বুধবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

বিশ্বে ৩৫ কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত

বর্তমানে বিশ্বে ৩৫ কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ২০৩৫ সালের মধ্যে এ রোগীর সংখ্যা দাঁড়াবে ৬০ কোটিতে। ফলে ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন যে হারে বাড়ছে, তা জন্ম দিচ্ছে শঙ্কার।

ওয়ার্ল্ড ইনোভেশন সামিট ফর হেলথ (ডব্লিউআইএসএইচ)-এ প্রকাশিত ‘রাইজিং টু দ্য চ্যালেঞ্জ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন এ উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এ খবর দিয়েছে অনলাইন জি নিউজ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আইনপ্রণেতাদের এ ব্যাপারে আশু পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।

২০১৪ সালে সার্বিক বৈশ্বিক স্বাস্থ্যখাতে যে ব্যয় হয়েছে, তার ১১ শতাংশ অর্থাৎ, ৬১ কোটি ২০ লাখ ডলার ব্যয় হয়েছে ডায়াবেটিসের চিকিৎসায়। নাইজেরিয়া বা সুইডেনের মোট বার্ষিক প্রবৃদ্ধির চেয়েও  যা অনেক বেশি। আরও উদ্বেগজনক তথ্য হচ্ছে, ৮০ শতাংশ ডায়াবেটিক রোগী যে দেশগুলোতে বাস করেন, সেখানে স্বাস্থ্যখাতে বৈশ্বিক বাজেটের মাত্র ২০ শতাংশ ব্যয় হয়।

ডায়াবেটিস হলে করণীয়

আপনার ডায়াবেটিস হয়েছে কিনা অথবা ডায়াবেটিস হয়ে গেলে তা নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা তা বোঝার জন্য কিছু টিপস জেনে রাখুন। যে কোন সময় কিছু সন্দেহ হলেই দ্রুত রক্তের সুগারটি মেপে নিন।

ডায়াবেটিসের মূল লক্ষণ যেমন অতিরিক্ত পিপাসা, ঘনঘন প্রস্রাব, রাত্রে উঠে প্রস্রাব করতে হয়, প্রচুর খিদে পায় ইত্যাদি।

আপনি সব সময় সুস্থ ছিলেন, কিন্তু হঠাত্ মনে হচ্ছে ওজন কমে যাচ্ছে, অথচ খাওয় দাওয়া ঠিক মতই চলছে এবং রুচি বা ক্ষুধাও বেশ বেশি, অনেক সময় মাত্রাতিরিক্ত।

যদি এমন হয় দ্রুত ওজন হারাচ্ছে শরীর, অথচ তার কোন চেষ্টা করা হয়নি যেমন হাঁটাচলা, ব্যায়াম কিছুই হচ্ছে না বা খাদ্য নিয়ন্ত্রণের কোন চেষ্টা চলছে না, অথবা অকারণে ওজন কমছে, তাহলে ধরে নিতে পারেন রক্তের সুগার বেড়েও যেতে পারে।


ডায়াবেটিস থেকে বাঁচার জন্য প্রতিরোধ করাটাই জরুরী

শুধু জীবন যাত্রার একটু খানি পরিবর্তন, একটু সচেতনতা ও সদিচ্ছা শতকরা প্রায় ৬০ ভাগ ডায়াবেটিসকে প্রতিরোধ করতে পারে।

রোগটি যেহেতু সারা জীবনের, তাই এই রোগে যাতে আক্রান্ত না হতে পারে সে লক্ষ্যে রোগ হওয়ার আগেই একে প্রতিরোধ করাটাই জরুরী। অর্থাত্ রোগটি আদতে না হতে দেওয়া। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মূলমন্ত্র সুশৃংখল জীবন যাপন। এর মাধ্যমে রোগকে দূরে রাখা সম্ভব। নিচের কিছু কিছু টিপস মেনে চললে এ দানব থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব-

খাদ্যাভ্যাস:
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য খাদ্যাভ্যাসের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সময়মতো এবং পরিমাণ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ছোটবেলা থেকেই বেশি বেশি সবুজ শাক সবজির সাথে প্রয়োজন অনুযায়ী মাছ খেতে হবে। কম চর্বি ও কর্ম শর্করাযুক্ত খাদ্য গ্রহণে উদ্ধুদ্ধ হতে হবে। অধিক ক্যালরিযুক্ত খাবার, ফাস্টফুড, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাবার, চকলেট, আইসক্রিম ইত্যাদি পরিহার বা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। চিনি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার যেমন মিষ্টি, সরবত, গ্লুকোজ, পায়েস ইত্যাদি কম খেতে হবে। ধূমপানের বিরুদ্ধে যেমন গণসচেতনতা গড়ে উঠেছে, তেমনিভাবে মন্দ খাদ্যাভ্যাসের বিরুদ্ধেও সচেতনতা গড়ে তোলা দরকার।

কায়িক শ্রম ও ব্যায়াম

ডায়াবেটিসের রোগীর ব্যায়ামের বিকল্প নেই। অবশ্যই রোগীদের নিয়মিত কায়িক শ্রম এবং যত অল্পই হোক সার্মথ্য অনুযায়ী ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। সকাল সন্ধ্যা নিয়মিত হাঁটাচলা, হাটে বাজারে কোথাও গেলে অল্প দূরত্বে রিকশা বা গাড়ি ব্যবহার না করা, অল্প কয়েক তলার জন্য লিফট ব্যবহার না করা ইত্যাদি। আরো সম্ভব হলে সাঁতার বা জগিং করা, ব্যায়ামাগারে গিয়ে সৃশৃংখল ব্যায়াম করা। মোট কথা নিজেকেই ঠিক করে নিতে হবে। ডায়াবেটিসের রোগীর রক্তের ভালো কোলেস্টেরল কম থাকে, যা করোনারি হার্ট ডিজিজের একটি বড় ঝুঁকি থাকে। ব্যায়ামের মাধ্যমে ভালো কোলেস্টেরল বাড়ানো যায়।

নিয়ম শৃঙ্খলা

ডায়াবেটিস রোগীর জীবন কাঠি হলো নিয়ম-শৃঙ্খলভাবে জীবন যাপন। এর মানে সব কিছু নিয়ম মাফিক মেনে চলা। যেমন-খাওয়া-দাওয়া, ঠিক মত হাঁটাচলা বা ব্যায়াম করা, ওষুধপত্র নিয়ম মাফিক ব্যবহার করা ইত্যাদি। যারা শৃঙ্খলা মেনে চলে তারা যেমন ডায়াবেটিস হওয়া থেকেও মুক্ত থাকতে পারে, এমনকি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে একে নিয়ন্ত্রণে রাখাও খুবই সহজসাধ্য ব্যাপর হয়ে যায়। ফলে স্বাভাবিক জীবন যাপন যেমন সম্ভব হয়, তেমনি অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের রোগীর জন্য প্রতিনিয়ত বয়ে আনে সমস্যাগুলো থেকেও বাঁচা সম্ভব।

এ বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে পাঠ্যপুস্তকে সঠিক জীবনাচরণ সম্পর্কে তথ্য অর্ন্তভূক্তি, মিডিয়ার ব্যবহার, শিক্ষক, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব এবং সামাজিক নেতাদের প্রশিক্ষণ, সমাজ কর্মীদের সচেতন করে তোলা, সচেতনতা ক্যাম্প ইত্যাদির ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন