বুধবার, ২৫ জুলাই, ২০১৮

‘মানসিক প্রশান্তির জন্য সাইকেল’


 অফিস শেষে ক্লান্ত শরীরে বের হলাম। গন্তব্য শাহবাগ। কিন্তু রাস্তায় বেরুতেই যেন চোখ কপালে..পুরা রাস্তায় গাড়িতে ঠাসা। তীব্র যানজটে গন্তব্যে যাওয়ার কোন গাড়ি নেই। উপায় না দেখে আড়াইশো টাকার বিনিময়ে রাইড শেয়ারিং অ্যাপের দ্বারস্ত হওয়া গেলো কিন্তু তীব্র যানজটে  সেই সার্ভিসেও ভরসা রাখা বৃথা। 

আবার কখনো কখনো কোথাও যাওয়ার জন্য তাড়াও থাকে। কিন্তু ঢাকার ট্রাফিকের কাছে হাসফাঁস করা ছাড়া যেন আর কিছুই করার নেই আমাদের। সকালেও একই রকম অস্বস্তি নিয়ে বাসা থেকে বের হতে হয়। হাতে যত সময় নিয়েই বের হোন না কেন সঠিক সময়ে অফিস পৌঁছার কোন গ্যারান্টি নাই। 

যাওয়া এবং আসার পথে আমাদের এই দুশ্চিন্তা আর ভোগান্তি থেকে রেহাই পেতে একটি বিকল্প পদ্ধতি মাথায় আসলো। সেটা হলো একটা বাই সাইকেল। তাছাড়া ইদানিং স্বাস্থ্যটার দিকেও মনে হচ্ছে একটু যত্ন নেয়া দরকার। কিন্তু অলসতা আর উদ্যোগের অভাবে ব্যায়াম করা হয়না। সবকিছু বিবেচনায় মাত্র ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে বন্ধুর ১৪ হাজার টাকায় কেনা সাইকেইলটাই কিনে ফেললাম। কিন্তু কেনাত হলো বাট চালাবো কিভাবে ? কারন ঢাকার রাস্তায় রিক্সা, গাড়ি ও মানুষের যে চাপ তাতে ফুটপাতে হাটাই দুস্কর। আর সড়কে বেপরোয়া গাড়ি চলাচলে বুক দুরু দুরু করে। কিন্তু কিইবা করার প্রতিদিনের ভোগান্তি বিরম্বনা থেকে মুক্তি পেতে অনেকটা রিস্ক নিয়েই শুরু ঢাকার রাস্তায় সাইক্লিং। তবে দুচারদিন চলার পর মনের ভয়টা যেন আস্তে আস্তে কমে গেলো। 


কমার আরেকটা বড় কারন হলো চলার স্বাধীনতা। ১১ বছরের ঢাকা জীবনে হঠাতই যেন ব্যাপক স্বাধীনতা পেয়ে গেলাম। অর্থাৎ অফিস ছাড়াও যখন যেখানে খুশি যাওয়ার প্ল্যানিং করা যায়। ১ ঘন্টার রাস্তা ১০ মিনিটেই চলে যাওয়া। সবচে মজার বিষয় হলো তীব্র জ্যামে যখন মোটর সাইকেলগুলোও অসহায় তখনও সচল সাইকেলের চাকা। দিন শেষে অফিসের ক্লান্তি নিয়ে বের হলেও বাসায় যেতে যেতে সাইক্লিং সেই ক্লান্তি দূর করে শরীরে আনে চাঙ্গা ভাব। আর টাকার হিসাবটা নাইবা দিলাম। 

ইদানিং রাস্তায় বের হলে প্রচুর মানুষকে দেখা যায় সাইক্লিং করছে। ছাত্র-পেশাজীবী থেকে শুরু করে সব শ্রেনী পেশার মানুষ সাইক্লিং করছে। তবে ইদানিং বাস চাপা সহ বেপরোয়া এক্সিডেন্টের কারনে সাইক্লিং এ শংকামুক্ত থাকা যাচ্ছেনা। ঢাকার রাস্তাগুলো সাইক্লিংএর উপযোগী নয়। সরকারের একটু নজর থাকলে আরো নিরাপদ হবে আমাদের পথ চলা। 
পাঠক আসুন জেনে নেই, সাইক্লিং এর উপর কিছু গবেষণা ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম কী বলে ?
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা কর্মক্ষেত্রে সাইকেল চালিয়ে যাওয়া-আসা করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনা ৩৯ শতাংশ। 
বিবিসি জানায়, ৫ বছর ধরে বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করেছেন যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব গ্লাসগো’র বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, যেসব মানুষ নিয়মিত কর্মক্ষেত্রে সাইকেল চালিয়ে যান তাদের ক্যান্সার ও হৃদরোগের ঝুঁকি অর্ধেক কমে যায়। প্রায় আড়াই লাখ মানুষের ওপর গবেষণা করে গবেষকরা দেখেন, যারা নিয়মিত সাইকেল চালান তাদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৪৫ শতাংশ কমে যায়, আর হৃদরোগের ঝুঁকি কমে  ৪৬ শতাংশ। তাছাড়া, এ অভ্যাসের কারণে মানুষের যেকোনো রোগে আক্রান্ত হয়ে অসময়ে মৃত্যুর ঝুঁকিও কমে ৪১ শতাংশ।

অপরদিকে যারা গাড়িতে যাওয়া-আসা করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনা ৬১ শতাংশ। বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে নিয়মিত সাইকেল চালানো পেশিশক্তি গঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখে এবং ঊরু, কাফ ও নিতম্ব সুগঠিত হয়।


সাইকেল চালালে শরীর প্রচুর ঘামে। এই ঘামের সঙ্গে শরীরের বর্জ্য বের হয়ে ত্বক পরিষ্কার হয়, শরীর ও মন ফুরফুরে থাকে। নিয়মিত সাইকেল চালালে শরীরের বাড়তি ওজন কমে আসে। শরীর সুঠাম থাকে। তাছাড়াও সাইকেল চালানোর কারণে মুক্ত বাতাসে মনে প্রশান্তি আসে। মানসিক দুশ্চিন্তা কমে। অতএব সাইকেল হোক আমাদের প্রিয় পরিবেশবান্ধব বাহন।


0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন