সোমবার, ২৩ জুন, ২০১৪

শকুন নাই, তাই পশুর অ্যানথ্রাক্স, জলাতঙ্ক রোগ বাড়ছে!

শকুন একটি উপকারি পাখি। কিন্তু আমাদের অবহেলা আর অজ্ঞতার কারনে বাংলাদেশ থেকে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে উপকারি এই প্রাণীটি। বাংলাদেশ থেকে শকুন বিলুপ্তির ফলে ‘অ্যানথ্রাক্স, জলাতঙ্ক, যক্ষা, খুরা রোগসহ বিভিন্ন জুনোটিক’ (পশু হতে সংক্রমিত) রোগের হার বেড়ে যাচ্ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন গবেষকরা।

তারা জানান, শকুনের সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণে প্রতিবেশী দেশ গুলতে অ্যানথ্রাক্স ও জলাতঙ্কের মত পশুর প্রাণঘাতি রোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। শকুন কমে যাওয়ায় এখন বাংলাদেশেও এসব রোগের প্রভাব বাড়ছে। এছাড়া শকুন বিলুপ্তির ফলে শুধু পশুই নয়, বাংলাদেশের মানুষও দিন দিন মারাত্বক রোগের ঝুঁকিতে পড়ছে।

সোমবার বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে আই ইউ সি এন বাংলাদেশের আয়োজনে ‘পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ওপর আসন্ন শকুন বিলুপ্তির প্রভাব’ শীর্ষক গোলটেবিল অনুষ্ঠানে বক্তরা এসব কথা বলেন।

বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে প্রায় ৫০ হাজার শকুন ছিল। এখন আছে মাত্র এক
হাজার। দেশে ৭ প্রজাতির শকুন থাকলেও স্থায়ীভাবে বাস করছে মাত্র দুই প্রজাতির শকুন। রাজ-শকুন ও সরুছুঁটি-শকুন সম্প্রতি বিলুপ্ত হয়েছে। সবশেষে এখন বাংলা-শকুনও বিলুপ্ত হতে চলেছে।


শকুন মারা যাওয়ার কারণ হিসেবে গবেষকরা জানান, পশু চিকিৎসায় বিষাক্ত ওষুধ ‘ডাইক্লোফেনাফ’ ও ‘কিটোপ্রোফেন’ ব্যবহার করার কারণেই শকুন মারা যাচ্ছে। কারণ এসব ওষুধ ব্যবহার করা হয়েছে এমন গরু ছাগলের মৃতদেহ খেলে শকুনের কিডনি নষ্ট হয়ে যায়। আর ‘ডাইক্লোফেনাফ’ ও ‘কিটোপ্রোফেন’ ওষুধ এতই মারাত্বক যে, এর মাত্র ৩০ মিলিলিটার দিয়ে ৫০০ শকুন মারা সম্ভব।

বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে  ও আমাদের প্রতিবেশি দেশ ভারতে পশু চিকিৎসায় ‘ডাইক্লোফেনাফ’ নিষিদ্ধ হয়েছে কিন্তু ‘কিটোপ্রোফেন’ এখনও নিষিদ্ধ করা হয়নি। এটি নিষিদ্ধ করা জরুরী। কারণ এগুলো বিষাক্ত ওষুধ বলেই ২০০৬ সালে পাকিস্তানে এবং ২০০৯ সালে নেপালে ডাইক্লোফেনের পরিবর্তে মেলোক্সিক্যামসহ অন্যান্য বিকল্প ওষুধ ব্যবহার করছেন তারা।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এম এ মান্নান বলেন, শকুন কোনো জীবিত প্রাণী খায় না। এরা পরিবেশেরও ক্ষতি করে না। বিভিন্ন প্রাণীর মৃত দেহ খেয়ে নানা রকম মারাত্বক রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে মানুষ ও পরিবেশকে রক্ষা করে। তাই এই প্রজাতিটি রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

অনুষ্ঠানে অতিরিক্তি অর্থ সচিব জামাল আহমেদ আশ্বাস দিয়ে বলেন, পরিবেশ ও বন বিভাগ যদি শকুন রক্ষায় কোনো প্রকল্প গ্রহণ করে। তাহলে সেক্ষেত্রে অর্থ বিভাগ অর্থ বরাদ্দ দিয়ে সহায়তা করবে।

সভায় আই ইউ সি এন-এর বাংলাদেশ কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ইশতিয়াক উদ্দীন আহমেদের সভাপতিত্বে আরো উপস্থিত ছিলেন, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু, ক্রিস বাউডেন, ইনাম আল হক, ড. মনিরুল খান, ড. তপন দে প্রমুখ।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন