বুধবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০১৫

সৃষ্টিকর্তার বিচিত্র সৃষ্টি গঙ্গাফড়িং

প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের এক অনুসঙ্গ গঙ্গাফড়িং। মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালার অপরূপ সৃষ্টি।
গঙ্গাফড়িং (Dragonfly)  Odonatla বর্গের Anisoptera উপবর্গের দিবাচর, বড় আকারের এক দল পতঙ্গ।

গঙ্গাফড়িং দেখতে অনেক সুন্দর। এদের চারটি বড়, বহুশিরাযুক্ত, পাতলা ডানা বসে থাকার সময় আনুভূমিক ও শরীরের দৈর্ঘ্য বরাবর সমকোণে থাকে। দেহ লম্বা, সরু এবং অনেক সময় লাল, সবুজ, নীল বা কালো দাগে চিত্রবিচিত্র। এর দেহের রং হালকা সবুজ, মুখটা ত্রিভুজের মতো, এটাকে সে খুশিমতো এদিক- ওদিকে ঘোরাতে পারে। মাথার বেশির ভাগ জুড়ে থাকে বিশাল দু পুঞ্জাক্ষি। গঙ্গাফড়িংয়ের চোখ দুটো বেশ বড় এবং দুটো ডানাও আছে। গায়ের রং সবুজ হওয়ার ফলে ঘাসের মধ্যে লুকিয়ে থাকতে তার সুবিধা হয়।

গঙ্গাফড়িং গাছের পাতার আড়ালে লুকিয়ে থেকে শিকার ধরে। গঙ্গাফড়িং একদৃষ্টিতে শিকারের দিকে তাকিয়ে থেকে তাকে কাবু করে ফেলে, তারপর সামনের হাত দুটো দিয়ে তাকে ঘায়েল করে গোগ্রাসে গিলে ফেলে। সামনের হাতে করাতের দাঁতের মত কাঁটা থাকায় শিকার কোনমতেই পালিয়ে যেতে পারে না।

গঙ্গাফড়িং প্রায় দুই মিটার দূরের বস্তু এবং ৪-১৩ মিটার দূরত্বের চলমান বস্তু দেখতে পায়। পা কাঁটাযুক্ত, ডালপালায় বসার উপযোগী, কিন্তু হাঁটাচলার জন্য নয়। উড়ার সময় এ পতঙ্গের গুটানো পাগুলি ঝুড়ির মতো দেখায় এবং তাতে শিকার ধরে রাখে।

এদের যৌনসঙ্গম অস্বাভাবিক ধরনের। স্ত্রী ও পুরুষ ফড়িং প্রায়ই একসঙ্গে ওড়ে এবং উড়ন্ত অবস্থায়ই মিলন সম্পন্ন করে।
স্ত্রী গঙ্গাফড়িং একসঙ্গে অনেকগুলো ডিম পাড়ে। তারপর শরীর থেকে আঠার মতো একধরনের জিনিস বের করে সেটা দিয়ে প্রত্যেকটা ডিমকে ঢেকে দেয়। এর ফলে ঐ আঠার ক্যাপসুলের ভিতর ডিমটি বেশ নিরাপদে থাকতে পারে। ডিম পানিতে বা পানির আগাছার উপর লাগিয়ে দেয়। একটি স্ত্রী পতঙ্গ ৮০০টি পর্যন্ত ডিম পাড়ে। ডিম ফোটে ১-৩ সপ্তাহের মধ্যে। বাচ্চাদের অপূর্ণ রূপান্তর ঘটে। পানিতে ১-৫ বছর কাটায়।

এরা জলজ ক্ষুদে প্রাণী খায়, বিশেষত মেফ্লাই ও মশার লার্ভা। বড় জাতের গঙ্গাফড়িং -এর লার্ভা মাছের ছোট পোনাও খেতে পারে। বড় হতে হতে এরা প্রায় ১২ বার খোলস পালটায়।

পাখি, টিকটিকি, গিরগিটি– এরা হচ্ছে গঙ্গাফড়িংয়ের প্রধান শত্রু। তাই সাবধানে সে তাদের এড়িয়ে চলে।

গঙ্গাফড়িংকে নিয়ে অনেক কিংবদন্তী প্রচলিত আছে। অনেকের মনে এও বিশ্বাস রয়েছে যে, ভুল করে এই পোকার মুখের রস চোখে গেলে মানুষ অন্ধ  হয়ে  যায়। কেউ কেউ মনে করে গরু-বাছুর ঘাস খাওয়ার সময় যদি কোনক্রমে গঙ্গাফড়িং খেয়ে ফেলে, তবে সে নিশ্চিত মারা পড়বে। আমাদের দেশে অনেকে মনে করে, ছোট ছেলে হারিয়ে গেলে যদি গঙ্গাফড়িংকে দেখতে পায়, তবে সে হাত তুলে কোন্ পথে যেতে হবে তা বলে দেয়।

বাংলাদেশের প্রধান গঙ্গাফড়িং প্রজাতিগুলি Aeshnidae, Gomphidae Cordulogastridae Libellulidae গোত্রভুক্ত। তবে আজ পর্যন্ত জানা প্রায় ৩০টি প্রজাতির অধিকাংশই Libellulidae I Aeshnidae গোত্রের।

- বাংলা পিডিয়া অবলম্বনে আকতারের ক্যানভাস

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন