শনিবার, ১৫ এপ্রিল, ২০১৭

প্রসঙ্গ ফেসবুক: যখন পড়বেনা মোড় পায়ের চিহ্ন এই বাটে...

 কিছুক্ষন আগে, অনেক চেষ্টা করে আমার পুরনো ফেসবুক আইডিতে ঢুকলাম। ১০-১২ বার চেষ্টা করে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের নানা শর্ত মেনে আইডিটা উদ্ধার করতে সমর্থ হলাম। ২০০৯ সালে সাইবার ক্যাফেতেতে গিয়ে ২৫ টাকা খরচ করে খোলা এই আইডিটি উদ্ধার করতে পেরে বরই উচ্ছসিত হয়েছি। টানা ৫ বছর ব্যাবহার করা আমার এই একাউন্টে ঢুকতেই কেমন নস্টালজিয়ায় পেয়ে বসলো। যেন পুরনো দিনের এ্যালবাম খুলে বসেছি।  একেকটি ছবি যেন একেকটি ঘটনা মনে করিয়ে দিচ্ছে। পুরনো কিছু বন্ধু, চেনা মানুষের ছবি ভেসে আসলো...মুহুর্তেই তাদের একাউন্টগুলোতে ঘুরে পরিবর্তনগুলো পরখ করলাম। ঘেটেঘুটে দেখলাম চ্যাংড়া ছেলেগুলো কিভাবে ব্যাটা ছাওয়ালে রূপান্তরিত হলো, সুন্দরী মেয়ে গুলো কীভাবে দিনবদলের হাওয়ায় ফুলে ফেপে ভাবি বা আন্টির রং ধারন করেছে।
এই একাউন্টে আমার ফ্রেন্ডের সংখ্যা খুবই কম সাড়ে ৩ শ'র কাছাকাছি। কিন্তু তাদের ৮০ শতাংশি রিয়েল লাইফ ফ্রেন্ড। অপরিচিত কাউকে নেয়া হয়না তেমন।  নতুন আইডিতে তাদের অনেকের সঙ্গেই যুক্ত হতে পারলেও অনেকেই রয়েগেঁছে আড়ালে। কেউকেউ বিদেশ বিভূঁইয়ে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।।

সবকিছু মিলিয় ৫ মিনিটের জার্নি ঘন্টা ছাড়ালো কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হলোনা।।
সবচে বেশি যে বিষয়টি মনে দাগ কেটে গেলো..তা হলো, মেসেঞ্জার বক্স।।  সেটা খুলতেই যেন খবরের ডালা খুলে দিল ফোসবুক। কুশলাদি বিনিময় করে কত কত আপনজন মেসেজ করে রেখেছে।
কেউ জরুরি অতি জরুরি খবর দিতে বা নিতে চেয়েছে, কেউবা শ্রেফ খোজ খবর জানতে চেয়েছে। নাম্বার চেয়েছে অনেকেই।
সবচে মজার বিষয় হলো, গেল সপ্তাহখানেক অাগে ২৬তম জন্মদিন গেলো।। আর এই আইডিতে ঢুকে দেখি...২০১৪/১৫ সালের পাঠানো জন্মদিনের শুভেচ্ছার জবাব দেয়া হয়নি। এমনকি দেখতেও পাইনি আমি...কেউ কেউ লিখেছে জরুরি ভিত্তিতে যোগাযোগ করার কথা।.....।


পুরান আমার এই প্রোফাইল চেক করে মনে হলো..কোন মৃত মানুষের ফেসবুকে ঢুকেছি আমি। যেখানে হঠাৎ করেই ব্যাবহারকারির প্রস্থানের কারনে থমকে গেছে সব খবর। বন্ধ রয়েছে সব আপডেট। ভাবতেই মনটা বিষিয়ে উঠল। আসলেইকি মরে ছিলাম আমি এই কয় বছর?
কিছুদিন আগে কোন কোন অনলাইন পত্রিকায় নিউজ দেখেছিলাম, এপর্যন্ত কোটি খানেক ফেসবুক ইউজারের মৃত্যু হয়েছে। নিউজের সুত্র অবশ্য মৃতমানুষদের কোন জরিপনা, বরং ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ধারনা প্রসুত একটি সমীক্ষা দিয়েছে। কারন কেউ মারা গেলেত আর স্ট্যাটাস দিয়ে বা ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে মেসেজ দিয়ে জানিয়ে যেতে পারেনা..যে জনাব, জাকারবার্গ আমি মরে যাচ্ছি।  তাই আমার একাউন্টটি স্থগিম করুন। সম্ভবত, যেসব ফেসবুক ইউজার দীর্ঘ দিন তার আইডিতে ঢোকেনা, তাদেরকেই মৃত সাব্যস্ত করেছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ।
তাহলেকি আমাকেও তারা মৃতদের তালিকায় ফেলেছিল??  এই প্রশ্নটিই বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে মনে।

আরও খারাপ লাগার যে বিষয়টি লক্ষ করলাম, তা হলো- এই কয় বছরে সত্যি সত্যি কিছু আইডির ফেসবুকিয় মৃত্যু ঘটেছে। ( মানে ডিএ্যাকটিভেট হয়েছে বা ব্লক করে দেয়া হয়েছে।) অনেকেই আবার সামাজিক নিরাপত্তার স্বার্থে নাম বদলে ফেলেছেন, যার কারনে গভীর অনুসন্ধান ছাড়া তাদের খুজে বের করা মুশকিল।

যাইহোক, আজকের এই উপলব্ধির মুল কথা হলো, এই যে এখন সারাদিন ফেসবুকে লগইন থাকি। এত এত বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ দরকারি আলাপ..এত বিপ্লবী স্ট্যাটাস...দিন শেষে সত্যিকি এগুলোর মানে আছে? এত জরুরি আপডেটকি কখনোই আমাদের অগ্রগামি করেছে? নাকি সময়ের অতল গভীরেই হারিয়ে যাবে সব রাগ অনুরাগ। মিথ্যা প্রমানিত হবে সব আবেগ অনুভুতি।

- আকতার হাবিব
১৬.০৪.১৭ ইং (রাত ০২.০৩ মিনিট)

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন