বুধবার, ১৬ জুলাই, ২০১৪

জমে উঠতে শুরু করেছে রাজধানীর ঈদ বাজার

আকতার হোসেন : একে একে ফুরিয়ে আসছে রমজানের  দিন গুলো। সে সাথে হাতছানি দিয়ে ডাকছে মুসলিম সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ঊৎসব ঈদ-উল ফিতর। ঈদকে কেন্দ্র করে জমে  উঠতে শুরু করেছে রাজধানীর শপিং মলগুলো। ক্রেতা-দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠছে মার্কেটগুলো। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে বেচাকেনা। সারা বছরের মন্দাভাব কাটিয়ে উঠে বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ব্যাবসায়ীরাও তাই নেমেছেন আটঘাট বেঁধে। সে লক্ষ্যে রমজানের শুরু থেকেই তারা বিপুল পরিমান পণ্যসামগ্রী সংগ্রহ করেছেন। রাজধানীর বিভিন্ন শপিংমল ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে ব্যাবসায়ীরা নান্দানিক ডেকোরেশন ও আলোকসজ্জার মাধ্যমে নতুন করে সাজিয়ে তুলেছে তাদের পণ্যে ঠাসা দোকানগুলো। রমজানের শুরুতে ক্রেতা কম থাকায় কিছুটা হতাশা কাজ করলেও ঈদ ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে তা কাটিয়ে উঠছে তারা। ব্যাবসাীরা আশা করছেন, দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ ও আবহাওয়া অনুকুল থাকলে গতবারের চেয়ে অনেক বেশি বিকিকিনি হবে। গত বছরও রাজনৈতিক অস্থিরতা ও দেশের অবস্থা খারাপ থাকার কারণে তেমন একটা সুবিধা করতে পারেনি ব্যাবসায়ীরা। তবে এবারের চিত্র অনেকটাই স্থিতিশীল। তাই এবার ব্যাবসায়ীদের চাহিদাও একটু বেশী।

রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, সকালের দিকে ক্রেতা সমাগম কিছুটা কম থাকলেও বিকালের দিকে তা কয়েকগুন বৃদ্ধি পায়। বেচাকেনা চলছে টানা রাত দশটা পর্যন্ত। বাতিল করা হয়েছে দোকানকর্মচারীদের ছুটি। বন্ধের দিনেও খোলা থাকছে মার্কেটগুলো। সামনের দিনগুলোতে গভীর রাত পর্যন্ত দোকান খোলা থাকবে বলে জানান ব্যাবসায়ীরা।

ব্যাবসায়ীরা জানান, এমনিতেই সারা বছর বেচাকেনা অনেক কম হয়। সারা বছরের সেই আয় দিয়ে টিকে থাকাই মুশকিল হয়ে পড়ে। তাছাড়া দোকান ভাড়া, কর্মচারী খরচ, বিদ্যুৎ বিল, আনুষঙ্গিক খরচসহ বিনিয়োগকৃত টাকা তুলে আনা সবগুলোই বেশ চ্যালেঞ্জের । তাই ব্যাবসায়ীরা মুখিয়ে থাকে এ এক মাসের জন্য। ব্যবসায়ীদের ভাষায় রমজান ও ঈদকে বলা হয় সিজন টাইম। এই সিজনেই পুষিয়ে নিতে চায় বছরের সব ঘাটতি। এ সময়ে মানুষজন প্রায় প্রত্যেকেই নিজেদের জন্য ও আপনজনের জন্য কিছুনা কিছু কেনার চেষ্টা করেন। এতে ব্যাবসায়ীদের বেচা-বিক্রিও বেশ ভাল হয়।

বাহারী পোশাকে ঠাসা দোকানগুলো
ঈদকে কেন্দ্র করে নতুন নতুন ডিজাইনের বাহারীসব পোশাকে ঠাসা রাজধানীর শপিংমলগুলো। ফ্যাশন হাউজগুলো তাদের নিজস্ব ডিজাইনের পোশাক নিয়ে এসেছে বাজারে। আর অন্যান্য সাধারণ দোকানীরা ক্রেতা চাহিদা লক্ষ্য রেখে বিভিন্ন ধরণের পোশাকের সমাহার ঘটিয়েছে। রাজধানীর মৌচাক, মালিবাগ, শান্তিনগর, মগবাজার, পলওয়েল, গুলিস্তান, পল্টন, পীর ইয়ামেনীসহ বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে প্রায় প্রত্যেকটি দোকানেই স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুন বেশি পোশাক সংগ্রহ করে রেখেছে ব্যাবসায়ীরা। বাজার ঘুুরে দেখা গেছে এবার ছেলেদের বিভিন্ন স্টাইলের জিন্স, টিস্যু, গ্যাভাডিনসহ ফরমাল প্যান্টের চাহিদা বেশি। এছাড়া অত্যাধুনিক ও মনকাড়া দেশীয় ডিজাইনের শার্ট, পাঞ্জাবী,ফতুয়া বিক্রি হচ্ছে বেশী।

অন্যদিকে মেয়েদের পোশাকের মধ্যে ফুল হাতা লং কামিজ, আনস্টিচ থ্রি পিস, লেহেঙ্গা, শাড়ির মধ্যে জামদানী, কাতান ইত্যাদির চাহিদা তুঙ্গে। তাছাড়া প্রতিবারের ন্যায় এবারও মেয়েদের ঈদ বাজারে দাপটের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে পার্শ্ববর্তী দেশ ও হিন্দী সিরিয়ালের বিভিন্ন চরিত্রের নামকরণ অনুযায়ী ডিজাইন করা পোশাকগুলো।

বিক্রি বেশি ছোটদের পোশাক, ভীড় বেশি কসমেটিক্সের দোকানে
রাজধানীর শপিংমলগুলো ঘুরে দেখা গেছে, ঈদঘনিয়ে আসার সাথে সাথে মার্কেটগুলোতে ভীড় বাড়লেও বেচা-বিক্রি তুলনামুলক কম। তবে ছোটদের পোশাক ও জুতা বেশি বিক্রি হচ্ছে। এব্যাপারে মৌচাক মার্কেটের এক দোকানী জাস্ট নিউজকে জানান,  ঈদে সাধারণত ছোটদের আনন্দটাই থাকে আলাদা। শপিং নিয়ে ছোট বাচ্চাদের আবদার থাকে শক্তিশালী। তাছাড়া সব বাবা-মা ই নিজেদের চেয়ে সন্তানের পছন্দটাকে গুরুত্ব দেয় বেশি। সেজন্য সবাই বাচ্চাদের শপিংগুলোই আগে ভাগে সেরে নেয়।  অন্যদিকে মার্কেটগুলোতে মহিলাদের নানারকম প্রসাধনী, ব্যাগ ও চুড়িসহ বিভিন্ন দোকানে ভীড় তুলনামুলক বেশি লক্ষ্য করা গেছে।
এছাড়া রেডিমেড পোশাকের পাশাপাশি থান কাপড়ের দোকানেও বেচা-বিক্রি কম নেই। বিক্রেতারা জানান, অনেকে  রেডিমেড পোশাকের চেয়ে অর্ডার দিয়ে পোশাক তৈরি করে নিতে পছন্দ করেন।  আর  ঈদের সময় সাধারণত ১৫ রমজানের পর থেকেই দর্জি বা টেইলার্সের দোকানে আর অর্ডার নিতে চায়না। সেজন্য আগে ভাগে রেডিমেড পোশাকের চেয়ে কাটা বা গজ কাপড়েরর দোকানগুলোতে তুলনামুলক বেচা-বিক্রি বেশি।

তবে এ মুহূর্তে বেচা-বিক্রি যাই হোক দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ভালো থাকলে গতবারের চেয়ে এবার ঈদে অনেক ভালো বিক্রি হবে এমনটাই আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন