সোমবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৭

আমরা কবে সভ্য হবো?

চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর কুলখানির অনুষ্ঠানে গিয়ে ভিড়ের মধ্যে পদদলিত হয়ে দশ জনের মৃত্যু হয়েছে, হতাহতের শিকার আরো বহু মানুষ। একবিংশ শতাব্দীর এই প্রান্তে এসে যখন দাবি করছি উন্নতির দ্বারপ্রান্তে চলে যাচ্ছি আমরা। এমন সময়ে কুলখানিতে গিয়ে এমন হতাহত নি:সন্দেহে আমাদের পীড়া দেয়। সেই সাথে লজ্জাও ।

আমি বলছিনা যে , চট্টগ্রামে কুলখানি খেতে গিয়ে যারা আহত হয়েছে বা নিহত হয়েছে বা যারা হুড়োহুড়ি করেছে তারা খাবারে অভাবে সেখানে ভীড় করেছে। বরং ২০১৭ সালের বিজয়ের এই মাসে আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে পারি, চালের দাম যতই বাড়ুক নিত্যপন্যের দাম যতই আকাশচুম্বী হোক, দু-মুঠো ভাতের জন্য অন্তত কেউ মারা যায়না।

হয়তো আয়-ব্যায়ের ভারসাম্যহীনতায় আমাদের নাকানি চুবানি খেতে হয়, কিন্তু ভাতের অভাবে কারো মরতে হয়না। মানে আমাদের দ্রব্যমুল্যের পাশাপাশি হয়তো আমাদের সক্ষমতাও বড়েছে। তবে কেন এই হতাহত?

মোটাদাগে বলতে গেলে এটা আমাদের অসভ্যতার একটা নজির।
পরষ্পরের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও সহানুভুতি কিংবা সহনশীলতা যে কমছে তারই একটা জলন্ত নজির হয়ে থাকবে চট্টগ্রামের এই ঘটনা।



সোমবার দুপুরে চট্টগ্রামের জামালখান আসকার দীঘির পাড়ে রীমা কমিউনিটি সেন্টারের এ ঘটনায় আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোন দায় নেই বলে দাবি করেছেন চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার। তিনি এটাকে আইনশৃংখলা জনিত সমস্যা নয় উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, বিষয়টি নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত নয়। এটা মারামারি বা গ্রুপিং বা অন্য কোনো বিষয় না। নিরাপত্তার অভাব হয়নি, অতিরিক্ত মানুষের কারণে এবং ঢোকার সময় হুড়োহুড়ির কারণে অনেকে পড়ে গিয়ে পদদলিত হয়েছেন।



আইনের কথায় তার বক্তব্যে  হয়তো যুক্তি আছে, কিন্তু তার বাহিনীর নামে আইনের সাথে যে শৃংখলা শব্দটি জুড়ে আছে সম্ভবত  তিনি সেটা ভুলে আছেন। তাই একজন তুমুল জনপ্রিয় নেতার কুলখানিতে তার কি পরিমান ভক্ত-অনুরাগীরা এই অনুষ্ঠানে ভীড় করতে পারে, আর সেখানে ঠিক কী কী ধরনের বিশৃংখলা হতে পারে সেটা হয়তো তিনি অনুধাবন করতে পারেননি।

সম্ভবত  চট্টগ্রাম পুলিশের শীর্ষ এই কর্তাব্যাক্তি ভুলে ছিলেন, এখানে ৮০ হাজার লোককে নিমন্ত্রন জানানো হয়েছে। এতো লোকের যেখানে জড়ো হওয়ার কথা রয়েছে সেখানে শুধুমাত্র সন্ত্রাসী হামলাই ফ্যাক্ট না তারচে বেশি প্রয়োজন শৃংখলা জনিত সমস্যা। যাই হোক অদুর ভবিষ্যতে মর্মান্তিক এই ঘটনার তদন্তে সবকিছুরই কারন অনুসন্ধান হবে এটাই আশা।


কিন্তু পাশাপাশি  যে, কথাটি শুধু বলতে চাই, সেটা হলো আমাদের আচরণ। আইন শৃংখলা রক্ষায় না হয় প্রশাসন আরো কঠোর হলো। কিন্তু আমাদের আচরণ বদলাবে কিসে?  কয়েকবারের নির্বাচিত ও তুমুল জনপ্রিয় মেয়রের কুলখানি অনুষ্ঠান আয়োজন নিশ্চয় কোন ঘাটতি রাখেননি তার পরিবার। 
কিন্তু একটু  শৃংখলভাবে সেখানে অংশ নিতে, হুরুহুরি এড়িয়ে খাবার নিতে আমাদের এতো সমস্যা কেন? এই শিক্ষা আমরা কোথায় পাবো?

শুধুমাত্র হুড়োহুড়ি করে একসাথে এতোগুলো মানুষের অকাল মৃত্যু, এতো গুলো পরিবারের বুকফাটা আর্তনাদের দিনে শুধু এই প্রশ্নটিই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে, আর কবে আমরা সভ্য হবো?

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন