ারম্যান।
সাবেক এই মন্ত্রী  ঢাকায় ২৫০ কোটি টাকা খরচ করে নিজের বাড়ি বানিয়েছিলেন। নকশা এবং প্রকৌশলী সবাই এসেছিলেন ফ্রাঞ্চ থেকে। তিনি পারটেক্স গ্রুপের ছাড়াও দুইটা বেসরকারী ব্যাংকের মালিক। সিটি এবং ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের মালিক তিনি।

৫.    আজম জে চৌধুরী:  তিনি ইস্ট-কোস্ট গ্রুপের মালিক।  প্রাইম ব্যাংকের চেয়ারম্যান এবং মবিল যমুনা লুব্রিক্যান্টের সোল এজেন্ট। আজম জে চৌধুরীর পুরো নাম আজম জাহাঙ্গীর চৌধুরী। তার জন্ম মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার হোসেনপুর গ্রামে। মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেয়া আজম বর্তমানে প্রায় ৪১০ মিলিয়ন ডলারের মালিক।

আজমের শৈশব কাটে কুলাউড়ায়। তিনি কুলাউড়ার নবীণচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করে সিলেট এমসি কলেজে ভর্তি হন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজীতে মাস্টার্স করে ১৯৮১ সালে ব্যবসায় পুরোপুরি আত্মনিয়োগ করেন। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রাইম ব্যাংক প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর তিনি এর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ব্যাংকের সাবেক এই চেয়ারম্যান বর্তমানে মবিল যমুনা লুব্রিকেন্টের এমডি। ইংরেজী দৈনিক নিউজ টুডে এবং একুশে টিভির পরিচালক ছাড়াও তিনি আন্তর্জাতিক কুরিয়ার টিএন্ডটির পরিচালকসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী গ্রুপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।

তিনি ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠা করেন বহুজাতিক কোম্পানি ইস্টকোস্ট গ্রুপ। এরপর গ্রীণ ওয়েজ ইন্ডাষ্ট্রিজ লিঃ, ঘোরাশাল পাওয়ার স্টেশন ও সিদ্ধিগঞ্জে ২১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করেন। এছাড়া বাংলাদেশ ট্রেড সিন্ডিকেট, ইস্টকোস্ট শিপিং লাইন, গ্রীণওয়েজ ইন্ডাষ্ট্রি, ইষ্ট কোস্ট ট্রেডিং, সাউথ এশিয়া প্লাষ্টিক কোম্পানি, গ্রীণডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মালিক ও পরিচালক তিনি। গ্রীণ ডেল্টাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সাবেক চেয়ারম্যান আজম জে চৌধুরী বাংলাদেশ নরওয়ে চেম্বারের সভাপতিও।আর্তমানবতার সেবায় তার অর্থে বিভিন্ন স্কুল কলেজ, বৃদ্ধাশ্রমসহ নানা সামাজিক প্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে।

৬.    গিয়াস উদ্দিন আল মামুন: তিনি ঠিকাদারি, রিয়েল এস্টেট, হোটেল ও নৌ পরিবহন (জাহাজ) ব্যবসা রয়েছেন তাঁর। টাকার পরিমান ৪০০ মিলিয়ন ইউ এস ডলার।

৭.    রাগিব আলী:  তিনি চা উৎপাদন ব্যাবসায় সফল একজন ব্যাবসায়ী। তিনি সাউথ ইস্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান। তিনি প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলারের মালিক ।

৮.    শামসুদ্দিন খান: তিনি একে খান এন্ড কোম্পানি লিঃ-এর চেয়ারম্যান এবং ডিরেক্টর । তিনিও প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলারের মালিক ।

৯.    ইকবাল আহমেদ: তিনি সিলেটের একজন ব্যাবসায়ী। সামুদ্রিক খাবার ব্যবসায় তিনি সফল। তিনি সীমার্ক গ্রুপ লিবকো ব্রাদার লিঃ-এর চেয়ারম্যান এবং ডিরেক্টর । তিনি প্রায় ২৫০-২৯০ মিলিয়ন ডলারের মালিক ।

১০.    সাইফুল ইসলাম কামাল: তিনি নাভানা লিঃ ও নাভানা সিএনজি লিঃ-এর চেয়ারম্যান এবং ডিরেক্টর । তিনিও প্রায় ২৯০ মিলিয়ন ডলারের মালিক ।



(বি.দ্র: উপরুক্ত পরিসংখ্যানে তথ্যগত দূর্বলতা রয়েছে। তবে আমার এই লেখার উদ্দেশ্য শুধুমাত্র তাদের পরিচয় করিয়ে দেয়া।)