ছবির মতোই সুন্দর ছিল আমার গ্রামটা...

বর্ষা মৌসুমে নৌকা ছাড়া চলাচলের কোন উপায় থাকতোনা। যেন মহসড়কের পাশে বিচ্ছিন্ন ছোটএকটা দ্বীপ।

সমস্যা যত বড়ই হোক, আশা মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে

আমরা অবশ্যই পারব৷ সমস্যা যত বড়ই হোক না কেন, আশা মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে, নতুন কিছু উদ্ভাবন করতে অনুপ্রেরণা জোগায়৷ কিন্তু সমস্যাকে নিজের চোখে না দেখলে শুধু আশা দিয়ে সমস্যা সমাধান করা যায় না৷

ঘুরে আসুন নারায়ণগঞ্জের সব দর্শনীয় স্থানে

অপরূপ সৌন্দর্যে ভরপুর আমাদের বাংলাদেশের প্রায় প্রত্যেকটি জেলায়ই রয়েছে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান। যা আমাদের দেশকে করেছে আরো সমৃদ্ধ। শত বছর ধরে লাখো পর্যটককে করেছে আকৃষ্ট।

মানবসেবাই সর্বোত্তম ধর্ম: ফাদার তেরেসা

অসহায়, দুস্থ মানুষের সহায়তাই তার ধ্যান-জ্ঞান।সহিংসতার বিপরীতে তিনি অসহায়ের ত্রানকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হন।তিনি পাকিস্তানের আবদুল সাত্তার ইদি।অসম্ভব মানবসেবার কারনে ৮৪ বছর বয়সী এই ব্যক্তি তার দেশে ফাদার তেরেসা নামেই বেশি পরিচিত।

‘মানসিক প্রশান্তির জন্য সাইকেল’

যাত্রা পথে পরিবহন নিয়ে দুশ্চিন্তা আর ভোগান্তি থেকে রেহাই পেতে বিকল্প হলো একটা বাই সাইকেল। তাছাড়া ইদানিং স্বাস্থ্যটার দিকেও মনে হচ্ছে একটু যত্ন নেয়া দরকার।

বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

সৌরবিদ্যুত বদলে দিচ্ছে কুষ্টিয়ার কৃষকদের ভাগ্য

সোলার প্লান্টে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে সৌরশক্তিনির্ভর কৃষি প্রযুক্তি বদলে দিচ্ছে কৃষকের ভাগ্য বিদ্যুতের লোডশেডিং, বাড়তি বিলের বোঝাসহ লো-ভোল্টেজের ভয়ে এখন ভীত নয় কৃষক আর সেচপাম্প চালাতেও দরকার পড়ছে না ডিজেলের সূর্যের আলোকে কাজে লাগিয়ে প্রয়োজন মতো জমিতে সেচ দিচ্ছে
সনাতন পদ্ধতিকে পেছনে ফেলে সৌর শক্তি নির্ভর সেচ প্রযুক্তির দিকে ছুঁটছে এখন প্রত্যন্ত গ্রামের কৃষক সৌরবিদ্যুত চালিত সেচ পাম্পের সফলতায় আশার আলো খুঁজে পেয়েছেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার কৃষকরা সুইচ টিপেই পানি পেয়ে তারা নিজেরাও বেজায় খুশি
জানা যায়, কৃষকদের সেচ কাজের জন্য অর্থমন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে রহিম আফরোজ ফাউন্ডেশন আরডিএফ সোলার ইরিগ্রেশন পাম্পিং সিস্টেমের উদ্যোগে জেলার বিভিন্ন এলাকায় তৈরি হয়েছে সৌরবিদ্যুত চালিত ডিপ সেচ পাম্প পদ্ধতি
আগে মিরপুর উপজেলার নওদাআজমপুর বুরাপাড়া এলাকার মানুষের সেচ কাজের জন্য বৈদ্যুতিক মোটর শ্যালো ইঞ্জিন চালিত সেচ পাম্প ব্যবহার করতো এর ফলে কৃষকের আবাদ খরচ বৃদ্ধি পেত অন্যদিকে শুষ্ক মৌসুমে পর্যাপ্ত সেচের অভাবে অনেক জমি অনাবাদী থাকতো
কৃষকদের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে নওদাআজমপুর বুরাপাড়া মাঠে স্থাপন করা হয় ২টি সৌরবিদ্যুত চালিত সেচ পাম্প অঞ্চলে এখন প্রায় ৫০০ একর ফসলী জমিতে পানি সরবরাহ করছে এই সেচ পাম্প ফলে ভুক্তভোগী কৃষকরা এখন কোনো প্রকার বিপত্তি ছাড়াই তাদের জমিতে সেচ কাজ চালিয়ে উপকৃত হচ্ছে
নওদাআজমপুর এলাকার কৃষক আব্দুল হান্নান জানান, এবার তিনি বোরো চাষ করেছেন সৌর বিদ্যুতের সহায়তায় এলাকায় বিদ্যুতের লোডশেডিং প্রায় নিত্য দিনের লো-ভোল্টেজ এর কারণে মোটর চালানো যেতো না তারপর ঘন ঘন লোডশেডিং এর ফলে নষ্ট হয়ে যেতো পাম্প এদিকে বিদ্যুতের মূলও প্রায় আকাশ ছোঁয়া এখন সৌরবিদ্যুৎ পাম্পের ফলে প্রয়োজন মতো জমিতে সেচ দেওয়া যায় সেচের মূল্যও বেশি না আর সময় মতো সেচ দেওয়ার সু-ব্যবস্থা থাকায় যে জমিতে বছরে একবার ফসল চাষ হতো সে জমিতে বছরে তিনবার ফসল চাষ করা যাচ্ছে
শুধু নওদাআজমপুর মাঠেই নয় উপজেলার চিথলিয়া মাঠে চালু হয়েছে ৩টি, নওয়াপাড়া মাঠে ১টি সৌরবিদ্যুৎ সেচ প্রকল্প এতে একদিকে যেমন বিঘা প্রতি সেচ খরচ দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা কমে এসেছে অন্যদিকে সময়মত পর্যাপ্ত পানি প্রাপ্তির নিশ্চয়তা তৈরি হওয়ায় ফসলের উৎপাদনও বেড়েছে
মিরপুর উপজেলা কৃষি অফিসার রমেশ চন্দ্র ঘোষ জানান, রহিম আফরোজ ফাউন্ডেশন আরডিএফ সোলার ইরিগ্রেশন পাম্পিং সিস্টেমে ধরনের সৌর বিদ্যুৎ সেচ প্রকল্প চালু করেছে সেচ প্রকল্পে খরচ অনেক কম সারা বছরই সেচ কাজ চালানো যায় এবং এটা পরিবেশ বান্ধব বিএডিসি (সেচ) এর সহকারী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন জানান, সেচ পাম্প চালাতে হলে প্রয়োজন নেই তেল কিংবা বিদ্যুতের প্রয়োজন নেই এনার্জি রিজারর্ভার হিসেবে ব্যাটারি শুধু প্রয়োজন সূর্যের আলো সৌরশক্তিকে সরাসরি ব্যবহার করে কৃষক তার জমির সেচ সুবিধা নিশ্চিত করতে পারবে
ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ডা. রফিকুল ইসলাম জানান, মাঠে মাঠে ধরনের সৌর বিদ্যুৎ পাম্পের ফলে কৃষকদের কৃষি সেচ কাজ করতে সুবিধা হচ্ছে তারা বর্তমানে আর বিদ্যুতের উপর নির্ভর করছে না এতে খরচও তুলনামূলকভাবে কম হচ্ছে

মিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিন জানান, বর্তমান সরকার উন্নয়নে বিশ্বাসী সরকার দেশের কৃষি খাতকে আরো উন্নত এবং কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি করতে ধরনের নানা মুখি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে আর সৌর বিদ্যুৎ সেচ পাম্পের ফলে কৃষকরা প্রয়োজন মতো সেচ সুবিধা পাচ্ছে অন্যদিকে পল্লী বিদ্যুতের ওপরও চাপ কমছে

বৃহস্পতিবার, ৩০ জুলাই, ২০১৫

ব্রিটেনের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাচীনতম কুরআনের পান্ডুলিপি ও ইংরেজ কর্তৃক মুসলিম স্থাপত্য লুটের ইতিহাস

ব্রিটেনের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে পাওয়া গেছে পৃথিবীর প্রাচীনতম কুরআন শরীফের পান্ডুলিপির একাংশ।পান্ডুলিপির চারটি পৃষ্ঠার মধ্যে প্রথম দুই পৃষ্ঠায় কুরআন শরীফের ১৯ নম্বর সূরা মারইয়ামের ৯১-৯৮ নম্বর আয়াত ও ২০ নম্বর সূরা ত্বা-হার ১-৪০ নম্বর আয়াত। অন্য দুই পৃষ্ঠায় রয়েছে ১৮ নম্বর সূরা কাহাফের ১৭ থেকে ৩১ নম্বর আয়াত। ২০১১ সালে সন্ধান পাওয়া পান্ডুলিপির পাতা কয়েকটি রেডিও কার্বন প্রযুক্তির মাধ্যমে পরীক্ষা করে এ বছর বলা হচ্ছে এটি কমপক্ষে ১৩৭০ বছর আগে ৬৪৫ সালে লেখা হয়েছে। এই হিসাবে পান্ডুলিপিটি নবীজীর (সা.) ওফাতের ১৩ বছরের ও তৃতীয় খলিফা হযরত উসমানের (রা.) খেলাফতের দ্বিতীয় বছরের মধ্যে লেখা হয়েছে।

বৃটিশ গবেষকরা কুরআনের এই প্রাচীনতম পান্ডুলিপির হদিশ পেয়ে দারুণ উচ্ছসিত। তারা বলছেন, যেই ব্যক্তি এটি লিখেছেন তার সাথে নবীজীর (সা.) সরাসরি সাক্ষাৎ হয়েছিল। সহজ কথায় একজন সাহাবী (রা.) পান্ডুলিপিটি লিখেছেন।

