প্রকৃতির বৈরিতায় নিঃস্ব হাওরের লাখো মানুষ। বৃষ্টির পানি আর উজানের ঢলে তলিয়ে গেছে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ৭ জেলার ২৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা। নষ্ট হয়েছে কৃষকের প্রায় পেকে যাওয়া একমাত্র ফসল ধান। প্রকৃতির এই আচরণে শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে নিঃস্ব হাওরাঞ্চলের প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ।
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgoOzHQT8Y0cHhmHyiD1x33a1Fj5oAK-4WQWTmriz8idJ9In5p3wF5vtBCVhrayNpbUWsUuarCnmzyJvPzmsn9Dg4P3snt-jWIUbHfQPNEmu4YnxCsA4laIqu8FlH83v1CgcSkSAykaD84/s200/sunamgong--home.jpg)
শুধু একমাত্র ফসল ধানই নয়, বিষাক্ত পানিতে মারা পড়ছে টনের পর টন মাছ। মারা যাচ্ছে হাস মুরগীর মতো গৃহপালিত পশুও। ফলে হাওরের এইসব কৃষিজীবি মানুষদের চোখেমুখে এখন শুধু অন্ধকার।
একটি বেসরকারি টিভি প্রতিবেদনের দেখলাম, একজন বয়োবৃদ্ধ কৃষক তার দু:খ কষ্টের কথা বলতে গিয়ে বলছেন, ‘ মনে কয়, পানিতে ঝাঁপ দিয়া মইরা যাই, পোলাপাইন লইয়্যা এখন কেমন চলমু, কী খাওয়ামু’ তার এমন দুর্দশার কথাশুনে মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেলো।
কৃষি নির্ভর আমাদের এই দেশে,দুর্ভিক্ষের যে পূর্বাভাস দেখা যাচ্ছে, তা থেকে হয়তো বাঁচতে পারবোনা আমরাও। কারন সব সময়ই দেখে আসছি, কারনে অকারনে সময়ে অসময়ে কোন কারন ছাড়াই বাড়ে দ্রব্যমুল্য। আর ধান বা চালতো আমাদের নিত্য আহার। তাই ধানের সবচেয়ে বড় যোগান আসে যে এই হাওরাঞ্চল থেকে। মৌসুমের শেষ দিকে এসে প্রকৃতির এমন আকস্মমিকতায় যে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে সাড়ে তিন লাখ মানুষের সে বিপর্যয় যে কিছু দিনের মধ্যেই ১৬ কোটি মানুষকেও গ্রাস করতে পারে, সে আশংকা অন্যায্য নয়।
এরই মধ্যে একটি আশা জাগানিয়া খবর পেলাম তা হলো,হাওরবাসীর এই দুর্দিনে এগিয়ে গেছে আমাদের সরকার। মাননীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান মন্ত্রী জানিয়েছেন, হাওরাঞ্চলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি মাসে ৩০ কেজি চাল ও ৫’শ টাকা অর্থ সহায়তা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এবং আগামী মৌসুম পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে। জাতীয় এ দুর্যোগে সরকারের এমন উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসীয়।কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে সরকারের এই ত্রাণ কতটা পর্যাপ্ত। যারা ধারকর্জ করে ধান চাষ করেছিলেন,তাদের কী হবে?
তবে,সরকারের একার পক্ষেত আর এত বৃহৎ জনগোষ্ঠির সব চাহিদা মেটানো কখনোই সম্ভব নয়।তবে আমাদের সবার অংশগ্রহনে ও সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যদি তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসা যায় তাহলে হয়তো সেই দুর্দশা কিছুটা হলেও লাঘব করা সম্ভব হবে।
এছাড়া অতীতে, শীত মৌসুমে বা বড় দূর্যোগের সময়ও আমরা দেখতে পেয়েছি, আমাদের শহুরে মানুষদের অনেকেই যার যার সাধ্যমতো ত্রাণ নিয়ে এগিয়ে যায়, কেউ কেউ হয়তো লোক দেখানো সহায়তা নিয়েও যায়। কিন্তু এবারের এই জাতীয় দূর্যোগে সেই চিত্র অনেকটাই কমই দেখতে পাচ্ছি।
তাই সবার প্রতি আহ্বান জানাবো, হাওরবাসীর প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে এখনই আমাদের উচিৎ সাধ্যানুযায়ী সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া। প্রয়োজনে শীতবস্ত্র সংগ্রহের মতো যৌথভাবে ফান্ড সংগ্রহ করে, খাদ্য সামগ্রী ও অন্যান্য সহযোগিতা দুর্গতদের মাঝে পৌঁছে দেয়া যেতে পারে।
আর যেসব সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হারওরের কৃষকদের মাঝে বীজ, সার, কীটনাশক বিক্রি করে, তাদের প্রতিও আহ্বান জানাবো ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পূর্বেকার ঋণ মওকুফ করে, আগামী মৌসুমে ফ্রি-তে বীজ সার বিতরন করবেন।
- আকতার হাবিব
সাংবাদিক, রেডিও ধ্বনি,ঢাকা।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন