শনিবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৭

কেমন আছে ইসলামিক ইরানের ইহুদীরা ?

পৃথিবীর প্রাচীন কাল থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত বৃহৎ সভ্যতাগুলোর মধ্যে অন্যতম ইরান। দেশটির জনগণ জাতিগত ও ভাষাগতভাবে বিচিত্র হলেও এরা প্রায় সবাই মুসলিম। শত শত বছর ধরে এ অঞ্চলটি মুসলিম শিয়া মতাবলম্বীদের কেন্দ্র। ইরানের প্রায় ৯৩% মুসলিম শিয়া ধর্মাবলম্বী এবং এদের প্রায় সবাই জাফরি শিয়া মতবাদে বিশ্বাসী। তবে ইরানের বেশিরভাগ মানুষ ইসলাম ধর্মের অনুসারী হলেও সেখানে খ্রিস্টান, ইহুদীসহ অন্যান্য ধর্মের মানুষের বসবাসও রয়েছে স্বল্প পরিমানে। 

 ইরানের প্রায় পৌনে ৮ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ২০  হাজারেরও বেশি ইহুদী জনগোষ্ঠী রয়েছে। 

১৯৭৯ সালের বিপ্লবের পর থেকে ইরানে ইসলামি প্রজাতন্ত্র চালু রয়েছে। সেই সুত্রে স্বাভাবিকভাবেই সাধারনের মনে প্রশ্ন সেখানে বসবাসরত অন্য ধর্মাবলম্বীরা কেমন আছে? বিশেষ করে ইহুদী জনগোষ্ঠী। তার কারন মধ্যপ্রাচ্য সংকট নিয়ে অভিযোগের তীর সব সময় ইহুদীবাদি ইসরাইলের দিকেই। তাছাড়া বিশ্বে শান্তি, স্বস্তি ও মানবতার জন্য ইসরাঈলকে বিসফোড়া মনে করা হয়। তাই এসবের বিরুদ্ধে সোচ্চার  ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরানে বসবাসরত ইহুদীরা কেমন আছে? তারই চিত্র  তুলে ধরেছেন জার্মান ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম ডয়চে ভেলের  সাংবাদিক থেরেসা ট্রপার। 

প্রতিবেদনের ভাষ্যমতে, ইসরাঈলের পরে বিশ্বের অন্যান্য যে কোন দেশের তুলনায় ভালো আছেন ইরানের ইহুদীরা। সেখানে ইহুদীরা যেমন স্বাধীনভাবে ধর্ম পালন করতে পারেন, ঠিক তেমনি ব্যাবসা বাণিজ্য, শিক্ষা সংস্কৃতি এমনকি রাজনৈতিক কর্মকান্ডেও যুক্ত হতে পারে। ইরান ইসলামিক প্রজাতন্ত্র হলেও দেশটির সংসদে রয়েছে সংখ্যালঘু ইহুদীদের প্রতিনিধি সংসদ সদস্যও। 
সাক্ষাতকারে তেহরানের ইহুদি সম্প্রদায়ের পরিচালক ও সংসদ সদস্য সিয়ামাক মোরসাদেঘ বলেন, মানুষ যা ভাবে তার চেয়ে অনেক ভালো আছেন ইরানের ইহুদীরা। সেখানে সংখ্যালঘু হিসেবে আমাদের স্বীকৃতি আছে৷ তাই আমরা স্বাধীনভাবে ধর্ম পালন করতে পারি৷ তেহরানে ২০টির বেশি সিনাগগ বা ধর্মীয় উপসনালয় আছে।  
সাধারণভাবে বললে, ইরানে ইহুদিদের অবস্থা সমসময় ইউরোপের চেয়ে ভালো। 


সিয়ামাক মোরসাদেঘ বলেন, এখানে ইহুদি আর মুসলমানরা একে অপরকে সম্মান করে। মুসলমানদের সঙ্গে আমাদের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আছে। তিনি বলেন, যে হাসপাতালের ডাক্তার আমি সেটি ইহুদি পরিচালিত হলেও সেখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারী ও রোগীদের ৯৫ শতাংশই মুসলমান৷
তবে কিছু পার্থক্য রয়েছে, যেমন এই দুই ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে বিয়ে হওয়ার হার খুবই কম। ইরানে আইন অনুযায়ী ইহুদিরা  চাইলে বিচারক হতে পারেনা, সেনাবাহিনীতে কর্মকর্তা পর্যায়ে চাকরি করার সুযোগ নেই, তবে সৈনিক পর্যায়ে চাকরি করতে পারে। 
ইরানের আইনে ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো ধরণের যোগাযোগ রাখা নিষিদ্ধ।
ইহুদী হলেও ইসরাঈলের আগ্রাসী নীতির সমালোক অনেক ইহুদী। সিয়ামাক বলেন, ইসরায়েলে যাওয়ার কোন ইচ্ছা আমার নেই। কারণ, আমি মনে করি, ইহুদিরা অন্যদের চেয়ে আলাদা, এই চিন্তাধারা থেকে ইহুদিদের শুধু বিশ্বের একটা জায়গায় বাস করতে হবে – এমন ভাবনার সঙ্গে আমি একমত নই। কারণ আমি মনে করি আমরা সবাই সমান৷
ধর্মীয় শিক্ষা বলে, আমরা যে দেশে বাস করি সেই দেশের আইন মেনে চলতে হবে। বিশ্বে অনেক ইহুদি আছেন যাঁরা ইসরায়েলি সরকার ও সেনাবাহিনীর আচরণের কঠোর সমালোচক৷ ইহুদি হিসেবে আমাদের ধর্মগ্রন্থ ‘তাওরাত' ও ‘তালমুদ' মেনে চলতে হয়৷ অন্য দেশ দখল করা ও নিরীহ মানুষ হত্যা করা মোজেসের (ইহুদিদের নবি) শিক্ষা নয়।  ইহুদি হিসেবে আমরা ইসরায়েলের আচরণ সমর্থন করতে পারি না, এটা ধর্মীয় নয়, রাজনৈতির ‘মুভমেন্ট'।  ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণহত্যার শিকার হওয়ায়, ইহুদিদের উচিত ফিলিস্তিনিদের প্রতি আরও সহানুভূতিশীল হওয়া।

2 মন্তব্য(গুলি):

  1. আমি জানতাম ইরানে টুয়েলভার্স শিয়াদের সংখ্যা বেশী, আপনি বললেন জাফরি। যাই হোক আমি ভূল হতে পারি, ইরানের ইহুদিদের নিয়ে ভালো একটি লেখা লিখেছেন। ইহুদি ধর্ম নিয়েও আলাদা একটি লেখা লিখবেন আশা করি।

    উত্তরমুছুন
  2. ইরানের ইসফাহান শহরে. দাজ্জাল আত্মপ্রকাশ করবে এবং ইসফাহান শহর থেকে দাজ্জালের ৭০ হাজার ইহুদি সমথক হবে......তাই ইরানে ইহুদীরা থেকে যায়.. এবং বতমানে আরো ইহুদীরা ইরানে রাজনৈতিক অছরয় চাইতাছে..

    উত্তরমুছুন