শনিবার, ২৬ জুলাই, ২০১৪

শেষ মুহূর্তের ঈদ বাজার: বেচাকেনায় ভাটা, ব্যবসায়ীরা হতাশ


আকতার হোসেন: ঈদের আর মাত্র কয়েকটি দিন বাকী। ভীড় বাড়তে শুরু করেছে নগরীর বাস, ট্রেন ও লঞ্চ টার্মিনাল গুলোতে। ফাঁকা হতে শুরু করেছে রাজধানী। সেই সাথে তুলনামুলক ভাবে রাজধানীর বিপনী বিতান গুলোতেও ভীড়ও কমছে। সাধারণত রমজানের শুরু থেকে বেচাকেনার পরিমান বাড়তে থাকে। আর শেষ মুহূর্তে বিশেষ করে চাঁদরাত পর্যন্ত বেচাকেনার পরিমান বেড়ে যায় কয়েকগুন। ব্যাবসায়ীদের যেন দম ফেলার সময় থাকেনা। কিন্তু এবারের চিত্র অনেকটাই ভিন্ন।

শুরুতে ক্রেতা কম থাকলেও ঈদ এগিয়ে আসার  সাথে সাথে ভীড় বাড়তে থাকে। ব্যাবসায়ীরাও আশায় বুক বাঁধতে থাকে। সেই সাথে তারা দোকনগুলোতে কয়েকগুন বেশি পন্য বোঝাই করেন। সবার প্রত্যাশা শেষ মূহুর্তে বেচাকেনা আরও বাড়বে।

কিন্তু সরকারি ছুটি ও সাপ্তাহিক ছুটি নিয়ে বড় রকমের ছুটির ফাঁদে পড়ে দেশ। কর্মজীবীরা নিজেদের সুবিধা মতো ছুটি নিয়ে অনেকেই ছুটছেন আপনজনদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে। আর যারা এখনও যেতে পারেননি তারাও ঢাকা ত্যাগের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অনেকে আবার আগে ভাগে পরিবারের সদস্যদের পাঠিয়ে দিয়েছেন গ্রামে।

ফলে রাজধানী কার্যত ফাঁকা হয়ে পড়ায় এর প্রভাব পড়েছে শপিংমল গুলোতে। বিকি-কিনি ধারাবাহিকভাবে চললেও ব্যবসায়ীরা বলছে সময়ের তুলনায় ক্রেতা সমাগম হতাশাজনক। এমনকি ফুটপাতেও এবার বেচাকেনা অনেক কম।

নগরীর বিভিন্ন শপিংমল ও ফুটপাত ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। ব্যাবসায়ীদের হিসাবে ২৭ রমজানের পর থেকে কাস্টমার আসবে জোয়ারের মতো। বেচা কেনার ধুম লেগে যাবে। দম ফেলারও সময় পাবেননা তারা। অথচ এবার রমজান উপলক্ষে বাড়তি সেলসম্যানরা কাজ করছেন ঢিলেঢাল ভাবে। ফুটপাতের ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ীরা ক্রেতা আকর্ষন করতে হাক ডাক ছাড়ছেন। একজন কাষ্টমার পেলে নিজেদের দোকানে ভেড়াতে উঠে পড়ে লাগছেন। কথা হয় রাজধানীর ফকিরের পুল এলাকার ফুটপাতের এক ব্যাবসায়ীর সাথে। বেচাকেমন কেমন- এ প্রশ্ন করতেই তিনি বলেন, দেখতেই তো পারছেন কেমন বেচা কেনা হচ্ছে। কাস্টমরাই নাই। বেচমু কার কাছে। রাস্তাঘাটের অবস্থা দেখলে মনে হয় দেশে হরতাল লাগছে। এমতাবস্থায় ঈদের জন্য সংগ্রহ করা তার সব পণ্য যথা সময়ে বিক্রি করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে ব্যাপক চিন্তিত তিনি।

রাজধানীর পান্থপথে অবস্থিত দেশের সর্বাধুনিক শপিং মল বসুন্ধরা সিটিতে গিয়ে দেখা গেল বেশিরভাগ দোকানি  বসে বসে অলস সময় কাটাচ্ছেন। এ দোকানগুলো মূলত  মহিলাদের শাড়ী, পাঞ্জাবী, আর ফতুয়ার দোকান।
 মোটামুটি ক্রেতাদের ছোট-খাটো ভিড় দেখা গেলেও বেশিরভাগ ক্রেতারা শুধু এ দোকান ও দোকান ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাছাড়া এই সময়ের তুলনায় সেই সংখ্যাটাও নেহাতেই নগন্য।

ঈদের বেচা -কেনা কেমন হচ্ছে এ বিষয়ে কথা বলতেই করিম উদ্দিন নামের একজন বিক্রেতা চরম হতাশা প্রকাশ করে বলেন, সারা বছর তো ব্যবসা এমনিতেই হয় না। তাই আশায় থাকি অন্তত ঈদের সময় দারুণ একটা ব্যবসা করার জন্য। কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি।

বিক্রেতা করিম অভিযোগের আঙ্গুল সরকারের দিকে দেখিয়ে বলেন, এ সরকার যতদিন থাকবে ব্যবসা করে আমরা কোন সুবিধা করতে পারবো না। তিনি বলেন, গত বছর আমাদের এক সপ্তাহে যা বিক্রি হয়েছিল এ বছর পুরো মাসেই তার অর্ধেক ব্যবসাও হয়নি। এভাবে একটি ব্যবসা চলতে পারেনা। তাই এ রকম বেচা-কেনার মুহূর্তেও  চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছি।

ঈদের বেচাকেনা নিয়ে কথা বলতেই মৌচাক এলাকার এক ব্যাবসায়ী ওই দিনের একটি জাতীয় দৈনিকের একটি নিউজ  দেখিয়ে বলেন, ভাই দেশে ডিজিটাল রাজত্ব চলছে তাই কোন কথা বলতে পারবোনা। দেশের পরিস্থিতি বেশি ভালোনা। তাহলে আমরা ভালো থাকবো কেমন করে? মানুষের হাতে টাকা পয়সা নাই, তাই ব্যাবসায়ও মন্দা।

ব্যাবসায়ীরা জানান, এমনিতেই সারা বছর বেচাকেনা অনেক কম হয়। দোকান ভাড়া, কর্মচারী খরচ, বিদ্যুৎ বিল, আনুষঙ্গিক খরচসহ বিনিয়োগকৃত টাকা তুলে আনা সর্বোপরি সারা বছরের সেই আয় দিয়ে টিকে থাকাই মুশকিল হয়ে পড়ে। তাই ব্যাবসায়ীরা মুখিয়ে থাকে এই এক মাসের জন্য। এক মাসেই পুষিয়ে নিতে চায় বছরের সব ঘাটতি। কিন্তু এবার আগে আগে মানুষ ঢাকা ত্যাগ করতে শুরু করায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে তাদের। তাদের শঙ্কা বাড়ছে অতিরিক্ত দামে ক্রয় করা অতিরিক্ত মাল চাঁদ রাতের মধ্যে বিক্রি করতে পারবেনতো!

ব্যাবসাীরা জানান, গত বছরও দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তেমন একটা সুবিধা করতে পারেনি ব্যাবসায়ীরা। তবে এবারের চিত্র ছিল অনেকটাই স্থিতিশীল। রাজনৈতিক দলগুলো কঠোর কোন কর্মসূচিও ছিলনা। তাই এবার ব্যাবসায়ীদের চাহিদাটাও ছিল একটু বেশী। তারা আশা করেছিল দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ ও আবহাওয়া অনুকুল থাকলে গতবারের চেয়ে অনেক বেশি বিকিকিনি হবে।

কিন্তু এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ সময়েও খুশি হতে পারছেননা তারা। ব্যবসায় এমন বাজে অবস্থা যে ব্যবসায়ীরা এখন হাসির বদলে চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছে। তবুও অনেকেই এখনো আশায় বুক বেঁধে আছেন যে, পরিস্থিতি যাই হোক আল্লাহর রহমতে চাঁদ রাত পর্যন্ত বেঁচাকেনা বেশ ভালো হবে।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন