ছবির মতোই সুন্দর ছিল আমার গ্রামটা...

বর্ষা মৌসুমে নৌকা ছাড়া চলাচলের কোন উপায় থাকতোনা। যেন মহসড়কের পাশে বিচ্ছিন্ন ছোটএকটা দ্বীপ।

সমস্যা যত বড়ই হোক, আশা মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে

আমরা অবশ্যই পারব৷ সমস্যা যত বড়ই হোক না কেন, আশা মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে, নতুন কিছু উদ্ভাবন করতে অনুপ্রেরণা জোগায়৷ কিন্তু সমস্যাকে নিজের চোখে না দেখলে শুধু আশা দিয়ে সমস্যা সমাধান করা যায় না৷

ঘুরে আসুন নারায়ণগঞ্জের সব দর্শনীয় স্থানে

অপরূপ সৌন্দর্যে ভরপুর আমাদের বাংলাদেশের প্রায় প্রত্যেকটি জেলায়ই রয়েছে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান। যা আমাদের দেশকে করেছে আরো সমৃদ্ধ। শত বছর ধরে লাখো পর্যটককে করেছে আকৃষ্ট।

মানবসেবাই সর্বোত্তম ধর্ম: ফাদার তেরেসা

অসহায়, দুস্থ মানুষের সহায়তাই তার ধ্যান-জ্ঞান।সহিংসতার বিপরীতে তিনি অসহায়ের ত্রানকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হন।তিনি পাকিস্তানের আবদুল সাত্তার ইদি।অসম্ভব মানবসেবার কারনে ৮৪ বছর বয়সী এই ব্যক্তি তার দেশে ফাদার তেরেসা নামেই বেশি পরিচিত।

‘মানসিক প্রশান্তির জন্য সাইকেল’

যাত্রা পথে পরিবহন নিয়ে দুশ্চিন্তা আর ভোগান্তি থেকে রেহাই পেতে বিকল্প হলো একটা বাই সাইকেল। তাছাড়া ইদানিং স্বাস্থ্যটার দিকেও মনে হচ্ছে একটু যত্ন নেয়া দরকার।

রবিবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৮

দু:খের দিনলিপি: একটি দু:সংবাদের অপেক্ষায়...

১৯ আগস্টের বিকেল। শিশু হাসপাতালের ৪ নাম্বার ওয়ার্ডের ৫৪ নম্বর বেডের রেলিং ধরে বসে আছি। পাশে ঐশীর বাবা মা দুজন অক্সিজেন হেড বক্সের দুইপাশ ঘিরে অশ্রুসজল।  জ্বরে পুড়তে থাকা মেয়ের গায়ে অাদরের পরশ বুলিয়ে দিচ্ছেন। হার্টবিটও বেড়েছে অনেক। শরির শুকিয়ে প্রায় রক্তশুন্য, চামরাগুলো এমন কুচকে গেছে যেন ৮০/৯০ বছরের বুড়ির শরির। শুকিয়ে হাড্ডিশার শরীর। বুকের খাচায় কংকাল।  ডা. রেজাউল বলেছেন ইনফেকশনের কারনে এমনটি হয়েছে। তবে চেহারাটা অনেক সুন্দর রয়েছে। হয়তো সৃষ্টিকর্তার নিজ হাতে সুনিপুণ ভাবে অনেক ভালোবাসায় সৃষ্টি করেছেন বলেই, মরনব্যাধি সেই ভালোবাসার চেহারা ঘায়েল করতে পারেনি।

আমি বসে আছি রক্ত দিব বলে, ক্রস মেচিং রিপোর্ট আসবে বলে দেরি। যদিও গতমাসেও একবার দিয়েছিলাম।

রওজার ৩ মাস ৩ দিন আজ।  এই তিন মাসের সোয়া দুই মাসই তাকে কাটাতে হয়েছে হসপিটালে। এর মধ্যে এনআইসিও, আইসিও মিলিয়ে ২৫ দিন। গত কয়েকদিন ধরেই এখানকার ডাক্তাররা ফের আইসিও আইসিও  বলে মাথা খারাপ করে দিচ্ছে। তাদের ভাষ্য যে কোন সময় লাইফ সাপোর্ট লাগবে তার। কিন্তু আঢ়ালে এও বলে দিয়েছেন এসব করে তার ফিরে আসার চান্স  ২০ ভাগ। বাকিটা আল্লাহর উপর ভরসা। উনি যা চান ফায়সালা  তাই হবে। আমরা শুধু চেষ্টা করার মালিক।

সবকিছু বিবেচনায় আইসিও বা লাইফ সাপোর্টে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু কারো চোখের পানিইত আর ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছেনা। বিশেষ করে রেখার বোবাকান্না সহ্য করার মতোনা। সময়ে অসময়ে গোপনে প্রকাশ্যে বুক ফেটে চোখের জলে এই কষ্টের বহিপ্রকাশ ঘটছে সবারই। গভীর রাতে বা ভোর সকালে যখনই তাদের ফোন পাই তখনই বুকের ভিতরটা মোচর দিয়ে উঠে এই বুঝি কোন খারাপ খবর শুনবো। এখনত প্রতিরাতে একটা দু:সংবাদ শোনার অপেক্ষায় ঘুমুতে যাওয়া অনেকটা রুটিনে পরিণত হয়েছে। সকালে নতুন সূর্যের মতো যখন তাদের ভালো থাকার খবরটা পাই তখনই বুক থেকে দুশ্চিন্তার পাথরটা নামে। কিন্তু তাতে কি। হঠাৎ হঠাৎই বাবুর অবস্থার অবনতি হলে কষ্টের তীব্রতা গ্রাস করে নেয় সব প্রশান্তি।

বিশেষত ঐশীর নিষ্পাপ, ফুলের মতো চেহারা যখন দেখি পাশাপাশি রোগ যন্ত্রনায় ছটফটানি দেখলে যে কারো চোখেই পানি চলে আসে। আসেপাশের বিছানার অন্যরোগীর আত্নীয়রাও দেখি কাঁদে ওর কষ্টে।

সবার একটাই প্রার্থনা এই কষ্ট থেকে যেন সবাইকেই মুক্তি দেন পরম দয়ালু আল্লাহ তায়ালা।  তিনিইত উত্তর আরোগ্যদানকারী।

জানিনা আজ থেকে ২০ বছর কিভাবে এই দিনটিকে মুল্যায়ন করা হবে। তবে মহান প্রভু পরোয়ার দেগারের দরবারে ফরিয়াদ তাকে নেক হায়াৎ দাও। সবার অন্তরে প্রশান্তির বাতাস বইয়ে দাও। তাকে সুস্থ্য স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দাও।

রবিবার, ১২ আগস্ট, ২০১৮

ছবির মতোই সুন্দর ছিল আমার গ্রামটা...


বাইরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। অনাকাঙ্ক্ষিত বৃষ্টিতে স্বভাবতই বের হওয়ার জো নেই। বাধ্যতামূলক গৃহবন্দি। তবে আজকে বের হতে না পারলেও অন্যদিনের মতো তীব্র বিরক্তি ভর করছেনা। কারন বাইরে বেরুবার সিরিয়ার কোন তাড়াও নেই। 
এমন বৃষ্টিদিনে অলস দুপুরে তাই বৃষ্টি দেখতেই ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে মনের দীর্ঘদিনের জমে থাকা বিষাক্ত কষ্টগুলোও ধুয়ে যাচ্ছে। মনটাও হালকা হতে শুরু করেছে। তানজীব সরোয়ার আর মিনারের বৃষ্টি দিনের গানগুলো শুনতে শুনতে কেন জানি হারিয়ে গেলাম অতীত জীবনের বৃষ্টি দিনে। চোখের সামনে ভেসে উঠলো আমার শৈশব জীবনেরর বৃষ্টিস্নাত গ্রাম খানি।

ঢাকার খুব কাছে হলেও সুযোগ সুবিধার দিক থেকে সবচে পিছিয়ে থাকা জনপদের সন্তান আমি। যদিও এখন প্রেক্ষাপট অনেক ভিন্ন।
ঢাকা চটগ্রাম মহাসড়ক থেকে ৭০০ মিটার দূরে হলেও  উন্নয়নের মহাসড়ক থেকে ৭০০ মাইল দুরেই মনে হয় আমার গ্রাম।।
সেসময় গ্রামে চলাচলের কোন কোন রাস্তা ছিলনা। বিশেষত বর্ষা মৌসুমে নৌকা ছাড়া চলাচলের কোন উপায় থাকতোনা। যেন মহসড়কের পাশে বিচ্ছিন্ন ছোটএকটা দ্বীপ।

মনেপড়ে, এরকম বহু বর্ষাময় দিনে পানি সাতরে স্কুলে গেছি। বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে নৌকার লগি ঠেলছি।

যে বছর আমাদের নৌকা ছিলনা,  কত কষ্টের  যাতায়াত ছিল। পাশের গ্রামের যে পর্যন্ত কাঁচারাস্তা ছিল হেটে এসে পড়নের হাফপেন্ট খুলে বই সমতে পলিথিনে ঢুকিয়ে  একহাত উচু করে দে সাতার।
বর্ষাকালে রাতের বেলায় ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে নৌকার জন্য বাপ- চাচাদের ডাকাডাকি শুনতাম।। অথবা কাউকে পার করে নিয়ে আসতে হবে এই তাগিদে বাড়ি থেকে সড়কের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। কখনো ডাকে সাড়া না পেলে তারাও পানি সাতরেই বাড়ি আসতেন। 

আর এখন কত পরিবর্তন গ্রামের উপর দিয়ে রাস্তা গেছে। যদিও কাঁচা। তবুও এখন রাতে বাড়ি গেলে ডাকাডাকিই করতে হয়।। এখন বাড়িতে একটা কলিং বেল লাগানোর প্রয়োজন অনুভব করছি সিরিয়াসলি। যাই হোক গ্রামের ছেলে মেয়েদের সাতার আর নৌকা চালাতে জানা অবধারিত। গ্রামের চলাচলে কেন্দ্রে বাড়ি হওয়াতে একটা উটকো ঝামেলাও ছিল, যখন তখন যে কেউ এসে অনুরোধ করতো একটু পাড় করে দেওয়ার। ইচ্ছে না হলেও মানবিক কারনে লিভ দিতে হতো।

এখন ভাবলেই মনটা কেমন চনমনে হয়ে উঠে, আধুনিক সুযোগ সুবিধা না থাকলেও আমাদের গ্রামটা কত সুন্দর ছিল। 
বাড়ির দুই পাশে তাকালে থই থই পানি। বিশেষ করে সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখতাম বাড়ির দুই পাশের বিলে হাজার হাজার শাপলা ফুল ফুটে পুরো বিল সাদা হয়ে আছে।  এ এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। কখনো কখনো সেই শাপলা তুলে নৌকা বোঝাই করে ফেলতাম। পরে সেই শাপলা দিয়ে পুটি মাছের ঝোলও ছিল মুখরোচক।
এরকম বহু বৃষ্টি দিনে ধান ক্ষেত মারিয়ে শালুক তোলার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা পানির নিচে ডুবাইছি। চোখ লাল করে যখন বাড়ি ফিরতাম মায়ের চোখ রাঙ্গানিটাও মিস করি এখন। আমার মাছ ধরার নেশা ছিল মারাত্নক। প্রায় প্রতিবছরই বিলে টুকটাক বরশি পেতে মাছ ধরতাম। যদিও দিন শেষে কিনেই খেতে হতো মাছ। রাতেও টেটা নিয়ে মাছ শিকারে ঘুরছি অনেক।

যাই হোক গত এক যুগে এই গ্রামেই এসেছে অনেক পরিবর্তন। গ্রামের বুক চিরে রাস্তা হয়েছে। গ্রামের কোলঘেষে গড়ে উঠেছে বহু ইন্ডাস্ট্রি ও গার্মেন্ট। কাছেই অর্থনৈতিক অঞ্চলের নামে গড়ে উঠছে বিশাল শিল্প এলাকা। সামনে পেছনের সেই শাপলা বিল এখন ধুধু মরুভুমি। কোম্পানির আকার বাড়াতে গিয়ে উচ্ছেদ হচ্ছে বসতবাড়ি। ছোট হয়ে আসছে গ্রাম। বহু ভীনদেশিদের পদচারনায় হারিয়ে ফেলছি চেনা মুখগুলো। 

আগে বর্ষাকালে রাস্তা না থাকায় ভোগান্তি হতো, আর এখন নিষ্কাশনের অভাবে সেই গ্রামের রাস্তায়ই জমে থাকে পানি। চলার পথে এই ভোগান্তি আরো বড় মবে হয়। 
যেই বিলে ঘন্টার পর ঘন্টা ডুবাইছি, শাপলা শালুক তুলছি, মাছ ধরছি সেই বিল এখন কারখানা বর্জ্যের ডাম্পিং স্পট। পানি ব্যবহার সুদুর কল্পনা।

তবে এই নগরায়নের অর্থনৈতিক তাৎপর্য বেশি। মানুষের পেষা বদল হয়েছে রাতারাতি। পুরুষদের পাশাপাশি মহিলারাও কাজ করছেন সমানে।  এসেছে অর্থনৈতিক সাবলম্বীতা। সৃষ্টি হয়েছে নতুন নতুন উটকো ঝামেলা। উন্নয়নের মহাসড়ক ধরেই গ্রামে ঢুকেছে মাদক, সন্ত্রাস আর নানা কুটনামির কুটচাল।

এতকিছুর পরও চোখের সামবে যখন গ্রামের সেই প্রাকৃতিক  দৃশ্যটা ভেসে উঠে। মনটা হাহাকার করে উঠে। সেই প্রাকৃতিক জলাশয়,  নদী ভরাট করে এখন রিয়েলএস্টেট বনিকেরা রিভারভিউ সিটি, লেকভিও বাড়ি বানানোর মিথ্যা বিজ্ঞাপন দিচ্ছে।

যাইহোক বৃষ্টি শেষ, অনেকক্ষন হলো নস্টালজিয়া।  এবার সত্যি বের হতে হবে।  তবে যাওয়ার আগে আরেকটা কথা বলার প্রয়োজন অনূভব করছি। সেটা হলো, আমরা উন্নয়ন চাই মনে প্রানে। কিন্তু যদি পরিবেশ প্রকৃতি সব কিছু ঠিক রেখেই করা যায়। পরিকল্পিত নগর পরিকল্পনার আলোকে যেন করা হয় উন্নয়ন। সবুজ প্রকৃতি, চলাচলের রাস্তা, সামাজিক প্রতিষ্ঠান, পানি ও বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থাও যেন রাখা হয় পর্যাপ্ত। নগরপতিরা যেন পুজির কাছে তাদের মাথা বিক্রির আগে বিবেক ও অনুভুতিগুলোও বিক্রি করে না দেন।

(আকতার হোসেন, 
১২ আগস্ট, সোনারাগাঁও )