শনিবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০১৫

আরাফাত রহমান কোকোর বর্ণাঢ্য জীবন

ঢাকা : শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠপুত্র আরাফাত রহমান কোকো। তিনি ছিলেন একজন সফল ব্যবসায়ী। তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ওল্ড ডিওএইচএস ক্লাবের সাবেক চেয়ারম্যান ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক, ক্রীড়া সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের সঙ্গে ওতোপ্রোত ভাবে জড়িত ছিলেন।

আরাফাত রহমানের জন্ম ও বেড়ে উঠা: শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠপুত্র আরাফাত রহমান কোকোর জন্ম ১৯৬৯  সালে ঢাকায়। ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে গ্রেফতারের আগ পর্যন্ত মা বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গেই ছিলেন আরাফাত রহমান কোকো। শিক্ষা জীবনে ঢাকার বি এফ শাহীন কলেজে লেখাপড়া করেন আরাফাত রহমান কোকো।

১৯৬৯ সালে জিয়াউর রহমান স্বপরিবারে ঢাকায় চলে আসলে কিছুদিন জয়দেবপুরে থাকার পর বাবা জিয়াউর রহমানের চাকরির সুবাদে চট্টগ্রামের ষোলশহর এলাকায় বসবাস করেন তারা। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে মায়ের সাথে কিছুদিন আত্মগোপন করে থাকার পর ১৬ মে নৌপথে পরিবারের সাথে ঢাকায় চলে আসেন কোকো। এরপর বড় খালা খুরশিদ জাহানের বাসায় ১৭ জুন পর্যন্ত থাকেন পরিবারের সবাই। ২ জুলাই সিদ্ধেশরীতে জনাব এস আব্দুল্লাহর বাসা থেকে পাক সেনারা মা ও বড়ভাই তারেকসহ আরাফাত রহমান কোকোকে বন্দি করে। তাঁরা ১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে বন্দি ছিলেন। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হলে মা-ভাইসহ তিনি মুক্তি পান।

ব্যক্তি জীবনে বাবা জিয়াউর রহমান সাবেক সেনাবাহিনীর প্রধান ও রাষ্ট্রপতি, মা বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী, এবং বড় ভাই তারেক রহমান বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হলেও আরাফাত রহমান কোকো ছিলেন অনেকটা পর্দার আড়ালে। রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ তার ছিল না। ব্যবসা বাণিজ্যসহ সামাজিক কর্মকান্ডেই সময় ব্যয় করতেন তিনি।

জেল-জুলুম, প্রবাসী জীবন গ্রহন: ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির  মাধ্যমে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এলে জিয়া পরিবারের উপর নেমে আসে রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের খড়গ। একই বছরের ৩ সেপ্টেম্বর ভোরে সেনানিবাসের বাড়ি থেকে মা বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে গ্রেফতার হন তিনি। সেনা সমর্থিত সরকারের অমানুষিক নির্যাতনে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে বিদেশে চিকিৎসার জন্য প্যারোলে মুক্তি দেয়া হয় তাকে।

২০০৮ সালের ১৮ জুলাই চিকিৎসার জন্য সপরিবারে ব্যাংকক যান আরাফাত রহমান কোকো। এরপর চিকিৎসা শেষে তিনি মালয়েশিয়াতে চলে যান এবং সেখানেই সপরিবারে বসবাস করে আসছিলেন।

২০১২ সালে খালেদা জিয়া সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা করাতে গেলে সেখানে কোকোর সাথে সিঙ্গাপুরে সাক্ষাত করেন তিনি। সবশেষ ২০১৪ সালে সৌদি আরবে জিয়া পরিবার একত্রিত হলেও আসতে পারেননি আরাফাত রহমান কোকো।

কোকোর বিরুদ্ধে যত মামলা: জরুরি অবস্থার সেনা সমর্থিত সরকারের সময় দেশের অন্যান্য ব্যাবসায়ীদের মতো তিনিও হয়রানির শিকার হন। বিভিন্ন অভিযোগে তার বিরুদ্ধে সাতটি হয়রানিমূলক মামলা দেয়া হয়।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে কোকোর বিরুদ্ধে গুলশান থানায় দুটি চাঁদাবাজির মামলা এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে একটি মামলা করে দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সোনালী ব্যাংকের ঋণখেলাপের মামলায় ভাইয়ের (তারেক রহমান) সঙ্গে এবং গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় মা বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাকেও আসামি করা হয়।

এরপর বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ২০০৯ সালের ১৭ মার্চ সিঙ্গাপুরে ২০ কোটি টাকার বেশি অর্থের অবৈধ লেনদেনের অভিযোগে কাফরুল থানায় আরাফাত রহমান কোকোর বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। ২০১১ সালের ২৩ জুন এ মামলার রায় হয়।  মামলায় পলাতক দেখিয়ে কোকোকে ছয় বছরের সশ্রম কারাদ-াদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে সাড়ে ১৯ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়।
কোকোর বিরুদ্ধে আয়কর ফাঁকির অভিযোগে ২০১০ সালের ১ মার্চ আরেকটি মামলা করে এনবিআর।

পারিবারিক জীবন: পারিবারিক জীবনে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলী রহমান এবং জাফিয়া রহমান ও জাহিয়া রহমান নামে দুই মেয়ে রয়েছে। তারাও বর্তমানে তার সঙ্গে মালয়েশিয়াতে বসবাস করছেন। প্রায় সাত বছর ধরে তিনি নির্বাসিত জীবন যাপন করে আসছিলেন।

ক্রীড়াঙ্গনে আরাফাত রহমান কোকো: ২০০৩ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন আরাফাত রহমান কোকো। এছাড়া ওল্ড ডিওএইচএস ক্লাবের চেয়ারম্যানও ছিলেন তিনি।

এদিকে আগেই থেকেই শ্বাসকষ্ট জনিত রোগে অসুস্থ ছিলেন আরাফাত রহমান কোকো। সবশেষ ২৪ জানুয়ারি শনিবার তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাকে মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি মালায়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। (আকতারের ক্যানভাস)

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন