ছবির মতোই সুন্দর ছিল আমার গ্রামটা...

বর্ষা মৌসুমে নৌকা ছাড়া চলাচলের কোন উপায় থাকতোনা। যেন মহসড়কের পাশে বিচ্ছিন্ন ছোটএকটা দ্বীপ।

সমস্যা যত বড়ই হোক, আশা মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে

আমরা অবশ্যই পারব৷ সমস্যা যত বড়ই হোক না কেন, আশা মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে, নতুন কিছু উদ্ভাবন করতে অনুপ্রেরণা জোগায়৷ কিন্তু সমস্যাকে নিজের চোখে না দেখলে শুধু আশা দিয়ে সমস্যা সমাধান করা যায় না৷

ঘুরে আসুন নারায়ণগঞ্জের সব দর্শনীয় স্থানে

অপরূপ সৌন্দর্যে ভরপুর আমাদের বাংলাদেশের প্রায় প্রত্যেকটি জেলায়ই রয়েছে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান। যা আমাদের দেশকে করেছে আরো সমৃদ্ধ। শত বছর ধরে লাখো পর্যটককে করেছে আকৃষ্ট।

মানবসেবাই সর্বোত্তম ধর্ম: ফাদার তেরেসা

অসহায়, দুস্থ মানুষের সহায়তাই তার ধ্যান-জ্ঞান।সহিংসতার বিপরীতে তিনি অসহায়ের ত্রানকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হন।তিনি পাকিস্তানের আবদুল সাত্তার ইদি।অসম্ভব মানবসেবার কারনে ৮৪ বছর বয়সী এই ব্যক্তি তার দেশে ফাদার তেরেসা নামেই বেশি পরিচিত।

‘মানসিক প্রশান্তির জন্য সাইকেল’

যাত্রা পথে পরিবহন নিয়ে দুশ্চিন্তা আর ভোগান্তি থেকে রেহাই পেতে বিকল্প হলো একটা বাই সাইকেল। তাছাড়া ইদানিং স্বাস্থ্যটার দিকেও মনে হচ্ছে একটু যত্ন নেয়া দরকার।

সোমবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৭

আমরা কবে সভ্য হবো?

চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর কুলখানির অনুষ্ঠানে গিয়ে ভিড়ের মধ্যে পদদলিত হয়ে দশ জনের মৃত্যু হয়েছে, হতাহতের শিকার আরো বহু মানুষ। একবিংশ শতাব্দীর এই প্রান্তে এসে যখন দাবি করছি উন্নতির দ্বারপ্রান্তে চলে যাচ্ছি আমরা। এমন সময়ে কুলখানিতে গিয়ে এমন হতাহত নি:সন্দেহে আমাদের পীড়া দেয়। সেই সাথে লজ্জাও ।

আমি বলছিনা যে , চট্টগ্রামে কুলখানি খেতে গিয়ে যারা আহত হয়েছে বা নিহত হয়েছে বা যারা হুড়োহুড়ি করেছে তারা খাবারে অভাবে সেখানে ভীড় করেছে। বরং ২০১৭ সালের বিজয়ের এই মাসে আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে পারি, চালের দাম যতই বাড়ুক নিত্যপন্যের দাম যতই আকাশচুম্বী হোক, দু-মুঠো ভাতের জন্য অন্তত কেউ মারা যায়না।

হয়তো আয়-ব্যায়ের ভারসাম্যহীনতায় আমাদের নাকানি চুবানি খেতে হয়, কিন্তু ভাতের অভাবে কারো মরতে হয়না। মানে আমাদের দ্রব্যমুল্যের পাশাপাশি হয়তো আমাদের সক্ষমতাও বড়েছে। তবে কেন এই হতাহত?

মোটাদাগে বলতে গেলে এটা আমাদের অসভ্যতার একটা নজির।
পরষ্পরের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও সহানুভুতি কিংবা সহনশীলতা যে কমছে তারই একটা জলন্ত নজির হয়ে থাকবে চট্টগ্রামের এই ঘটনা।



সোমবার দুপুরে চট্টগ্রামের জামালখান আসকার দীঘির পাড়ে রীমা কমিউনিটি সেন্টারের এ ঘটনায় আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোন দায় নেই বলে দাবি করেছেন চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার। তিনি এটাকে আইনশৃংখলা জনিত সমস্যা নয় উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, বিষয়টি নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত নয়। এটা মারামারি বা গ্রুপিং বা অন্য কোনো বিষয় না। নিরাপত্তার অভাব হয়নি, অতিরিক্ত মানুষের কারণে এবং ঢোকার সময় হুড়োহুড়ির কারণে অনেকে পড়ে গিয়ে পদদলিত হয়েছেন।



আইনের কথায় তার বক্তব্যে  হয়তো যুক্তি আছে, কিন্তু তার বাহিনীর নামে আইনের সাথে যে শৃংখলা শব্দটি জুড়ে আছে সম্ভবত  তিনি সেটা ভুলে আছেন। তাই একজন তুমুল জনপ্রিয় নেতার কুলখানিতে তার কি পরিমান ভক্ত-অনুরাগীরা এই অনুষ্ঠানে ভীড় করতে পারে, আর সেখানে ঠিক কী কী ধরনের বিশৃংখলা হতে পারে সেটা হয়তো তিনি অনুধাবন করতে পারেননি।

সম্ভবত  চট্টগ্রাম পুলিশের শীর্ষ এই কর্তাব্যাক্তি ভুলে ছিলেন, এখানে ৮০ হাজার লোককে নিমন্ত্রন জানানো হয়েছে। এতো লোকের যেখানে জড়ো হওয়ার কথা রয়েছে সেখানে শুধুমাত্র সন্ত্রাসী হামলাই ফ্যাক্ট না তারচে বেশি প্রয়োজন শৃংখলা জনিত সমস্যা। যাই হোক অদুর ভবিষ্যতে মর্মান্তিক এই ঘটনার তদন্তে সবকিছুরই কারন অনুসন্ধান হবে এটাই আশা।


কিন্তু পাশাপাশি  যে, কথাটি শুধু বলতে চাই, সেটা হলো আমাদের আচরণ। আইন শৃংখলা রক্ষায় না হয় প্রশাসন আরো কঠোর হলো। কিন্তু আমাদের আচরণ বদলাবে কিসে?  কয়েকবারের নির্বাচিত ও তুমুল জনপ্রিয় মেয়রের কুলখানি অনুষ্ঠান আয়োজন নিশ্চয় কোন ঘাটতি রাখেননি তার পরিবার। 
কিন্তু একটু  শৃংখলভাবে সেখানে অংশ নিতে, হুরুহুরি এড়িয়ে খাবার নিতে আমাদের এতো সমস্যা কেন? এই শিক্ষা আমরা কোথায় পাবো?

শুধুমাত্র হুড়োহুড়ি করে একসাথে এতোগুলো মানুষের অকাল মৃত্যু, এতো গুলো পরিবারের বুকফাটা আর্তনাদের দিনে শুধু এই প্রশ্নটিই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে, আর কবে আমরা সভ্য হবো?

শুক্রবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

পশু কোরবানি: যে বিষয়গুলো জানা জরুরি

কোরবানি বলা হয় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য অর্জন ও তার এবাদতের জন্য পশু জবেহ করা। কোরবানির দিনটি হল বছরের শ্রেষ্ঠ দিন। আব্দুল্লাহ ইবনে কুর্ত রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলে কারীম স. বলেছেন : আল্লাহর নিকট দিবস সমূহের মাঝে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ দিন হল কোরবানির দিন, তারপর পরবর্তী তিনদিন।

কোরবানির দিনের করণীয়

ঈদের সালাত আদায় করা,
এর জন্য সুগন্ধি ব্যবহার,
পরিচ্ছন্নতা অর্জন,
সুন্দর পোশাক পরিধান করা।
তাকবীর পাঠ করা।
কোরবানির পশু জবেহ করা ও তার গোশত আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধব ও দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা।
এ সকল কাজের মাধ্যমে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য অর্জন ও সন্তুষ্টি অন্বেষণের চেষ্টা করা।
এ দিনটাকে শুধু খেলা-ধুলা, বিনোদন ও পাপাচারের দিনে পরিণত করা কোন ভাবেই ঠিক নয়।

এবাদতের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল আল্লাহর উদ্দেশ্যে পশু জবেহ করা। এ কাজটি তিনি শুধু তার উদ্দেশ্যে করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। বলেছেন :— ‘বল, আমার সালাত, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও আমার মরণ জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে। তার কোন শরিক নাই এবং আমি এর জন্য আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই প্রথম মুসলিম।’


কোরবানি ওয়াজিব: 

প্রাপ্তবয়ষ্ক, সুস্থমস্তিষ্কসম্পন্ন প্রত্যেক মুসলমান নর-নারী মুকীম ব্যক্তি, যে ১০ যিলহজ্ব সুবহে সাদিক থেকে ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজন অতিরিক্ত সাড়ে সাত (৭.৫) ভরি স্বর্ণ অথবা সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি রুপা বা সমপরিমান অর্থের মালিক হবেন তার উপর কোরবানি ওয়াজিব।
স্বর্ণ-রুপার অলঙ্কার, নগদ অর্থ, যে জমি বাৎসরিক খোরাকীর জন্য প্রয়োজন হয় না এবং প্রয়োজন অতিরিক্ত আসবাবপত্র-এ সবই কোরবানির নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য। [বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬]

কোরবানির পশু 

রাসুল (সা.)উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা ছাড়া অন্য কোন পশু কোরবানি করেননি ও কোরবানি করতে বলেননি। তাই কোরবানি শুধু এগুলো দিয়েই করতে হবে। উট পাঁচ বছরের হতে হবে। গরু বা মহিষ দু বছরের হতে হবে। ছাগল, ভেড়া, দুম্বা হতে হবে এক বছর বয়সের। কোরবানির পশু যাবতীয় দোষ-ত্রুটি মুক্ত হতে হবে। যে পশুটি কোরবানি করা হবে তার উপর কোরবানি দাতার পূর্ণ মালিকানা সত্ত্ব থাকতে হবে। বন্ধকি পশু, কর্জ করা পশু বা পথে পাওয়া পশু দ্বারা কোরবানি আদায় হবে না। কুরবানীর পশু হৃষ্টপুষ্ট হওয়া উত্তম। কোরবানি দাতা নিজের কোরবানির পশু নিজেই জবেহ করা উত্তম, যদি তিনি ভালভাবে জবেহ করতে পারেন।

মৃত ব্যক্তির পক্ষে কোরবানি

কোরবানি মূলত জীবিত ব্যক্তিদের জন্য। তবে মৃত ব্যক্তিদের জন্য কোরবানি করা জায়েজ ও একটি সওয়াবের কাজ। কোরবানি একটি সদকা। আর মৃত ব্যক্তির নামে যেমন সদকা করা যায় তেমনি তার নামে কোরবানিও দেয়া যায়। মৃত ব্যক্তি যদি ওসিয়ত না করে থাকে তবে সেটি নফল কুরবানী হিসেবে গণ্য হবে। কুরবানীর স্বাভাবিক গোশতের মতো তা নিজেরাও খেতে পারবে এবং আত্মীয়-স্বজনকেও দিতে পারবে। আর যদি মৃত ব্যক্তি কুরবানীর ওসিয়ত করে গিয়ে থাকে তবে এর গোশত নিজেরা খেতে পারবে না। গরীব-মিসকীনদের মাঝে সদকা করে দিতে হবে। -মুসনাদে আহমদ ১/১০৭, হাদীস ৮৪৫,


কোরবানির গোশত কারা খেতে পারবেন

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘অত:পর তোমরা উহা হতে আহার কর এবং দু:স্থ, অভাবগ্রস্থকে আহার করাও।’ রাসূলুল্লাহ স. কোরবানির গোশত সম্পর্কে বলেছেন :—‘তোমরা নিজেরা খাও ও অন্যকে খাওয়াও এবং সংরক্ষণ কর।’

কতটুকু নিজেরা খাবে, কতটুকু দান করবে আর কতটুকু উপহার হিসেবে প্রদান করবে এর পরিমাণ সম্পর্কে কোরআনের আয়াত ও হাদিসে কিছু বলা হয়নি। তাই উলামায়ে কেরাম বলেছেন, কুরবানীর গোশতের এক তৃতীয়াংশ গরীব-মিসকীনকে এবং এক তৃতীয়াংশ আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীকে দেওয়া উত্তম। অবশ্য পুরো গোশত যদি নিজে রেখে দেয় তাতেও কোনো অসুবিধা নেই। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪, আলমগীরী ৫/৩০০ মোস্তাহাব।

কোরবানির গোশত যতদিন ইচ্ছা ততদিন সংরক্ষণ করে খাওয়া যাবে।


কুরবানীর পশুর চামড়া বিক্রি 
কোরবানির মাধ্যমে মুসলমানদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে মেহমানদারি হয়। তাই এর কোনো অংশ বিক্রি করা জায়েজ নয়। কোরবানির পশুর গোশত,চামড়া ও হাড্ডি কোরবানিরই অংশ। এ বিষয়ে শরিয়তের বিধান হলো—এক. কোরবানির পশুর কোনো অংশ, যেমন—গোশত, চর্বি, হাড্ডি ইত্যাদি বিক্রি করা জায়েজ নয়। বিক্রি করলে পূর্ণ মূল্য সদকা করে দিতে হবে। (বাদায়েউস সানায়ে : ৫/৮১)
তবে কুরবানীর চামড়া কুরবানীদাতা নিজেও ব্যবহার করতে পারবে। তবে কেউ যদি নিজে ব্যবহার না করে বিক্রি করে তবে বিক্রিলব্ধ মূল্য পুরোটা সদকা করা জরুরি। চামড়া বিক্রি করলে মূল্য সদকা করে দেওয়ার নিয়তে বিক্রি করবে। সদকার নিয়ত না করে নিজের খরচের নিয়ত করা নাজায়েয ও গুনাহ। -আদ্দুররুল মুখতার, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০১

চামড়া বিক্রির অর্থ কোথায় দেয়া যাবে ?


নিয়ত যা-ই হোক বিক্রিলব্ধ অর্থ পুরোটাই সদকা করে দেওয়া জরুরি। বিক্রয়লব্ধ অর্থ পুরোটাই জাকাতের উপযুক্ত ব্যক্তিকে সদকা করে দিতে হবে।  এই অর্থ মাদ্রাসা-মসজিদ ইত্যাদি নির্মাণে খরচ করা জায়েজ নয়। তবে তা লিল্লাহ বোর্ডিংয়ের জন্য দেওয়া যাবে। (ফাতাওয়া কাজিখান : ৩/৩৫৪)। কোরবানির চামড়া গরিবের হক। গরিব লোকদের না দিয়ে কোরবানির চামড়ার মূল্য দিয়ে ইমাম, খতিব, মুয়াজ্জিন, শিক্ষক ও কর্মচারীর বেতন দেওয়া নাজায়েজ। (শামি : ২/৩৩৯)

কোরবানির পশুর কোনো অংশ বিনিময় বা পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া জায়েয নয়। আলী রা. বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোরবানির চামড়া ছাড়ানোর পারিশ্রমিক হিসেবেও চামড়ার কোনো অংশ প্রদান করতে নিষেধ করেছেন। (-সহীহ বুখারী, হাদীস:১৭১৭) ।
শ্রমের বিনিময়ে টাকা দিয়ে দিবে। চুক্তির সময় গোশত বা ভুড়ি দেওয়ার শর্ত না থাকলে ন্যায্য পারিশ্রমিক দেওয়ার পর কোরবানির পশুর ভুড়ি বা গোশত হাদিয়া হিসেবে দেওয়া যাবে। এতে কোনো অসুবিধা নেই। [সহীহ মুসলিম ৩/৩৫০; সহীহ বুখারী (ফাতহুল বারী) ৩/৬৫০;

কৃতজ্ঞতা: ইন্টারনেট

শনিবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৭

কেমন আছে ইসলামিক ইরানের ইহুদীরা ?

পৃথিবীর প্রাচীন কাল থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত বৃহৎ সভ্যতাগুলোর মধ্যে অন্যতম ইরান। দেশটির জনগণ জাতিগত ও ভাষাগতভাবে বিচিত্র হলেও এরা প্রায় সবাই মুসলিম। শত শত বছর ধরে এ অঞ্চলটি মুসলিম শিয়া মতাবলম্বীদের কেন্দ্র। ইরানের প্রায় ৯৩% মুসলিম শিয়া ধর্মাবলম্বী এবং এদের প্রায় সবাই জাফরি শিয়া মতবাদে বিশ্বাসী। তবে ইরানের বেশিরভাগ মানুষ ইসলাম ধর্মের অনুসারী হলেও সেখানে খ্রিস্টান, ইহুদীসহ অন্যান্য ধর্মের মানুষের বসবাসও রয়েছে স্বল্প পরিমানে। 

 ইরানের প্রায় পৌনে ৮ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ২০  হাজারেরও বেশি ইহুদী জনগোষ্ঠী রয়েছে। 

১৯৭৯ সালের বিপ্লবের পর থেকে ইরানে ইসলামি প্রজাতন্ত্র চালু রয়েছে। সেই সুত্রে স্বাভাবিকভাবেই সাধারনের মনে প্রশ্ন সেখানে বসবাসরত অন্য ধর্মাবলম্বীরা কেমন আছে? বিশেষ করে ইহুদী জনগোষ্ঠী। তার কারন মধ্যপ্রাচ্য সংকট নিয়ে অভিযোগের তীর সব সময় ইহুদীবাদি ইসরাইলের দিকেই। তাছাড়া বিশ্বে শান্তি, স্বস্তি ও মানবতার জন্য ইসরাঈলকে বিসফোড়া মনে করা হয়। তাই এসবের বিরুদ্ধে সোচ্চার  ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরানে বসবাসরত ইহুদীরা কেমন আছে? তারই চিত্র  তুলে ধরেছেন জার্মান ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম ডয়চে ভেলের  সাংবাদিক থেরেসা ট্রপার। 

প্রতিবেদনের ভাষ্যমতে, ইসরাঈলের পরে বিশ্বের অন্যান্য যে কোন দেশের তুলনায় ভালো আছেন ইরানের ইহুদীরা। সেখানে ইহুদীরা যেমন স্বাধীনভাবে ধর্ম পালন করতে পারেন, ঠিক তেমনি ব্যাবসা বাণিজ্য, শিক্ষা সংস্কৃতি এমনকি রাজনৈতিক কর্মকান্ডেও যুক্ত হতে পারে। ইরান ইসলামিক প্রজাতন্ত্র হলেও দেশটির সংসদে রয়েছে সংখ্যালঘু ইহুদীদের প্রতিনিধি সংসদ সদস্যও। 
সাক্ষাতকারে তেহরানের ইহুদি সম্প্রদায়ের পরিচালক ও সংসদ সদস্য সিয়ামাক মোরসাদেঘ বলেন, মানুষ যা ভাবে তার চেয়ে অনেক ভালো আছেন ইরানের ইহুদীরা। সেখানে সংখ্যালঘু হিসেবে আমাদের স্বীকৃতি আছে৷ তাই আমরা স্বাধীনভাবে ধর্ম পালন করতে পারি৷ তেহরানে ২০টির বেশি সিনাগগ বা ধর্মীয় উপসনালয় আছে।  
সাধারণভাবে বললে, ইরানে ইহুদিদের অবস্থা সমসময় ইউরোপের চেয়ে ভালো। 


সিয়ামাক মোরসাদেঘ বলেন, এখানে ইহুদি আর মুসলমানরা একে অপরকে সম্মান করে। মুসলমানদের সঙ্গে আমাদের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আছে। তিনি বলেন, যে হাসপাতালের ডাক্তার আমি সেটি ইহুদি পরিচালিত হলেও সেখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারী ও রোগীদের ৯৫ শতাংশই মুসলমান৷
তবে কিছু পার্থক্য রয়েছে, যেমন এই দুই ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে বিয়ে হওয়ার হার খুবই কম। ইরানে আইন অনুযায়ী ইহুদিরা  চাইলে বিচারক হতে পারেনা, সেনাবাহিনীতে কর্মকর্তা পর্যায়ে চাকরি করার সুযোগ নেই, তবে সৈনিক পর্যায়ে চাকরি করতে পারে। 
ইরানের আইনে ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো ধরণের যোগাযোগ রাখা নিষিদ্ধ।
ইহুদী হলেও ইসরাঈলের আগ্রাসী নীতির সমালোক অনেক ইহুদী। সিয়ামাক বলেন, ইসরায়েলে যাওয়ার কোন ইচ্ছা আমার নেই। কারণ, আমি মনে করি, ইহুদিরা অন্যদের চেয়ে আলাদা, এই চিন্তাধারা থেকে ইহুদিদের শুধু বিশ্বের একটা জায়গায় বাস করতে হবে – এমন ভাবনার সঙ্গে আমি একমত নই। কারণ আমি মনে করি আমরা সবাই সমান৷
ধর্মীয় শিক্ষা বলে, আমরা যে দেশে বাস করি সেই দেশের আইন মেনে চলতে হবে। বিশ্বে অনেক ইহুদি আছেন যাঁরা ইসরায়েলি সরকার ও সেনাবাহিনীর আচরণের কঠোর সমালোচক৷ ইহুদি হিসেবে আমাদের ধর্মগ্রন্থ ‘তাওরাত' ও ‘তালমুদ' মেনে চলতে হয়৷ অন্য দেশ দখল করা ও নিরীহ মানুষ হত্যা করা মোজেসের (ইহুদিদের নবি) শিক্ষা নয়।  ইহুদি হিসেবে আমরা ইসরায়েলের আচরণ সমর্থন করতে পারি না, এটা ধর্মীয় নয়, রাজনৈতির ‘মুভমেন্ট'।  ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণহত্যার শিকার হওয়ায়, ইহুদিদের উচিত ফিলিস্তিনিদের প্রতি আরও সহানুভূতিশীল হওয়া।

সোমবার, ৭ আগস্ট, ২০১৭

চন্দ্র গ্রহন: কতিপয় ভুল ধারনা ও আমাদের করনীয়


রাত ১০ টার কিছু পরে অফিস শেষে বাসার পথে পা বাড়িয়েই এক সুহৃদ কে ফোন করলাম। উদ্দেশ্য কর্মক্লান্তি দূর করে একটু খোস গল্প করে চনমনে হয়ে বাসায় ফেরা। ফোন ধরেই অপর প্রান্ত থেকে উদ্বেগের স্বরে প্রশ্ন, আমি কোথায়? রাস্তায়।  জানাতেই আরো তটস্থ হয়ে জানালো আজ চঁন্দ্র গ্রহন। তাই বেশিক্ষন বাইরে থাকা যাবেনা, রাত ১ টার আগে খাবার খাওয়া যাবেনা..ইত্যাদি আরও কিছু বিধি নিষেধ।  আমি বরাবরই কোন সংস্কারে বিশ্বাস করিনা। এতো বিধি নিষেধের কথা শুনে হাসতে হাসতেই আকাশের দিকে চেয়েতো অবাক।
কী সুন্দর চাঁদ ফুটেছে আকাশের বুকে। অন্য যে কোন সময়ের তুলনায় অধিক উজ্জল। যেনো একটা মস্ত ফ্লাড লাইট। আসলে ইট পাথর আর কংক্রিটের শহর ঢাকার এই বহুতল ভবনের জঙ্গলে থেকে কখনো আকাশে বিশালতা দেখারও ফুসরত হয়না কখনো, আবার সময় মিললেও কোনটা চাঁদ আর কোনটা সোডিয়াম লাইট পার্থ্যক্য অনুমান করা কঠিন হয়ে দাড়ায়।
আমার নিজের ফোনে তোলা চাঁদ
যাই হোক সুহৃদের এমন শক্ত  বিশ্বাস ও অনুশাষন আমাকেও আরো বেশি উৎসুক করে তোললো চন্দ্রগ্রহন সম্পর্কে। বাসায় ফিরে নেট ঘেটে দেখলাম সত্যি ভয়াবহ ব্যাপার। পক্ষে বিপক্ষে নানা ধরনের আলোচনা প্রচলিত আছে সমাজে।  তাই ভাবলাম বিষয়টি নিয়ে একটা নিরপেক্ষ বিশ্লেষন করা যায়। তারই সংক্ষেপ তুলে ধরলাম আমার পাঠকদের জন্য।

 কী হচ্ছে আজ...?
সোমবার মধ্যরাতে আংশিক চন্দ্রগ্রহণ ঘটে। ৯.৪৮ মিনিট থেকে রাত ২ টা পর্যন্ত দেখা যায় এ মহাজাগতিক দৃশ্য। একরেখায় এসে দাঁড়িয়েছে পৃথিবী, চাঁদ আর সূর্য।

মুলত কক্ষপথ পরিভ্রমণের একপর্যায়ে চাঁদ পৃথিবীকে মাঝখানে রেখে সূর্যের সঙ্গে এক সমতলে এবং এক সরলরেখায় চলে এলে সূর্যের আলো পৃথিবীতে বাধা পড়ে চাঁদে পৌঁছতে পারে না। তখনই ঘটে থাকে চন্দ্রগ্রহণ। অর্থাৎ উজ্জল চাদ তার সমস্ত আলো হারিয়ে অন্ধকারে নিমজ্জিত করবে পৃথীবিকে।
সূর্য বা চন্দ্র যে কোনো গ্রহণ থেকে পৃথিবী, সূর্য এবং চাঁদকে একই সরলরেখায় আসতে হয়, এবং এ সরলরৈখিক অবস্থান একটি চন্দ্র মাসে দুবার হয়। তাই সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ জোড়ায় জোড়ায় হয়। একটি চন্দ্রগ্রহণের স্থায়িত্বকাল নির্ভর করে চাঁদের পৃথিবীর ছায়ার প্রদক্ষিণকালের ওপর, এটি কয়েক ঘণ্টা জুড়েও হতে পারে। যদি চাঁদ পৃথিবীর ছায়ার কার্নিশ দিয়ে প্রদক্ষিণ করে তাহলে তাকে আংশিক চন্দ্রগ্রহণ বলে কিন্তু চাঁদ যদি পৃথিবীর ছায়া ঢাকা সম্পূর্ণ অংশ দিয়ে প্রদক্ষিণ করে তাহলে তাকে পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ বলে।
২০১৭ সালে হলো আংশিক চন্দ্র গ্রহন
বিজ্ঞান কী বলে??
আধুনিক সৌর বিজ্ঞানীদের মতে, মঙ্গল ও বৃহস্পতি গ্রহ দু'টির কক্ষপথের মধ্যবলয়ে রয়েছে এস্টিরয়েড (Asteroid), মিটিওরিট (Meteorite) ও উল্কাপিন্ড প্রভৃতি ভাসমান পাথরের এক সুবিশাল বেল্ট, এগুলোকে এককথায় গ্রহানুপুঞ্জ বলা হয়। গ্রহানুপুঞ্জের এই বেল্ট (Belt) আবিষ্কৃত হয় ১৮০১ সালে। এক একটা ঝুলন্ত পাথরের ব্যাস ১২০ মাইল থেকে ৪৫০ মাইল। বিজ্ঞানীরা পাথরের এই ঝুলন্ত বেল্ট নিয়ে শঙ্কিত। কখন যেনো এ বেল্ট থেকে কোন পাথর নিক্ষিপ্ত হয়ে পৃথিবীর বুকে আঘাত হানে, যা পৃথিবীর জন্য ধ্বংসের কারণ হয় কিনা?

গ্রহানুপুঞ্জের পাথর খন্ডগুলোর মাঝে সংঘর্ষের ফলে অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাথরখন্ড প্রতিনিয়তই পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসে। কিন্তু সেগুলো পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে এসে জ্বলে ভস্ম হয়ে যায়।
কিন্তু বৃহদাকার পাথরখন্ডগুলো যদি পৃথিবীতে আঘাত করে তাহলে কি হবে? প্রায় ৬৫ মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীতে এমনই একটি পাথর আঘাত হেনেছিল। এতে ডাইনোসরসহ পৃথিবীর তাবৎ উদ্ভিদ লতা গুল্ম সব ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। উত্তর আরিজন (Arizon) এ যে উল্কাপিন্ড এসে পরেছিল তার কারণে পৃথিবীতে যে গর্ত হয়েছিল তার গভীরতা ৬০০ ফুট এবং প্রস্থ ৩৮০০ ফুট।
বিজ্ঞানীরা বলেন, সূর্য অথবা চন্দ্রগ্রহণের সময় ঝুলন্ত পাথরগুলো পৃথিবীতে ছুটে এসে আঘাত হানার আশংকা বেশী থাকে। কারণ হচ্ছে,এসময় সূর্য,চন্দ্র ও পৃথিবী একই সমান্তরালে,একই অক্ষ বরাবর থাকে।
ফলে তিনটির মধ্যাকর্ষণ শক্তি একত্রিত হয়ে ত্রিশক্তিতে রুপান্ত্রিত হয়। এমনি মুহূর্তে যদি কোন পাথর বেল্ট থেকে নিক্ষিপ্ত হয় তখন এই ত্রিশক্তির আকর্ষণের ফলে সেই পাথর প্রচন্ড শক্তিতে, প্রবল বেগে পৃথিবীর দিকে আসবে, এ প্রচন্ড শক্তি নিয়ে আসা পাথরটিকে প্রতিহত করা তখন পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাড়াবে। ফলে পৃথিবীর একমাত্র পরিণতি হবে ধ্বংস।

কতিপয় কুসংস্কার
চন্দ্র গ্রহন ও সূর্য গ্রহেনর সময় বিধি নিষেধ নিয়ে সমাজে নানা ধারনা প্রচলিত আছে। এসময় গর্ববতী মহিলাদের বাইরে না বেরুনো, গ্রহনের আগের রান্না করা খাবার গ্রহন চলাকালীন সময় না খাওয়া, না শোয়া বা ঘুমানোসহ অনেক কুসংস্কার প্রচলিত আছে। আদতে আধুনিক বিজ্ঞান বলে এসব ধারনার কোন ভিত্তি নেই। এটি প্রকৃতির অমোঘ নিয়মের স্বাভাবিক ঘটনা। জোয়ার-ভাঁটার পরিবর্তন ছাড়া এর অন্য কোন প্রভাব নেই।

সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ সম্পর্কে ইসলাম কি বলে??

অধিকাংশ সময়েই আমাদের দেশের মানুষেরা অত্যন্ত আনন্দ আর কৌতুহল নিয়ে সূর্যগ্রহন এবং চন্দ্রগ্রহন প্রত্যক্ষ করে থাকে। সূর্য ও চন্দ্র যখন গ্রহনের সময় হয় তখন আমাদের প্রিয় নবী (সা.) এর চেহারা ভয়ে বিবর্ণ হয়ে যেত। তখন তিনি সাহাবীদের নিয়ে জামাতে নামাজ পড়তেন। কান্নাকাটি করতেন। আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন।
আরবীতে সূর্যগ্রহণকে 'কুসূফ' বলা হয়। আর সূর্যগ্রহণের নামাজকে 'নামাজে কুসূফ' বলা হয়। দশম হিজরীতে যখন পবিত্র মদীনায় সূর্যগ্রহণ হয়, ঘোষণা দিয়ে লোকদেরকে নামাজের জন্য সমবেত করেছিলেন। তারপর সম্ভবত তার জীবনের সর্বাদিক দীর্ঘ নামাজের জামাতের ইমামতি করেছিলেনন। সেই নামাজের কিয়াম, রুকু, সিজদাহ মোটকথা, প্রত্যেকটি রুকন সাধারণ অভ্যাসের চেয়ে অনেক দীর্ঘ ছিল।

বিভিন্ন আলেমরাও তাই, এ সময় বেশি বেশি করে নফল নামাজ পড়া, কোরআন তেলাওয়াত করা, দান সদকা করা এবং মিসকিনকে খাওয়ানোতে উৎসাহিত করেছেন

মঙ্গলবার, ১১ জুলাই, ২০১৭

আরে ভাই, সাংবাদিকতায় কি এসব ভাবলে চলে??

সকাল থেকেই অাকাশের মন ভালো নেই। সেই সাথে আমার শরিরটাও। চিকুনগুনিয়ার প্রভাবে সুস্থ্য হওয়ার পরেও সকালবেলা ঘুম থেকে উঠতে সমস্যা হয়।  মনে হয়, হাত-পা ও মেরুদন্ড কেমন রোবটিক হয়ে আছে।  তার উপর আবার গতরাতে সোয়া একটায় বাসায় ফিরে ঘুমাতে ঘুমাতে ৩ টা তাই সকালে ঘুম ভাঙলো ৯ টায়।
চিকুনগুনিয়ারর প্রভাবে যেন অলসতায় পেয়ে বসলো। তার উপর ফেসবুসে ঢুকে সহকর্মী উজ্জলের জাতীয় অলস দিবসেন স্ট্যাটাস দেখে দেহটা যেন আরো আস্কারা পেয়ে বসলো।

তাছাড়া সকালে কাজও নেই তেমন গুরুত্বপুর্ন, এসাইনমেন্ট যেটা আছে তা বিকাল ৩ টায়। কিন্তু এরপরেও আমলাদের ফলোয়াপ বলে কথা...কাজ না থাকলেও সেক্রেটারিয়েটের গাছতলায় গিয়ে বসে থাকতে হবে। এটাই গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

ঘড়ির কাটা ১১ টা ছুই ছুই করছে...। নাহ আর বসে থাকা যায়না ৩০ মিনিটের মধ্যে সেক্রেটারিয়েটের  গাছতলায় পৌছুতে না পারলে কেলেংকারি হয়ে যেতে পারে। সব আলসেমি দুরে ঠেলে ফ্রেস হতে যাবো অমনি দেখি আকাশ মসাই প্রচন্ড গোস্বা করলেন। কথা বার্তা ছাড়াই শুরু করলেন কান্না। সে কি কান্না। তর্জন গর্জন দিয়ে কান্না। তখনই ভাবলাম এই সেরেছেরে..এত থামার কোন লক্ষন দেখছিনা।। এত কান্নায় নির্ঘাত বাসার সামনে হাটুপানি হয়ে যাবে।

এরই মধ্যে গোসল, নাস্তা সেরে দেখি মোবাইলের স্ক্রীনে ভাসছে চারটা মিসড কল। এর মধ্যে তিনটাই অফিসের নাম্বার থেকে। এতগুলো মিসড কলে বিচলিত হইনি, প্রত্যাশিতই ছিল।
এই মুহুর্তে উচিৎ কাজ হলো কল ব্যাক করা। কিন্তু এমন বৃষ্টিস্নাত সকাল সকাল কে বকা শুনতে চায়?নিশ্চয় ফোনে ভাইয়া যখন শুনবেন আমি এখনও বাসায়, তখন টেলিফোনের ওপারে চোখ কপালে তুলে তিনি রাজ্যের বিস্ময় প্রকাশ করবেন।

তারচে ভালো এমন বৃষ্টির কিছু দৃশ্য মোবাইলে ধারন করে বৃষ্টি বিলাশী কিছু বন্ধুর মনোরঞ্জন করি। করলামও..। কিন্তু তাতে আমারতো মনোরঞ্জন হচ্ছেনা। এসাইনমেন্টে যাওয়ার অস্থিরতাও  কমছেনা।  আর ওদিকে আকাশের কান্না থামারও কোন লক্ষন আপাতত দেখা যাচ্ছেনা।

তাই কূল না পেয়ে পাশের রুমের আরেক সংবাদ কামলা ভাইকে বললাম কী করা যায়? উনিও একই অস্থিরতায় ভুগছে। কারন প্রেসক্লাবে উনার চলছে গুরুত্বপুর্ন সেমিনার। মিস করলে লস। তাকে বললাম চলেন..উনি বলে এ্যাতো বৃষ্টিতে ক্যামনে যাই।
বল্লাম অারে ভাই, সাংবাদিকতায় এসব চলে? ঝড়, বৃষ্টি বা রোদ, কিংবা রাস্তায় হাটু পানি এসবকি আর বুঝবে রানডাউন! আপনি সুস্থ্য না অসুস্থ্য তা দিয়েত আর মিডিয়া চলবেনা। যথাসময়ে স্পটে উপস্থিত...। "আকতার আপনিকি শুনতে পাচ্ছেন?...হ্যা শুনতে পাচ্ছি। "  লাইভে অনএয়ার থেকে শুনতে পাওয়াটাই শেষ কথা।

যাইহোক বৃষ্টি দিনে ড্রেস কী হবে? কি পড়ে যাবো। বসের কড়া নির্দেশ লুথার মতো যাওয়া চলবেনা। আমারও একই মত, রাষ্ট্রের সবচে গুরুত্বপুর্ন ব্যাক্তিদের অনুষ্ঠানে কি আর সেন্ডেল পড়ে যাওয়া কি শোভা পায়? কিন্তু রাস্তায় যে হাটু সমান পানি।

আরে ভাই সাংবাদিকতায় কি এতো কিছু ভাবলে চলে। আসেন বের হই। বাধ্যছেলের মতো ভাগিনার ছোট ছাতাটা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। ছোটদের ছোট এই ছাতায় দুই জনের মাথা সুরক্ষা হলেও প্যান্টসহ পুরো শরির ভিজেই গেলো। বাধ্যহয়ে ভাবলাম পায়েহাটার পথটুকু রিক্সায় যাই। রিক্সাঅলাও প্রত্যাশার বাইরে কোন আচরন করলো না। বিশ টাকার ভাড়া ৪০ টাকা। খুবই ন্যায্য আবদার।
এরই মধ্যে রাজ্য জয়ের মতো অানন্দ নিয়ে সচিবালয়ে প্রবেশের পরই মনে হলো আজকেত গাছতলায় বসা যাবেনা। বুদ্ধি করে ঢুকলাম ক্যানটিনে। কিন্তু কতক্ষন..?? বৃষ্টি যে থামার নাম নেই।  ক্যান্টিন বয় গুলোর ধৈর্য্যের বাধ যেন ভেঙ্গে গেলো। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়েই কাছে এসে বললো মামা কাস্টোমার বসতে পারছেনা..মানে ছেড়ে দিতে হবে। কিন্তু আমাদেরও উপায় নেই। থাকতে হবে সাড়ে তিনটা অবধি। কেননা তখন কিছু একটা  নিউজ হয়তো পাওয়া যাবে।
ক্যান্টিন বয়ের আচরনে মনে হলো, গ্রামে কিছু চালাক দোকানদারদের কথা যারা টিভি দেখায় খদ্দের আটকে রাখে আবার কিছু না কিনলে উঠায় দেয়।

যাইহোক এখানে যেহেতু কিছু কিনতে পারলাম না তাই চেয়ারটা ছেড়েই দিতে হলো। ক্যান্টিন থেকে বের হয়ে ফের দ্বিতীয়বার বৃষ্টি ধর্ষন হলাম।।

(( বি.দ্র. যারা এই লেখাকে নিছক ফাও প্যাচাল মনে করছেন তাদেরকে বলছি।। এছাড়া আর কী লিখবো বলেন? ৫৭ ধারার যাতা কলে যেভাবে সাংবাদিক নির্যাতন শুরু হইছে। তাই কী লিখে আবার কার আত্নসম্মানে অাঘাত দেই, পিছে মামলার ঝুঁকি। তারচে বরং নিজেকে নিয়ে খাজুরে গল্প লেখি তাতেও যদি হাতের চুলকানি কিছুটা কমে। ধন্যবাদ।।))

শনিবার, ২৭ মে, ২০১৭

সংযমের মাসেও কি সংযত হবেননা ব্যবসায়ীরা

খুচরা বাজারে পন্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন এক ব্যাবসায়ী
শুরু হলো রহমত মাগফেরাত আর নাজাতের মাস মাহে রমজান। গতকাল তারাবি নামাজের মাধ্যমে মুসলমানরা সিয়াম সাধনা শুরু করেছেন। দুনিয়ার সমস্ত পাপাচার আর খারাপ কাজ থেকে বিরত থেকে একমাত্র মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের রহমত, ক্ষমা ও সন্তুষ্টি লাভই মুমিনের একমাত্র টার্গেট। আর তাই এই মাসের ব্যাপারে ইসলামেরর নির্দেশনা হলো দুনিয়াবি কাজ কর্ম বা ব্যস্ততা কমিয়ে দিয়ে বেশি বেশি ইবাদাতে মশগুল থাকা। সারা বছরের উপার্জনের একটা অংশ রেখে দিয়ে রমজান মাসে খরচ করার জন্য এবং এই মাসে কম মুনাফা করার ব্যাপারে নির্দেশনা আছে। কিন্তু আমাদের সমাজের বাস্তবিক চিত্র যেন আল্লাহর সেই নির্দেশনার বিপরীত।

ব্যাবসায়িরা সারা বছর পন্যমজুদ করে বসে থাকেন এই রমজানের অপেক্ষায়। আর রমজান এলেই পন্যমূল্যের পাগলা ঘোড়ার লাগাম ছেড়ে দেন। এমন ভাবেই ছেড়ে দেন যেন একে থামাবার বা নিয়ন্ত্রন করার শক্তি কারো নেই।

সারা পৃথিবীতে ন্যায়পরায়ন শাষকরা, ব্যাবসায়ীরা এই মাসে রোজাদারদের কষ্ট লাঘবে নানা উদ্যোগ নিয়ে থাকেন, ব্যাবসায়ীরা পন্যে ভেজাল দেয়া থেকে বিরত থাকেন, দামও মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে।
অথচ আমাদের দেশে এই পরিস্থিতি পুরো উল্টো, বাজারে নিত্য পন্যের পর্যাপ্ত মজুদ থাকা সত্বেও হু হু করে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম।
নিউজ পোর্টাল অর্থসুচকের একটি প্রতিবেদনে  আজকের বাজার পরিস্থিতিতে দেখা যায়,
 " এদিকে আজ রোববার রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য। গত শুক্রবারের বাজারে কিছু পণ্যের দাম আরেক দফা বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি রসুনের দাম ১০-৫০ টাকা এবং আদার দাম ১০ টাকা হারে বাড়ানো হয়েছে।

গত সপ্তাহে কেজি প্রতি ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া দেশি রসুন আজকের বাজারে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ভারতীয় রসুনের দাম ২৩০ টাকা থেকে বেড়ে ২৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে ১১০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া চায়না আদা ১০ বেড়ে আজকের বাজারে ১২০ টাকা এবং ক্যারালা আদা ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এভাবেই সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়ে চলেছে সব পণ্যের দাম। "


এই হলো আমাদের বাজার পরিস্থিতি। প্রতিবেদনটিতে পন্যবাজারের  অস্থিতিশীলতার কয়েকটি কারন তুলে ধরেছে। যেখানে বলা হয়েছে, কিছু আমদানিকারক ও পাইকাররা তাদের টার্গেট অনুযায়ী পণ্য গুদামজাতকরণের পরই পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। আর কিছু অসাদু পাইকার ব্যবসায়ী রমজানের আগে প্রচুর পণ্য মজুদ করে রাখেন। ফলে কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়। আর দাম বাড়তে থাকে। প্রতি দফা দাম বাড়ার পর অল্প অল্প মাল বাজারে ছাড়েন তারা।"

দ্রব্যমুল্য বৃদ্ধির অভিযোগ বা কারনটা খুবই স্পষ্ট। এমনকি এই অভিযোগ নতুন কিছুও নয়, বছরের পর বছর একই অভিযোগ। তাহলে দায়টা কার।
সরকারের পক্ষ থেকে বার বার জোড় গলায় বলা হচ্ছে রমজানে পন্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। ফলে দামও বাড়বেনা। কিন্তু বাস্তবে কী হচ্ছে এসব। তাহলেকি বলবো, সরকার মহাশয় এখানেও অসহায়?? দিন দিন তারা তাদের ব্যার্থতারই প্রমান দিচ্ছে?? যার মাশুল গুনতে হচ্ছে সাধারন রোজাদারদের।


বাজার ব্যাবস্থাপনার এ চরম বিশৃংখল পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগী হওয়া ছাড়া আমার মতো সাধারন নাগরিকের হয়তো কিছুই করার নেই। তবুও আমাদের এ কষ্টের কথা শোনার কি কেউ থাকবেনা? তিনি আল্লাহ একজন অবশ্যই আছেন। আমরা তার কাছেই অভিযোগ জানাই। হে আল্লাহ, সংযমের এ মাসে তুমি অসাধু, মুনাফাখোর ব্যাবসায়ী, ঘুষ খোর কর্মকর্তাদের  সংযত হওয়ার তৌফিক দাও। নয়তো তোমার ফয়সালাই তাদের দেখিয়ে দাও। যেমন ফয়সালা হয়েছিল, হযরত মুসা আলাইহিসালাম এর জাতির উপর।
যারা তোমার নির্দেশনা অমান্য করে রবিবারে  ইবাদতের জন্য আসা মাছ ধরে ধরতো।
সুতরাং সবক্ষেত্রে অাল্লাহর ফয়সালাই চুড়ান্ত। আমরা সবাই যেন তার গজব থেকে বেঁচে থাকতে পারি, এবং রমজানের পূর্ন সওয়াব অর্জন করতে পারি সে জন্য তৌফিক কামনা করি।
 আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন, আমিন।
(২৮-০৫-২০১৭)

রবিবার, ১৪ মে, ২০১৭

আমার মা: জীবন সংগ্রামে হার না মানা এক মহিয়সী নারী

হাসপাতালের বারান্দায় আমি আর মা
'মা'। সম্ভবত পৃথীবির সবচে ছোট তবে সবচে বড় অনুভুতির একটি শব্দ। হাজার হাজার পৃষ্ঠা লিখেও মায়ের মর্ম সঠিকভাবে উত্থাপন সম্ভব নয়। আমাদের অনুভুতি, যাপিত জীবন সবকিছুর রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে আছেন মা। মা ছাড়া এই পৃথীবি নি:সন্দেহে অন্ধকার।
ব্যাক্তি জীবনে আমার মা- কে নিয়ে ব্যাখা করার মতো সঠিক কোন বাক্য খুঁজে পাইনা। হয়তো একটা বই ই লিখে ফেলতে পারব- 'আমার মা কে যেমন দেখেছি' এমন শিরোনামে। ছোট বেলা থেকে আমি মারাত্নক ডানপিটে থাকার কারনে অসম্ভব রকম জ্বালিয়েছি মা কে বাবাকে।
তবে জীবন জীবিকার তাগিদে বাবা প্রবাসী জীবন বেছে নেয়ার কারনে মা-ই হয়ে উঠেন আমাদের তিন ভাই বোনের একমাত্র অভিবাবক। লেখাপড়া, জীবনাচার, লেনদেন, লোক সমাজে চলাফেরা সব কিছুতেই মা আমাদের গাইড।
যদিও তিনি নিজে লেখা পড়ায় প্রাথমিকের গন্ডি পার হতে পারেননি, কিন্তু জ্ঞানে আমি  ইঞ্জিনিয়ারিং এ গ্রাজুয়েশন করেও তাকে টপকাতে পারিনি এখনো। আমার অন্য ভাই বোনরাত নয়ই। মা যখন প্রথম আমাদের বাড়িতে আসেন তখন তার বয়স ছিল তের কি চৌদ্দ। অথচ এই অল্প বয়সে, শিশুকালেই তিনি যে দক্ষতায় আমাদের সংসারের দায়িত্ব কাধে নিয়েছিলেন, আমরা ভাই বোনরা তারচে দ্বিগুন বয়সের হয়েও এখনও সেই দায়িত্বটা বুঝেই উঠতে পারিনি। সক্ষমতাতো দুরের কথা। 

 ক্যালেন্ডারের পাতাগুনে বয়স হয়তো হয়েঁছে ঠিকই ২৭ কিংবা ২৮। কিন্তু তার কাছে এখনো ৭/৮ বছরের শিশু থেকে বেশি বড় হতে পারিনি। দেশের কত প্রান্তে ঘুড়ে বেরিয়েছি, কত মানুষের সাথে চলাফেরা করেছি, করছি নিত্যদিন, কিন্তু মানুষ চেনায় এখনো তার কাছে আনাঢ়ি। অর্ধেকটাও প্রজ্ঞাবান হয়ে উঠতে পারিনি।
প্রতিদিন কত চ্যালেঞ্জিং কাজ করি, অথচ এখনো মায়ের মতো অতটা সাহসীই হয়ে উঠতে পারিনি। যখনই কোন কাজে বুকটা দুরু দুরু করে ভেঙ্গে পরি তখন মা সাহস যোগান।
একটা ঘটনা না বললেই নয়, সে বার আমি যখন চরম বিপদে পড়লাম। গুম হয়ে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ছিলাম, তখন আমার ধারনা হয়েছিল আর কোন দিন হয়তো পৃথিবীর আলো দেখবোনা। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবো না। তখন পৃথীবির জন্য নয় শুধু আমার মায়ে মুখটা কল্পনা করেই কেঁদেছি দিন রাত। তবে সপ্তাহ দুই পর যখন জীবনে কিছুটা আশার আলো ঝলকানি দিল তখন ভেবেছিলাম মায়ের সাথে প্রথম সাক্ষাতে অামি খুব শক্ত থাকবো। কারন আমার দুরবস্থা জানলে মা হয়তো অনেক কষ্ট পাবে।   কিন্তু কিসের কী! মা কে দেখেই আমার হৃদয় ভেঙ্গে কান্না চলে এলো। আমি যখন হাউ মাউ করে কেঁদে উঠলাম, তখন আমার মা আমাকে অবাক করে দিয়ে বীরের মতো, একজন সেনাপতির মতো আমাকে সাহস দিলো। বললো বাবা, কাঁদো কেন? তুমি না পুরুষ মানুষ। সেই দিন আমি তার চোখে এক ফোঁটা পানিও দেখিনি বরং তার চোখে দেখেছিলাম দৃঢ়তার ঝলকানি। তার সেই সাহসী ভুমিকা আমাকে প্রেরনা যুগিয়েছে শত কষ্টের মাঝেও দাত কেলিয়ে হাসার। এনে দিয়েছে দুনিয়াকে তুচ্ছ করার মানসিক শক্তি । যেটা আমার কল্পনাতেও ছিলনা। কঠিন বিপদে একজন দুর্বল মহিলা কীভাবে হারমানা সৈনিকের মনোবল ফিরিয়ে দিতে পারে তার উদাহরন আমার মা।
মায়ের যোগানো সেই সাহস আমাকে অারো অনেক দুর নিয়ে যাবে, পৃথিবীকে জয় করার শক্তি এনে দিবে এটাই আমার বিশ্বাস।

শুধুকি সাহস আর বুদ্ধিমত্তা! যাপিত জীবনে ফ্যাশন, লাইফস্টাইলেও মায়ের কাছে খ্যাত ছাড়া ভালো কোন পদবি পাইনি এখনো। 

মা কে ছাড়িয়ে যাওয়ার আমার এ ইচ্ছা সেই ক্লাস সেভেন কি এইট থেকেই। সেই থেকে অদ্যবধি একটাই চেষ্টা করে যাচ্ছি জীবনের সব ক্ষেত্রে মা-কে ছাড়িয়ে যাবার। কিন্তু আজও তার ধারে কাছে যেতে পারিনি। মাঝে সাঝে তাকে এগিয়ে যাবার চেষ্টা করি কিন্তু পরক্ষনেই কুপোকাত। বুমেরাং হয়ে ফিরে আসতে হয় তার কাছেই, নত হয়ে বলতে হয় ভুল হয়ে গেছে। তবে এত কিছুর পরও মা চিরস্থায়ী রাগ করেন না। যদিও সাময়িক বকাঝকা করে, তবে বুঝতে পারি এটা তার রাগ না অভিমান। সবক্ষেত্রে তাকে ছাড়িয়ে যেতে পারলে তিনিই হয়তো সবচে বেশি খুশি হবেন।

যাই হোক জীবন যুদ্ধে মা আমার এখন অনেকটাই ক্লান্ত। বয়সের ভারে না হলেও দায়িত্বের ভারে কাবু তিনি। বুঝতে পারি, তিনি এখন আর অাগের মতো অতটা চাপ সইতে পারেননা। তবুও তিনি এখনো অদম্য। তার এত সংগ্রামের পরেও আমরা ভাইবোনরা এখনো সু প্রতিষ্ঠিত না হতে পারায় তিনি আরো বেশি ভেঙ্গে পড়ছেন। প্রায় রাতেই দেখি ঘুমের ঘোরে আমার/আমার ভাইয়ের নাম ধরে কেঁদে উঠেন। গোঙ্গানি দিতে দিতে আবার ঘুমিয়ে পড়েন।  তখন কষ্টে বুকটা ভেঙ্গে যায়। রাগা রাগি করি, বলি এতটা চিন্তা করার কী আছে আমাদের নিয়ে। আল্লাহতো একটা ফয়সালা করেই রেখেঁছেন আমাদের জন্য। তবুও তিনি ভাবনাহীন হতে পারেন না।
মা কে ছাড়িয়ে যাবার এই খেলায় নেমে, এখন দেখছি আমার মায়ের আরেক উল্টো রূপ। তাকে যতটা সাহসী মনে করতাম, আমাদের ব্যার্থতায় তিনি ততটাই দুর্বল। আমরা একদিন আরো বড় হবো, আরো স্বাবলম্বি হবো, সবকিছু ঠিক ঠিক বুঝে নেব, এমন হাজারো আশার বানী তাকে আশ্বস্ত করতে পারেনা কিছুতেই।
জীবন যাপনের এতো এতো সমীকরনে যে কথাটি কখনোই মুখ ফুটে বলা হয়নি, আমরা তাকে কতটা ভালোবাসি, কতটা অনুভব করি। তাকে ছাড়াযে আমাদের জীবনটাই অন্ধকারে ঢেকে যাবে।

যাই হোক, পৃথীবির সব মায়েরাই সুন্দর। অনন্য তাদের ভালোবাসা, মমতা। জীবন সংগ্রামে হার না মানা এক মহিয়সী নারী মা। সন্তানের ভবিষ্যত ভবিষ্যত করে যে তার অতীত বর্তমান ভবিষ্যত সব হারিয়েছে। আজকের এ দিনটাতে পৃথীবির সব মা য়ের জন্যই রইল ভালোবাসা। 

রবিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০১৭

মাংস ব্যবসায়ীদের সমস্যার সমাধান হবে, ভোক্তাসমস্যার সমাধান হবেকি ?

মাংস ব্যবসায়ী সমিতির দাবি দাওয়া মেনে সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। ঢাকার দুই মেয়রের সঙ্গে কথা বলে আগামী চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান করা হবে। মাংশ ব্যাবসায়ীদের জন্য খবরটি অত্যান্ত আশাব্যাঞ্জক। কারন অনেকদিন ধরেই তারা তাদের দাবি আদায়ে সোচ্চার রয়েছে। ঘাটে ঘাটে চাদাবাজি, আর ইজারাদারদের অব্যবস্থাপনাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত এই খাতটি। নির্দিষ্ট নীতিমালা হলে হয়তো তারা স্বস্তি পাবে। কিন্তু একজন সাধারণ ভোক্তা হিসেবে আমরাকি শংকামুক্ত হতে পারছি ?? আমরাকি স্বস্তি পাবো??

যে দিন থেকে বুঝতে শিখেছি, সেদিন থেকে দেখে আসছি কিভাবে বেড়ে চলেছে মাংশের দাম। সেই ৬০ টাকা থেকে শুরু..এখন ৫শ থেকে সাড়ে ৫শ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। অথচ বাজারে সব ধরনের নিত্যপন্যের দামই বাড়ে আবার ক্ষনে ক্ষনে কমেও। সবকিছু মিলিয়ে দাম বাড়া-কমার একটা ব্যালান্সের মধ্যে রয়েছে। কিন্তু বিপরীতে বাজারে মাংশের দাম কমেনি কখনো।

কিছুদিন আগেও গত ১৩ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছয় দিনের কর্মবিরতি পালন করেছিলেন মাংস ব্যবসায়ীরা। তখন তারা জানিয়েছিল, তাদের দাবি দাওয়া বন্ধ হলে মাংশের দাম অর্ধেকে নামিয়ে আনা সম্ভব। কিন্তু সেদিনের কয়দিনের ধর্মঘটের পরে বাজারে মাংশের দাম আরো বেড়ে গেল। হয়তোবা তাদের দাবি মেনে নেয়া হয়নি।

ওই ঘটনার আড়াই মাস পর রোববার আবারও ব্যাবসায়ীরা সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব শামীম আহমেদ জানিয়েছেনসমস্যার সমাধান হলে গরুর মাংস ৩০০ টাকা কেজি আর ছাগলের মাংস ৫০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করা যাবে।
আমরা তার এই আশ্বাসে আশ্বস্ত হতে চাই। কিন্তু মন্ত্রনালয়ে মাননীয় বাণিজ্যমন্ত্রীর সংঙ্গে ব্যাবসায়ীদের যে বৈঠক হয়েছে, তাতেকি ভোক্তা সাধারনের স্বার্থ নিয়ে আলোচনা হয়েছে ?? নাকি আগামী রমজানে ব্যাবসায়ীদের কর্ম বিরতিতে যাওয়ার হুমকিতে ভীত হয়েই থাকবো।

তাই মাননীয়মন্ত্রী মহোদয়, মেয়র দ্বয় তাদের প্রতি অনুরোধ থাকবে ব্যাবসায়ীদের সাথে বৈঠকে ভোক্তাসাধারনের স্বার্থও যেন অক্ষুন্ন থাকে।   

রবিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৭

হাওরবাসীর দুর্দিন: জনসাধারনের ত্রাণ তৎপরতা কই?

প্রকৃতির বৈরিতায় নিঃস্ব হাওরের লাখো মানুষ। বৃষ্টির পানি আর উজানের ঢলে তলিয়ে গেছে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ৭ জেলার ২৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা। নষ্ট হয়েছে কৃষকের প্রায় পেকে যাওয়া একমাত্র ফসল ধান। প্রকৃতির এই আচরণে শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে নিঃস্ব হাওরাঞ্চলের প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ।



শুধু একমাত্র ফসল ধানই নয়, বিষাক্ত পানিতে মারা পড়ছে টনের পর টন মাছ। মারা যাচ্ছে হাস মুরগীর মতো গৃহপালিত পশুও। ফলে হাওরের এইসব কৃষিজীবি মানুষদের চোখেমুখে এখন শুধু অন্ধকার। 




একটি বেসরকারি টিভি প্রতিবেদনের দেখলাম, একজন বয়োবৃদ্ধ কৃষক  তার দু:খ কষ্টের কথা বলতে গিয়ে বলছেন, ‘ মনে কয়, পানিতে ঝাঁপ দিয়া মইরা যাই, পোলাপাইন লইয়্যা এখন কেমন চলমু, কী খাওয়ামু’  তার এমন দুর্দশার কথাশুনে  মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেলো। 



কৃষি নির্ভর আমাদের এই দেশে,দুর্ভিক্ষের  যে পূর্বাভাস দেখা যাচ্ছে, তা থেকে হয়তো বাঁচতে পারবোনা আমরাও। কারন সব সময়ই দেখে আসছি, কারনে অকারনে সময়ে অসময়ে কোন কারন ছাড়াই বাড়ে দ্রব্যমুল্য। আর ধান বা চালতো আমাদের নিত্য আহার। তাই ধানের সবচেয়ে বড় যোগান আসে যে এই হাওরাঞ্চল থেকে। মৌসুমের শেষ দিকে এসে প্রকৃতির এমন আকস্মমিকতায় যে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে সাড়ে তিন লাখ মানুষের সে বিপর্যয় যে কিছু দিনের মধ্যেই ১৬ কোটি মানুষকেও গ্রাস করতে পারে, সে আশংকা অন্যায্য নয়।



এরই মধ্যে একটি আশা জাগানিয়া খবর পেলাম তা হলো,হাওরবাসীর এই দুর্দিনে এগিয়ে গেছে আমাদের সরকার। মাননীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান মন্ত্রী জানিয়েছেন, হাওরাঞ্চলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি মাসে ৩০ কেজি চাল ও ৫’শ টাকা অর্থ সহায়তা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এবং আগামী মৌসুম পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে। জাতীয় এ দুর্যোগে সরকারের এমন উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসীয়।কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে সরকারের এই ত্রাণ কতটা পর্যাপ্ত। যারা ধারকর্জ করে ধান চাষ করেছিলেন,তাদের কী হবে? 



তবে,সরকারের একার পক্ষেত আর এত বৃহৎ জনগোষ্ঠির সব চাহিদা মেটানো কখনোই সম্ভব নয়।তবে আমাদের সবার অংশগ্রহনে ও সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যদি তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসা যায় তাহলে হয়তো সেই দুর্দশা কিছুটা হলেও লাঘব করা সম্ভব হবে। 



এছাড়া অতীতে, শীত  মৌসুমে বা বড় দূর্যোগের সময়ও আমরা দেখতে পেয়েছি, আমাদের শহুরে মানুষদের অনেকেই যার যার সাধ্যমতো ত্রাণ নিয়ে এগিয়ে যায়, কেউ কেউ হয়তো লোক দেখানো সহায়তা নিয়েও যায়। কিন্তু এবারের এই জাতীয় দূর্যোগে সেই চিত্র অনেকটাই কমই দেখতে পাচ্ছি।



তাই সবার প্রতি আহ্বান জানাবো, হাওরবাসীর প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে এখনই আমাদের উচিৎ সাধ্যানুযায়ী সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া।  প্রয়োজনে শীতবস্ত্র সংগ্রহের মতো যৌথভাবে  ফান্ড সংগ্রহ করে, খাদ্য সামগ্রী ও অন্যান্য সহযোগিতা দুর্গতদের মাঝে পৌঁছে দেয়া যেতে পারে।



আর  যেসব সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হারওরের কৃষকদের মাঝে বীজ, সার, কীটনাশক বিক্রি করে, তাদের প্রতিও আহ্বান জানাবো ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পূর্বেকার ঋণ মওকুফ করে, আগামী মৌসুমে ফ্রি-তে বীজ সার বিতরন করবেন।


- আকতার হাবিব
সাংবাদিক, রেডিও ধ্বনি,ঢাকা।

বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল, ২০১৭

এলেন বাড়ির বৈঠক কোন সমাধান নয়, চক্রান্তেরই অংশ

কার স্বার্থে চালু হলো সিটিং সার্ভিস ;
গত কয়দিন ধরে দেশে গণপরিবহন নিয়ে নাটক না, মহানাটকের মঞ্চায়ন চলছে। সিটিং নামের চিটিং বন্ধ হলো, কিন্তু পরিবহন মালিক শ্রমিকদের গুন্ডামি বন্ধ হলোনা। সিটিং বন্ধ করে গাদাগাদি করে লোক তুলল, কিন্তু ভাড়া কমালোনা, বরং উল্টো মাথার উপরের ফ্যানটা পর্যন্ত খুলে নিল বদমায়েশগুলো। তাদের রুটি রুজির একমাত্র নিয়ামক এই যাত্রীদের সাথে দুর্ব্যাবহার করতে এতটুকু বিবেকে বাধলোনা। যাদের বিবেকে বাঁধা দিয়েছে তারা একডিগ্রী এগিয়ে বাস চলাচলই বন্ধ রাখলো। বাহ..কী সুন্দর নিরব প্রতিবাদ তাদের। 




গত ৪/৫ দিনে মানুষের অবর্ণনীয় দুর্ভোগে অনেকেই সিটিং সার্ভিস পুনরায় ফেরা নিয়ে মায়া কান্না দেখিয়েছেন। অবশ্য যারা এমনটি করছে চাহিদার জন্য না, বরং এটা তাদের অধৈর্যের বহিপ্রকাশ। 

যাই হোক- গতকয়েকদিনেরর মহা নাটকের আপাতত একটা রফা হয়েছে, বুধবারের এলেনবাড়ির বৈঠকে। কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত ১৫ দিনের  জন্য স্থগিত করা হয়েছে। মানে পিছু হটেছে সরকার। দোর্দণ্ড প্রতাপ দেখিয়েছে পরিবহন মালিকরা। তারা ভাড়া কমায়নি, সেবার মান বাড়ায়নি, জনগনের সাথে তাদের আচরন বদলায়নি উল্টো এনবিআর থেকে ট্যাক্স কমানোর ঘোষনা নিয়ে নিছেন। সিটিং চালুর বৈধতা নিয়ে নিছেন। আপাত দৃষ্টিতে এই বৈঠকে তাদেরই জয় হয়েছে, পরাজয় ঘটেছে সাধারন যাত্রী ও সরকারের। 

তাহলে এখন চোখ রাখা যাক গতকালের সেই বৈঠকে- এটাকে আমি বৈঠক বলবোনা। বলবো ষড়যন্ত্রের এক গোপন শলাপরামর্শ হয়েছে এলেন বাড়িতে। কারন জনগনের ভোগান্তি হলেও জনগনকে সম্পৃক্ত করা হয়নি ওই বৈঠকে। ছিলনা সরকার পক্ষের কর্তা ব্যাক্তিরাও। অথবা নিয়ম অনুযায়ি যাত্রী সাধারণকে নিয়ে গণশুনানীর আয়োজন করা যেত। 
অথচ বৈঠক করেছে ঘুষখোর আর দুর্ণীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত বিআরটিএর কতিপয় কর্মকর্তারা এবং এই নাটকের মুল খলনায়ক বাস মালিকরা। তাহলে কী আলোচনা হতে পারে সেই বৈঠকে?? তারা নিজেদের স্বার্থেই আলোচনায় বসেছিল সেখানে।


রাজধানীর ফার্মগেটের এলেনবাড়িতে বিআরটি এর কার্যালয়
আমরা ধারনা করতে পারি-(স্রেফ ধারনা) বৈঠকে বাস মালিকরা বিআরটিএর কর্মকর্তাদের শাষিয়েছে, মাসে মাসে এতটাকা ঘুষ দিচ্ছি সেই টাকা কোত্থেকে আসবে?? ঘুষখোর কর্মকর্তারা তাদের ধমকে চুপসে গেছে...অথবা কর্মকর্তারা বলেছে তোমরা মাসে মাসে যে ঘুষ দেও তাতে আর পোষাচ্ছেনা, বাজারে জিনিস পত্রের ম্যালা দাম বাড়ছে। বাস মালিকরাও তাদের উৎকোচের পরিমান বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। আর অমনি গনেশ উল্টে গেছে।`

ঘটনার একটা যৌক্তিক ও গ্রহনযোগ্য একটা সমাধান দিতে  এদের বাইরে ২ জনকে রাখা হলো তাদের একজন নিসচা চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন, উনি অবশ্য সরকারের সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসার প্রস্তাব করেছিল। তার যুক্তি হিসেবে তিনি বলেছেন অতীতে সরকার অনেক উদ্যোগ নিয়ে মাঝপথে আটকে গেছে। পরে আর সেই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়নি। তাই এবার পিছু হটা উচিত হবে না। কিন্তু তার আপত্তি হাওয়ায় মিলে গেছে। 

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খান। শুনেছি তারই মস্তিস্ক থেকে নাকি সমাধানের এই মহান থিওরী প্রসব হয়েছে। যদিও তার  নৈতিকতা নিয়ে আমার ঘোর আপত্তি অাছে। উনি টকশোতে যখন কথা বলে তখন মুগ্ধ হয়ে শুনি। কিন্তু বাজারে এ-ও রটনা আছে যে কোন বিষয় স্টাবলিশ করতে তাকে নাকি কন্টাক করে নিয়ে যাওয়া হয় যুক্তি তর্ক দিয়ে বিষয়টি প্রতিষ্ঠা করার জন্য। এবং তিনি এই লাইনে অনন্য। আর গতকালও তিনি ঠিক কার স্বার্থে কথা বলতে সেই মিটিংএ হাজির ছিলেন তা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। 
একটি জনপ্রিয় দৈনিক পত্রিকা প্রথম আলো থেকেই কোট করছি গতকাল বৈঠকে তার ভূমিকা, ‌‌সিটিং সার্ভিস বন্ধের অভিযান ১৫ দিন স্থগিত রাখা এবং এটি আইনি কাঠামোতে এনে চালু করার পরামর্শটি সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খানের কাছ থেকে এসেছে বলে বৈঠক সূত্র জানায়। একপর্যায়ে বিআরটিএর চেয়ারম্যান বৈঠক থেকে উঠে নিজ কক্ষে ঘুরে আসেন। এরপরই সাংবাদিকদের ভেতরে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয়। 
এ সময় তিনি বলেন, ‘একটা উদ্দেশ্য নিয়েই মালিকেরা সিটিং সার্ভিস বন্ধ করেছিলেন। তাঁদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা তাঁদের সে উদ্যোগে সহায়তা করেছি। তবে সিটিং সার্ভিস বন্ধ হওয়ার পর নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী যাত্রীদের অসুবিধার কথা বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে আসে। এ জন্যই সিটিং সার্ভিস বন্ধের সিদ্ধান্ত ১৫ দিন স্থগিত করা হয়েছে।’`
আমার বক্তব্য হলো, ওই বৈঠকে বাস কর্তৃপক্ষরা নিজেদের স্বার্থে কথা বলেছে। দেশ বা জনগনের স্বার্থ নয়। 
কালকে কেন, কেউ জোড়ালো ভাবে সরকারের সিদ্ধান্ত অমান্যকারি বাস মালিকদের কঠোর শাস্তির দাবি জানালোনা??  আইনে আছে কেউ কারন ছাড়া বাস চলাচল বন্ধ রাখলে তাদের রুট পারমিট বাতিল করা হবে। সেই আইনের প্রয়োগ কেউ দেখালোনা কেন?  জনগনের প্রতিনিধি আমাদের দুই সাহসী মেয়র মহোদয়দের রাখা হলোনা কেন ওই বৈঠকে, মাননীয় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ছিলনা কেন ঐ বৈঠকে। তাহলে দেখতাম বাস মালিকদের কতবড় বুকের পাটা ছিল গুন্ডামী করার। 
অতীতের কর্মকান্ডের জন্য জনগনের প্রতিনিধি হিসেবে ঢাকার দুই মেয়র এবং মাননীয় সেতু মন্ত্রী সাহেবের প্রতি আমাদের যথেষ্ট আস্থা রয়েছে। এবং আমাদের বিশ্বাস তাদের সিদ্ধান্তেও জনগনের আশা আকাংখার প্রতিফলন ঘটতো।
রাজধানীর ফার্মগেটের এলেনবাড়িতে বিআরটি এর কার্যালয়
যাই হোক এই কয়দিনের অবর্নীয় দুর্ভোগ আর অভিযোগের মুল বিষয় ছিল দুই টা। ১. সিটিং বন্ধ হলেও ভাড়া কমেনি। ২. পর্যাপ্ত বাস নামেনি।
অথচ এই দুই অভিযোগের কোন সুরাহা না করে বাস মালিকদের অনৈতিক দাবির কাছেই হার মেনেছে মেরুদন্ডহীন সরকারি কর্মকর্তারা। তাই আমার বিশ্বাস বুধবার বিকেলে এলেন বাড়ির ওই বৈঠকটি কোন বৈঠক ছিলনা, ছিল জনগনকে ঠকানোর এক গোপন ষড়যন্ত্র।

- আকতার হাবিব, সাংবাদিক, ঢাকা।
 - ২০ এপ্রিল সকাল ৬.৩০ 

রবিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৭

বন্ধ হলো সিটিং সার্ভিস: ভোগান্তি কমবে তো নগরবাসীর ?

বিআরটিএ এর ঘোষণা অনুযায়ী আজ থেকে বন্ধ হয়েছে সিটিং সার্ভিস। এমন সিদ্ধান্তে আপাত হাফ ছেড়ে বেঁচেছে নগরবাসী। কিন্তু দুশ্চিন্তা যেন পিছু ছাড়ছেনা কারো। কারন আপাতদৃষ্টিতে কিছুটা সুবিধা হলেও ভোগান্তি কমেনি এতটুকুও। নতুন এই নিয়মে বাসকর্তৃপক্ষের ভাড়া আদায়ে একতরফা রাহাজানি কিছুটা কমলেও ভাড়া কমেনি অনেক বাসেই। বরং উল্টো গাদাগাদি করে যাত্রী উঠানো ও অযথা সময়ক্ষেপনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে প্রবল।

গণপরিবহনের এই নৈরাজ্যের বিষয়টি উঠে এসেছে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরেও। ফলে্ এই সিদ্ধান্তের পক্ষে বিপক্ষে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। সিদ্ধান্তের সুবিধা অসুবিধা নিয়ে অনেকেই বিশ্লেষন করছেন।

দৈনিক প্রথম আলোর এক সংবাদের মাধ্যমে জানা যায়, মৃন্ময় মিন্টু নামের এক যাত্রী অভিযোগ করেন, মিরপুর ১ থেকে শাহবাগের বাসভাড়া তালিকা অনুযায়ী ১৬ টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু দিশারী পরিবহন এখনো ২৫ টাকা নিচ্ছে। এম আর আবির নামে এক যাত্রী অভিযোগ করেছেন, মিরপুর-১ থেকে হেমায়েতপুরের ভাড়া ২০ টাকা। কিন্তু নিচ্ছে ৩৫ টাকা। তা-ও যাত্রীদের দাঁড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে।
ভোগান্তির আরো চিত্র ফুটে উঠেছে, জাগো নিউজ২৪ এর একটি প্রতিবেদনে, 

সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য যে। বাসের কোনো টিকেট সিস্টেম নাই। যাত্রীদের সাথে অনেক সময় চরম পর্যায়ের খারাপ ব্যবহার করা হয়। অনেকে জানেনা গন্তব্য স্থলের ভাড়া কত। যার থেকে পারে ইচ্ছা মতো ভাড়া নেওয়া হয়। বাস এক জায়গায় অনেক সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। প্রতিবাদ করতে গেলে খারাপ ব্যবহারের শিকার হতে হয়।  আরেকটা খারাপ দিক হলো কার আগে কে যেতে পারে। চলন্ত অবস্থায় যাত্রী উঠতে, নামাতে গিয়ে অনেকে সময় এক্সিডেন্টের ঘটনা ও ঘটে। বাস গুলো কে নির্দিষ্ট স্টপিস মেইনটেইন করার জন্য সরকারকে অনুরোধ করা হলো।


প্রতিফলন যাই হোক, বাস কর্তৃপক্ষের একতরফা নৈরাজ্য ঠেকাতে এটাযে একটা যুগান্তকারী পদক্ষেপ তাতে কোন সন্দেহ নেই। তবে এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় যে ভোগান্তির সৃষ্টি হবে, সে ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ কতটা প্রস্তুত সেটাই এখন ভাবার বিষয়। 

যদিও রাজধানীতে সিদ্ধান্ত কার্যকরে ৫ টি ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে কিন্তু এটা কতদিন চলবে তা নিয়েও সন্দিহান সাধারন মানুষ।
একজন সাধারন ও সচেতন নাগরিক হিসেবে যোগাযোগ সরকার, বিআরটিএ, সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ও সিটি মেয়রসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানাবো- নগরীতে সিটিং সার্ভিস বন্ধের যে যুগান্তকারি পদক্ষেপ নিয়েছেন, তার সফল বাস্তবায়নের লক্ষে আপনাদের আরো কার্যকরি ভুমিকা দরকার।

সাধারন যাত্রীকুলের ভোগান্তিহীন বাসযাত্রা নিশ্চিত করতে ওভার লোডিং বন্ধ ও সরকারি ভাড়া তালিকা কার্যকর করতে কর্তৃপক্ষ আরো উদ্যোগী হবে বলেই আমরা বিশ্বাস করি।


-আকতার হাবিব, (16.04.17/ 18:21)

শনিবার, ১৫ এপ্রিল, ২০১৭

প্রসঙ্গ ফেসবুক: যখন পড়বেনা মোড় পায়ের চিহ্ন এই বাটে...

 কিছুক্ষন আগে, অনেক চেষ্টা করে আমার পুরনো ফেসবুক আইডিতে ঢুকলাম। ১০-১২ বার চেষ্টা করে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের নানা শর্ত মেনে আইডিটা উদ্ধার করতে সমর্থ হলাম। ২০০৯ সালে সাইবার ক্যাফেতেতে গিয়ে ২৫ টাকা খরচ করে খোলা এই আইডিটি উদ্ধার করতে পেরে বরই উচ্ছসিত হয়েছি। টানা ৫ বছর ব্যাবহার করা আমার এই একাউন্টে ঢুকতেই কেমন নস্টালজিয়ায় পেয়ে বসলো। যেন পুরনো দিনের এ্যালবাম খুলে বসেছি।  একেকটি ছবি যেন একেকটি ঘটনা মনে করিয়ে দিচ্ছে। পুরনো কিছু বন্ধু, চেনা মানুষের ছবি ভেসে আসলো...মুহুর্তেই তাদের একাউন্টগুলোতে ঘুরে পরিবর্তনগুলো পরখ করলাম। ঘেটেঘুটে দেখলাম চ্যাংড়া ছেলেগুলো কিভাবে ব্যাটা ছাওয়ালে রূপান্তরিত হলো, সুন্দরী মেয়ে গুলো কীভাবে দিনবদলের হাওয়ায় ফুলে ফেপে ভাবি বা আন্টির রং ধারন করেছে।
এই একাউন্টে আমার ফ্রেন্ডের সংখ্যা খুবই কম সাড়ে ৩ শ'র কাছাকাছি। কিন্তু তাদের ৮০ শতাংশি রিয়েল লাইফ ফ্রেন্ড। অপরিচিত কাউকে নেয়া হয়না তেমন।  নতুন আইডিতে তাদের অনেকের সঙ্গেই যুক্ত হতে পারলেও অনেকেই রয়েগেঁছে আড়ালে। কেউকেউ বিদেশ বিভূঁইয়ে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।।

সবকিছু মিলিয় ৫ মিনিটের জার্নি ঘন্টা ছাড়ালো কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হলোনা।।
সবচে বেশি যে বিষয়টি মনে দাগ কেটে গেলো..তা হলো, মেসেঞ্জার বক্স।।  সেটা খুলতেই যেন খবরের ডালা খুলে দিল ফোসবুক। কুশলাদি বিনিময় করে কত কত আপনজন মেসেজ করে রেখেছে।
কেউ জরুরি অতি জরুরি খবর দিতে বা নিতে চেয়েছে, কেউবা শ্রেফ খোজ খবর জানতে চেয়েছে। নাম্বার চেয়েছে অনেকেই।
সবচে মজার বিষয় হলো, গেল সপ্তাহখানেক অাগে ২৬তম জন্মদিন গেলো।। আর এই আইডিতে ঢুকে দেখি...২০১৪/১৫ সালের পাঠানো জন্মদিনের শুভেচ্ছার জবাব দেয়া হয়নি। এমনকি দেখতেও পাইনি আমি...কেউ কেউ লিখেছে জরুরি ভিত্তিতে যোগাযোগ করার কথা।.....।


পুরান আমার এই প্রোফাইল চেক করে মনে হলো..কোন মৃত মানুষের ফেসবুকে ঢুকেছি আমি। যেখানে হঠাৎ করেই ব্যাবহারকারির প্রস্থানের কারনে থমকে গেছে সব খবর। বন্ধ রয়েছে সব আপডেট। ভাবতেই মনটা বিষিয়ে উঠল। আসলেইকি মরে ছিলাম আমি এই কয় বছর?
কিছুদিন আগে কোন কোন অনলাইন পত্রিকায় নিউজ দেখেছিলাম, এপর্যন্ত কোটি খানেক ফেসবুক ইউজারের মৃত্যু হয়েছে। নিউজের সুত্র অবশ্য মৃতমানুষদের কোন জরিপনা, বরং ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ধারনা প্রসুত একটি সমীক্ষা দিয়েছে। কারন কেউ মারা গেলেত আর স্ট্যাটাস দিয়ে বা ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে মেসেজ দিয়ে জানিয়ে যেতে পারেনা..যে জনাব, জাকারবার্গ আমি মরে যাচ্ছি।  তাই আমার একাউন্টটি স্থগিম করুন। সম্ভবত, যেসব ফেসবুক ইউজার দীর্ঘ দিন তার আইডিতে ঢোকেনা, তাদেরকেই মৃত সাব্যস্ত করেছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ।
তাহলেকি আমাকেও তারা মৃতদের তালিকায় ফেলেছিল??  এই প্রশ্নটিই বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে মনে।

আরও খারাপ লাগার যে বিষয়টি লক্ষ করলাম, তা হলো- এই কয় বছরে সত্যি সত্যি কিছু আইডির ফেসবুকিয় মৃত্যু ঘটেছে। ( মানে ডিএ্যাকটিভেট হয়েছে বা ব্লক করে দেয়া হয়েছে।) অনেকেই আবার সামাজিক নিরাপত্তার স্বার্থে নাম বদলে ফেলেছেন, যার কারনে গভীর অনুসন্ধান ছাড়া তাদের খুজে বের করা মুশকিল।

যাইহোক, আজকের এই উপলব্ধির মুল কথা হলো, এই যে এখন সারাদিন ফেসবুকে লগইন থাকি। এত এত বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ দরকারি আলাপ..এত বিপ্লবী স্ট্যাটাস...দিন শেষে সত্যিকি এগুলোর মানে আছে? এত জরুরি আপডেটকি কখনোই আমাদের অগ্রগামি করেছে? নাকি সময়ের অতল গভীরেই হারিয়ে যাবে সব রাগ অনুরাগ। মিথ্যা প্রমানিত হবে সব আবেগ অনুভুতি।

- আকতার হাবিব
১৬.০৪.১৭ ইং (রাত ০২.০৩ মিনিট)