কুরআনের প্রাচীনতম পান্ডুলিপিটি নিজেদের কাছে থাকায় এবং এটি দেখতে বিশ্বের মুসলমানরা বেশ আগ্রহী হবেন ভেবে বৃটিশরা বেশ খুশি। কোনো এক সাহাবীর (রা.) হাতে লেখা কুরআনের পান্ডুলিপির হদিশ জানতে পেরে সারা বিশ্বের মসুলমানদের মধ্যেও বেশ খুশি ছড়িয়ে পড়েছে। তবে মক্কা বা মদীনায় লিখিত কুরআনের পান্ডুলিপি ব্রিটেনে যাওয়া নিয়ে এরই মধ্যে বহু মুসলমানের মধ্যেই প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। জনপ্রিয় আমেরিকান মুসলিম পন্ডিত আবু আম্মার ইয়াসির কাজী জানিয়েছেন তিনিও কুরআনের প্রাচীনতম পান্ডুলিপির ব্রিটেনে উদ্ধারের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হয়েছেন।
ইয়াসির কাজী বলছেন, অনেক মুসলমানই আমার কাছে জানতে চেয়েছেন কিভাবে প্রাচীন আমলের বহু ইসলামী দলিল-পান্ডুলিপি অমুসলিম দেশ ও লাইব্রেরিতে গেল। জবাবে আমি বলেছি, সহজ কারণ হল ঔপনিবেশিকতা ও পয়সার জোর। কিছু পান্ডুলিপি স্রেফ দখল করা হয়েছে, তবে ঐতিহাসিক মূল্যের কথা বিবেচনা করে ইউরোপীয় পর্যটকরা বেশির ভাগ পান্ডুলিপিই ব্যক্তিগত মালিকদের কাছ থেকে বা কালোবাজার থেকে অর্থের বিনিময়ে খরিদ করেছেন।

ইয়াসির কাজীর কথার সূত্র ধরে কুরআনের প্রাচীনতম পান্ডুলিপি খুঁজে পাওয়ার তথ্যানুসন্ধান করে জানা গেছে, মুসলিশ বিশ্বে পশ্চিমা শক্তিগুলোর দখলদারি, উপনিবেশ স্থাপন ও প্রত্নসম্পদ লুণ্ঠনের ঐতিহাসিক কালো অধ্যায় সম্পর্কে।

যেভাবে বৃটেনে গেল প্রাচীনতম কুরআন
১৭৫৭ সালে সুবে বাংলাকে পরাধীন করার মধ্য দিয়ে মুসলিম শাসনাধীন ভারতবর্ষে ঔপনিবেশিক শাসন শুরু হয়। আর ১৮৮৮ সালে মিশর দখল করা হয়। মুসলমানদের দুই সাম্রাজ্যের মাঝখানে থাকা উসমানীয়া সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে তুরস্কে সেক্যুলার জাতীয়তাবাদ ও আরব জনপদে আরব জাতীয়বাদ তৈরি করে ব্রিটিশরা।

বৃটিশদের সাথে সাথে আরব জনপদে উপনিবেশ ও দখলদারিতে লিপ্ত ফ্রান্স, জার্মানি, ইটালি, অস্ট্রিয়াসহ পশ্চিমা দেশগুলো। তবে উসমানীয়া সাম্রাজ্যের পতন ঘটিয়ে আরব বিশ্বকে উপনিবেশে পরিণত করার মূল কুচক্রী ছিল ব্রিটেন ও ফ্রান্স।

মিশর দখলের ২৬ বছর পর ১৯১৪ সালে শুরু হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, যা ১৯১৮ সালে শেষ হয়। এই যুদ্ধের দ্বিতীয় বছর ১৯১৫ সালে বৃটেনের স্যার মার্ক সাইকস ও ফ্রান্সের ফ্রান্সিস জর্জেস পিকোট উসমানীয়া খেলাফতকে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয়ার গোপন চুক্তি করে।
সাইকস-পিকোট চুক্তি অনুযায়ী ব্রিটেন জর্ডান, ইরাক ও  কুয়েত এবং ফ্রান্স সিরিয়া, লেবানন ও দক্ষিন তুরস্ক ভাগ করে নেয়ার প্রস্তাব করে।

যদিও এ সময় আরবদের সাথে ব্রিটিশরা চুক্তি করেছিল যে তুরস্ক কেন্দ্রিক উসমানীয়া খেলাফত থেকে আরব জাতি স্বাধীনতা পাবে। আরেকটি চুক্তি হয়েছিল ইউরোপে থাকা ইহুদিদের ফিলিস্তিনে থাকার জন্য বসতি নির্মাণের সুযোগ দেবে ব্রিটিশরা।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর দেখা গেল আরবদের সাথে করা চুক্তি না মেনে নিজেদের মধ্যে আরব বিশ্বকে ভাগ করে নেয়া আর ইহুদিদের ফিলিস্তিনে পুনর্বাসনের চুক্তি ব্রিটেন-ফ্রান্স ঠিকই মেনে নিয়েছে।
ফলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য গঠিত জাতিপুঞ্জ বা লিগ অব নেশনস অনেকটা সাইকস-পিকোট চুক্তির রূপরেখা অনুযায়ী উসমানীয়া খেলাফতকে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মধ্যে বন্টন করে দেয়।



আর ব্রিটেন-ফ্রান্স আরব দেশগুলোতে নিজেদের বশংবদ আরব গোত্রপতিদের রাজা-শাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়। এ সময় ব্রিটেনের ভাগে আসা ইরাককে রাজা হিসেবে বসানো হয় হাশেমী বংশের কুখ্যাত দালাল ফয়সালকে।
ফয়সালের সময়ে ইরাকের প্রাচীন জমানার ঐতিহাসিক দলিল-দস্তাবেজ ও প্রত্নসম্পদসমূহ লুট হতে শুরু করে। পশ্চিমারা যেমন দুহাতে লুট করে, তেমনি পয়সার লোভ দেখিয়ে স্থানীয় লুটেরাদের দিয়েও ঐতিহাসিক সম্পদ হাতাতে থাকে পশ্চিমারা। এ সময় সিরিয়-মিশরসহ আরবের সকল প্রাচীন জনপদই এই লুণ্ঠনের শিকার হয়।
আর ফয়সালের সময়কালেই ১৯২০ এর দশকে আরব বিশ্বের তিন হাজারেরও বেশি দলিল-দস্তাবেজ ব্রিটেনের বার্মিংহামে নিয়ে যান ইরাকের কলদিয় খ্রিস্টান পাদ্রী আলফন্স মিনগানা।

দলিলগুলো ইরাক থেকে ব্রিটেনে নিয়ে যেতে মিনগানাকে অ্যাডওয়ার্ড ক্যাডবারি অর্থের যোগান দেন। আর এই দলিলগুলোর মধ্যেই প্রাচীনতম কুরআনের পান্ডুলিপির অংশ ছিল বলে দাবি করেছে ব্রিটেন ভিত্তিক সংবাদ সংস্থা বিবিসি।বিবিসির এ দাবির সূত্র ধরে তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, অ্যাডওয়ার্ড ব্রিটেনের বার্মিংহামের বিখ্যাত চকলেট প্রস্তুত প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ক্যাডবারির প্রতিষ্ঠাতা জন ক্যাডবারির নাতি। তিনি পারিবারিক চকলেট ব্যবসায় জড়িত থাকলেও কলেজ প্রতিষ্ঠা, মিডিয়া ব্যবসা ও ব্যাবসা বিষয়ক তাত্ত্বিক ছিলেন।

আর পাদ্রী মিনগানা তুরস্কের সীমান্ত সংলগ্ন ইরাকের মুসলের জাখো জেলার আসিরিয়ান গ্রাম শারানিসে জন্মগ্রহণ করেন।  তিনি ১৯১৩ সালে বার্মিংহামের সেলি অক এলাকার খ্রিস্টান ধর্মীয় গোষ্ঠী কোয়্যাক এর আমন্ত্রণে দুই বছরের জন্য ব্রিটেনে যান। কিন্তু ১৯১৫ সালে তিনি নরওয়েজিয়ান ছাত্রী এমা সোফি ফ্লোরকে বিয়ে করে ব্রিটেনে থেকে যান এবং ম্যানচেস্টারের জন রিল্যান্ড লাইব্রেরিতে আরবী পান্ডুলিপি বিষয়ক কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন, এখানে তিনি ১৯৩২ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন।এর মধ্যেই ১৯২০ এর দশকে জন রিল্যান্ড লাইব্রেরি ও অ্যাডওয়ার্ড ক্যাডবারির কাছ থেকে টাকা নিয়ে তিন দফা ইরাক সফর করেন পাদ্রী মিনগানা।
১৯২৪ সালের বসন্তে প্রথম সফরে লেবানন, সিরিয়া ও ইরাকে যান মিনগানা। সেখান থেকে তিনি জন রিল্যান্ড লাইব্রেরির জন্য ২২টি আরবী ও সিরীয় ভাষায় লিখিত কিছু প্রাচীন পান্ডুলিপি নিয়ে ব্রিটেনে ফেরেন। এ সময় ক্যাডবারির জন্যও কিছু সিরীয় পান্ডুলিপি আনেন তিনি।

পরের বছর শরৎকালে অ্যাডওয়ার্ড ক্যাডবারির একক অর্থায়নে সিরিয়া, ইরাক ও দক্ষিণ কুর্দিস্তান সফরে গিয়ে বেশ কিছু সিরীয় পান্ডুলিপির সঙ্গে কিছু আরবী পান্ডুলিপিও সংগ্রহ করে ব্রিটেনে ফেরেন মিনগানা।
সর্বশেষ ১৯২৯ সালে সিনাই উপত্যকা ও মিশরের নীল নদের দুই তীরবর্তী এলাকা সফর করে বেশ কিছু আরবী পান্ডুলিপি সংগ্রহ করেন, এর মধ্যে কয়েকটি পান্ডুলিপি ছিল মিশরের কপ্টিক এবং গ্রিক ভাষায় লিখিত। ১৯৩২ সালে মিনগানা ব্রিটেনে ফেরার পর প্রথম দু বছর আরব থেকে আনা দলিলের ক্যাটালগ তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। পরে ১৯৩৪ সালে তিনি সেলি অক কলেজসমূহের লাইব্রেরির কিউরেটর হিসেবে যোগ দেন। সেলি অক কলেজগুলো ছিল মূলতঃ প্রটেস্টান্ট খৃস্টান সম্প্রদায়ের বিশেষ গোষ্ঠী কোয়েকার এর সদস্যদের নিয়ে গঠিত ধর্মীয় বন্ধু সমাজ প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন কলেজের ফেডারেশন। কোয়েকার বন্ধু সমাজের অন্যতম সংগঠক ছিলেন অ্যাডওয়ার্ড ক্যাডবারি। পরবর্তীতে অন্য প্রটেস্টান্টরাও সেলি অকের বিভিন্ন কলেজ প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসেন।

সেলি অক কলেজগুলোতে ধর্মতত্ত্ব ও সমাজকর্ম বিষয়ে পড়ানো হত এবং শিক্ষক প্রশিক্ষন দেয়া হত। এগুলো পরবর্তীতে বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ওয়েস্টহিল কলেজ ২০০১ সালে বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে একীভূত হয়ে গেছে। পরবর্তীতে উডব্রুক কলেজ ও ফারক্রফ্ট কলেজ ছাড়া সব কলেজই বন্ধ হয়ে গেছে।

সেলি অক কলেজ ফেডারেশনের লাইব্রেরির কিউরেটরের দায়িত্ব নেয়ার পর আলফন্স মিনগানা মাত্র তিন বছর বেঁচে ছিলেন। তবে শেষ বেলাতেও প্রাচীন পান্ডুলিপি ও দলিল-দস্তাবেজ সংগ্রহ করে লাইব্রেরিটি সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করেন তিনি।এর অংশ হিসেবে মিনগানা ১৯৩৪ সালের মে মাসে এবং ১৯৩৬ সালের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে সুইজারল্যান্ডের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ব্যবসায়ী তরুণ এরিক ভন শেরলিংয়ের কাছ থেকে আরব থেকে আনা বেশ কিছু দলিল দস্তাবেজ কেনেন।
এরিক ভন ছিলেন একজন সুইডিশ কূটনীতিকের ছোট ছেলে, তিনি বাবার কর্মস্থল নেদারল্যান্ডের রটারডামে ১৯০৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন। স্কুলের পাঠ চুটিয়ে লেইডেনের প্রাচীন বইয়ের বিক্রেতা জেকব গিন্সবার্গের সাথে কাজ শুরু করে এরিক আরবদেশের প্রাচীন পান্ডুলিপি, আরবী ও ল্যাটিন ভাষার উপর বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে দক্ষতা অজর্ন করেন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ওই সময়ে আরব বিশ্বের প্রত্নসম্পদ, প্রাচীন পান্ডুলিপি ও দলিল-দস্তাবেজ এতই হরিলুট হচ্ছিল যে মাত্র ২১ বছর বয়সেই এরিক ভন ওই সবের একজন আন্তর্জাতিক কারবারিতে পরিণত হন।

ভাষা বিজ্ঞানী অস্ট্রেরিয়ান অ্যাডল্ফ গ্রোম্যানকে প্যাপিরাস গাছের বাকল দিয়ে তৈরি কাগজের উপর লিখিত মিশরের কিছু প্রাচীন পান্ডুলিপি (প্যাপিরি) দেখিয়েছিলেন এরিক ভন। গ্রোম্যান আরব, মিশর ও সেমিটিক তত্ত্ববিদ ছিলেন। তিনি এরিকের সংগ্রহগুলো দেখে এসব কিনতে জার্মানির কিছু লাইব্রেরিকে সুপারিশ করেন। কিন্তু ৩০ এর দশকে জার্মানি থেকে বাইরের কারো কাছে মূল্য পরিশোধ করা সুযোগ ছিল না। ফলে জার্মানির বদলে ব্রিটেনে মিনগানার কাছে ওই প্যাপিরি এবং কুরআনের প্রাচীন পান্ডুলিপির ভগ্নাংশ বিক্রি করে দেন এরিক ভন।

বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছে, এরিক ভনের কাছ থেকে ১৯৩৬ সালে আলফন্স মিনগানার কেনা দলিল-দস্তাবেজের মধ্যে চামড়া ও প্যাপিরাসের উপর লিখিত কুরআনের সাতটি প্রথম যুগের পান্ডুলিপি ছিল।
প্রসঙ্গত, সেলি অক কলেজ ফেডারেশন লাইব্রেরিটি পরবর্তীতে বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অঙ্গীভূত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাডওয়ার্ড ক্যাডবারি ও আলফন্স মিনগানার সংগ্রহ নিয়ে ‘‘অ্যাডওয়ার্ড ক্যাডবারি গবেষণা লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করেছে।এই লাইব্রেরিতে বিশেষ সংগ্রহ হিসেবে মজুদ রয়েছে মিনগানার সংগ্রহগুলো। যা মিনগানা সংগ্রহ হিসেবে পরিচিত। মিনগানার সংগ্রহগুলোর উপর ১৯৩৩ সালে ৬০৬টি সিরীয় পান্ডুলিপির ক্যাটালগ, ১৯৩৬ সালে ১২০টি খ্রিস্টান আরবী পান্ডুলিপি ও ১৬টি সিরীয় পান্ডুলিপি এবং ১৯৩৭ সালে মিনগানার মৃত্যুর দুবছর পর ১৫২টি খ্রিস্টান আরবী পান্ডুলিপি ও ৪০ টি সিরীয় পান্ডুলিপির ক্যাটালগ প্রকাশিত হয়।

যেভাবে পাওয়া গেল প্রাচীনতম কুরআনের হদিশ
আলবা ফেদেলি কুরআনের প্রথম জমানার পান্ডুলিপি, সেসবের হরফ এবং বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সংগ্রহ বিভাগে থাকা আলফন্স মিনগানার দলিল বিষয়ক পিএইচডি গবেষণা করেন। আলবা প্রায় চার বছর ধরে পরিচালিত গবেষণার উপর লেখা থিসিস পেপার গত ১১ মে বিশ্ববিদ্যালয় বরাবর জমা দেন। পরে গত ১০ জুলাই তাকে পিএইচডি ডিগ্রী দেয়া হয়। আলবা ফেদেলি গবেষণা করতে গিয়ে ২০১১ সালে বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাডওয়ার্ড ক্যাডবারি গবেষণা লাইব্রেরিতে কুরআন শরীফের প্রাচীনতম পান্ডুলিপির সন্ধান পান। কুরআনের প্রাচীন পান্ডুলিপি নিয়ে গবেষণা ও প্রাচীনতম পান্ডুলিপিটি খুঁজে পাওয়ার ব্যাপারে ২০১৩ সালেই নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানান আলবা ফেদেলি।
তিনি বলেন, ১৯৯৮ সালে আমার দিকনির্দেশক শিক্ষক ইটালির প্রয়াত অধ্যাপক সার্গিও নোজা নসেদা আমাকে ইহুদি ভাষাবিদ জর্জীয় লেভি ডেইয়া ভিদার ১৯৪৭ শীর্ষক সংগ্রহের প্রদর্শনীর ক্যাটালগে প্রকাশিত পশুর চামাড়ার উপর লেখা কুরআনের কিছু প্রাচীন পান্ডুলিপি দেখান।ক্যাটালগের এই ছবিগুলো দেখিয়েই গিওভানি গালবিয়াতি তরুণ পন্ডিত নসেদাকে কুরআনের পান্ডুলিপি নিয়ে অধ্যয়ন করতে পরামর্শ দেন।
ড. আলবা বলেন, নসেদার অধ্যয়নের এই কাহিনী শুনে অনুপ্রাণিত হয়েই কুরআনের পান্ডুলিপি নিয়ে আমার অধ্যয়ন শুরু করি। আর কুরআনের একটার পর একটা পান্ডুলিপির তালাশের সূত্র ধরেই আমি ইংল্যান্ডের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালেয়ে এসে পৌঁছাই।আলবা জানান, তিনি বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাডবারি গবেষণা লাইব্রেরির মিনগানা সংগ্রহ হিসেবে থাকা কুরআনের প্রাচীনতম পান্ডুলিপি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন।
বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর টেক্সচুয়াল স্কলারশিপ অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক এডিটিং (আইটিএসইই) এর অ্যাডওয়ার্ড ক্যাডবারি অধ্যাপক ডেডিড পার্কারের তত্ত্বাবধানে ও ব্রিটেনের আর্টস অ্যান্ড হিউমিনিটিজ রিসার্চ কাউন্সিল অর্থায়নে গবেষণা শুরু করেন আলবা ফেদেলি।
তিনি জানান, বার্মিংহাম বিশ্বিবদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে থাকা কুরআনের প্রাথমিক যুগের চারটি পান্ডুলিপি ছিল তার গবেষণার ক্ষেত্র।
পান্ডুলিপিগুলোর মধ্যে প্রথমটি হল মিনগানা ইসলামিক অ্যারাবিক ১৫৭২, যা পশুর চামড়া দিয়ে তৈরি নয়টি কাগজে লেখা। এর দুটি অংশ ছিল। যার একাংশের সাথে  পিটার্সবুর্গের মার্সেল ১৭ ও দোহার ইসলামী আর্ট যাদুঘরের এমআইএ ৬৭ সংগ্রহের মিল রয়েছে।
দ্বিতীয় পান্ডুলিপিটি হল মিনগানা ইসলামিক অ্যারাবিক ১৫৬৩, যা মূলতঃ পশুর চামড়া দিয়ে তৈরি ৩৯টি কাগজে লেখা প্রাচীন কুরআনের পান্ডুলিপি।
তৃতীয় পান্ডুলিপিটি হল এরিক ভন শেরলিংয়ের কাছ থেকে কেনা প্যাপিরির সাথে থাকা কুরআনের পান্ডুলিপির ক্ষুদ্রাংশ। চতুর্থ পান্ডুলিপিটি নিয়েই এখন সারা দুনিয়া তোলপাড় হচ্ছে। এই পান্ডুলিপিটি ক্যাডবারি গবেষণা লাইব্রেরিতে মিনগানা ক্রিশ্চিয়ান অ্যারাবিক অ্যাডিশনাল ১৫০) নামে অতিরিক্ত সংগ্রহ হিসেবে ছিল।
ড. আলবা বলেন, ঘঁষামাজা করে মূল লেখার উপর লেখায় পান্ডুলিপিটি বিকৃত (প্যালিম্পসেস্ট) এবং খ্রিস্টান ধর্মের অপরিচিত লিখিত দলিল হিসেবে ভুল ক্যাটালগ করায় পান্ডুলিপিটির হদিশ বহু বছর ধরেই গোপন ছিল। গবেষণা করতে গিয়ে আমি দেখতে পাই যে, এর মূল লেখাগুলো কুরআনের অংশ, যার সাথে হুবহু মিল আছে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে থাকা লুইস-মিনগানা প্যালিম্পসেস্ট (ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি লাইব্রেরি ওরিয়েন্টাল ১২৮৭) নামে পরিচিত কুরআনের বিখ্যাত পান্ডুলিপির।
আলবা জানান, আলফন্স মিনগানার মৃত্যুর দু বছর পর ১৯৩৯ সালে ভুল ক্যাটালগ করার পর কুরআনের এই প্রাচীনতম পান্ডুলিপিটি ২০১১ সাল পর্যন্ত অযত্ন-অবহেলার শিকার হয়েছে।
এর জন্য মিনগানাকে কিছু দায়ীই মনে করেন আলবা ফেদেলি। তার মতে, এটা খুবই সম্ভব যে প্যালিম্পসেস্টেড হয়ে যাওয়া কুরআনের এই পান্ডুলিপির মূল লেখার সম্পর্কে মিনগানা জানতেন। কারণ ১৯৩৭ সালে অতিবেগুনি রশ্মি ব্যবহার করে পান্ডুলিপিটির কয়েকটি ছবি তুলে তিনি কিছু পরীক্ষী-নিরীক্ষা চালিয়েছেন বলে জানা গেছে।পরবর্তীতে আলবা ফেদেলি কুরআনের এই পান্ডুলিপিটি কত প্রাচীন জানতে রেডিওকার্বন পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেন।অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রেডিওকার্বন অ্যাক্সেলেরেটর ইউনিট ওই পাণ্ডুলিপি পরীক্ষা করার পর জানায়, পাণ্ডুলিপিটি ছাগলের বা ভেড়ার চামড়ার ওপর ৫৬৮ থেকে ৬৪৫ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে কোন এক সময় লেখা হয়েছিল। এটি কোরআন শরিফের সবচেয়ে পুরোনো পাণ্ডুলিপি।
বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সংগ্রহবিষয়ক পরিচালক সুসান ওরাল বলেন, আমরা জানতাম এটি বেশ পুরোনো। তবে গবেষকরা কখনোই আশা করেননি এটি মহানবীর (সা.) জীবিত অবস্থায় লেখা হতে পারে।বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্রিষ্ট ও ইসলামতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ডেভিড টমাসের মতে, খোঁজ পাওয়া পাণ্ডুলিপির অংশবিশেষ যিনি লিখেছেন, তিনি সম্ভবত মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সময় বেঁচে ছিলেন। হয়তো তিনি মহানবী (সা.)-কে চিনতেন। হয়তো মহানবী (সা.)-এর বাণী তিনি সরাসরি শুনেছেন।
টমাস বলেন, ওই পাণ্ডুলিপি আমাদের ইসলাম প্রতিষ্ঠার প্রকৃত সময়ের কাছাকাছি বছরগুলোতে নিয়ে যায়।
ব্রিটিশ লাইব্রেরির পাণ্ডুলিপি বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ ইসা ওয়ালি বলেন, সুন্দর ও স্পষ্টভাবে হিজাজি লিপিতে (মক্কা-মদীনাসহ হিজাজ অঞ্চলে এ লিপিতেই আরবী লেখা হত) লেখা ওই দুটি পৃষ্ঠা ইসলামের প্রথম তিন খলিফার সময়ের।

প্রাচীনতম কুরআন কি নিজ দেশে ফিরবে?

ঔপনিবেশিক দখলদারির সময়ে লুণ্ঠিত হয়ে আরব বিশ্ব থেকে ব্রিটেনে গিয়েছে অজানা এক সাহাবী লিখিত কুরআনের প্রাচীনতম পান্ডুলিপি। তাও আবার প্রায় ৮০ বছর ধরে অযত্নে-অবেহলায় পড়েছিল সংগ্রহশালার অবিন্যস্ত বাড়তি দলিল হিসেবে। এখন প্রশ্ন হল, কুরআনের প্রাচীনতম দলিলটির সন্ধান জানার পর এটি কি ইরাক, সিরিয়া, মিশর বা সৌদি আরবে ফেরত পাঠানো হবে? সম্ভবত উত্তরটি না।
কারণ ঔপনিবেশিক দখলদারি, শোষণ ও লুণ্ঠন সম্পর্কে সংবদেনশীল মুসলমানদের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রশ্ন থাকলেও মুসলিম দেশগুলোর শাসকদের এমন প্রশ্নও যেমন নাই, তেমিন ঐতিহ্যের উপর নিজেদের উত্তরাধিকারের দাবি বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক দরবার করতেও তাদের আগ্রহ নেই।
অবশ্য এরই মধ্যে বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কুরাআনের প্রাচীন পান্ডুলিপির দখলিসত্ত্ব নিয়ে  অবস্থান পষ্ট করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সংগ্রহবিষয়ক পরিচালক সুসান ওরাল বলেন, এটা অত্যন্ত আনন্দের বিষয় যে, পৃথিবীর প্রাচীনতম কুরআনের একটি অংশ আমাদের কাছে আছে। এটি নিয়ে আমরা গর্বিত।

আর বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় একথাও জানিয়েছে, আসছে অক্টোবরের ২-২৫ তারিখ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বারবার ইনস্টিটিউট অব ফাইন আর্টস কুরআনের প্রাচীনতম পান্ডুলিপি উন্মুক্ত প্রদর্শনীর আয়োজন করা হচ্ছে। 
(অনলাইন বাংলার সৌজন্যে)

শুক্রবার, ৩ এপ্রিল, ২০১৫

কেমন আছে কিউবার সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়

কমিউনিষ্ট দেশ কিউবায় মুসলমানের সংখ্যা মাত্র চার হাজার। কিন্তু সেখানে ইসলামের অনুসারীদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। কিউবায় নেই মসজিদ, নেই কোন হালাল মাংসের দোকান। সম্প্রতি কিউবায় দীর্ঘ পাঁচ দশকের কমিউনিষ্ট শাসন শিথিল হতে শুরু করেছে। কিন্তু কিউবার মুসলমানরা কতটা স্বাধীনভাবে তাদের ধর্ম পালন করতে পারছেন? সেখানে একজন মুসলিম হিসেবে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা কতটা কঠিন?

ছোট্ট এক উপকুলীয় শহর আলামারার এক পরিত্যক্ত খেলার মাঠে প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজের জন্য জড়ো হন কয়েকজন কিউবান মুসলিম। এই শহরে হাতে গোনা অল্প কজন মুসলিমের বাস।

খেলার মাঠে যখন তারা নামাজ পড়েন, তখন পাশ দিয়ে বিকিনি হেঁটে যায় মহিলারা, বিয়ারের ক্যান হাতে পার্কে বসে থাকা পুরুষরা তাকিয়ে দেখে নামাজ পড়ার দৃশ্য। কিউবার মতো একটা দেশে ইসলামিক রীতি এবং ঐতিহ্য মেনে চলার চ্যালেঞ্জ খুব স্পষ্ট।

হোর্হে এলিয়াস সম্প্রতি ইসলামে দীক্ষা নিয়েছেন। তার মুসলিম নাম ইসা। গত বছর অন্য কজন মুসলিমের সঙ্গে মক্কায় গিয়ে হজ্জ্বও করে এসেছেন।

তিনি বলছিলেন, কিউবায় একজন মুসলমান হিসেবে ধর্ম মেনে চলা একদিকে খুব সহজ, আবার অন্যদিকে খুবই জটিল।

“আমরা এখনো খুবই ছোট্ট এক সম্প্রদায়। অনেক সময় মুসলিম হিসেবে জীবনযাপন আমাদের জন্য অতটা সহজ নয়। যেমন ধরুণ আমরা হালাল খাবার চাই, সেটা পাওয়া সহজ নয়। আর কিউবায় লোকজন প্রচুর শুকরের মাংস খায়। মদ পান করে। আপনি জানেন, ইসলামে এসব নিষিদ্ধ। তবে এটা কোন বড় সমস্যা নয়। এখানকার মানুষ খুব ভালো। সবার সঙ্গে আমাদের খুব চমৎকার সম্পর্ক। তবে এটা সত্য, মুসলিম হিসেবে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করার ক্ষেত্রে আমাদের কিছু সমস্যা আছে।”
কিউবার একটি সীবিচ

কিউবার রাজধানী হাভানায় মুসলমানদের নামাজ পড়ার জায়গা এখন পর্যন্ত একটাই। সেটা হলো ইমাম ইয়াইয়া পেড্রো টোরেজের বাড়িতে। তিনি কিউবার ইসলামিক লীগের প্রেসিডেন্ট। ইমাম পেড্রো টোরেজ স্বীকার করলেন, কিউবার মত দেশ, যেখানে মদ্য পান আর খোলামেলা যৌনতা একেবারেই স্বাভাবিক ব্যাপার, শুকর যেখানে জাতীয় খাদ্য, সেখানে কড়াকড়িভাবে ইসলাম মেনে চলা খুবই কঠিন।

সম্প্রতি কিউবা সফরে এসেছিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়িপ এরদোয়ান। কলম্বাসের অনেক আগে মুসলমানরাই প্রথম দ্বাদশ শতকে কিউবায় নেমে আমেরিকা আবিস্কার করে বলে দাবি করে তিনি কিছুদিন আগে বিতর্ক সৃষ্টি করেন। কিউবার নেতা রাউল ক্যাস্ত্রোর সঙ্গে বৈঠকে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান কিউবার প্রথম মসজিদ তৈরি করে দেয়ার প্রস্তাব দেন।

কিন্তু প্রেসিডেন্ট্ এরদোয়ানের এই প্রস্তাবের আগেই মসজিদ তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছে সৌদি আরব। হাভানার শিল্পাঞ্চলের কাছে সৌদি অর্থে তৈরি হতে যাচ্ছে কিউবার প্রথম মসজিদ। কিউবার ছোট্ট মুসলিম সম্প্রদায় শীঘ্রই এখানে এসে নামাজ পড়তে পারবেন বলে আশা করছেন।

বৃহস্পতিবার, ২৬ মার্চ, ২০১৫

কিভাবে দারিদ্রে জর্জরিত সিঙ্গাপুর বিশ্বের শীর্ষ আয়ের দেশ

সিঙ্গাপুর। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ছোট্ট একটি দ্বীপ। আয়তন মাত্র ৭১৬ বর্গ কিলোমিটার। এটাকে কোন রাষ্ট্র না বলে নগরই বলা চলে। তবুও এই দ্বীপটিই আধুনিক পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যকেন্দ্র।  অথচ আজ থেকে মাত্র ৫০ বছর পেছনে তাকালে দেখা যাবে ভিন্ন এক দৃশ্য। কী ছিল সিঙ্গাপুর? ১৯৫৯ সালের সেই নগর রাষ্ট্রটিকে অপরাধ ও দরিদ্রে জর্জরিত একটা বাণিজ্যকেন্দ্র বলা যায়।

খুবই ছোট এই নগর রাষ্ট্রের প্রাকৃতিক সম্পদের অপ্রতুলতা উল্লেখ করার মতো। প্রকৃত অর্থে কিছুই ছিল না তাদের। তখন তাদের পেশা-নেশা, বেঁচে থাকা সব কিছুর সঙ্গেই জড়িত ছিল ফিশিং। আর সেটি পরিচিত ছিল মাছ ধরার একটা কেন্দ্র হিসেবেই।

সিঙ্গাপুরের সেই ফিশিংম্যানরাই মাত্র ৫০ বছরে নিজেদেরকে নিয়ে গেছেন আধুনিকতার চরম শিখরে। হয়েছেন বিশ্বের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন, গণতান্ত্রিক ও বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ মাথপিছু আয়ের দেশে। সেই সাথে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যকেন্দ্রের খ্যাতিতো রয়েছেই।

ফিরে দেখা সিঙ্গাপুর: ১৯৬৫ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে সিঙ্গাপুর স্বাধীনতা লাভ করে। লি কুয়ানকে বলা হয়ে থাকে আধুনিক সিঙ্গাপুরের জনক। তার নেতৃত্বেই স্বাধীনতা লাভ করে দেশটি। শুরুর দিকে সিঙ্গাপুরও ছিল তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশ। সে সময়কার সিঙ্গাপুরের চেহারা ছিল আজকের বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। ভাঙ্গাচোরা রাস্তা ঘাট, নিয়ন্ত্রনহীন যানবাহন, রুগ্ন, দরিদ্র মানুষে ভর্তি রাস্তা-ঘাট। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দ্বীপনগরে সংখ্যাগরিষ্ঠ চীনাদের সঙ্গে সংখ্যালঘু মালয় ও ভারতীয়দের মধ্যে দ্বন্দ্ব-বিভেদ ছিল চরমে। অপরাধ আর খুন-খারাবির কোনো বালাই ছিল না। একক সিঙ্গাপুরীয় পরিচয়ের চিন্তাও তখনো ছিল না। দুর্নীতি, অশিক্ষা আর ঘিঞ্জি ছিল চারপাশ। কিন্তু সেদিন পাল্টে গেছে।

একজন লি কুয়ান: মাত্র ৫০ বছরের পথপরিক্রমায় সিঙ্গাপুর পরিণত হয়েছে এশিয়ার সবচেয়ে বাসযোগ্য ও দুর্নীতিমুক্ত দেশ। আর এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন একজন মানুষ। দেশটির প্রথম প্রধানমন্ত্রী লি কুয়ান ইউর নেতৃত্বে ব্রিটিশ সামরিক ঘাঁটি থেকে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ মাথপিছু আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে ৫৫ লাখ মানুষের দেশ সিঙ্গাপুর। এ কারণে তাকে বলা হয় আধুনিক সিঙ্গাপুরের জনক।

১৯৬৫ সালে প্রতিবেশি মালয়েশিয়া থেকে আলাদা হওয়ার পর থেকেই মূলত এ দ্বীপ রাষ্ট্রটিকে একটু একটু করে নিজ হাতে প্রতিষ্ঠা করেন লি কুয়ান। ৯ আগস্ট ১৯৬৫, লি কুয়ান ইউ জনগণের পক্ষ থেকে রিপাবলিক অব সিঙ্গাপুরের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। স্বাধীনতা ঘোষণার সময়েই ঘোষণা করা হয় সিঙ্গাপুর রাষ্ট্রের মূল নীতি হবে— স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার, জনকল্যাণ, সমৃদ্ধি ও সাম্য।’

সদ্য স্বাধীন দেশের ক্ষমতায় গিয়ে লি কুয়ান সবচেয়ে প্রথমে বাছাই করেছেন কিছু মেধাবি মানুষ, প্রনয়ন করেছেন দীর্ঘমেয়াদী কিছু পরিকল্পনা। প্রাথমিক দিকের এই মানুষগুলোর নিরলস পরিশ্রমে দেশটি ধীরে ধীরে তৃতীয় বিশ্বের কাতার হতে পৌছায় প্রথম বিশ্বে। লি কুয়ান মানুষের যে গুনটাকে সবচেয়ে প্রাধান্য দেন তা হচ্ছে ''সততা''। শিক্ষা দীক্ষা , মেধার, ওপরেও স্থান হচ্ছে সততার। সিঙ্গাপুরের প্রতিটা মানুষের মাঝে তিনি এই সততার ভিতটা গভীরভাবে গেথে দিয়েছেন। আসলে দেশের জন্য সকল শিক্ষা ও মেধাই ব্যর্থ যদি মানুষ অসৎ হয়। অপরাধ দমনে সেখানে রয়েছে কঠোর আইন শৃংখলা। নিñিদ্র নিরাপত্তার চাদরে দেশকে ঢেকে রাখতে ২৪ ঘন্টাই সাদা পোষাকে ঘুরে বেড়ায় পুলিশ।

সিঙ্গপুরে সবচেয়ে যে জিনিষটা মুগ্ধ করে তা হচ্ছে নারীদের নিরাপদ অবাধ চলাচল। মধ্যরাতেও একজন নারী ফাকা রাস্তায় পুরোপুরি নিরাপদ। কিছু মজার কিন্তু অত্যন্ত কার্যকর আইনও এখানে সেখানে। কোন নারীর দিকে যদি কোন পুরুষ অশোভন দৃষ্টিতে তাকায়, তবে সেই নারী পুলিশে রিপোর্ট করতে পারে। পুলিশ নিয়ে এমন করকানি দেয় যাতে সেই পুরুষ আর দ্বিতীয়বার কোন নারীর দিকে তাকাতেও ভয় পায়। আরেকেটি মজাদার আইন হচ্ছে লিটারিং বা ময়লা ফেলা বিষয়ক আইন। যেখানে সেখানে থুথু ফেলা, বা ময়লা ফেলা এখানে একটি অপরাধ। কাজেই লিটারিং করলে শাস্তি হচ্ছে একদিন একটি দ্র্ঘী পরিবেশ সচেতনতা বিষয়ক বোরিং সেমিনারে অংশ নিতে হবে ও তারপর পুরো একটি দিন একটি নির্দিষ্ট এলাকার ঝাড়ুদারের দ্বায়িত্ব নিতে হবে।

নাগরিক সুযোগ সুবিধার কথা বলতে গেলে বলতে হবে ২৪ ঘন্টা বিদ্যুৎ পানি, উন্নত ইংলিশ মিডিয়াম শিক্ষা ব্যবস্থা যা কিনা স্কুল ও কলেজ লেভেল পর্যন্ত ফ্রি, সাবসিডাইসড উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা, সবার জন্য আবাসন সুব্যবস্থা, উন্নত জব মার্কেট ইত্যাদি।
সিঙ্গাপুরের রাজনীতি: সিঙ্গাপুরের রাজনীতি একটি সংসদীয় প্রজাতন্ত্রের কাঠামোয় সংঘঠিত হয়। সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী হলেন সরকারের প্রধান। দেশটিতে মূলত একটি রাজনৈতিক দলের প্রভাব বেশি। দেশের নির্বাহী ক্ষমতা সরকারের হাতে ন্যস্ত। আইন প্রণয়নের ক্ষমতা সরকার ও আইনসভার দায়িতে। আইনসভার সদস্যরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন। রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের প্রধান হলেও তার ভূমিকা মূলত আলংকারিক। তবে ইদানিং রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার পরিসর কিছু বাড়ানো হয়েছে।

১৯৫৯ সালের নির্বাচন থেকে সিঙ্গাপুরের রাজনীতিকে পিপল্স অ্যাকশন পার্টি নামের রাজনৈতিক দল নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে। একাধিক বিরোধী দল উপস্থিত থাকলেও ক্ষমতায় তাদের প্রতিনিধিত্ব নেই বললেই চলে। তাই অনেক বিদেশী পর্যবেক্ষক সিঙ্গাপুরকে কার্যত একটি এক-দলীয় শাসনব্যবস্থা হিসেবে গণ্য করে থাকেন। তবে সিঙ্গাপুরের সরকার সবসময়ই একটি স্বচ্ছ, দুর্নীতিমুক্ত সরকার হিসেবে বহির্বিশ্বে পরিচিত। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের মতে সিঙ্গাপুর বহুদিন ধরেই এশিয়ার সবচেয়ে দুর্নীতিমুক্ত দেশ।

(তথ্য কৃতজ্ঞতা: নাগরিক ব্লগ, উইকিপিডিয়া ও সংবাদ পত্র)- আকতারের ক্যানভাস

বুধবার, ২৫ মার্চ, ২০১৫

সৌদি আরবে জনশক্তি রপ্তানির সমস্যা ও সম্ভাবনা

দীর্ঘ ৬ বছর পর সৌদি আরবে জনশক্তি রপ্তানির সুযোগ নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জন্য বড় সুখবর। কিন্তু বর্তমান সৌদি আরবে জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা জনশক্তি রপ্তানির এই সুযোগ পুরুষের পরিবর্তে নারী শ্রমিকদের জন্য! তাও আবার পেশার দিক দিয়ে মান মর্যাদাহীন গৃহকর্মী (খাদ্দামা)। সৌদি আরবের গৃহকর্মীদের খাদ্দামা বলেই ডাকা হয়!

বেসরকারি হিসেবে সৌদি আরবে বর্তমান ২৬ লাখ ১৫ হাজারের অধিক বাংলাদেশি শ্রমিক সৌদি আরবে কর্মরত রয়েছে। বর্তমান বিশ্বে সৌদি আরবই বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার। ৬ বছর একটানা ভিসা বন্ধ না থাকলে বর্তমান সৌদি আরবে প্রবাসী বাংলাদেশির সংখ্যা অর্ধকোটি ছাড়িয়ে যেত। 


 ২০০৭ সালে সৌদি তৎকালিন বাদশা সালমান-বিন-আবদুল আজিজের প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা প্রহরীকে খুন ও ডাকাতির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় একাধিক বাংলাদেশিকে। ২০০৬-২০০৭ সালের নানা অপরাধ পর্যালোচনা করে। সৌদি আরবে সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী পর্ষদ (শরিয়াহ বোর্ড) এর সিদ্ধান্ত ক্রমে বাংলাদেশিদের ভিসা বন্ধ করা হয়। এবং ওই ঘটনায় দীর্ঘ বিচার কার্যক্রম পর্যালোচনা শেষে অভিযুক্তদের অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় ২০১১ সালে ৮ বাংলাদেশিকে শিরচ্ছেদ করা হয়।

 একই বছর বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে হত্যা ডাকাতিসহ আরও অনেক অভিযোগ এনে বাংলাদেশি ভিসা বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাংলাদেশি ভিসা বন্ধ করার ক্ষেত্রে ইন্ডিয়ান ও পাকিস্তানি মালিকানাধীন মধ্যপ্রাচ্য ও সৌদি আরব থেকে স্থানীয়ভাবে প্রকাশিত দৈনিকগুলো ব্যাপক ভূমিকা রাখে। মূলত এই সব দৈনিকে অপপ্রচারের কারণেই বাংলাদেশি ভিসা বন্ধ হয়ে যায়।

 মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশি মালিকানাধীন গণমাধ্যমের অনুপস্থিতি ও সৌদি আরবের প্রভাবশালী দৈনিক গুলোতে ইন্ডিয়ানদের ব্যাপক প্রভাব বিস্তারের কারণে সৌদিদের মধ্যে দীর্ঘদিনের বাংলাদেশিদের সুনাম ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হতে থাকে। এক পর্যায়ে বাংলাদেশি ফ্যামিলি ভিসা থেকে শুরু করে সব ধরনের ভিসা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। 

এছাড়া সৌদি আরবে যে পাঁচ লাখের অধিক রোহিঙ্গা রয়েছে। বাংলা ভাষাভাষি হওয়ায় মায়ানমারের রোহিঙ্গারাও বাংলাদেশি পরিচয় দিয়ে থাকেন। সৌদি আরবে নানা অপরাধের সাথে এসব রোহিঙ্গাদের সম্পৃক্ততা আছে বলে বিভিন্ন সংস্থা দাবি করেছে। চেহারা ও ভাষার মিল থাকায় অপরাধ সংঘটনের পরপরই দোষ চাপিয়ে দেয়া হয় বাংলাদেশিদের উপর। এই কারণেও প্রবাসী বাংলাদেশিরা নানা সমালোচনার সম্মুখীন হয়ে থাকেন।

দীর্ঘ ছয় বছরের আমার সৌদি প্রবাস জীবনের নানা অর্জন ও অভিজ্ঞতার নিরিখে আমি সৌদি আরবে নারী শ্রমিক প্রেরণের ক্ষেত্রে সম্ভাবনার চেয়ে সমস্যায় বেশি দেখছি। মূলত দুটি কারণে সৌদি আরবে নারী শ্রমিক প্রেরণ হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সালে সৌদি আরবে নারী শ্রমিক প্রেরণের চুক্তি অনুসারে প্রতি মাসে ১০ হাজার হলে ১২ মাসে ১ লাখ ২০ হাজার নারী শ্রমিক সৌদি আরবে গেলে বাংলাদেশের গার্মেন্টস্ সেক্টরের কি হবে? তা ভেবে না দেখে বাংলাদেশির উল্লাস দেখে পাগলের বিলাপ বলেই মনে হয়েছে আমার। দুঃখ  ও পরিতাপের বিষয় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রী, বিশ দলীয় জোট নেত্রী, স্পীকারসহ দেশের শীর্ষ স্থানীয় পদে যে দেশের নারীদের অগ্রায়ন হয়েছে সেদেশের নারীরা বিদেশে গৃহকর্মী হয়ে গেলে দেশ কিভাবে মাথা তুলে দাঁড়াবে?

ব্যাপক ডাক ঢোল পিটিয়ে ১৪ সালের শেষ পর্যায়ে আরব আমিরাতে ও বাংলাদেশি গৃহকর্মী প্রেরণের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। গত ৪ মাসে আরব আমিরাতে কত নারী শ্রমিক গিয়েছে তার হদিছ নেই। এছাড়া  হংকংসহ আরও অনেক দেশে বাংলাদেশ থেকে গৃহকর্মী নেওয়ার চুক্তি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে বাংলাদেশ যেন গৃহকর্মী উৎপাদনের দেশে পরিণত হয়েছে। যে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার কথা হচ্ছে.. সেদেশের নারীদের বিদেশে গৃহকর্মী হওয়া কতটা মানসম্মানের তা চুক্তিকর্তারাই ভালো জানেন! 

এছাড়া সৌদি আরবে যেসব নারী শ্রমিক যেতে আগ্রহী হবেন তাদের বয়স ও শারীরিক অবস্থা এবং পরিচ্ছন্নতা সৌদি আরবের গৃহকর্তা নয় স্বয়ং গৃহকর্তীদেরও পছন্দ হবে কি না সন্দেহ রয়েছে! 

কারণ সেদেশে ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশের ইংরেজী জানা শিক্ষিত গৃহকর্মীদের দারুণ দারুণ সব সার্ভিস দিয়েছে! সেদেশে বাংলাদেশের মত অজোপাড়া গায়ের অশিক্ষিত মেয়েরা ভিন দেশের ভিন্ন পরিবেশে কতটা মানিয়ে নিতে পারবেন? 
এছাড়া বাংলাদেশের এসব মেয়েরা খাদ্য সংকটেও পড়বে। কেননা সৌদি পরিবারগুলোতে বাংলাদেশের মত ভাত ও তরিতরকারি রান্না হয় না। সেদেশগুলোতে রান্না ঘরের কাজ না থাকলেও যার যত বিত্ত তার তত খাদ্দামা (গৃহকর্মী) রাখার সংস্কৃতি রয়েছে। সব গৃহকর্মীদের অত্যাচারই যেমন সত্য নয়, তেমনি সব গৃহকর্তাও সাধু নয়।

কথা হচ্ছে মাসের পর মাস খেটে বেতন না পেয়ে গৃহকর্মীরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? সৌদি আরবে আমার প্রবাস জীবনের দীর্ঘ ৪ বছর অবস্থান ছিল জেদ্দার কিলো তামানিনস্থ  বাংলাদেশ দূতাবাসের সন্নিকটে। 

আমার দীর্ঘ ৪ বছরের অভিজ্ঞতায় আমি কোনো ভূক্তভোগী বাংলাদেশিকে দূতাবাসের সেবা পেতে দেখিনি! দিনের পর দিন বাংলাদেশ দূতাবাস অফিসে এসে সমস্যার কথা বড় কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছাতে পারেনি অসহায় বাংলাদেশি শ্রমিকরা। 

 যাদের রক্ত ও ঘামের বিনিময়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা তরান্বিত হচ্ছে সেই প্রবাসী বাংলাদেশিদের অভিভাবক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ দূতাবাস! সংকট সমাধানে কতটা অসহায় তা কেবল ভূক্তভোগীরাই জানেন। দূতাবাসের কর্মকর্তারা দামী গাড়ি নিয়ে বড় বাড়িতে সরকারি অর্থ খরচ করে বিলাসী জীবন যাপনই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। প্রবাসী শ্রমিকদের কোনো মূল্যায়ন-ই হয় না দূতাবাসে। রাজনৈতিক বিবেচনায় দূতাবাসের নিয়োগ বদলি বিবেচিত হওয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের সমস্যা সমাধানে কার্যকর ভূমিকা কর্মকর্তারা রাখতে পারেন না কিংবা রাখেন না! 

সৌদি আরবে বন্ধ ভিসা চালু হওয়ার খবরে ২৬ লাখ সৌদি প্রবাসী বাংলাদেশিরা খুশিতে আত্মহারা হয়ে উঠে। সংবাদকর্মী হওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা গত এক মাসে কয়েক'শ বার ফোন করে জানতে চেয়েছেন আমার কাছে আসলেই কি ভিসা বের হচ্ছে? নাকি নারী শ্রমিক প্রেরণের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।

 সৌদি ভিসা চালু হবার খবরে ২৬ লাখ প্রবাসী ২ কোটিরও বেশি আত্মীয়-স্বজনের মুখে হাসি ফুটে। ফলে খবর প্রকাশের এক দিনের মধ্যে গত ২ ফেব্রুয়ারি জেলায় জেলায় জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ে পুরুষদের দীর্ঘ লাইন পরিলক্ষিত হয়। সরকারিভাবে নিবন্ধনের কথা বলায় নারী শ্রমিকের ভিসার জায়গায় পুরুষ শ্রমিকের এই দীর্ঘ লাইন পরিলক্ষিত হচ্ছে। 

বিদেশ যেতে নিবন্ধনের জন্য এই দীর্ঘ লাইন বলে দেয় বাংলাদেশের মানুষ অকর্মা নয়। দেশ কর্মসংস্থান দিতে ব্যর্থ হওয়ায় নাগরিক জীবন অস্থির হয়ে উঠেছে। সম্ভবত বাংলাদেশই এশিয়া মহাদেশের মধ্যে শিক্ষিত বেকারের সর্বোচ্চ দেশে পরিণত হয়েছে।

 জীবনের স্বাদ আহ্লাদ পূরণ করতে না পেরে অনেক তরুণ বিপথগামী হচ্ছে। জড়িয়ে পড়ছেন অসামাজিক ও অবৈধ কর্মকা-ে। একজন কর্মবীর মানুষের দৈনিক খরচের পরিমাণের চেয়ে একজন বেকারের খরচ অনেক বেশি। বাবার হোটেলের তিন বেলা খাবার ফ্রি হলেও মোবাইল বিল, ইন্টারনেট খরচ শ্বাস-নিঃশ্বাসের মত প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে এই বিশাল বেকার জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগাতে হবে তাহলেই বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াবে।

নাজিম উদ্দিন চৌধুরী এ্যানেল
লেখক, সংগঠক ও কলামিস্ট
nazimabnews24@gmail.com

রবিবার, ১৫ মার্চ, ২০১৫

ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের বড় অর্জন: প্রাথমিকে বৃত্তি পেলো ৫৪,৪৮১ জন

২০১৪ সালের প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় ৫৪ হাজার ৪৮১ শিক্ষার্থী বৃত্তি পেয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান রবিবার দুপুরে বৃত্তির ফল ঘোষণা করেন। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে এ বৃত্তির ফল ঘোষণা করা হয়।


বৃত্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে ট্যালেন্টপুলে (মেধাবৃত্তি) ২১ হাজার ৯৮৩ জন এবং সাধারণ কোটায় ৩১ হাজার ৪০৭ জন রয়েছে। সম্পূরক বৃত্তি পেয়েছে এক হাজার ৯১ জন।

সারাদেশে সর্বোচ্চ বৃত্তিপ্রাপ্ত ১০টি বিদ্যালয়ের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে রাজধানীর মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়। এ বিদ্যালয় থেকে ১৪৫ জন বৃত্তি পেয়েছে।

প্রাথমিক বৃত্তির ফলাফল প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের ওয়েবসাইট   (www.dpe.gov.bd)  থেকে সংগ্রহ করা যাবে।

সোমবার, ২ মার্চ, ২০১৫

বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে সৌদি গমনেচ্ছু নারীকর্মীদের নিবন্ধন

আগামী ৫ মার্চ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে সৌদি আরব তথা বিদেশ গমনেচ্ছু নারীকর্মীদের নিবন্ধন কার্যক্রম।

প্রথম পর্যায়ে ১১ মার্চ পর্যন্ত শুধু ঢাকা বিভাগের বাসিন্দারা নিবন্ধন করতে পারবেন। এরপর ১২  থেকে ১৬ মার্চ রাজশাহী ও রংপুর, ১৭ থেকে ২৩ মার্চ চট্টগ্রাম ও সিলেট এবং ২৪ থেকে ২৮ মার্চ খুলনা ও বরিশাল বিভাগে নিবন্ধন হবে।

পুরুষকর্মী এ দফায় নিবন্ধন করতে পারবেন না।

সোমবার রাজধানীর ইস্কাটনের প্রবাসীকল্যাণ ভবনে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান প্রবাসী জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক বেগম শামসুন নাহার।

তিনি জানান, দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন, পৌরসভা এবং সিটি করপোরেশনের নগর তথ্যসেবা কেন্দ্রে এবং জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ে নিবন্ধন করা যাবে। প্রতি কর্মদিবসে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত নিবন্ধন চলবে। নিবন্ধনের জন্য ৩০০ টাকা খরচ হবে। এর মধ্যে সরকারি ফি ২০০ টাকা। ফরম পূরণে সহায়তার জন্য উদ্যোক্তাকে দিতে হবে ১০০ টাকা।
 
গত ১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় সৌদি আরব। ২০০৮ সালে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল দেশটি। পরে ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের সঙ্গে জনশক্তি রফতানিতে চুক্তি করে সৌদি সরকার। ওই দিন বিনা খরচে সৌদি আরব যাওয়ার ঘোষণায় নিবন্ধন করতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে সাধারণ মানুষ। ভিড় সামলাতে না পেরে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি নিবন্ধন বন্ধ করে দেওয়া হয়।

প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, 'নারী-পুরুষ কর্মী একত্রে নিবন্ধন করায় কিছু সমস্যা হচ্ছে। এ কারণেই নারীদের জন্য আলাদা নিবন্ধন চালু করা হয়েছে। বিশেষ করে যারা গৃহকর্মী হিসেবে যেতে চান তাদের আলাদা নিবন্ধন করা হবে। নিবন্ধিতদের মধ্যে যারা চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হবে তাদের ছয় সপ্তাহ গৃহস্থালি কাজের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।'

এদিকে, সৌদি গেজেট সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আগামী ৩ মাসের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে গৃহকর্মী সৌদি আরবে পৌঁছতে পারে বলে আশা করছে দেশটি।
দেশটির ইস্টার্ন প্রভিন্সের রিক্রুটমেন্ট অফিসের একাধিক সূত্রের বরাতে প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সৌদি আরবে কাজের ভিসা দেওয়া শুরু হবে। - আকতারের ক্যানভাস

বুধবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

বিশ্বে ৩৫ কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত

বর্তমানে বিশ্বে ৩৫ কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ২০৩৫ সালের মধ্যে এ রোগীর সংখ্যা দাঁড়াবে ৬০ কোটিতে। ফলে ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন যে হারে বাড়ছে, তা জন্ম দিচ্ছে শঙ্কার।

ওয়ার্ল্ড ইনোভেশন সামিট ফর হেলথ (ডব্লিউআইএসএইচ)-এ প্রকাশিত ‘রাইজিং টু দ্য চ্যালেঞ্জ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন এ উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এ খবর দিয়েছে অনলাইন জি নিউজ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আইনপ্রণেতাদের এ ব্যাপারে আশু পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।

২০১৪ সালে সার্বিক বৈশ্বিক স্বাস্থ্যখাতে যে ব্যয় হয়েছে, তার ১১ শতাংশ অর্থাৎ, ৬১ কোটি ২০ লাখ ডলার ব্যয় হয়েছে ডায়াবেটিসের চিকিৎসায়। নাইজেরিয়া বা সুইডেনের মোট বার্ষিক প্রবৃদ্ধির চেয়েও  যা অনেক বেশি। আরও উদ্বেগজনক তথ্য হচ্ছে, ৮০ শতাংশ ডায়াবেটিক রোগী যে দেশগুলোতে বাস করেন, সেখানে স্বাস্থ্যখাতে বৈশ্বিক বাজেটের মাত্র ২০ শতাংশ ব্যয় হয়।

ডায়াবেটিস হলে করণীয়

আপনার ডায়াবেটিস হয়েছে কিনা অথবা ডায়াবেটিস হয়ে গেলে তা নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা তা বোঝার জন্য কিছু টিপস জেনে রাখুন। যে কোন সময় কিছু সন্দেহ হলেই দ্রুত রক্তের সুগারটি মেপে নিন।

ডায়াবেটিসের মূল লক্ষণ যেমন অতিরিক্ত পিপাসা, ঘনঘন প্রস্রাব, রাত্রে উঠে প্রস্রাব করতে হয়, প্রচুর খিদে পায় ইত্যাদি।

আপনি সব সময় সুস্থ ছিলেন, কিন্তু হঠাত্ মনে হচ্ছে ওজন কমে যাচ্ছে, অথচ খাওয় দাওয়া ঠিক মতই চলছে এবং রুচি বা ক্ষুধাও বেশ বেশি, অনেক সময় মাত্রাতিরিক্ত।

যদি এমন হয় দ্রুত ওজন হারাচ্ছে শরীর, অথচ তার কোন চেষ্টা করা হয়নি যেমন হাঁটাচলা, ব্যায়াম কিছুই হচ্ছে না বা খাদ্য নিয়ন্ত্রণের কোন চেষ্টা চলছে না, অথবা অকারণে ওজন কমছে, তাহলে ধরে নিতে পারেন রক্তের সুগার বেড়েও যেতে পারে।


ডায়াবেটিস থেকে বাঁচার জন্য প্রতিরোধ করাটাই জরুরী

শুধু জীবন যাত্রার একটু খানি পরিবর্তন, একটু সচেতনতা ও সদিচ্ছা শতকরা প্রায় ৬০ ভাগ ডায়াবেটিসকে প্রতিরোধ করতে পারে।

রোগটি যেহেতু সারা জীবনের, তাই এই রোগে যাতে আক্রান্ত না হতে পারে সে লক্ষ্যে রোগ হওয়ার আগেই একে প্রতিরোধ করাটাই জরুরী। অর্থাত্ রোগটি আদতে না হতে দেওয়া। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মূলমন্ত্র সুশৃংখল জীবন যাপন। এর মাধ্যমে রোগকে দূরে রাখা সম্ভব। নিচের কিছু কিছু টিপস মেনে চললে এ দানব থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব-

খাদ্যাভ্যাস:
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য খাদ্যাভ্যাসের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সময়মতো এবং পরিমাণ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ছোটবেলা থেকেই বেশি বেশি সবুজ শাক সবজির সাথে প্রয়োজন অনুযায়ী মাছ খেতে হবে। কম চর্বি ও কর্ম শর্করাযুক্ত খাদ্য গ্রহণে উদ্ধুদ্ধ হতে হবে। অধিক ক্যালরিযুক্ত খাবার, ফাস্টফুড, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাবার, চকলেট, আইসক্রিম ইত্যাদি পরিহার বা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। চিনি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার যেমন মিষ্টি, সরবত, গ্লুকোজ, পায়েস ইত্যাদি কম খেতে হবে। ধূমপানের বিরুদ্ধে যেমন গণসচেতনতা গড়ে উঠেছে, তেমনিভাবে মন্দ খাদ্যাভ্যাসের বিরুদ্ধেও সচেতনতা গড়ে তোলা দরকার।

কায়িক শ্রম ও ব্যায়াম

ডায়াবেটিসের রোগীর ব্যায়ামের বিকল্প নেই। অবশ্যই রোগীদের নিয়মিত কায়িক শ্রম এবং যত অল্পই হোক সার্মথ্য অনুযায়ী ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। সকাল সন্ধ্যা নিয়মিত হাঁটাচলা, হাটে বাজারে কোথাও গেলে অল্প দূরত্বে রিকশা বা গাড়ি ব্যবহার না করা, অল্প কয়েক তলার জন্য লিফট ব্যবহার না করা ইত্যাদি। আরো সম্ভব হলে সাঁতার বা জগিং করা, ব্যায়ামাগারে গিয়ে সৃশৃংখল ব্যায়াম করা। মোট কথা নিজেকেই ঠিক করে নিতে হবে। ডায়াবেটিসের রোগীর রক্তের ভালো কোলেস্টেরল কম থাকে, যা করোনারি হার্ট ডিজিজের একটি বড় ঝুঁকি থাকে। ব্যায়ামের মাধ্যমে ভালো কোলেস্টেরল বাড়ানো যায়।

নিয়ম শৃঙ্খলা

ডায়াবেটিস রোগীর জীবন কাঠি হলো নিয়ম-শৃঙ্খলভাবে জীবন যাপন। এর মানে সব কিছু নিয়ম মাফিক মেনে চলা। যেমন-খাওয়া-দাওয়া, ঠিক মত হাঁটাচলা বা ব্যায়াম করা, ওষুধপত্র নিয়ম মাফিক ব্যবহার করা ইত্যাদি। যারা শৃঙ্খলা মেনে চলে তারা যেমন ডায়াবেটিস হওয়া থেকেও মুক্ত থাকতে পারে, এমনকি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে একে নিয়ন্ত্রণে রাখাও খুবই সহজসাধ্য ব্যাপর হয়ে যায়। ফলে স্বাভাবিক জীবন যাপন যেমন সম্ভব হয়, তেমনি অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের রোগীর জন্য প্রতিনিয়ত বয়ে আনে সমস্যাগুলো থেকেও বাঁচা সম্ভব।

এ বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে পাঠ্যপুস্তকে সঠিক জীবনাচরণ সম্পর্কে তথ্য অর্ন্তভূক্তি, মিডিয়ার ব্যবহার, শিক্ষক, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব এবং সামাজিক নেতাদের প্রশিক্ষণ, সমাজ কর্মীদের সচেতন করে তোলা, সচেতনতা ক্যাম্প ইত্যাদির ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

রবিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

বিনামুল্যে আইটি প্রশিক্ষন দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইরুডিভার্সিটি

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জনপ্রিয় তথ্যপ্রযুক্তি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান ইরুডিভার্সিটি (www.erudeversity.com) সম্প্রতি বাংলায় তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক অনলাইন প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করেছে।

প্রতিষ্ঠানটির ফ্রি-প্রশিক্ষণ প্ল্যাটফর্মে প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য ইন্টারেক্টিভ ভিডিও টিউটোরিয়াল এর মাধমে চাকুরী নির্ভর বাংলা কোর্স চালু করা হয়েছে। ফলে এখন ইংরেজি, স্প্যানিশ ও হিন্দী এর পাশাপাশি বাংলায়ও প্রশিক্ষণ নেয়ার সুযোগ থাকছে। ২০১৪ সালে শেষের দিকে প্রতিষ্ঠানটি তাদের প্রশিক্ষণ বিষয়ক ইন্টারেক্টিভ ওপেন সোর্স ওয়েব প্ল্যাটফর্ম চালু করে এবং ইতিমধ্যে সারা বিশ্বের অসংখ্য প্রশিক্ষণার্থী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে তাদের ক্যারিয়ার গড়তে সফল হয়েছে।

ইরুডিভার্সিটির পরিচালক থমাস বায়ডিএান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সারা বিশ্বের বিপুল সংখ্যক বাংলা ভাষাভাষীদের চাহিদার কথা চিন্তা করে আমরা বাংলা ভাষায় ট্রেনিং ভিডিও অনুবাদ কার্যক্রম শুরু করেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘চাকুরিনির্ভর এই তথ্যপ্রযুক্তি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এখন বিশ্বের যে কোনো জায়গা থেকে অনলাইনে বসে শিক্ষার্থীরা ফ্রি-ল্যান্সার, গ্রাফিক্স ডিজাইনার, কার্টুন অ্যানিমেটর, সফটওয়্যার ডেভেলপার বা উদ্যোক্তা হতে পারবে।’


অন্যদিকে এই প্ল্যাটফর্মে প্রশিক্ষকরা নতুন কোর্স তৈরি করে প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে কোর্সটির জনপ্রিয়তার ওপর ভিত্তি করে আয় করে থাকেন। প্রতিষ্ঠানটি বিনা মূল্যে উচ্চ মানের টিউটোরিয়াল ভিডিওর সাহায্যে প্রশিক্ষণার্থীদের বর্তমান চাকুরী বাজার উপযোগী হাই-ডিমান্ড টেকনিক্যাল কোর্স এবং সফটওয়্যার টুলস বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদানে বদ্ধপরিকর।


প্রতিষ্ঠানটি প্রতি সপ্তাহে নতুন ভিডিও টিউটোরিয়াল যুক্ত করার পাশাপাশি আরও নতুন কিছু ভাষায় কোর্স চালু করার পরিকল্পনাও করছে। ফলে প্রশিক্ষণার্থীরা সহজে বিনা খরচে ঘরে বসে আইসিটি প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারবে। খুব শীঘ্রই বাংলাদেশ থেকেও অনলাইনে পরীক্ষার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রশিক্ষণ সার্টিফিকেট পাবার সুযোগ থাকছে বলে জানান এ কোম্পানির কর্মকর্তারা, যা কিনা বর্তমান চাকুরী বাজারে বেশ সহায়তা করবে। আরও জানতে ভিজিট: www.erudeversity.com।

বুধবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

‘অনলাইনেও নিবন্ধন করতে পারবেন সৌদি গমনেচ্ছুরা’

এখন থেকে অনলাইনেও নিবন্ধন করতে পারবেন সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে গমনেচ্ছুরা। বিদেশ গমনেচ্ছুরা বিএমইটির ওয়েবসাইটের (www.bmet.gov.bd) মাধ্যমেও অনলাইনে নিবন্ধন করতে পারবেন।

এছাড়া অফিস চলাকালীন সময়ে জনশক্তি রফতানি ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর(বিএমইটি) অধীনে সব জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয় এবং দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের ইউনিয়ন ডিজিটাল কেন্দ্রের মাধ্যমে নিবন্ধন করা যাবে।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শহিদুল আলম মজুমদার বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নিবন্ধন একটি চলমান প্রক্রিয়া। এজন্য তাড়াহুড়ার কোনো প্রয়োজন নেই। বিদেশ গমনেচ্ছুরা বিএমইটির ওয়েবসাইটের (www.bmet.gov.bd) মাধ্যমেও অনলাইনে নিবন্ধন করতে পারবেন।

এদিকে, নিবন্ধন ফরম জমা দিতে বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই রাজধানীর ইস্কাটনে প্রবাসী কল্যাণ ভবনে ভিড় করেছেন সৌদি আরব গমনেচ্ছুরা। সেখানে হাজারো মানুষের ভিড়ে বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সৌদি গমনেচ্ছুদের ভিড় প্রবাসী কল্যাণ ভবন থেকে পূর্বে রমনা থানা ও পশ্চিমে টেলিযোগাযোগ ভবন পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।

সৌদি আরব গমনেচ্ছু হাজার হাজার মানুষের চাপ সামাল দিতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং জনশক্তি রফতানি ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

প্রসঙ্গত, সৌদি সরকারের সঙ্গে গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ সরকারের একটি চুক্তি সই হয়। এই চুক্তির মাধ্যমে দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর পর সৌদি আরবের শ্রমবাজার উন্মুক্ত হল বাংলাদেশের জন্য। চুক্তি অনুযায়ী আপাতত শুধু ৮০০ রিয়াল (প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার টাকা) বেতনে গৃহকর্মী (নারী) নেবে সৌদি আরব। এর পর ধীরে ধীরে মালী ও দারোয়ানসহ অন্য ১১টি গৃহস্থালির কাজে কর্মী নেবে তারা।