রবিবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৮

দু:খের দিনলিপি: একটি দু:সংবাদের অপেক্ষায়...

১৯ আগস্টের বিকেল। শিশু হাসপাতালের ৪ নাম্বার ওয়ার্ডের ৫৪ নম্বর বেডের রেলিং ধরে বসে আছি। পাশে ঐশীর বাবা মা দুজন অক্সিজেন হেড বক্সের দুইপাশ ঘিরে অশ্রুসজল।  জ্বরে পুড়তে থাকা মেয়ের গায়ে অাদরের পরশ বুলিয়ে দিচ্ছেন। হার্টবিটও বেড়েছে অনেক। শরির শুকিয়ে প্রায় রক্তশুন্য, চামরাগুলো এমন কুচকে গেছে যেন ৮০/৯০ বছরের বুড়ির শরির। শুকিয়ে হাড্ডিশার শরীর। বুকের খাচায় কংকাল।  ডা. রেজাউল বলেছেন ইনফেকশনের কারনে এমনটি হয়েছে। তবে চেহারাটা অনেক সুন্দর রয়েছে। হয়তো সৃষ্টিকর্তার নিজ হাতে সুনিপুণ ভাবে অনেক ভালোবাসায় সৃষ্টি করেছেন বলেই, মরনব্যাধি সেই ভালোবাসার চেহারা ঘায়েল করতে পারেনি।

আমি বসে আছি রক্ত দিব বলে, ক্রস মেচিং রিপোর্ট আসবে বলে দেরি। যদিও গতমাসেও একবার দিয়েছিলাম।

রওজার ৩ মাস ৩ দিন আজ।  এই তিন মাসের সোয়া দুই মাসই তাকে কাটাতে হয়েছে হসপিটালে। এর মধ্যে এনআইসিও, আইসিও মিলিয়ে ২৫ দিন। গত কয়েকদিন ধরেই এখানকার ডাক্তাররা ফের আইসিও আইসিও  বলে মাথা খারাপ করে দিচ্ছে। তাদের ভাষ্য যে কোন সময় লাইফ সাপোর্ট লাগবে তার। কিন্তু আঢ়ালে এও বলে দিয়েছেন এসব করে তার ফিরে আসার চান্স  ২০ ভাগ। বাকিটা আল্লাহর উপর ভরসা। উনি যা চান ফায়সালা  তাই হবে। আমরা শুধু চেষ্টা করার মালিক।

সবকিছু বিবেচনায় আইসিও বা লাইফ সাপোর্টে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু কারো চোখের পানিইত আর ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছেনা। বিশেষ করে রেখার বোবাকান্না সহ্য করার মতোনা। সময়ে অসময়ে গোপনে প্রকাশ্যে বুক ফেটে চোখের জলে এই কষ্টের বহিপ্রকাশ ঘটছে সবারই। গভীর রাতে বা ভোর সকালে যখনই তাদের ফোন পাই তখনই বুকের ভিতরটা মোচর দিয়ে উঠে এই বুঝি কোন খারাপ খবর শুনবো। এখনত প্রতিরাতে একটা দু:সংবাদ শোনার অপেক্ষায় ঘুমুতে যাওয়া অনেকটা রুটিনে পরিণত হয়েছে। সকালে নতুন সূর্যের মতো যখন তাদের ভালো থাকার খবরটা পাই তখনই বুক থেকে দুশ্চিন্তার পাথরটা নামে। কিন্তু তাতে কি। হঠাৎ হঠাৎই বাবুর অবস্থার অবনতি হলে কষ্টের তীব্রতা গ্রাস করে নেয় সব প্রশান্তি।

বিশেষত ঐশীর নিষ্পাপ, ফুলের মতো চেহারা যখন দেখি পাশাপাশি রোগ যন্ত্রনায় ছটফটানি দেখলে যে কারো চোখেই পানি চলে আসে। আসেপাশের বিছানার অন্যরোগীর আত্নীয়রাও দেখি কাঁদে ওর কষ্টে।

সবার একটাই প্রার্থনা এই কষ্ট থেকে যেন সবাইকেই মুক্তি দেন পরম দয়ালু আল্লাহ তায়ালা।  তিনিইত উত্তর আরোগ্যদানকারী।

জানিনা আজ থেকে ২০ বছর কিভাবে এই দিনটিকে মুল্যায়ন করা হবে। তবে মহান প্রভু পরোয়ার দেগারের দরবারে ফরিয়াদ তাকে নেক হায়াৎ দাও। সবার অন্তরে প্রশান্তির বাতাস বইয়ে দাও। তাকে সুস্থ্য স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দাও।

1 মন্তব্য(গুলি):