রবিবার, ৩০ মার্চ, ২০১৪

৫ম ধাপের উপজেলা নির্বাচন: বিজয় ছিনিয়ে নেওয়ার আশংকা বিএনপি’র

ঢাকা, ৩০ মার্চ : গত ৪ ধাপের উপজেলা নির্বাচনের মতো আগামীকালের নির্বাচনেও সরকারদলীয় ক্যাডারদের ভোটকেন্দ্র দখল, অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, সরকার গত নির্বাচনগুলোর চেয়ে আরো বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠছে।

রবিবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের নির্যাতনের কথা তুলে ধরে সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, আগামীকালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এজেন্টদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছে সরকার দলীয় সমর্থকরা। র‌্যাব-পুলিশকে ব্যবহার করে গ্রেফতার ও নির্যাতন চালাচ্ছে। কারচুপি ও শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে ভোটকেন্দ্র দখল করে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে অধিকাংশ পদ ছিনিয়ে নিতে বিরোধী নেতা-কর্মীদের হত্যা ও জখম করেছে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী দিয়ে নির্বিচারে গ্রেফতার করে দেশের কারাগারগুলো কানায় কানায় ভর্তি করে ফেলা হয়েছে।

নতুন নির্বাচনের দাবি জানিয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বর্তমান অবৈধ সরকারের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, স্বৈরাচারী কায়দায় জোরজবরদস্তি শাসন ব্যবস্থা কায়েম করে পৃথিবীর কোনো স্বৈরশাসক টিকে থাকেনি। আপনারাও থাকবেন না, এটাই ইতিহাসের অমোঘ বিধান।

তিনি বলেন, এখনও সময় আছে, অবৈধ জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে পদত্যাগ করুন। নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থার অধীনে অবিলম্বে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। অন্যথায়, তীব্র গণঅভ্যূত্থানে আপনাদের পতন অনিবার্য।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বলেন, সরকার গত ৫ই জানুয়ারী প্রহসনের নির্বাচনের আগে ও পরে দেশব্যাপী যেসব সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়েছে তা বর্তমান উপজেলা পরিষদ নির্বাচন চলাকালীন সময়ে আরো বেশী বেপরোয়াভাবে প্রকাশিত হয়ে উঠেছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে-বর্তমান অবৈধ সরকার গত চারটি ধাপের উপজেলা নির্বাচনে যেভাবে সহিংসতা চালিয়ে ভোটকেন্দ্র দখল থেকে শুরু করে ব্যালট বাঙ ও ব্যালট পেপার ছিনতায়ের মাধ্যমে উপজেলা পরিষদের নির্বাচন চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদগুলো ছিনিয়ে নিতে মরিয়া ছিল; আগামীকালের নির্বাচনেও তার ব্যতয় ঘটাবে বলে মনে হচ্ছে না।

সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যই আওয়ামী লীগের অনুষঙ্গ উল্লেখ করে সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, আওয়ামী লীগ তাদের শাসনামলগুলোতে গণতন্ত্রের সুস্থ ধারাকে বেগবান রাখতে কখনোই সচেষ্ট হয়নি। গণতন্ত্রের লেবাসে আওয়ামী লীগ সবসময়ই গণতন্ত্রকে  গলাটিপে হত্যা করেছে। এরা নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীসহ রাষ্ট্রের সকল অঙ্গকে নিজেদের ইচ্ছামতো ব্যবহার করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা অর্থাৎ বাকশালী শাসন প্রতিষ্ঠার সফলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, গণতন্ত্র এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে বড় বড় বুলি আউড়িয়ে প্রকারন্তরে বর্তমান অবৈধ সরকার গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অবিরাম কুঠারাঘাত করছে। আর এজন্যই দেশের আপামর জনসাধারণের আবেগ-অনুভূতির প্রতি তোয়াক্কা না করে নিজেদের ক্ষমতার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বাস্তবায়ন করতে দেশব্যাপী রক্তারক্তি, হত্যা, সন্ত্রাস ও ভোট ডাকাতির দল হিসেবে আওয়ামী লীগ আবারো নিজেদের মুখোশ নগ্নভাবে উন্মোচন করেছে।

নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, সংবিধানে নির্বাচন কমিশন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার প্রভাবমুক্ত হয়ে নির্বাচন পরিচালনা করার যথেষ্ট ক্ষমতাবান হওয়া সত্ত্বেও ভোট ডাকাতি ঠেকাতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিজেদেরকে সরকারের অতীব আজ্ঞাবহ হিসেবে প্রমাণ করে প্রতিষ্ঠানটিকে কলঙ্কিত করেছে।

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন উপজেলা নির্বাচনের প্রত্যেকটি ধাপে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনে ব্যর্থ  হয়েছে বললে ভুল হবে, বরং নির্বাচন কমিশন নির্লজ্জ পক্ষপাতিত্ব করেছে। অদক্ষ, অযোগ্য, ব্যর্থ, দলবাজ নির্বাচন কমিশনের পূর্ণাঙ্গ পদত্যাগ আমরা আগেও চেয়েছি, এখনও চাই।

নির্বাচনে সরকার দলীয় লোকদের সহিংসতার কথা উল্লেখ করে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বলেন, প্রথম দফা উপজেলা নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে তারা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালালেও বিএনপি তথা ১৯ দলীয় জোটের সাফল্য দেখে তারা দিশেহারা হয়ে উপজেলা নির্বাচনের পরবর্তী ধাপগুলোতে আরো বেসামাল ও বেপরোয়া হয়ে উঠে। চতুর্থ দফা উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি ও ১৯ দলীয় জোটের ৪ জন নেতা-কর্মীর মৃত্যুই তাদের ধারাবাহিক ভয়াল ও পৈশাচিক তান্ডবের সাক্ষী বহন করে। সুতরাং এ কথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় নির্বাচনী কারচুপি ও সহিংসতায় পারদর্শী আওয়ামী লীগ ১৯৭৩ সাল থেকে যে দক্ষতার প্রমান দিয়েছে তা বিশ্বের ইতিহাসে নজীরবিহীন।

সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, আওয়ামী লীগের ইতিহাস হচ্ছে প্রতারণা, হিংসা, সন্ত্রাস, হত্যা, গুপ্ত হত্যা, দুর্নীতি ও মিথ্যাচারের ইতিহাস। ভোট ডাকাতি, কেন্দ্র দখল, ফলাফল ছিনতাই ইত্যাদি আওয়ামী লীগের অপরাজনীতির বর্ণাঢ্য ঐতিহ্য। গণতন্ত্রের মুখোশে আওয়ামী লীগ একটি সর্বনাশা স্বৈরাচারের নাম। আওয়ামী লীগ এবং গণতন্ত্র পরস্পর বিপরীত শব্দ।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন