শনিবার, ২৭ মে, ২০১৭

সংযমের মাসেও কি সংযত হবেননা ব্যবসায়ীরা

খুচরা বাজারে পন্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন এক ব্যাবসায়ী
শুরু হলো রহমত মাগফেরাত আর নাজাতের মাস মাহে রমজান। গতকাল তারাবি নামাজের মাধ্যমে মুসলমানরা সিয়াম সাধনা শুরু করেছেন। দুনিয়ার সমস্ত পাপাচার আর খারাপ কাজ থেকে বিরত থেকে একমাত্র মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের রহমত, ক্ষমা ও সন্তুষ্টি লাভই মুমিনের একমাত্র টার্গেট। আর তাই এই মাসের ব্যাপারে ইসলামেরর নির্দেশনা হলো দুনিয়াবি কাজ কর্ম বা ব্যস্ততা কমিয়ে দিয়ে বেশি বেশি ইবাদাতে মশগুল থাকা। সারা বছরের উপার্জনের একটা অংশ রেখে দিয়ে রমজান মাসে খরচ করার জন্য এবং এই মাসে কম মুনাফা করার ব্যাপারে নির্দেশনা আছে। কিন্তু আমাদের সমাজের বাস্তবিক চিত্র যেন আল্লাহর সেই নির্দেশনার বিপরীত।

ব্যাবসায়িরা সারা বছর পন্যমজুদ করে বসে থাকেন এই রমজানের অপেক্ষায়। আর রমজান এলেই পন্যমূল্যের পাগলা ঘোড়ার লাগাম ছেড়ে দেন। এমন ভাবেই ছেড়ে দেন যেন একে থামাবার বা নিয়ন্ত্রন করার শক্তি কারো নেই।

সারা পৃথিবীতে ন্যায়পরায়ন শাষকরা, ব্যাবসায়ীরা এই মাসে রোজাদারদের কষ্ট লাঘবে নানা উদ্যোগ নিয়ে থাকেন, ব্যাবসায়ীরা পন্যে ভেজাল দেয়া থেকে বিরত থাকেন, দামও মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে।
অথচ আমাদের দেশে এই পরিস্থিতি পুরো উল্টো, বাজারে নিত্য পন্যের পর্যাপ্ত মজুদ থাকা সত্বেও হু হু করে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম।
নিউজ পোর্টাল অর্থসুচকের একটি প্রতিবেদনে  আজকের বাজার পরিস্থিতিতে দেখা যায়,
 " এদিকে আজ রোববার রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য। গত শুক্রবারের বাজারে কিছু পণ্যের দাম আরেক দফা বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি রসুনের দাম ১০-৫০ টাকা এবং আদার দাম ১০ টাকা হারে বাড়ানো হয়েছে।

গত সপ্তাহে কেজি প্রতি ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া দেশি রসুন আজকের বাজারে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ভারতীয় রসুনের দাম ২৩০ টাকা থেকে বেড়ে ২৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে ১১০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া চায়না আদা ১০ বেড়ে আজকের বাজারে ১২০ টাকা এবং ক্যারালা আদা ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এভাবেই সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়ে চলেছে সব পণ্যের দাম। "


এই হলো আমাদের বাজার পরিস্থিতি। প্রতিবেদনটিতে পন্যবাজারের  অস্থিতিশীলতার কয়েকটি কারন তুলে ধরেছে। যেখানে বলা হয়েছে, কিছু আমদানিকারক ও পাইকাররা তাদের টার্গেট অনুযায়ী পণ্য গুদামজাতকরণের পরই পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। আর কিছু অসাদু পাইকার ব্যবসায়ী রমজানের আগে প্রচুর পণ্য মজুদ করে রাখেন। ফলে কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়। আর দাম বাড়তে থাকে। প্রতি দফা দাম বাড়ার পর অল্প অল্প মাল বাজারে ছাড়েন তারা।"

দ্রব্যমুল্য বৃদ্ধির অভিযোগ বা কারনটা খুবই স্পষ্ট। এমনকি এই অভিযোগ নতুন কিছুও নয়, বছরের পর বছর একই অভিযোগ। তাহলে দায়টা কার।
সরকারের পক্ষ থেকে বার বার জোড় গলায় বলা হচ্ছে রমজানে পন্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। ফলে দামও বাড়বেনা। কিন্তু বাস্তবে কী হচ্ছে এসব। তাহলেকি বলবো, সরকার মহাশয় এখানেও অসহায়?? দিন দিন তারা তাদের ব্যার্থতারই প্রমান দিচ্ছে?? যার মাশুল গুনতে হচ্ছে সাধারন রোজাদারদের।


বাজার ব্যাবস্থাপনার এ চরম বিশৃংখল পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগী হওয়া ছাড়া আমার মতো সাধারন নাগরিকের হয়তো কিছুই করার নেই। তবুও আমাদের এ কষ্টের কথা শোনার কি কেউ থাকবেনা? তিনি আল্লাহ একজন অবশ্যই আছেন। আমরা তার কাছেই অভিযোগ জানাই। হে আল্লাহ, সংযমের এ মাসে তুমি অসাধু, মুনাফাখোর ব্যাবসায়ী, ঘুষ খোর কর্মকর্তাদের  সংযত হওয়ার তৌফিক দাও। নয়তো তোমার ফয়সালাই তাদের দেখিয়ে দাও। যেমন ফয়সালা হয়েছিল, হযরত মুসা আলাইহিসালাম এর জাতির উপর।
যারা তোমার নির্দেশনা অমান্য করে রবিবারে  ইবাদতের জন্য আসা মাছ ধরে ধরতো।
সুতরাং সবক্ষেত্রে অাল্লাহর ফয়সালাই চুড়ান্ত। আমরা সবাই যেন তার গজব থেকে বেঁচে থাকতে পারি, এবং রমজানের পূর্ন সওয়াব অর্জন করতে পারি সে জন্য তৌফিক কামনা করি।
 আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন, আমিন।
(২৮-০৫-২০১৭)

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন