বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

দেড় বছরে ২০৭ গার্মেন্টস বন্ধ, বেকার দেড় লাখ

দেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি এবং রপ্তানি আয়ের প্রধান উৎস তৈরি পোশাক শিল্পে একের পর এক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিনই প্রায়ই দু-একটি করে কারখানা বন্ধ হচ্ছে। রানা প্লাজা ধসের পর থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২০৭টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। এতে কর্মহীন হয়ে পড়েছে প্রায় দেড় লাখ শ্রমিক। বিজিএমইএ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বিশ্বমানের এবং দেশের সবচেয়ে বড় গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান হলমার্ক গ্রুপ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে বেকার হয়ে পড়েছে প্রায় ৪৫ হাজার শ্রমিক।

সর্বশেষ ১ সেপ্টেম্বর মিরপুরের সেকশন-৭ এ পূরবী সুপার মার্কেটের উপর স্থাপিত ইমাকুলেট প্রাইভেট লিমিডেট গার্মেন্টসটি বন্ধ করে দেয় মালিকপক্ষ। এর কয়েকদিন আগে একই মালিকের মিরপুর-১ এ অবস্থিত দুটি কারখানাও বন্ধ হয়ে যায়।

বিজিএমইএ সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, বন্ধ হওয়া ২০৭টি কারখানার মধ্যে ২০ শতাংশ হচ্ছে শিফট হওয়া, ৪০ শতাংশ শেয়ার্ড বিল্ডিং কারখানা। বাকী কারখানাগুলো সাব-কন্ট্রাক্টে কাজ করা কারখানা। তবে এর মধ্যে ভালো মানের কারখানা ৫ শতাংশেরও কম। পারপাসমেড বিল্ডিংয়ের কোনো কারখানা বন্ধ হয়নি।

এই কর্মকর্তা আরো জানান, ইদের আগে বিভিন্ন জায়গায় আরো ২০টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। যা বিজিএমইএ জানেনা বা বিজিএমইএকে জানানো হয়নি। সব মিলিয়ে প্রায় ৪০০ কারখানা বন্ধ হওয়ার কথা জানান তিনি।

তিনি বলেন, স্ট্যান্ডার্ড মানের কোনও কারখানা বন্ধ হয়নি, সবই নরমাল কারখানা। অন্যদিকে শিফট হওয়া কারখানাগুলো ঢাকায় বন্ধ করে গাজীপুর আশুলিয়ায় একই নামে চালু করছে মালিকরা।

জানা গেছে, আগে বড় কারখানাগুলো বেশি করে পোশাকের অর্ডার নিয়ে অন্য কারখানায় সাব-কন্ট্রাক্টে কাজ করাতো। এবং তাদের নামে রপ্তানি হত। কিন্তু রানা প্লাজা ধসের পর বড় বড় বায়াররা কারখানার পরিবেশ ও মান যাচাই-বাছাইয়ের পর অর্ডার দেন। তারা শেয়ার্ড বিল্ডিংয়ে অর্ডার বন্ধ করে দিয়েছেন।

কোনো নামি-দামি ব্র্যান্ড খারাপ পরিবেশে তার কোম্পানির পোশাক তৈরি করে বদনাম কামাতে চান না। আর দেশে ভালো মানের কম্প্লায়েন্স কারখানাগুলোও সাব-কন্ট্রাক্টে এখন আর কাজ করাচ্ছেন না। তাই ছোট ও মাঝারি কারখানাগুলো কাজ না পাওয়ায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, রানা প্লাজা ধসের পর থেকে এ শিল্প কঠিন চাপের মুখে পড়ে। দেশে বিদেশে এ শিল্পের ইমেজ নষ্ট হয়। প্রশ্ন উঠে কারখানার নিরাপত্তা নিয়ে। ফলে ক্রেতাদের দুটি জোট এ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স কারখানা পরিদর্শনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। তারা গত বছরের নভেম্বর থেকে কারখানা পরিদর্শন শুরু করে।

এ্যাকর্ড অ্যালায়েন্সের কারখানা পরিদর্শন কর্মসুচির পর নিরাপত্তা ইস্যুতে ঝুঁকিপূর্ন হওয়ায় ২১ টি কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এছাড়া রানা প্লাজা ধসের পর অনেক ক্রেতা এদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। ফলে রপ্তানি আদেশও কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েন গার্মেন্টস মালিকরা।

বর্তমানে বিজিএমইএ সদস্যভূক্ত সাড়ে তিন হাজার কারখানা চালু রয়েছে। যদিও বিজিএমইএর সদস্য কারখানার সংখ্যা পাঁচ হাজার ৭৫১টি। এর মধ্যে ডিহোল্ডার আছে দুই হাজার ২০০ কারখানা। বিভিন্ন কারণে ছোট ও মাঝারি কারখানা বন্ধ হলেও ২০১৪ সালে নতুন কারখানা হয়েছে ৮০টি, ২০১৩ সালে হয়েছে ১৪০টি আর ২০১২ সালে ২০০ টি কারখানা নতুন করে স্থাপন করা হয়েছে।

এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, কারখানা বন্ধের পাশাপাশি নতুন কারখানা করার হারও কমছে।

কারখানা বন্ধ হওয়া প্রসঙ্গে বিজিএমইএ সভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম বলেন, কারখানা বন্ধ হওয়ার অনেকগুলো কারণ আছে। এক নম্বর কারণ হচ্ছে রানা প্লাজা ধসের প্রভাবে ক্রয় আদেশ কমে যাওয়া। এছাড়া এ্যাকর্ড অ্যালায়েন্সর কারখানা পরিদর্শন, শেয়ার্ড বিল্ডিং কারখানা থাকার কারণে ক্রেতারা অর্ডার না দেওয়া, ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির কারণে মালিকরা কারখানা চালাতে না পারা এসব কারণেও কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

প্রতিদিনই কোনো না কোনো কারখানার সমস্যা বিজিএমইএতে সমাধান করা হচ্ছে। প্রতিদিনই দুই একটি করে কারখানা বন্ধ হচ্ছে। কারখানার কাজ না থাকায় আরো কারখানা বন্ধ হওয়ার আশঙ্কার কথাও জানান তিনি।

হলমার্ক গ্রুপের মত বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান যদি এভাবে একের পর এক বন্ধই থেকে যায় তাহলে অদুর ভবিষ্যতে দেশের অর্থনীতির চাকা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।

বিশেষজ্ঞরা  মনে করেন, বাংলাদেশে গার্মেন্টস শিল্পের মত অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তিকে সচল করতে সরকারের একটু সদিচ্ছাই যতেষ্ঠ। সমঝোতার মাধ্যমে সরকারই পারে গার্মেন্টস শিল্পের সুনাম অক্ষুন্ন রেখে দেশকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিতে। (জুহা)

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন